স্মৃতিতে অম্লান শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০০
॥ আলী আহমাদ মাবরুর ॥
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ আমার সম্মানিত পিতা। ২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর দিবাগত (২২ নভেম্বর) রাতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। সে হিসাবে তার শাহাদাতের ৯ বছর চলে গেল। ৯ বছর সময় হিসেবে কম নয়। এ সময়ে অনেক কিছুই পাল্টে যায়। অনেক স্মৃতি ঝাপসা হয়ে যায়। জাগতিক নানা ব্যস্ততায়, আনুকূল্যে কিংবা প্রতিকূলতায় মানুষের অগ্রাধিকার পরিবর্তিত হয়। আপনজনকে হারিয়ে মানুষ আবার বাস্তবের নানা ঘটনায় একাত্ম হয়ে যায়। পরিস্থিতির সাথে নিজকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার একটি বিস্ময়কর ক্ষমতা দিয়ে মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। কারো জন্যেই এ ব্যস্ত পৃথিবী একটি মুহূর্তের জন্যর থেমে থাকে না। কিন্তু আমার শহীদ পিতার সাথে আমার সম্পর্কটা বরাবরই ব্যতিক্রম। তিনি সবসময়ই আমার সাথে থাকেন। আমার স্মৃতিতে, আমার চিন্তায় বা প্রেরণায় আমি তার অস্তিত্ব বয়ে বেড়াই। এমন কোনোদিন নেই, যেদিন তার কথা আমার মনে পড়ে না। যেকোনো কিছু লেখার সময়, কোনো কিছু নিয়ে ভাবনা করার সময় কিংবা রাজনৈতিক কোনো পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার ক্ষেত্রে আমি তার কথা স্মরণ করি।
এককথায় যদি বলি, আমি আমার বাবাকে বরাবরই সংগঠন অন্তপ্রাণ মানুষ হিসেবে দেখেছি। সংগঠনের নিয়মশৃঙ্খলা, সাংগঠনিক কাঠামো, মৌলিক নীতিমালা, গঠনতন্ত্র বা সংগঠনের অভ্যন্তরীণ সংহতি রক্ষাই ছিল তার জীবনের অগ্রাধিকার। তার এ বৈশিষ্ট্যের কারণে তিনি যেমন দায়িত্বশীল সংগঠক হিসেবে সংগঠনকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন আবার সংগঠনের স্বার্থকে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণে কেউ কেউ তাকে একটু ভিন্নভাবেও মূল্যায়ন করেছেন। আমার বাবা ঢাকা মহানগরীর আমীর ছিলেন অনেকদিন। রাজধানীতে সংগঠন করছেন এরকম যারাই এখন মাঝ বয়স থেকে বার্ধক্যে পৌঁছে গেছেন, তাদের অনেকের শপথ হয়েছে আমার বাবার হাতেই। আবার কেন্দ্রে আসার পর দেখেছি আমার বাবা মাসের বড় একটি সময় ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নে সফর করেছেন। বর্তমানে তৃণমূল পর্যন্ত জামায়াতের সাংগঠনিক কাঠামোর যে বিস্তৃতি, যেভাবে কেন্দ্র থেকে একটি কর্মসূচি ঘোষণা করা মাত্রই দেশজুড়ে পালিত হয়Ñ এর নেপথ্যেও আমার বাবাসহ তার অন্য সহকর্মীদের ভূমিকা স্মরণীয়।
আব্বার সাথে আমি সফরসঙ্গী হিসেবে অনেক জেলায় সফর করেছি। সম্ভবত এ কারণেই বাংলাদেশের অনেক জেলার দায়িত্বশীলগণ আমাকে চেনেন আবার আমি নিজেও তাদের চিনতে পারি। তৃণমূলের এ মানুষগুলোর প্রতি আমি সে কারণেই এক ধরনের মানসিক ও আত্মিক টানও অনুভব করি। আব্বার জীবনযাপনে যে বৈশিষ্ট্যটুকু কমবেশি সবাই স্বীকার করবেন, তা হলো তার সাদামাটা জীবন। তিনি পোশাক-পরিচ্ছদে, চলাফেরায় খুব সরল ছিলেন। খাবার হিসেবে রিচ ফুড তার মোটেও পছন্দ ছিল না। সাধারণ শাকসবজি, ছোট মাছ, ভর্তা বা ভাজি ছিল তার পছন্দের আইটেম। যেসব জেলায় তিনি সফরে গেছেন কিংবা যারা তার মেহমানদারি করেছেন, সবাই তার এ পছন্দ সম্পর্কে অবগত ছিলেন। আমাদের পারিবারিক খাদ্যাভাসেও এর প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। আব্বা কোথাও গেলে নিজেই বাজার করতেন। সফর করে আব্বার বাসায় ফেরা মানেই বাসার জন্য বাজার সদাই নিয়ে আসা। আব্বা হাইওয়ের পাশে বসা ছোট-খাটো বাজার বা হাট থেকে বাজার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। এ বৈশিষ্ট্য আমাদের পরিবারের সবাই উত্তরাধিকার সূত্রে কমবেশি পেয়েছে।
আর্থিকভাবে আব্বা অত্যন্ত স্বচ্ছ ছিলেন। তার উপার্জনের আলাদা কোনো খাত ছিল না। কোনো ব্যবসা বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথেও তার কোনো সম্পৃক্ততাও ছিল না। তার সীমিত আয় নিয়ে তিনি খুব সন্তুষ্ট ছিলেন। আমরা ছোটবেলা থেকেই প্রাচুর্যের দেখা পাইনি। এটি নিয়ে যে আক্ষেপ করবো- তেমন মানসিকতাও তিনি আমাদের মাঝে গড়ে তোলারও চেষ্টা করেননি। কম খেয়ে, অল্পের মাঝেই তিনি খুশি থাকার তাগিদ দিয়েছেন। বৈষয়িক বিষয়ে তিনি খুব উদাসীন ছিলেন। আমার মনে পড়ে, আমরা যখন ফাঁসি কার্যকরের আগে তার সাথে দেখা করতে গেলাম, তিনি তখন পরিবারের উদ্দেশে নসিহা দিয়েছিলেন। উক্ত নসিহার একটি উল্লেখযোগ্য অংশই ছিল হালাল উপার্জন। তিনি আমাদের হালাল আয় রোজগারে সচেষ্ট থাকার পরামর্শ দিয়ে গেছেন। অভাব নিয়ে হা-হুতাশ করতে না করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী ছিলাম। ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছি। আল্লাহর রহমতে আমার পেটে একটি টাকাও হারাম যায়নি।” আব্বার ঐ বলিষ্ঠ উচ্চারণ আজও আমার কানে বাজে। আমি চেষ্টা করি, যাতে তার এ নির্দেশনাগুলো মেনে চলা যায়। আমরা সুদিনে বা দুর্দিনে যেভাবে টিকে আছি, লো প্রোফাইলে থাকার চেষ্টা করছি, আলহামদুলিল্লাহ। তার নেপথ্যেও আমার বাবার নির্দেশনা ও প্রভাবই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে।
আব্বার কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ ছিল না। তিনি কখনো অন্যের আগে নিজের জন্য কিছু নিশ্চিত করতে চাননি। আমার মনে পড়ে, চারদলীয় জোট গঠন হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনের কথা। এ নির্বাচনেই চারদলীয় জোট দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয়ে ২০০১ সালে সরকার গঠন করেছিল। আমার বাবাকে আমি ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে একবার, ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এবং পরবর্তী ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের আমলে তৃতীয়বার জোটবদ্ধ নির্বাচনে খুব কাছ থেকে ভূমিকা পালন করতে দেখেছি। এর মধ্যে আব্বা ২০০১ সালের নির্বাচনে নিজে অংশই নেননি। তিনি পুরোটা নির্বাচনী সময় বেগম জিয়ার সাথে সারা দেশ সফর করেছেন, জামায়াতের আসনগুলোতে তাকে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং নিজেও আলাদা করে প্রতিটি আসন সফর করেছেন। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এ নির্বাচনেও তিনি জোটের স্বার্থে নিজ জেলা ফরিদপুর থেকে সরে গিয়ে পার্শ্ববর্তী মাদারীপুর জেলার শিবচর আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। যদিও ঐ আসনটি তার জন্য মোটেও অনুকূল ছিল না। তারপরও জোট রক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে তিনি এ কুরবানি করেছিলেন। জামায়াতের পক্ষ থেকে তাকে ফরিদপুরের বিকল্প হিসেবে অন্য কোনো অনুকূল আসন দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। তিনি তাতেও রাজি হননি।
