আলোকে তিমিরে : গণবিপ্লব এবং…


৮ নভেম্বর ২০২৪ ১১:০৭

॥ মাহবুবুল হক ॥
গত সংখ্যায় ‘বিপ্লব ২০২৪’ লেখায় বন্ধুদের মধ্যে কয়েকজন প্রশ্ন করেছেন, আসলে এই যে বিশাল একটা পরিবর্তন সংঘটিত হলো, এর নামকরণ বা শিরোনাম কী হবে? তাদের আরও বয়ান হলো, আদিকাল থেকে প্রায় আমাদের দেশে সামুদ্রিক ঝড়-তুফান হয়। গত প্রায় ৭০ বছর থেকে দেখা যাচ্ছে একেক তুফান বা ঘূর্ণিঝড়ের একেক ধরনের নাম। মোটাদাগে কেউ আর এখন ঝড়-তুফান বলছেন না। এমনো দেখা গেছে, ঝড়ের তাণ্ডব শুরু হওয়ার সময় ছিল এক নাম। পরবর্তীতে ঝড় বা তুফানের গতি-প্রকৃতি ও রোষানল অবলোকন করে এর নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। আমাদের আন্দোলনের ওই ঝড়টা প্রথমে শুরু হয়েছিল কোটার নামে, পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে, আরও পরে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার নামে। পরবর্তীতে এক দফা দাবির নামে। এ স্তরে পৌঁছেই বিপুল ত্যাগ, কুরবানি ও শাহাদাতের রক্তরাঙা পিচ্ছিল পথে আল্লাহর রহমতে আন্দোলনের ঝড়-তুফান ষোলোকলায় পূর্ণ হয়ে সাফল্য লাভ করলো। মুহূর্তেই এ তুফানের নাম রাখা হলো ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’। কিন্তু আন্দোলনকারীদের মধ্যে কেউ কেউ বললেন, ‘না’ ঠিক হলো না। এর সঠিক নাম হবে ‘তৃতীয় স্বাধীনতা’। এর মধ্যে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বয়স্কজনদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বললেন, ‘না’ এর যথাযথ নাম হবে শুধু ‘স্বাধীনতা’। অর্থাৎ তারা বলতে চেয়েছেন ১৯৭১-এ আমরা স্বাধীন হইনি। সত্যিকারের স্বাধীনতা পেলাম এবার ২০২৪-এর ৫ আগস্ট বা ৩৬ জুলাইয়ে। একাত্তরে আমরা পাকিস্তানের অধীনতা থেকে বের হয়ে ভারতীয় অধীনতার খপ্পরে আবদ্ধ হয়েছিলাম। একটু পরিষ্কার করে বললে বাংলাদেশের নামে ৫৩ বছর মোট ৭৭ বছর আমরা পরাধীন ছিলাম। এ আলোচনার ডামাডোলে বেশ কয়েকদিন ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’র কথাই উচ্চকিত হতে থাকলো। বিশেষ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সভা ও মিছিলে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’র কথাই উজ্জ্বল ও সমুজ্জ্বল করে চলতে লাগলো। এর ফাঁকে ফাঁকে ‘বিপ্লব’ শব্দটিও উঁকি-ঝুঁকি দেওয়া শুরু করলো। বিশেষ করে ডানপন্থী, মধ্যপন্থী, ইসলামপন্থী, রাজনৈতিক, সামাজিক দল ও গোষ্ঠী এবং বড়-মাঝারি কয়েকজন সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তক।
বলাইবাহুল্য শুরু থেকেই আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার সাথে একদিকে যেমন ছোট বড় রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলোর সম্পৃক্ততা ছিল, ঠিক তেমনি কিছু বুদ্ধিজীবী ও রাষ্ট্রচিন্তকেরও সংযোগ ছিল। কিন্তু বিপ্লবকে এগিয়ে নেওয়া যায়নি। গেলে দেশ, জাতি ও আগামী বিশ্বের জন্য ভালো শুধু নয় উত্তম হতো। বিপ্লবের মাধ্যমে বিপুল সংস্কারের একটা সুযোগ ছিল। সেই সুযোগ এদেশবাসী শুরুতেই হারালো। গত সংখ্যায় আমি এ বিষয়ে বলার চেষ্টা করেছি। ড. ইউনূস সাহেবের ফ্রান্স থেকে দুদিন পরে আসার মর্তবা এখানেই। বিপ্লব আসলে ওই দুদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে।
