আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচার শুরু
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০০
দুই দিনে আদালতে তোলা হয় ২১ হেভিওয়েট আসামিকে
রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশের সুযোগ পাচ্ছেন ট্রাইব্যুনাল
স্টাফ রিপোর্টার : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বেশ আলোচনায়ও রয়েছে ট্রাইব্যুনালের সামগ্রিক তৎপরতা। জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় শেখ হাসিনার সংশ্লিষ্টতা এবং তার সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রীদের প্রথমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয় গত ১৮ নভেম্বর সোমবার। জুলাই-আগস্টের ঘটনায় ‘গণহত্যার’ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার জন্য এক মাসের সময় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সাথে একই বিষয়ে আরেক মামলায় শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রীসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। গত ২০ নভেম্বর বুধবার জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক পুলিশপ্রধান ও এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালকসহ ৮ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি ট্রাইব্যুনাল চাইলে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করতে পারবেন।
ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম নিয়ে বেশ আলোচনা ছিল গত ১৮ ও ২০ নভেম্বর। কারণ ১৮ নভেম্বর ১৩ জন এবং ২০ নভেম্বর আরও ৮ জন হেভিওয়েট আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠান। গত ১৮ নভেম্বরই প্রথম বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো মন্ত্রী-উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রীকে এ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলো। প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৭ ডিসেম্বর দিন ঠিক করেছেন ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। এর আগে প্রতিবেদন দাখিলে দুই মাস সময় চেয়ে আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হেভিওয়েট ১৩ আসামি ছিলেন- সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান, সাবেক শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক মন্ত্রী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক মন্ত্রী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম। এদিন সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাককে হাজিরের কথা থাকলেও অন্য একটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য টাঙ্গাইল থানা হেফাজতে থাকায় তাকে হাজির করা হয়নি বলে আদালতকে জানান চিফ প্রসিকিউটর।
ট্রাইব্যুনালে ১৩ হেভিওয়েট আসামিকে হাজির করাকে কেন্দ্র করে ১৮ নভেম্বর সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশেও তল্লাশি ও পাস বাধ্যতামূলক করা হয়। এজলাসে প্রবেশকালে রেখে দেওয়া হয় মোবাইল ফোনসহ সব ইলেকট্র্রনিক্স ডিভাইস।
সাবেক পুলিশপ্রধানসহ কারাগারে আরও আটজন
গত ২০ নভেম্বর জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক পুলিশপ্রধান ও এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালকসহ ৮ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তারা হলেন- সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান, বরখাস্ত ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, গুলশান থানার সাবেক ওসি মো. মাজহারুল হক ও ঢাকা উত্তর ডিবির সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন। আর আগে থেকেই ট্রাইব্যুনালের অধীনে গ্রেফতার ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের সাবেক উপকমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন মোল্লা ও ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম। একইসঙ্গে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৯ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। একইদিন মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বুধবার (২০ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অন্য প্রসিকিউটররা। এর আগে গত ২৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুলিশের সাবেক ১৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই গণহত্যার সুপ্রিম কমান্ডার ছিলেন সাবেক পুলিশপ্রধান আব্দুল্লাহ আল মামুন। তার নেতৃত্বে গণহত্যা চালানো হয়েছে। গত ২০ নভেম্বর সাবেক পুলিশপ্রধানসহ ৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গণহত্যা অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে তিনি এ মন্তব্য করেন। তাজুল ইসলাম বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে তারা যেসব অপরাধ করেছে, সেগুলো শয়তানও করতে ভয় পাবে। সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের অপরাধ বর্ণনা করতে গিয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, বলকান কসাইদের মতো জিয়াউল আহসান হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তার নেতৃত্বে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে হত্যা করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ শুরু হয়।