আরেকটি দৃশ্য আমার মনে পড়ে। জোটের আসনগুলো ভাগাভাগির সময় তিনি খুব পেরেশান থাকতেন। তিনি সে সময়গুলো একরকম বিনিদ্র রজনী পার করতেন। আসন বণ্টন হওয়ার প্রক্রিয়ায় সবার আগে জামায়াতের প্রত্যাশিত আসনগুলো তিনি নিশ্চিত করার চেষ্টা করতেন। জামায়াতের অন্য দায়িত্বশীলদের আসনগুলোও নিশ্চিত করতেন। আমি তার সাথে গাড়িতে সফর করার সময় দেখেছি, দলের প্রত্যাশিত কোনো একটি আসন হয়তো তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। তাই তিনি বিষণ্ন হয়েছিলেন। কারণ তিনি নিজেকে ব্যর্থ ভাবছিলেন। আবার এমন হয়েছে যে, জামায়াতের প্রভাব আছে এমন কোনো আসনে জামায়াতের প্রার্থীকে হয়তো সিট দেওয়া সম্ভব হয়নি। এতে তিনি ক্ষুব্ধও হয়েছিলেন। আব্বা আবার তাকে ফোন দিয়ে বুঝিয়েছেন। কড়া কথাও বলেছেন। কিন্তু কথা শেষ হওয়ার পর লাইন কেটে দিয়ে তিনি নিজেও কেঁদেছেন। আব্বাকে যারা খুব বলিষ্ঠ ও কঠোর মানসিকতার মানুষ জানেন, তারা হয়তো এ তথ্য বিশ্বাস করতে চাইবেন না। কিন্তু আমি নিজে এরকম দৃশ্য একাধিকবার দেখেছি। আব্বার এ বিচিত্র দৃষ্টান্তগুলো আমার প্রায়ই মনে পড়ে।
আমি বর্তমানে লেখক ও অনুবাদক হিসেবে কাজ করছি। আলহামদুলিল্লাহ, আমার ৫০টি বই প্রকাশিত হয়েছে। আমার সবচেয়ে বড় দুঃখ বা আফসোস হলো, আব্বা আমার কোনো বই দেখে যেতে পারেননি। কোনো একটি বই আমি তার হাতে তুলে দেওয়ার সুযোগ পাইনি। কিন্তু আমি নিশ্চিতভাবে জানি, আমার এ কাজগুলো, এ বইগুলো দেখলে তিনি সন্দেহাতীতভাবে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। কেননা আমার লেখালেখির জগতে আসার পেছনে তার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণাই ছিল সবচেয়ে বেশি। তিনিই প্রথম আমার ভেতর এ সক্ষমতাটুকু আবিষ্কার করেছিলেন। সাংবাদিকতায় আসার জন্য উৎসাহ দিয়েছিলেন। তার পরামর্শেই আমি দৈনিক সংগ্রামে সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেছিলাম। আমি লেখালেখি করি কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনে অবদান রাখি, এমনটাই চাওয়া ছিল তার। তাই প্রতিটি বই রচনার পর কিংবা বই প্রকাশের পর যখন নতুন বইটি হাতে পাই, তখন আমার ভেতর আনন্দের সাথে সাথে এক ধরনের কষ্টকর অনুভূতিও কাজ করে। আব্বাকে বইটি না দিতে পারার কষ্ট। এ কষ্ট হয়তো আমাকে সবসময়ই বয়ে বেড়াতে হবে।
আব্বাকে নিয়ে আরো একটি কষ্ট রয়ে গেছে আমার। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দুটি সন্তান দিয়েছেন। এর মধ্যে বড় সন্তানকে আব্বা কোলে নিতে পেরেছেন। আব্বার শাহাদাতের সময় ওর বয়স ছিল ৩ মাসের কিছু বেশি। এ বাচ্চার বয়স যখন ৫-৬ দিন, তখন একবার কোর্টে নিয়ে আব্বাকে দেখিয়ে এনেছিলাম। এর ৩ মাস পর আব্বা ওকে দ্বিতীয়বার কোলে নেন ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগ মুহূর্তে। আমার বাবা অসম্ভব রকম পরিবারকেন্দ্রিক মানুষ ছিলেন। পরিবারকে নিয়ে তিনি চলাফেরা করতে পছন্দ করতেন। মন্ত্রী থাকা অবস্থায় যখন তিনি কোনো জেলায় সফরে যেতেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে যেতেন। আবার সাংগঠনিক সফরের সময়ও তিনি পরিবারের কাউকে সাথে রাখতে চাইতেন। আমরা গেলে হয়তো নতুন সেই স্থানে ঘুরে বেড়াতাম আর তিনি তার মতো করে সাংগঠনিক প্রোগ্রামাদি করতেন। রাতের বেলায় দেখা হতো আমাদের। তারপরও তিনি চাইতেন পরিবারের সদস্যরা তার সাথে থাকুক। এরকম একজন পরিবারকেন্দ্রিক মানুষ পরিবারের সবার সান্নিধ্যের বাইরে জীবনের শেষ ৬টি বছর কাটিয়েছেন, এ দুঃখ আমাকে সব সময় পীড়িত করে।