কারণ বিপ্লবী মুজাহিদরা একটা শতচ্ছিন্ন কাঁথার মতো সংবিধান গায়ে জড়িয়ে ফ্যাসিবাদের রক্ষাকবচ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর হাতে শপথ গ্রহণ করলেন। অর্থাৎ আমরা সনাতন আইন বিধান সর্বান্তকরণে মেনে নিতে বাধ্য হলাম। চুপ্পু সাহেব চুপি চুপি দুটি মহাশান্তির ব্যবস্থা করলেন।
এক. জঙ্গি ও ফ্যাসিবাদী শক্তিকে আশ্রয় ও লালন-পালন করার যাবতীয় ব্যবস্থা সম্পন্ন করলেন। বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে উপলব্ধিতে এলেও দেশীয় তথাবিজ্ঞ মহলে অনুভূত হতে একটু সময় লেগেছিল। আপাতত দেশ শান্তিপূর্ণ হয়েছে সেটাই ছিল মনে হয় সবার লক্ষ্য। এর মধ্যে রাজনীতি বা প্রকৃত অর্থে জিও পলিটিক্স এবং দূরবর্তী স্বপ্নের রেশ ছিল না। আমরা সবাই জানি আপাত অস্থিরতাকে কবুল করে দূরবর্তী স্থিরতাকে আমরা কল্পনা করতে পারি না। অর্থাৎ আমরা আপাত লাভের অংকগুলো ভবিষ্যতের খাতা শূন্য থাকÑ এ প্রক্রিয়াতেই বহু আকাক্সিক্ষত বিপ্লব অপসৃত হয়ে গেল। যথাযথ পরম্পরায় ‘গণবিপ্লবে’র স্থলে ‘গণঅভ্যুত্থান’ শব্দটি এসে গেল। এ শব্দটি এখন সরকারি-বেসরকারি এবং আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত হয়ে এগিয়ে যাওয়ার ডধু ড়ঁঃ তৈরি করে নিয়েছে এবং এভাবে না সেভাবে ‘সুজাকে বোঝানোর মতো’ সুড়সুড় করে এগিয়ে যাচ্ছে।
আমরা সবাই জানি বিপ্লব আর অভ্যুত্থান এক জিনিস নয়। অভিধানে লিখে দিলেও কখনো তা এক হবে না। রুশ বিপ্লবকে কেউ রুশ অভ্যুত্থান বলেনি। ফ্রান্স বিপ্লবকে কেউ ফ্রান্স অভ্যুত্থান বলেনি। ইংরেজিতে জবাড়ষঁঃরড়হ-এর বাংলা অর্থ ‘বিপ্লব’ আর টঢ়ংঁৎমব-এর বাংলা অর্থ ‘অভ্যুত্থান’। সবাই জানে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হতে সময় লাগে না। কিন্তু বিপ্লব ব্যর্থ হতে অনেক সময় লাগে। রুশ বিপ্লবসহ এ পর্যন্ত যত বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছে, তাতে সময় লেগেছে ৬০ থেকে ৮০ বছর। আর অভ্যুত্থান? সেটার ইতিহাস বলার খুব প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। সংবাদপত্রের পাতায় এর যথেচ্ছ ছড়াছড়ি থাকে। আসুন আমরা একটু পেছনের দিকে তাকাই।
অলৌকিকভাবে নীলনদ পার হওয়ার পর অর্থাৎ বিজয় লাভের পর হযরত মূসা (আ.)-এর কওমের একাংশ বাছুরের কাহিনীসহ নানা-কাহিনীর সূত্রপাত করে বসলো। তারা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে এগিয়ে যেতে পারেনি। এ বিষয়ে কুরআনের সূরা আল আন’আমের ১৫১ থেকে ১৫৩নং আয়াতে বিজয়ের পরে আল্লাহর ওপর সমর্পিত মুসলিম জাতিকে কী কী নির্দেশ দিয়েছিলেন আসুন কষ্ট করে তা একটু দেখে নেই:
“শোনো: * ‘তবে তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য কী কী নিষিদ্ধ করেছেন;
