সম্পাদকীয় : আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র কঠোর হাতে দমন করতে হবে
১৪ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০০
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দীর্ঘ দেড় দশক বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসন চালিয়েছে। তাদের দুঃশাসনে বাংলদেশ একটি ব্যধভূমিতে পরিণত হয়েছিল। অবশেষে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ডামি সরকারের প্রধানমন্ত্রী দলবল নিয়ে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে। দলের নেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তার দোসররা অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। অনেকে চলে গেছেন আত্মগোপনে। লুটপাটের টাকায় যারা বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে সেসব দেশে বাড়ি-গাড়ি, ব্যবসা বাণিজ্য পেতেছে, তারা পালিয়ে সেসব দেশে গেছে। সেখানে বসেই তারা লুটপাটের টাকার গরমে দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা ক্ষমতা ধরে রাখতে দেড় দশকে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে জনগণের সম্পদ লুট করেছে, তাদের ওপর চালিয়েছে নির্যাতনের স্টিমরোলার। কিন্তু এ নিয়ে কোনো অনুশোচনা ও অনুতাপ তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। বরং প্রতিনিয়ত দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। দেশে ফিরে ক্ষমতা দখল করতে পারলে আবারও হত্যাযজ্ঞ চালানোর হুমকি দিচ্ছে। জনমনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। তারা তাদের আচরণের কারণেই পতনের পর নিজেরাই নিজেদের উত্থানের পথ রুদ্ধ করছে বলে মনে করেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
রাজনীতিতে উত্থান-পতন কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। এজন্যই হয়তো এ কথা প্রচলিত আছে, ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। অবশ্য এ কথা তখনই প্রযোজ্য যখন কোনো রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক ধারায় রাজনীতি করে এবং কোনো দুর্বলতা অথবা অন্য কোনো অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে তাদের পতন ঘটে। কিন্তু যখন কোনো রাজনৈতিক দল গণতন্ত্র ও নির্বাচনব্যবস্থাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে ফ্যাসিবাদী আচরণের কারণে জনরোষে পড়ে দেশত্যাগে বাধ্য হয়, তাদের সেই পতন নিশ্চয়ই স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। এমন পতনের পর কোনো দলের ঘুরে দাঁড়ানো শুধু কঠিনই নয়, অসম্ভব। কারণ ফ্যাসিবাদকে প্রশ্রয় দেয়ার অর্থ স্বাভাবিক রাজনৈতিক ধারা ধ্বংস করা এবং দেশ ও জনগণের সর্বনাশ ডেকে আনা। পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ ও আমেরিকার মতো উদার গণতান্ত্রিক দেশেও ফ্যাসিবাদী কোনো রাজনৈতিক দলকে পুনর্বাসনের সুযোগ দেয়া হয় না। বরং তাদের কঠোর হাতে দমন করা হয়। পতিত ফ্যাসিবাদী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আচরণের কারণেই সাধারণ নাগরিক, ছাত্র ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে সে দাবিই উঠছে। আওয়ামী লীগের পতনে ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রসঙ্গে সাংবাদিক কাদির কল্লোল একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিক মতামতের কলামে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের প্রতি মানুষের আস্থার সংকটের বড় কারণ তাদের দমননীতির কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘দেশ শাসনের সময়টাতে আওয়ামী লীগের দমন-পীড়নে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও ভিন্নমতে দাঁড়াতে পারেনি। নির্বাচন ও নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিল। তাদের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ দেশ চালাত। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোও সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল; ভিড় জমেছিল সুবিধাবাদীদের।… ছাত্র আন্দোলন সামলাতে শুরু থেকে একের পর এক সরকার যা করেছে, যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তার সবই ছিল ভুল। আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে এখন তা মনে করেন। দলটি কতটা হালে পানি পাবে বা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, সে ব্যাপারেও নিশ্চিত নন দলের অনেক নেতা। এছাড়া দলটি প্রাণহানি বা হতাহতের ঘটনার দায়ভার নিতে রাজি নয়। আওয়ামী লীগ এখনো ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার কথা বলছে। কিন্তু তাদের এ কৌশলে যে মানুষের মধ্যে আস্থা ফেরানো যাবে না, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।’ এ কথা বিশ্লেষকরা মনে করলেও আওয়ামী লীগের মূল নেতৃত্ব মনে করে না। তাই তারা ষড়যন্ত্রতত্ত্ব থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না। স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, হত্যা, সন্ত্রাস ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগের ডিএনের সাথে মিশে আছে। তারা ১/১১ সরকারকেও বলেছিল তাদের আন্দোলনের ফসল এবং বিএনপি সরকারের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখলের পর শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘আই অ্যাম নট আন হ্যাপি।’ নিজেদের ক্ষমতা দখলের পথ তৈরি করতে তারা স্বৈরশাসকেও স্বাগত জানাতে দ্বিধা করে না। অন্যদিকে মিথ্যাচার প্রোপাগান্ডায় তারা অতুলনীয় এ কথা বার বার প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের পর বলতে গেলে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া তেমন কোনো বড় অঘটন ঘটেনি। অথচ তারা জোরগলায় প্রচার করছে, ‘ড. ইউনূস সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়েছে তাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী।’
আওয়ামী লীগের যেসব নেতা লুটপাট ও হত্যার অভিযোগে বিচার এড়াতে দেশত্যাগ করেছে, তারাও সরকারের উদারতার সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার প্রার্থনার মতো সাহস দেখাচ্ছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির মতো কঠিন অপরাধ করে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা মনে করি, অবিলম্বে ফ্যাসিবাদের রানি ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা এবং ইন্টারপোলের মাধ্যমে আটক করে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করা সময়ের দাবি। এ দাবি পূরণে সরকার যত বিলম্ব করবে, তারা তত বেশি ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তৃত করার সুযোগ পাবে। আমরা আশা করি সরকার এ সত্য উপলব্ধি করবে। ফ্যাসিবাদ যেন আর ফিরে না আসতে পারে, ত্বরিত সেই পদক্ষেপ নেবে।