বিশেষ করে আব্বার নাতিদের জন্য খারাপ লাগে। আব্বা দাদা হিসেবে সেরা একজন মানুষ হতেন। জেল জীবনে যে দুজন নাতিকে তিনি পেয়েছিলেন, তাদের তিনি ভীষণই আদর করতেন। কারাগারের সাক্ষাতে নাতিরা কেউ গেলে তার আনন্দের যেন কোনো সীমা থাকতো না। আর নাতিরাও দাদা বলতে অজ্ঞান ছিল। অথচ আমার ছেলেরা কেউই তাদের দাদার সান্নিধ্য পেল না। দাদার চরিত্রটি তাদের কাছে শুরু থেকেই অনুপস্থিত। আমি আমার বড় ছেলেকে শিখিয়েছি যে, তার দাদা একজন শহীদ। এ শহীদ দাদাকে নিয়েই তার যত কল্পনা। আমার সন্তানদের দাদাকে কাছে না পাওয়ার কষ্টও আমাকে বড্ড বেশি কষ্ট দেয়। আমি রাস্তায় বা পার্কে কিংবা কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যখন কোনো দাদা বা নানাকে তার নাতি-নাতনিদের কোলে নিতে দেখি, আদর করতে দেখি, তখনো আমার খারাপ লাগে। আমার কেবলই মনে হয়, আমার বাবারও এরকম কিছু সুন্দর সময় পাওয়ার অধিকার ছিল। কিন্তু তিনি এ সুযোগটাই পেলেন না।
শত কষ্টের মাঝেও আমরা আল্লাহর ফয়সালাকে মেনে নিয়েছি। আমরা আমাদের অভিভাবককে হারিয়েছি। এ অপ্রাপ্তি তো আছেই, কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক বেশি বঞ্চিত হয়েছি। আমি আব্বার ডান হাতের মতো ছিলাম। আমার কৈশোরকাল থেকে আব্বার ফাঁসির রাত পর্যন্ত যতগুলো বছর, এর অধিকাংশই আমি তার সাথে চুম্বকের মতো লেগেছিলাম। তার একাকিত্বের সময়ে, ব্যস্ততার সময়ে, তার পেরেশোনির সময়ে, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন সময়ে, আটক পরবর্তী সময়ে, অসংখ্য মামলায় তার প্রস্তুতিকালীন সময়ে, আদালতের সাক্ষী হিসেবে কিংবা আইনজীবীদের সাথে আলোচনায় কিংবা আদালতে বা হাজিরার সময়কালীন সাক্ষাতে আমি নিয়মিত থাকতে পেরেছি। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, আলহামদুলিল্লাহ।
শুধুমাত্র ইসলামী আন্দোলনের সম্পৃক্ততা এবং জামায়াতের শীর্ষ একজন নেতা হওয়ার কারণেই তিনি অপশক্তির টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন। ছাত্র-জনতার বিপ্লব আর অসংখ্য নিরীহ ছাত্রসহ নানা পেশার কুরবানির বিনিময়ে সেই অপশক্তি আজ বিদায় নিয়েছে। দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হওয়া এ দেশে অনেক মানুষের উচ্ছ্বাস দেখি। মুক্ত মনে ও মুক্ত পরিবেশে মানুষ কাজ করছে, কথা বলতে পারছে আলহামদুলিল্লাহ। এর মাঝেও মনের কোণে কোথায় যেন একটি বিষাদের সুর বাজে। মনের গভীরে হাহাকারও শুনতে পাই। আমার বাবা কিংবা নিহত ছাত্র-জনতা কেউই হয়তো আর কখনো ফিরে আসবে না, কিন্তু তারা কি তাদের প্রাপ্য মর্যাদাটুকু কিংবা সর্বোচ্চ কুরবানির স্বীকৃতিটুকু পাবেন? ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, যাদের বিগত সাড়ে ১৫ বছরের অপশাসন চলাকালে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, সাজানো ট্রাইব্যুনাল, দলীয় মনোভাবাপন্ন বিচারপতি ও প্রসিকিউশন বা দলীয় সাক্ষীর যোগসাজশে আমার বাবাসহ তার যেসব সহকর্মীকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাদের যেন বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হয়। এতে করে আমরা আমাদের অভিভাবককে ফিরে না পেলেও অন্তত মানসিকভাবে স্বস্তি পাবো। আল্লাহ তায়ালা আমার শ্রদ্ধেয় পিতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। দুনিয়ার জীবনে যেভাবে তিনি কষ্ট পেয়েছেন, যেভাবে বঞ্চিত হয়েছেন- আল্লাহ পাক যেন পরকালীন জীবনে সেগুলোর পরিপূর্ণ জাজা দান করেন। আমিন।