কখনো কোনোভাবে তিনি ব্যতীত কাউকে উপাসনা করো না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে, দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না,
(কেননা) আমরাই তোমাদের ও তাদের প্রতিপালনের ব্যবস্থা করবো;
আর কোনো লজ্জা কর কাজ করবে না, তা প্রকাশ্যে হোক অথবা গোপনে;
আর, কোনো মানুষকে হত্যা করো না (যে জীবনকে), আল্লাহ তায়ালা পবিত্র বলে ঘোষণা করেছেন। ন্যায়বিচারের প্রয়োজন ব্যতীত।
এসব তিনি তোমাদের জন্য নির্ধারিত করেছেন যাতে তোমরা অনুধাবন করো;
আর অনাথের সম্পদ স্পর্শ করো না। তা আরও সমৃদ্ধ করার উদ্দেশ্য ছাড়া,
যে পর্যন্ত সে না সাবালক হয়।’
আর (সকল আদান-প্রদানে) সঠিক মাপ ওজন দিও, ন্যায্যভাবে।
আমরা কারো ওপর এমন বোঝা চাপাই না, যা বহন করা তার সাধ্যের বাইরে;
এবং যখন কোনো বিষয়ে মতামত প্রদান কর ন্যায়নিষ্ঠ থেক,
এমনকি তা যদি আপনজনের বিরুদ্ধেও হয়।
আর সর্বক্ষণ তোমার সম্পর্ক অটুট রেখ আল্লাহ তায়ালার সাথে,
তোমরা যেন একথা কখনো বিস্তৃত না হও।
এবং জেনে রাখো এই পথ অনুসরণ করলেই তা নিয়ে আসবে আমার কাছে তোমাদের;
এ-পথেরই অনুবর্তী হও। অনুসারী হয়ো না অন্য কোনো পথের,
যাতে তাঁর পথ থেকে কখনো বিচ্যুত না হও,
এসবই তাঁর নির্দেশ যাতে তোমরা সাবধান হতে পারো।”
মহান আল্লাহর সকল বাণীর চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে আমরা চাইনা। তবে এ অভূতপূর্ব ও অচিন্তনীয় পরিবর্তনের পরে অন্তর্র্বর্তী সরকার আগ-পিছ না ভেবে নিরলস ও নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশ ও দশের যে সেবা করে যাচ্ছেন তার কিছু নজির আমরা এখানে পেশ করার প্রয়াস পাচ্ছি। যেমন-
● সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করা এবং এই সকল কমিশন যেন ডিসেম্বরের মধ্যে কমিশনের রিপোর্ট পেশ করতে পারে, সেটারও টাইম ফ্রেম বেঁধে দেওয়া।
● মানবতাবিরোধী অপরাধ গঠন ও কাজ শুরু করা।
● ব্যাংকের লুটপাট বন্ধ করা এবং বিগত লুটপাটের তদন্তের জন্য দুদককে শক্তিশালী করা।
● লুটপাট করা যত অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে, সেজন্য শক্তিশালী কমিটি গঠন করা।
● সরকার পরিচালনার আকাশচুম্বী ব্যয় নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
● প্রটোকলের বাহুল্যতা কমানো, সরকারি ও আধা-সরকারি অফিস-আদালতে গত ১৫ বছর যাবত যাদের চাকরি চলে গিয়েছিল এবং যাদের প্রমোশন হেল্ডআপ ছিল তাদের প্রমোশনসহ পুনর্বাসন করা।
● প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘে মাত্র একটি অধিবেশনে বাংলাদেশের বিলীয়মান মর্যাদার যে ক্ষতি হয়েছিল, তা পুনর্বাসিত হওয়া।
● রোহিঙ্গারা এতদিন ছিল মজলুম তাদের বর্তমান সরকার শরণার্থী অভিধায় সংস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। [এটা একটা বিশাল বিজয়। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ রোহিঙ্গা শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে রিফিউজি হিসেবে ইমিগ্রেশন এর সুযোগ পেয়েছে। এই শরণার্থীরা যে যেখানে যেতে পেরেছে, তারা নাগরিকত্ব পাচ্ছে। ভবিষ্যতে এরা আর আমাদের গলগৃহ হওয়ার আশঙ্কা নেই বলা বাহুল্য কোনো মুসলিম দেশ এই মুসলিম শরণার্থীদের ইমিগ্র্যান্ট হিসেবে গ্রহণ করেনি।]
