দ্য হিন্দুকে ড. ইউনূস : বিচারের সম্মুখীন করতে হাসিনাকে দেশে আনার প্রক্রিয়া চালাবে সরকার


২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০০

সোনার বাংলা ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করে দেশে আন্দোলন করার আহ্বান জানাচ্ছেন, যা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের ওপর প্রভাব ফেলছে। ভারত যদি কোনো রাজনৈতিক কারণে তাকে আশ্রয় দেয়, এটি ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বিচারের মুখোমুখি করতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে ফেরত আনার চেষ্টা করবে অন্তর্র্বর্তী সরকার। তিনি বলেন, ‘আমরা সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া ব্যবহার করব তাকে (শেখ হাসিনা) ফিরিয়ে আনার জন্য। তবে আমরা এখনো দ্বিপক্ষীয়ভাবে সরাসরি কোনো অনুরোধ করিনি।’
ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘দ্য হিন্দু’কে সম্প্রতি ঢাকা থেকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। সাক্ষাৎকারটি গত ১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ বা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের প্রশ্নে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এসব বিষয়ে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিতে চায় না। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর ইচ্ছাকে সম্মান করছি। ইতোমধ্যে বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে যে, সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে। সুতরাং দেশের একটি বড় দলের মতামতকে উপেক্ষা করতে পারি না।’
তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে আপত্তি আছে কিনাÑ এমন প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি রাজনীতিবিদ নই। আমি কেবল রাজনীতিবিদদের ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি।’
অন্তর্র্বর্তী সরকারের ১০০ দিনের সাফল্য নিয়ে বলতে গিয়ে ইউনূস বলেন, “অর্থনীতিতে আমরা ‘এ-প্লাস’ গ্রেড পেয়েছি। আমাদের পাওনা পরিশোধের সক্ষমতা বেড়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে আমরা এখনো ‘এ’ গ্রেড পাইনি, তবে উন্নতি হচ্ছে।”
‘আমরা যখন সরকারের দায়িত্ব নেই তখন অর্থনীতি ছিল ভঙ্গুর। ব্যাংক ব্যবস্থায় বিপর্যয় ছিল, যেখানে ৬০ শতাংশ ঋণ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এখন আমরা তা পুনরুদ্ধারের পথে এগুচ্ছি।’
অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই ভারত সরকার বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের দাবি করে আসছে। ভারতীয় গণমাধ্যমটির নামও দ্য হিন্দু হওয়ায় স্বভাবতই দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিয়ে তাদের উৎকণ্ঠার বিষয়ে প্রশ্ন আসবেই।
গণমাধ্যমটি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচারণা। প্রথম ফোনালাপে আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে বলেছি যে, এটি বাস্তবতা নয়। এটি অপপ্রচার। আমরা সবাই নাগরিক এবং আমাদের সংবিধান আমাদের পূর্ণ অধিকার দিয়েছে।’
‘আমাদের সরকার মানবাধিকার রক্ষা এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনামূলক মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, ‘যখন তিনি বাস্তব পরিস্থিতি দেখবেন তখন অবাক হবেন। আমাদের অর্থনীতি ভালো হলে সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।’
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক বন্ধন রয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের একত্রে এগিয়ে যেতে হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করে দেশে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘তিনি বাংলাদেশে আন্দোলন করার আহ্বান জানাচ্ছেন, যা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের ওপর প্রভাব ফেলছে।’
তিনি সতর্ক করেন, ‘ভারত যদি কোনো রাজনৈতিক কারণে তাকে আশ্রয় দেয়, এটি ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা শুধু একটি অন্তর্র্বর্তী সরকার নই; আমাদের কাজ হলো বাংলাদেশকে সংস্কার করা। নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি করা হয়েছে এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ হওয়ার পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
‘আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন হোক। তবে সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের জন্য সময় প্রয়োজন।’