৫ আগস্ট দেশ পথের দিশা ফিরে পেয়েছে : এডভোকেট জুবায়ের


১ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:১৪

সিলেট সংবাদদাতা: জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও নির্বাহী কমিটির সদস্য এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর দেশ পথ হারিয়েছিল আর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশ আবার পথের দিশা ফিরে পেয়েছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের শহীদদের পরিবার ও আহতদের বক্তব্য শুনলে পাষাণ হৃদয়ে কাঁদতে বাধ্য হয়। ফ্যাসিস্টদের বিদায় হয়েছে এখন বিচার নিশ্চিত করার পালা। শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করে লাশের ওপর নৃত্য করা হয়েছিল। ২৮ অক্টোবরের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ছিল আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার প্রথম মহড়া। এরপর তারা ১/১১-এর ফখর-মঈন সরকারের সাথে আঁতাত করে ক্ষমতায় গিয়ে পিলখানা হত্যাকাণ্ড দিয়ে গণহত্যা শুরু করে। তারা ধারাবাহিকভাবে আল্লামা সাঈদী (রহ.) রায় পরবর্তী গণহত্যা, শাপলা চত্বরের গণহত্যা এবং সর্বশেষ ২৪-এর জুলাই-আগস্টের গণহত্যা চালায়। হাজারো ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে ৫ আগস্ট দীর্ঘ ১৭ বছর পর ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন নিশ্চিত হয়েছে।
গত ২৮ অক্টোবর সোমবার বিকেলে সিলেট মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে লগি-বৈঠার তাণ্ডবে শহীদ ও আহতদের স্মরণে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় সভা নগরীর কুমারপাড়াস্থ মালঞ্চ কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুলসংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এডভোকেট জুবায়ের আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসরদের কোনোভাবে ছাড় দেয়া যাবে না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে বিগত সকল হত্যকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে সবাইকে স্বোচ্ছার হতে হবে। সভার শুরুতে প্রজেক্টরের মাধ্যমে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের নৃশংস তাণ্ডবসহ আওয়ামী সরকারের গণহত্যার ডকুমেন্টারিসংবলিত ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। আলোচনা সভায় বিগত ছাত্র-আন্দোলনে সিলেটে নিহতদের পরিবারের সদস্যগণ অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। এসময় তাদের প্রিয়জন হারানোর বেদনার নির্মম বর্ণনা শুণে সভাস্থলে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এছাড়া সভায় উপস্থিত আহত ছাত্র-জনতার অনেকে অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। তাদের ওপর নৃশংস হামলায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন। এহসানুল মাহবুব জুবায়ের আরো বলেন, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ছিল মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সবচেয়ে বড় অভ্যুত্থান। ছাত্র-জনতার বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ফ্যাসিস্টদের পতন নিশ্চিত করেছে। এ বিজয়কে অর্থবহ করতে হবে। সন্ত্রাস-দুর্নীতিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গঠনে জামায়াতে ইসলামী কাজ করছে। আওয়ামী দুঃশাসনে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি সেক্টর নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাষ্ট্রযন্ত্র পুনর্গঠনে সময় দেয়া প্রয়োজন। সন্ত্রাস-দুর্নীতিমুক্ত ও মানবিক বাংলাদেশ গঠনে জামায়াত কাজ করে যাচ্ছে।
আলোচনা সভায় অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন ২০০৬ সালে সিলেট নগরীর বন্দরবাজার কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের লগি-বৈঠার তাণ্ডবে গুরুতর আহত তৎকালীন সিলেট মহানগর ছাত্রশিবির সভাপতি ও বর্তমান সিলেট মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ড. নুরুল ইসলাম বাবুল। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, সেদিনের তাণ্ডব আমি ভুলে যেতে চাই। বিষয়টি কারো সাথে শেয়ার করতে পারিনা। তারা সেদিন আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। আল্লাহর মেহেরবানিতে বেঁেচ আছি।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সিলেট জেলা আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, সাবেক সিলেট জেলা দক্ষিণ জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগরী সভাপতি শরীফ মাহমুদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ফজলুর রহমান।
সভাপতির বক্তব্যে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার টানা ১৭ বছর বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর খুন-গুম, জুলুম-নিপীড়ন চালিয়েছে। নিরপরাধ শীর্ষ জামায়াত নেতৃবৃন্দকে বিচারের নামে শহীদ করেছে। কত মানুষকে তারা ঘরছাড়া, বাড়িছাড়া, দেশছাড়া করেছে তার সঠিক হিসাব নেই। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তারা গণহত্যার চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করেছিল। অতিষ্ঠ হয়ে দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্টের পতন নিশ্চিত করেছে। এবার ছাত্র-জনতাকে সাথে নিয়ে দেশকে গঠন করতে জামায়াত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।