● আলেমগণ পূর্বে ওয়াজ-মাহফিলের জন্য নানারকম বাধার সম্মুখীন হতো। এখন আর সেসব বাধা নেই। তারা নির্বিঘ্নে ওয়াজ-মাহফিল সম্পন্ন করতে পারছেন।
● আয়নাঘরসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও জঙ্গি ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়েছে এবং এ বিষয়ে জিরো টলারেন্সে-এ আসার দৃঢ় প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
● যারা গত ১৫ বছরে খুন-গুম হয়েছেন, তারা জীবিত বা পুতে রাখা লাশ উত্তোলন করে বিষয়টির মানবিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
● আন্দোলন চলাকালীন যারা হতাহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসায় ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
● এ সরকার বহির্বিশ্বের চাপ ও কৌশল এড়িয়ে যেতে পেরেছে। আন্তরজাতিক মানবাধিকার সংস্থার প্রধানসহ কয়েকদিন পূর্বে ঢাকা সফরে এসেছিলেন। তারা সরকারের কাছে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের বিচারব্যবস্থায় মৃত্যুদণ্ড রোহিতের আহ্বান জানিয়েছিলেন। সরকারপক্ষ বিনয়ের সাথে জানিয়ে দিয়েছেন, এসব এখন একেবারেই অসম্ভব। (অনেকেই মনে করছেন এটা প্রকারান্তরে একটি ভারতীয় প্রস্তাব)
● ভারতের সঙ্গে একটা ‘উইন উইন সিচুয়েশন’ তৈরি করা হয়েছে। যেমনÑ রেল, সড়ক ও নেভাল ট্রানজিট এর মতো অসম দ্বিপাক্ষিক চুক্তিসমূহ স্থগিত করা হয়েছে। সমুদ্রবন্দরে একই সাথে ভারত ও বাংলাদেশের জাহাজ উপস্থিত হলে বাংলাদেশের জাহাজকে বহিরাঙ্গে নোঙর করে অবস্থান করতে হতো। সেটা এখন আর লাগছে না।
● বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের আকাশ ব্যবহার করার অসম চুক্তি বিদ্যমান ছিল। বর্তমানে আকাশসীমা ব্যবহারের রুটচার্জ বাংলাদেশ পাচ্ছে। ফ্রান্স থেকে মাত্র দুটি রাডার ক্রয় করে সরকার সেই ব্যবস্থা করেছে।
● বিচার ব্যবস্থা বলতে কিছু ছিল না। এখন সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্টসহ সর্বস্থানে সংস্কারের কাজ চলছে। পূর্বে বিচার ব্যবস্থা সরকারের চাপে ছিল শতভাগ। এখন তা বহুলাংশে কমে গেছে। বিচারপ্রার্থী পূর্বের তুলনায় অনেকটা স্বস্তির আবহ অনুভব করছেন।
● সংবাদপত্রসহ সকল মিডিয়ার স্বাধীনতা সমুজ্জ্বল করা হয়েছে। যে সংবাদপত্র ও মিডিয়াগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, তা পুনরায় খুলে দেয়ার বিধির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
● স্থানীয় সরকারের অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে যারা মেয়র-কমিশনার, চেয়ারম্যান-কাউন্সিলর হয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
