দূষণ, যানজট, দখল ও অব্যবস্থাপনা : বসবাসের অযোগ্য রাজধানী ঢাকা


২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০০

॥ সাইদুর রহমান রুমী॥
ভয়াবহ বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, জলাবদ্ধতা, যানজট আর পদে পদে ভোগান্তি মিলিয়ে রাজধানী ঢাকাকে ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিণত হয়েছে। বর্জ্য ও দূষণে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, পানিতে কলেরার জীবাণু, সড়কে মৃত্যুর মিছিল, অগ্নিসহ নানা দুর্ঘটনা আর অপঘাতে মৃত্যুভয় নিয়ে নগরবাসীর নিত্য বসবাস। একসময়ের প্রাণের শহর যেন আজ মৃত্যুপুরী। নির্মল বায়ু প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ নানা ধরনের বাহারি প্রকল্পের নামে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের ১৬ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হলেও কাজের কাজ হয়নি কিছুই। ওয়াসা, ডেসা, ডিসিসিআইসহ সেবা সংস্থাগুলোর চরম দুর্নীতি আর সরকারি সদিচ্ছার কবলে একবিংশ শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও রাজধানী ঢাকা আজ বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতি আর জঞ্জালের শহরে পরিণত হয়েছে। বরং ফি বছর বিশ্ব তালিকায় বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকার ওপরে উঠে এসেছে ঢাকা। আর মানুষের কোটি কোটি টাকা মেরে হাসিনার সাথে ঢাকা দক্ষিণের মেয়রসহ বেশিরভাগ কাউন্সিলরই দেশ ছেড়ে গেছেন পালিয়ে।
দুর্বিষহ যানজট
রাজধানী ঢাকা মানেই এক ভয়াবহ যানজটের নগরী। শহরের এক জায়গা হতে আরেক জায়গা যেতেই মূল্যবান কাজের সময় শেষ। কী দিন, কী রাত- সবসময়ই যেন যানজট লেগেই আছে। ঢাকায় যানজটের কারণে দৈনিক নষ্ট হচ্ছে প্রায় ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা। অর্থমূল্যে যা দৈনিক প্রায় ১৩৯ কোটি টাকা যা বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার অধিক। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট তাদের সমীক্ষায় জানায়, ২০০৭ সালে ঢাকায় গাড়ির গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কি.মি.। এখন ২০২৪ সালে এসে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে। একবিংশ শতাব্দী পেরিয়ে এসে এখনো রাজধানীর ট্রাফিক সিস্টেম হাতের ইশারা নির্ভর করে রাখা হয়েছে। বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা মানুষের ভোগান্তি কমাতে ট্রাফিক ব্যবস্থা আধুনিকায়নের তেমন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। অথচ এত বছরে গাড়ির সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তারা স্বনির্বাচনযোগ্য সমন্বিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বা কাস্টমাইজেবল ইন্টিগ্রেটেড ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইটিএমএস) প্রস্তাব করেছেন।
ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট
দীর্ঘদিন ধরে নাজুক পরিস্থিতি রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকার রাস্তাঘাটের। সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর মুগদা-মাণ্ডার মূল সড়ক, যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক, দয়াগঞ্জ সড়ক, গোলাপবাগ, মানিকনগর, সবুজবাগ, খিলগাঁও ও মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত সড়কে শত শত গর্ত রয়েছে। এসব গর্তে পানি জমে থাকতে দেখা যায়। মালিবাগ রেলগেটসংলগ্ন সড়কটিও ভাঙাচোরা। সংস্কারের জন্য অনেক মাস ধরে খুঁড়ে রাখা হয়েছে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডটি। তাই এ পথ দিয়ে যান চলাচল আপাতত বন্ধ রয়েছে। পথচারীদের হেঁটে চলাচলেও সমস্যা হচ্ছে। নর্থ-সাউথ রোড, নয়াবাজার, বাবুবাজারের প্রধান সড়কগুলোও খুঁড়ে রাখা হয়েছে। বংশাল, নবাবপুর রোড, ওয়ারী, সূত্রাপুর, ধোলাইখালসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন রাস্তার অবস্থাও শোচনীয়। উত্তরা এলাকার উত্তর খান-দক্ষিণ খানসহ রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকার রাস্তাঘাটগুলো দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে। আওয়ামী লীগ সময়ের মেয়র, কাউন্সিলর, ঠিকাদার সবাই যোগসাজশে বরাদ্দের অর্থ লুটপাট করে পালিয়েছে। কথা হয় মুগদা এলাকার ইজিবাইক চালক মফিজের সঙ্গে। তিনি জানান, কয়েক বছর ধরেই শুনেছি মুগদা-মাণ্ডা-সবুজবাগের সড়কগুলো মেরামত করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাস্তাগুলো মেরামত না করেই শুনেছি টাকাপয়সাগুলো মেরে দিয়ে আওয়ামী কাউন্সিলররা পালিয়েছে। একইভাবে তেজগাঁও, সাতরাস্তা, কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট, ইন্দিরা রোড, মিরপুরের বিভিন্ন সড়কসহ নতুন ওয়ার্ডগুলোর বিভিন্ন সড়ক খানাখন্দকে ভরা। এসব বিষয়ে ডিএসসিসি প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, নগরবাসীর ভোগান্তি লাঘব করা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। আমরা ইতোমধ্যে অনেকগুলো সড়কের খানাখন্দক ও বড় বড় গর্ত মেরামত শুরু করেছি, কিন্তু পর্যাপ্ত ফান্ডের অভাবে সমস্যা হচ্ছে।
বায়ুদূষণ মারাত্মক পর্যায়ে
ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, যত্রতত্র শিল্পবর্জ্য আর অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে রাজধানীতে বায়ুদূষণ সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৫ গুণ বেশি বলে জানিয়েছে পরিবেশ সংস্থাগুলো। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, শুধু বায়ুদূষণেই বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকার দৃশ্যমান ক্ষতি হচ্ছে। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা প্রাণঘাতী অসুখে। আবহাওয়া পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, প্রায় প্রতিদিনই ঢাকার বায়ুদূষণ সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি থাকে। অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে, ঢাকার বায়ুদূষণ রোধের বিষয়টি বৃষ্টিনির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে বছরের অধিকাংশ সময়েই পরিস্থিতি খারাপ থাকে। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, সাধারণত দিনের শুরুতে দূষণের মাত্রা বেশি থাকে। সূর্য যতই গোধূলির দিকে যেতে থাকে, দূষণের মাত্রাও ততই কমে যায়। কিন্তু ঢাকায় তাও হয় না। এমনকি রাতে যেখানে দূষণ কমে আসার কথা, সেখানে উল্টো বেড়েছে। সার্বিকভাবে ঢাকার বাতাসে দূষণ সহনীয় মাত্রার চেয়েও পাঁচগুণ বেশি থাকে অধিকাংশ সময়। সাধারণত প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম ধূলিকণা ও গ্যাসীয় পদার্থকে সহনীয় মাত্রা হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। যেখানে ঢাকায় সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (একিউআই) হিসাবে দেখা গেছে, ঢাকার প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ২৭৬ মাইক্রোগ্রাম দূষণ অধিকাংশ সময়ই থাকে। কখনো কখনো তা বেড়ে ৩২৪ পয়েন্ট পর্যন্ত হয়েছে, যা সহনীয় মাত্রার চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বেশি।
দখল করা হয়েছে ঢাকার ৭৭ খাল
ঢাকা জেলা প্রশাসকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার খালের সংখ্যা ছিল ৪৭টি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা শহরে ৫৬টি খালের অস্তিত্ব থাকলেও তার সবই এখন দখল হয়ে গেছে। ঢাকা ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) ঢাকায় মোট খালের সংখ্যা ৪৩টি বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। নদীরক্ষা কমিশন ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা মিলিয়ে মোট ৭৭টি খালের অস্তিত্ব চিহ্নিত করেছিল। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা ওয়াসার যোগসাজশে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে ঢাকার বেশিরভাগ খাল। ঢাকার খালের ইতিহাস অনুসন্ধানে যে ৪৭টি খালের কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কল্যাণপুর প্রধান খালের সঙ্গে আরও ছয়টি খাল সংযুক্ত রয়েছে। এছাড়া ইব্রাহিমপুর, আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, মহাখালী, বেগুনবাড়ী, গুলশান, বনানী, কাটাসুর, আব্দুল্লাহপুর, বাউনিয়াবাদ, রূপনগর, দিয়াবাড়ী, শাহজাহানপুর, কাটাসুর, রামচন্দ্রপুর, বাইস ডেকি, হাতিরপুল, পরীবাগ, রাজাবাজার, রায়েরবাজার, মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর, গোপীবাগ, সেগুনবাগিচা, ধোলাইখাল, খিলগাঁও, বাসাবো, ধলপুর, মুগদা, মাণ্ডা, পান্থপথ, গজারিয়া, দক্ষিণগাঁও, নন্দিপাড়া, সুতিখাল, বাড্ডা, ধানমন্ডি ও মেরাদিয়াসহ ৫৩ খাল। এসবের অধিকাংশই দখল করা হয়েছে। দখলকারীরা অধিকাংশ জায়গা দখল করে বাড়িঘর, এ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করে সেগুলো বিক্রিও করে দিয়েছে। ফলে ঢাকার পানি নিষ্কাশনের খালগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় এখন সামান্য বৃষ্টিতেই পুরো রাজধানী ডুবে যাচ্ছে। গত এক যুগে ওয়াসা এবং সিটি করপোরেশনগুলো মিলে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। কিন্তু এতে সুফল নেই বললেই চলে। এদিকে ঢাকার খালগুলোর প্রবাহ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি খাল পুনরুদ্ধার করে দখল ও দূষণমুক্ত করার মাধ্যমে খালকেন্দ্রিক ‘ব্লু নেটওয়ার্ক’ গড়তে কমিটি গঠন করেছে বর্তমান সরকার। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিবীক্ষণ ও বাস্তবায়ন শাখা থেকে ৭ নভেম্বর কমিটি গঠনের তথ্য জানানো হয়।
ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রাজধানী
নিয়মকানুন না মেনে জলাধারগুলো ভরাট করে ফেলা আর যত্রতত্র বহুতল ভবনের ভারে ন্যুব্জ রাজধানী ঢাকা। জলাধার ভরাট করলে ন্যূনতম পাঁচ বছরের জেল অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো প্রভাবশালীকে এ আইনে সাজা দেয়া হয়েছে বলে শোনা যায়নি। জলাধার ভরাটের পরিণতি ঢাকাবাসী এবার প্রত্যক্ষ করেছেন পুরান ঢাকার দুটি মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায়। আগুন নেভানোর পানির দু®প্রাপ্যতা আগুনের সর্বধ্বংসী লেলিহান শিখাকে যেন আরো উসকে দিয়েছিল। পৃথিবীর প্রতিটি বড় বড় শহরে জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য রয়েছে বিকল্প ব্যবস্থা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসানো ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকে। আরও একটি দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, প্রতি বছর ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর গড়ে দু-তিন মিটার নেমে যাচ্ছে। গত ৪০ বছরে পানির স্তর নেমেছে ৫০ মিটার। বর্তমানে জায়গাভেদে ঢাকা শহরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৩৮ থেকে ৮২ মিটার। ফলে অনেক জায়গায় পানির সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে। পানি সরবরাহের জন্য যদি এভাবে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার বাড়তেই থাকে, তাহলে এক সময়ে ঢাকা শহর ধসে যেতে পারে। ফলে মারাত্মক ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা।
শব্দদূষণে বধির হয়ে পড়ছে ঢাকাবাসী
ঢাকায় যেই পরিমাণে শব্দদূষণ হচ্ছে, এতে মানুষের শোনার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে কয়েকগুণ। বধির হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, একটি শহরে শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা ৬০ ডেসিবেল থাকা প্রয়োজন। অথচ ঢাকায় অধিকাংশ স্থানে গড় মাত্রা ১০০ ডেসিবেল। চিকিৎসকরা বলছেন, শব্দদূষণের ফলে শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া, বধিরতা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, কম ঘুম হওয়া, হৃদরোগ, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘ্ন হওয়াসহ নানারকম সমস্যা দেখা যায়। স্বল্পমেয়াদি শব্দদূষণ মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি শব্দদূষণ শ্রবণশক্তি কমিয়ে বিরক্তি, নেতিবাচকতা, রাগ, ক্লান্তি, চাপা উত্তেজনা, মানসিক চাপ, বিষণ্নতা এবং স্মৃতিশক্তি ও নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা হ্রাস করে দেয়।
