লুটপাটকারীদের দ্রুত বিচার : অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে
৮ নভেম্বর ২০২৪ ০০:০৩
॥ উসমান সরকার॥
ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে গত ১৬ বছরে দেশের সবচেয়ে গোছালো ও শক্তিশালী হিসেবে বিবেচিত অর্থনীতির বিভিন্ন খাত ধ্বংস করা হয়। ব্যাংক, বীমা, পুঁজিবাজার ও বৈদেশিক ঋণের অর্থ লোপাট করতে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করেছে তারা। এমনকি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে অর্থ নিয়ে তা পাচার করেছে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের একটি অংশ। এ সময়ে বিদেশে দুই লাখ কোটি টাকার বেশি অর্থ পাচার হয়েছে বলে সরকারি প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসছে। এ কারণে ভঙ্গুর করে দেয়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কাজটি করতে সরকারকে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। সরকারের প্রথম তিন মাসে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াটি শুরু হলেও সামনে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা এখনো আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছে। সচিবালয়সহ সব জায়গা থেকে তাদের বিতাড়িত করার পাশাপাশি লুটপাটকারি মন্ত্রী, সচিব, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। দুর্নীতি, লুটপাটের খতিয়ান জনগণের সামনে প্রকাশ করে তাদের সব ধরনের সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়। অন্যদিকে ব্যাংক, বীমা, পুঁজিবাজার ও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে গঠিত সংস্কারের টাস্কফোর্সের দেয়া অগ্রাধিকার বিষয়ের সুপারিশ তাৎক্ষণিক বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এটি করতে পারলে জনগণের কাছে বার্তা যাবে যে, সরকার দুর্নীতিবাজদের শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি অর্থনীতি সাজাতে কোনো প্রকার ছাড় দিচ্ছে না।
রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে দেশের জনগণের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো বসে থাকা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয় গত ৫ আগস্ট। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে দেশের ছাত্র-জনতা ১৬ বছরের দুঃশাসনকে উৎখাত করলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ থেকে গোপনে পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তার দেশ ছাড়ার আগে থেকেই পরিণতির ভয়াবহতা আশঙ্কা করে দেশ থেকে গোপনে পালিয়ে গিয়েছিল সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও দলের নেতারা।
শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর দেশ ছাড়া নেতাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। পাসপোর্ট ছাড়া অর্থাৎ অবৈধ পথে সবাই গিয়ে আশ্রয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বুদ্ধি ও মদদদাতা দেশ ভারতে। কলকাতাসহ দিল্লির মতো শহরগুলো এখন আওয়ামী লীগ ও ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিণত হয়েছে। যেখানে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা অবৈধভাবে থাকতে পারছে।
ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে যাওয়ার আগে দেশ থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে তার দোসররা। টাকার অংকে যা দুই লাখ কোটি টাকার বেশি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক সভায় অংশ নেয়ার সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে দেয়া সাক্ষাৎকারে গভর্নর বলেন, শুধু এস আলম গ্রুপের মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এ কাজে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করা হয়েছে। এ পাচার হওয়া টাকার সুবিধাভোগী শেখ হাসিনাসহ তার ঘনিষ্ঠরা।
ক্ষমতায় থাকতেই আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, তেল গ্যাস আমদানিতে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের মতো অর্থ দেশ থেকে বেরিয়ে গেছে বিভিন্ন গ্রুপের ডাকাতির মাধ্যমে। আগে জ্বালানি আমদানি পুরোটা সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু এ সরকার প্রথমবার তা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়। এর ফলে বিদেশ থেকে আমদানির সময়ে বেশি দর দেখানো, সরকারকে সরবরাহ করার সময়ে টাকা লোপাট করা হয়েছে।
দেশের জ্বালানি খাতকে সমৃদ্ধ না করে, নতুন কূপ খনন না করে বিদেশ থেকে আমদানিনির্ভর হয়েছে সরকারের বিভিন্ন পক্ষের কমিশন বাণিজ্যর কারণে। সেই ৪৫ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার করার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি করেছেন দেশপ্রেমিক জনতা। বিশাল এ অংক দেশ থেকে পাচার করায় ২০২০ সালের শেষের দিক থেকে বাংলাদেশ ডলার সংকটে পড়েছে। পাচারের কারণে এক সময়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ এখন ২০ বিলিয়নে নেমেছে।
লুটপাটকারীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে
এস আলমসহ দেশের কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপ ফ্যাসিস্ট সরকারকে নানা অবৈধ সুবিধা দিয়ে নজিরবিহীন লুটপাট চালিয়েছে আর্থিক খাতে। এ কাজে রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, আমলাদের বড় একটি অংশ সহযোগিতা করেছে। তাদের দ্রুত শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার সময় হয়েছে। তাদের অনিয়মের সকল তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক, আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে আছে। শুধু তা এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পাঠালেই বিচারের কাজটি শুরু হয়ে যাবে। মামলা করার পরপরই উচ্চ আদালত থেকে এসব ব্যবসায়ী গ্রুপ ও জড়িত ব্যক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে রাষ্ট্রের অনুকূলে। দেরি করলে তারা অবৈধভাবে অর্জিত সব সম্পত্তি বিক্রি করে দেশ থেকে পালিয়ে যাবে। বিচার শেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সম্পত্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে সরকার।
ব্যবসায়ীমুক্ত ব্যাংক
ব্যাংক থেকে অর্থ ঋণ হিসেবে নিয়ে ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনা করে ব্যবসায়ীরা। আর ব্যাংকে আমানত হিসেবে অর্থ জমা রাখেন সাধারণ মানুষ। এ কারণে বিশ্বের সব দেশেই ব্যাংক ব্যবস্থাকে দেখা হয় স্পর্শকাতর খাত হিসেবে। উন্নত বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশের প্রতিযোগী রাষ্ট্রগুলোয়ও এ কারণে ব্যবসায়িক কোনো গোষ্ঠী বা গ্রুপকে ব্যাংকের মালিকানায় আসতে দেয়া হয় না।
যাদের অর্থ আছে কিন্তু সরাসরি ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে না এমন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা ব্যাংক পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। বাংলাদেশের ব্যাংক খাতেও ব্যবসায়ীদের পদচারণা এক সময়ে খুব বেশি ছিল না। গত ১৬ বছরে দেশের ব্যাংক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে গেছে এস আলম গ্রুপের মাধ্যমে। শেখ হাসিনার ডাইনিং টেবিলে বসে একসঙ্গে খাওয়ার মতো সম্পর্ক ছিল এস আলম গ্রুপের পরিচালক ও কর্মকর্তাদের। একে একে ৯টি ব্যাংক এস আলম নিয়ন্ত্রণে নেয় ২০১৬ সাল থেকে। দেশের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এখন লোকসানে পরিণত হয়েছে, এস আলমের লুটপাটের কারণে। এক লাখ কোটি টাকার আমানতের ব্যাংকটি এখন তারল্য সংকটে ভুগছে। এরকম ২৪টি ব্যাংক এখন ভেতরে ভেতরে দেউলিয়া হয়ে গেছে ফ্যাসিস্ট সরকারের ২৪ মন্ত্রী-এমপির লুটপাটের কারণে। দায়িত্ব নিয়ে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, এসব ব্যাংক তারল্য সংকটের পাশাপাশি নানামুখী সমস্যায় রয়েছে। অবসায়নের শেষ প্রান্তে যাওয়া এ ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক সহযোগিতা করছে বাঁচিয়ে রাখতে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যবসায়ীমুক্ত করতে ব্যাংকের পরিচালকদের অর্থের উৎস খতিয়ে দেখা। অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ করে বা অবৈধ অর্থের মাধ্যমে তারা ব্যাংকের শেয়ার কিনেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ব্যাংকের পরিচালক হওয়া বেশিরভাগ ব্যবসায়ীদের অর্থের উৎস সঠিক নয়। হয় অন্য ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের অর্থ দিয়ে আরেক ব্যাংকের শেয়ার কিনেছেন বা অবৈধ অর্থ দিয়ে শেয়ার কিনেছেন। এভাবে ব্যাংকের পরিচালক হয়ে নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর ঋণের নামে, বেনামে অর্থ সরিয়ে নিয়েছে ব্যবসায়ীদের অংশটি। টাকা পাচারের মতো অন্যায় কাজে তারা ব্যাংক ব্যবস্থাকে ব্যবহার করেছেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউ’র কর্মকর্তারা জড়িত।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকের পরিচালক কারা হতে পারবেন তার একটি মানদণ্ড করে দেয়া উচিত। পরিচালকদের শিক্ষাগত ও পেশাগত দক্ষতা নির্ধারণ করে সততা, নৈতিকতার মাপকাঠি ঠিক করার বিকল্প নেই। একইসঙ্গে দুই শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়ে পরিচালকদের সম্পত্তির হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। বিদেশি প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রতিনিধি পরিচালক করা যাবে না। মিউচুয়াল ফান্ড ও বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোনো শিল্প গ্রুপকে ব্যাংকের পরিচালক করা যাবে না। বিশেষ ক্ষেত্রে যেসব শিল্প গ্রুপের কোনো পর্যায়ে ঋণ নেই তারাই শুধু ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন।
