সাতক্ষীরায় প্রাণসায়েরের প্রাণ ফেরাতে কাজ করছেন জামায়াত-শিবিরের স্বেচ্ছাসেবীরা
৮ নভেম্বর ২০২৪ ১১:২৩
আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরা : প্রাণ ফেরানোর চেষ্টা চলছে সাতক্ষীরার প্রাণসায়েরের খালে। গত দুদিন ধরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের নেতৃত্বে কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবী খালের দখলমুক্ত ও পরিষ্কার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। গত কয়েক মাস ধরে শহরে প্রাণকেন্দ্র দিয়ে প্রবাহিত ১৭৪ বছরের পুরোনো প্রাণসায়ের এ খালটির পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। এমনকি শহরে বসবাস দুষ্কর হয়ে উঠেছে। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে পৌরবাসী। একটু বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিনা খরচে সাতক্ষীরাবাসীকে সাথে নিয়ে সেই খাল সংস্কার ও দূর্ষণমুক্ত করার উদ্যোগে গ্রহণ করা হয়। তারই অংশ হিসেবে গত ২ নভেম্বর শনিবার সুলতানপুর বড় বাজার এলাকা থেকে খালের দখলমুক্ত ও পরিষ্কার করে গাছ লাগানো শুরু হয়েছে।
২০২০ সালে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে খালটি খনন করেছিল পাউবো। কিন্তু ৪ বছর যেতে না যেতে ভাগাড়ে পরিণত হয় সেটি। ১৮৫০ সালে সাতক্ষীরার তৎকালীন জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী নদীপথে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা এবং শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য প্রাণসায়ের খাল খনন করান। খালটির দৈর্ঘ্য ১৪ কিলোমিটার। দক্ষিণে মরিচ্চাপ ও উত্তরে বেতনা নদীর সঙ্গে খালটি মিশেছে। তবে খালের মুখ দুটি ভরাট থাকায় প্রবাহহীন হয়ে পড়েছে। সূত্রটি আরো জানায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার এল্লারচর মরিচ্চাপ নদীর সংযোগ থেকে প্রাণসায়ের খাল খনন শুরু করে একই উপজেলার বিনেরপোতা (খেজুরডাঙ্গা) নৌখাল পর্যন্ত এসে শেষ করার কথা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খালের প্রায় তিন কিলোমিটার খনন বাকি রেখে ২০২১ সালে কাজ বন্ধ করে দেয়, যা এখনো বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী সময়ে বাকি অংশ খাল খনন হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রাণসায়ের খালের সৌন্দর্য বর্ধনকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে খালটি দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করার লক্ষ্যে খালের দুইপাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার (১ নভেম্বর) এ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ।
জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, খুলনা বিভাগের একমাত্র খাল হিসেবে প্রাণসায়ের খালকে বেছে নেওয়া হয়েছে। খালের দুই মুখ মরিচ্চাপ ও বেতনা নদীতে মিলিয়ে দিয়ে খালের প্রবাহ সচল করা হবে। পাশাপাশি অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে দৃষ্টিনন্দন করা হবে প্রাণসায়ের খাল। খরচের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, সরকারি বরাদ্দ ছাড়াই যে সৃজনশীল কাজ করা যায়, সেটি প্রমাণের সময় এসেছে। বুলডোজার দিয়েছে সওজ কর্তৃপক্ষ। আর জনবল দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা। সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আপাতত খাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে দৃষ্টিনন্দনের জন্য বড় বরাদ্দের প্রয়োজন হলে ঊর্ধ্বতন মহলের সহায়তা চাওয়া হবে। গত ২ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় খালটির দুইধারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক। এ সময় সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান, শহর আমীর খোরশেদ আলম, শিবির সভাপতি আল মামুন, স্থানীয় সরকার বিভাগ সাতক্ষীরার উপপরিচালক মাসরুবা ফেরদৌস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ, সাতক্ষীরা পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি, ছাত্র প্রতিনিধি ও প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
এ সময় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, অবৈধ মালিক সে ছোট হোক বড় হোক, সবই অবৈধ। যে অবৈধ তাকে আমরা চিহ্নিত করব। সেভাবেই অপসারণ করব। খাল কোনো ব্যক্তির নয়, সাতক্ষীরার প্রাণসায়ের খাল প্রাণবন্ত করতে চাই। তিনি বলেন, এখানে আমরা দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। রাস্তা করে দেওয়ার। দুই ধারে গাছ লাগানো হবে। এখানে কিছু বেঞ্চ তৈরি করে দেব সেখানে বসবে মানুষ। এভাবেই আমরা দৃষ্টিনন্দন করব। তিনি আরো বলেন, শহরের মানুষের কোনো বিনোদনের জায়গা নেই। হাঁটার জায়গা নেই। খালের দুই পাড়ে রাস্তা করে দৃষ্টিনন্দন করে দিলে সব শ্রেণির মানুষ সেখানে হাঁটতে পারবে। আমরা আশা করি, সাতক্ষীরার মানুষ; বিশেষ করে শহরের মানুষ তারা আমাকে সহযোগিতা করবে।
সাতক্ষীরা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান জানান, শহরের প্রাণসায়েরের খালটির দূষণমুক্ত করতে জামায়াত-শিবিরের কয়েকশ কর্মী পরিচ্ছন্নের কাজ করছেন। আমাদের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষ ও সহযোগিতা করছেন।