● জঙ্গি ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনকে চিহ্নিত করার প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।
● এ সরকারের আরো একটি ভালো দিক হলো ভুল করলে তারা ভুল স্বীকার করছেন এবং শোধরানোর ব্যবস্থা করছেন।
সরকারের প্রধান তার আবাসস্থলেই অফিস করছেন। সরকারপ্রধানের প্রাসাদগুলোয় অবস্থিত অফিসগুলোয় পা মাড়াচ্ছেন না। এতে ঊর্ধ্বতন মহলের কাজগুলো অতি দ্রুত সম্পন্ন হচ্ছে। সময় কম নষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে সরকারপ্রধান যদি বিভিন্ন জায়গায় অফিস করতেন, তাহলে বর্তমানের যানজট বহুগুণে বেড়ে যেত।
কথাটা ছোট, কিন্তু ড. ইউনূস দেশের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তা অবর্ণনীয়। শুধু একটা দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। আমাদের অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান কত টাকাই আর সম্মানী পাবেন। কিন্তু তিনি তো পূর্বে এবং এখন ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন দেশের আমন্ত্রণ পাচ্ছেন। কিন্তু কোনটাই তো তিনি গ্রহণ করছেন না। ব্যক্তিগতভাবে এবং জাতিগতভাবে; বিশেষ করে সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে এটা আমাদের জন্য অনেক লসের বিষয়। তারপরও নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও আকাশভরা আশা নিয়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
কিন্তু শোনা যায় কেউ কেউ তাকে বলছেন, দেশটা পেছনের দিকে হাঁটতে শুরু করেছে, আপনি এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ সম্মানিত ব্যক্তি, সনাতন পদ্ধতিতে পৌঁছে গেলে আপনি তো অসম্মানিত হতে পারেন, আমরা সে আশঙ্কায় অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আপনাকে অনুরোধ করছি, চলুন না আমরা নিজ নিজ অবস্থানে ফিরে যাই। সংস্কার তো অব্যাহত আছে, অসুবিধা কোথায়? এসব কথা পুরোপুরি সত্য নাও হতে পারে।
আপনাদের মনে আছে ষাটের দশকে সাবেক বিচারপতি গ. জ. কধুধহর বেশ কয়েকটি সাড়াজাগানো বই লিখে খ্যাতিমান হয়েছিলেন। তার লেখা বইয়ের কয়েকটি নাম হঠাৎ আমার মনে পড়লোÑ ‘ঐধষভ ঞৎঁঃয’, ‘ঘড়ঃ ঞযব ডযড়ষব ঞৎঁঃয’, ‘অ ঔঁফমব গধু খধঁময’, ‘ঝড়সব গড়ৎব ঞৎঁঃয’, ‘ঞযব ডযড়ষি ঞৎঁঃয’, ‘অভশধৎ-ব-চধৎবংযধহ’.
দেশবাসী একটা যথাযথ শিক্ষানীতি পাওয়ার জন্য গত ৭৭ বছর যাবত অপেক্ষা করছে। এবারও জাতীয় শিক্ষানীতির জন্য কোনো কমিশন গঠন করতে পারেনি। সরকার পারলে অন্তর্র্বর্তী সময়ে সেই মোবারক শিক্ষানীতির রিপোর্ট এ সরকার বাস্তবায়নে হাত দিতে পারবেন কিনা, যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
এরশাদের আমলে জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসানের নেতৃত্বে জাতীয় সংস্কৃতি কমিশন গঠিত হয়েছিল। সেই সরকারের আমলেই সংস্কৃতি কমিশন রিপোর্টটি সরকারের হাতে পৌঁছে দিয়েছিল। সেটা ১৯৯০ সালের কথা। এখনো এদেশের কোনো সরকারের সৌভাগ্য হয়নি সেই রিপোর্টটি পড়ে দেখার।