অর্থনীতির ক্ষত পুঁজিবাজার ঠিক করতে শেয়ারের দর বেঁধে দিতে হবে
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলেই সর্বপ্রথম ১৯৯৬ সালে দেশের পুঁজিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর গত ১৬ বছরের আমলে ২০১০ সালে দ্বিতীয়বার ও ২০২০ সাল থেকে এখনো রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে পুঁজিবাজারে। সালমান এফ রহমানের মতো শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী পুঁজিবাজারের ধসের জন্য দায়ি। লাখো বিনিয়োগকারী এখন পুঁজি হারিয়ে ভিখেরির মতো হয়েছেন। সর্বস্বান্ত হয়ে অসহায় দিন যাপন করছে। দুর্নীতি ও লুটপাটের টাকা এ খাতে বিনিয়োগ করে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর বাড়িয়ে কারসাজি করেছে একটি চক্র। যার নেতৃত্বে ছিল এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের মতো সরকারি কর্মচারীও। এ কারণে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের সম্পদের হিসাব আয়করের সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কি না, তা দেখতে হবে।
একটি শেয়ার বা ইউনিট দর বছরে কতটুকু বাড়তে পারবে তার একটি সীমা নির্ধারণ করে দিতে হবে। বর্তমানে এটি না থাকায় ১০ টাকা দরের শেয়ার কোনো কারণ ছাড়াই কয়েক মাসের ব্যবধানে এক হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে। পরে কারসাজি চক্র শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে চলে গেলে দর নেমে আসে ১০০ টাকার নিচে। এমনকি আগের অভিহিত দরের নিচেও নেমেছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত আইসিবিকে শেয়ারবাজারের সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে হবে। শেয়ার কারসাজি করে দর বাড়ানো শেয়ারগুলো শেষ পর্যায়ে আইসিবিকে দিয়ে ক্রয় করানো হয়। সালমান এফ রহমানের মতো দাপুটে ব্যবসায়ীরা এ কাজটি করেছেন। জনগণের করের টাকায় পরিচালিত আইসিবি এখন এসব শেয়ার কিনে লোকসান গুনছে।
ব্যবসায়ীদের ফাঁকি ঠেকিয়ে কর আদায়
বছরে প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি কর ছাড় দেয়া হয় প্রতি বছরে। এর মধ্যে ৮৫ হাজার কোটি টাকা ছাড় পান ব্যবসায়ী গোষ্ঠীরা। শুধু রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা, ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগীরা গত ২০২৩ সালে এ সুবিধা নিয়েছে শেখ হাসিনার কাছ থেকে। এর বাইরে যে পরিমাণ কর প্রতি বছর দেয়ার কথা তাতেও ফাঁকি দিয়েছেন সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা।
এতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রতি বছর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কর আদায় করতে পারছে না। অথচ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার নিয়মিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের গালগল্প শুনিয়ে আসছিল জনগণকে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। কিন্তু অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা আড়াল করে সরকারের গালগল্প হওয়ায় রাজস্ব আদায় সব সময় কম হয়েছে। এজন্য সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের কর ছাড় বন্ধ করার সঙ্গে কর ফাঁকি রোধ করতে হবে।
ব্যবসায়ী শিল্পগোষ্ঠী কর ফাঁকি দেয়ায় সাধারণ মানুষের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর বাড়িয়ে দিয়েছিল আওয়ামী সরকার। গত কয়েক বছরে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড পরিমাণ উঁচুতে যাওয়ারও এটি একটি কারণ। করের চাপে জনগণ আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে বসেছে। জনগণের ওপর করের বোঝা কমিয়ে আনতে হলে ব্যবসায়ীদের কর ফাঁকি বন্ধ করার সঙ্গে এনবিআরের কর্মকর্তাদেরও দুর্নীতি বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। কর ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অনলাইন ব্যবস্থায় নিয়ে যেতে হবে।
অর্থনীতিবিদ, বিশ্লেষক ও সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, আর্থিক খাত সংস্কারে বিপ্লবী সরকার ৫টির মত টাক্সফোর্স গঠন করেছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার আগেই কমিটিগুলোর কাছ থেকে তাৎক্ষণিক সমাধানযোগ্য সুপারিশগুলো নিয়ে নেয়া যেতে পারে। সরকার ইতোমধ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে অর্থনীতির উন্নয়নে। যার মধ্যে কিছু বাস্তবায়ন হওয়ায় অর্থনীতি এখন সঠিক পথে গুটি গুটি পায়ে হাঁটা শুরু করেছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে খাতভিত্তিক কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরভিত্তিক এসব কমিটিতে অন্তত ২০ সদস্য থাকা উচিত। যেখানে দেশপ্রেমিক সাবেক আমলা, সাংবাদিক, শিক্ষক ও গবেষকরা থাকবেন।