খেলার মাঠগুলোও দখল করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা
বিগত দেড় যুগে ঢাকা শহরে মাঠ দখল করে নানা স্থাপনা, ক্লাব, মার্কেট এমনকি হাটবাজার পর্যন্ত গড়ে তুলেছিল ছাত্রলীগ-যুবলীগ। কয়েকটি মাঠ থাকলেও সেগুলোয় সাধারণের প্রবেশাধিকার ছিল না। মাঠের অভাবে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের সংকট দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় দখল হওয়া মাঠগুলো পুনরুদ্ধার করার আশ্বাস দিয়েছেন সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। প্রাচ্যের ভেনিস হিসেবে খ্যাত এ মহানগরী বর্তমানে বিশ্বের বসবাস অযোগ্য নগরীর পরিচয় গ্রহণ করেছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ গ্রাস করছে এ নগরীর পার্ক ও খেলার মাঠের মতো নাগরিক সুবিধাদি। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, একটি আধুনিক শহরে প্রতি আধাবর্গকিলোমিটার এলাকার জন্য একটি করে খেলার মাঠ প্রয়োজন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ১২৯টি ওয়ার্ড থাকলেও ড্যাপে উল্লেখ রয়েছে, ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই। ফলে শিশু ও তরুণদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পরছে। পাশাপাশি খেলার মাঠ, পার্ক এবং উন্মুক্তস্থান সংকটে কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকাংশ শিশুকে বাড়িতেই সময় কাটাতে হচ্ছে; আসক্তি বাড়ছে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের। একইসাথে নাগরিকগণ বঞ্চিত হচ্ছে নির্মল বায়ু সেবন, ব্যায়াম ও হাঁটাচলার অধিকার থেকে।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন
নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, তরুণদের নগর উন্নয়নের কাজে সংযুক্ত করতে হবে। জুলাইয়ের আন্দোলনে তরুণদের হাত ধরে দেশের পটভূমি পরিবর্তন হয়েছে। তাই তারা বাসযোগ্য নগরীর কাজে থাকলে দ্রুত পরিবর্তন আসবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা কমিউনিটিভিত্তিক সব সংগঠনকে দুর্বল করে দিয়েছিল। যার কারণে অনেক কাজই করা যেত না। নগরায়ণে যত ধরনের নাগরিক সুবিধার সংকট আছে, তা নিয়ে কাজ করার জন্য তরুণদের সংযুক্ত করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, বসতি দিবসে শুধু নগরায়ণ নয়, গ্রামের প্রতিটি অঞ্চল নিয়ে কাজ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ইতোমধ্যে ঢাকার জীবন অনেকটাই অসহনীয় হয়ে উঠেছে। ঢাকাকে বাসযোগ্য করার জন্য বেক ওয়াস এফেক্ট ঠেকিয়ে দিতে হবে। মফস্বল এলাকায় যতগুলো জেলা আছে, সেসব জেলায় পরিকল্পিত উপায়ে উন্নয়ন উদ্যোগ সৃষ্টিকারী প্রয়াসগুলো ছড়িয়ে দিতে হবে। নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, ঢাকার বেশ কয়েকটি মৌলিক সমস্যার অন্যতম হলো এখানে সর্বজনীন বিষয় অগ্রাধিকার কম পায়। সবুজ আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন এ প্রসঙ্গে বলেন, ঢাকাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদন বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন এবং পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধিতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন করে ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর ও দক্ষিণের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে দুটি করে পুকুর কিংবা জলাশয় খননের পাশাপাশি পুরনো পুকুরগুলোকে সংস্কার করতে হবে। ঢাকার চারপাশের নদীর ব্যবহার বাড়াতে নদীর খনন, নদীর পাড়জুড়ে স্টেশন নির্মাণ করে নৌযান চলাচলের উপযোগী করতে হবে। ঢাকার মধ্যে অবস্থিত সব ধরনের কেমিক্যাল ও গার্মেন্টসের কারখানা স্থানান্তর করে শহরের পাশের জেলায় নিতে হবে।