রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৮ম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ॥ ৮ জিলকদ ১৪৪৫ হিজরী ॥ ১৭ মে ২০২৪

এটা কিডনি সমস্যার সাথে যুক্ত
॥ হামিম উল কবির ॥
চুলকানি মানবদেহের খুব সাধারণ একটি বিষয়। দীর্ঘদিন এবং বেশি পরিমাণে চুলকানির সাথে কিডনি ও লিভারের সমস্যা জড়িত। মাত্রা বেশি হয়ে গেলে এটাকে সহজভাবে নেয়া উচিত নয়, উপসর্গ অনুযায়ী রোগটির চিকিৎসা করিয়ে ফেলতে হবে। চিকিৎসকরা বলেন, ত্বকের সংক্রমণ, পরিবেশগত কারণ, অ্যালার্জি এবং অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতার কারণে মানুষের মধ্যে চুলকানি হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে এটা চলতে থাকলে কিডনি ও লিভারের ত্রুটির সাথে সম্পর্কযুক্ত রোগ হিসেবে চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
চুলকানি কী?
চুলকানি শরীরে অস্বস্তিকর অনুভূতি জন্মায়। তা থেকে বাঁচতে যেখানে চুলকানি হয়, সেখানে আঁচড়াতে ইচ্ছা করে। শুষ্ক ত্বক চুলকানির বেশ কয়েকটি কারণের একটি হলেও কিডনি ও লিভার সমস্যার পাশাপাশি চর্মরোগ, সোরিয়াসিস, গর্ভাবস্থা, রক্তরোগ (থ্যালাসেমিয়া) এবং কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সার হলে চুলকানি হয়ে থাকে। স্নায়ুকোষের ক্ষতির কারণে ত্বকে প্রদাহ বা ক্ষতির কারণেও চুলকানির উদ্ভব হয়। আবার এটা মানসিক ব্যাধির কারণেও হতে পারে। এছাড়া অ্যালার্জি, হাঁপানি এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলেও চুলকানি হয়ে থাকে।
কিডনির সাথে চুলকানির কী সংযোগ?
শুষ্ক এবং রুক্ষ ত্বক কিডনি সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে ত্বকের ঘর্মগ্রন্থি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে টক্সিন বা বর্জ্য পদার্থ জমে ত্বক শুকিয়ে যায় এবং চুলকানি শুরু হয়। কিডনি বিশেষজ্ঞরা বলেন, ত্বকের অতিরিক্ত দাগ অথবা ছোপ কিডনির সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। কিডনি সঠিক নিয়মে কাজ না করলে রক্ত পরিষ্কার হয় না। সঠিকভাবে রক্ত পরিষ্কার করতে না পারলে অথবা রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ দূর করতে না পারলে তা ত্বকে প্রতিফলিত হয়। ফলে ত্বকে  দাগ ও ছোপের পরিমাণ বাড়তে থাকে। একই সাথে ত্বকে চুলকানি হয়ে থাকে। কিডনিতে সমস্যা থাকলে ত্বকে ফুসকুড়ি, র‌্যাশ, চুলকানির মতো সমস্যা হতে পারে। এটা খুব সাধারণ বিষয়ও হতে পারে আবার কিডনির সাথে সম্পর্কিত থাকতে পারে। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে বিষয়টিকে অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেছেন চিকিৎসকরা। তারা কিছু পরীক্ষা করে কিডনির কার্যকারিতা দেখে নেবেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেবেন। আবারও এমন হতে পারে, হঠাৎ করেই ত্বকের রং বদলাতে শুরু করতে পারে। বিশেষ করে গায়ের রং হলুদ হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি গায়ে প্রচণ্ড চুলকানিও হতে পারে। এমন ধরনের কোনো সমস্যা হয়ে থাকলে সাথে সাথে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। বিশেষ করে কিডনি অথবা চর্ম বিশেষজ্ঞের কাছে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞরাও এ চিকিৎসা করে থাকেন।
কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, এমন হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়। আমরা প্রথমে সামান্য কিছু পরীক্ষা করে কিডনির সাথে চুলকানির সংযোগটা দেখে পরে আরো কিছু পরীক্ষা দিয়ে চিকিৎসা শুরু করি। কিডনিতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে প্রথমেই ত্বকে এর লক্ষণ ফুটে ওঠে। কিডনির যেকোনো সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আগে কিডনি শরীরে নানা সংকেতের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। রোগীরা সঠিক সময়ে চিকিৎসকের কাছে এলে এবং সময়মতো রোগটি অথবা কিডনির রোগটি শনাক্ত করতে পারলে কিডনিটাকে রক্ষা করা যায় এবং রোগী সুস্থ থাকতে পারে। সেজন্য অবহেলা না করে চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে আসতে না পারলেও সরকারি মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের কাছে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা নেয়া যায়। ডা. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ত্বক হলুদ হয়ে যায় কিডনি সঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে, সঠিক মাত্রায় পরিমাণমতো রক্ত পরিষ্কার করতে না পারলে। চুলকানি দ্রুত বৃদ্ধি পেলে রোগী নিজেও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে ‘ক্রিয়েটিনাইন’ নামক পরীক্ষাটি করিয়েই ডাক্তারের কাছে আসতে পারেন। তাহলে ডাক্তার চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিডনি সঠিকভাবে রক্ত পরিশোধন বা ফিল্টার করতে না পারলে রক্তে টক্সিন বা ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ জমতে শুরু করে। এ টক্সিনগুলো আমাদের ত্বকের রং পরিবর্তন করতে ভূমিকা রাখে। ত্বকের রং কখনো বাদামি বা কখনো হলুদ হতে শুরু করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ত্বকের রং কালোও হয়ে যায়।
চুলকানির সাথে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা যুক্ত
যাদের লিভার বা যকৃতে অতিরিক্ত চর্বি বা ফ্যাট জমা হয়ে যায় তাদের সন্ধ্যা বা রাতে হাত-পায়ের তালুতে চুলকানি অনুভূত হয়ে থাকে। এ চুলকানিকে অনেকেই খুবই সাধারণ সমস্যা ভেবে এড়িয়ে যান। মনে করেন, ‘এটা কিছুই না, এমনিতেই চুলকায়, একসময় ঠিক হয়ে যাবে’। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, লিভারে ফ্যাট জমা হলে এমন হতে পারে। হাত বা পায়ের তালুতে নিয়মিত এ ধরনের সমস্যা দেখলে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে এবং চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। আমেরিকান মায়ো ক্লিনিকের তথ্যানুসারে, এটি প্রাথমিক বিলিয়ারি সিরোসিস (পিবিসি), প্রাথমিক স্কলেরোসিসসহ অন্যান্য ধরনের লিভারের রোগের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন, যাদের যকৃতের রোগ আছে, তাদের ত্বকের নিচে পিত্ত লবণের উচ্চমাত্রা থাকায় চুলকানির সৃষ্টি হতে পারে।
চুলকানি হলেই কিডনি সমস্যা হয় না
আবার চুলকানি হলেই কিডনির সমস্যা হয় না। অন্য কিছু স্থানীয় কারণেও চুলকানি হতে পারে। অনেক সময় ত্বকে ছোট ছোট গুঁটি অথবা ফুসকড়ির মতো উঠতে পারে, এগুলো প্রচণ্ড চুলকায়। যতই চুলকানো যায়, ততই স্বস্তি বা মজা অনুভূত হয়। আবার কারো কারো হাতে ছোট ছোট ফুসকুড়ি উঠে প্রচণ্ড চুলকিয়ে পানির মতো বের হয়ে আসতে পারে। ওষুধ দেয়া না হলে সেখানে ঘায়ের মতো হয়ে যায়। চর্ম বিশেষজ্ঞ ডা. ফারজানা ফেরদৌস বলেন, ত্বকের নানা সংক্রমণে এরকম সমস্যা হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অ্যালার্জির মতো সাধারণ সমস্যায় এরকম হয়ে থাকে। আবার একজিমা নামক একটি চর্মরোগেও এরকম প্রায়ই দেখা যায়। তিনি জানান, স্কেবিস নামে একটি ছোঁয়াচে রোগের কারণে এরকম ঘটনা ঘটে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে এটা ছড়িয়ে পড়তে পারে। আবার কিছু রাসায়নিক পদার্থ হাতে লাগলেও এমন হতে পারে। ফাঙ্গাসজনিত সংক্রমণেও এরকম ঘটনা ঘটে। এছাড়া চামড়া খুব শুকনা থাকার কারণে এরকম পরিবর্তন হতে পারে। যে কারণেই হোক, একজন চিকিৎসক হাত পরীক্ষা করে, রোগ শনাক্ত করে  চিকিৎসা দেবেন। হাতুড়ে ডাক্তার অথবা কবিরাজের কাছে না যাওয়াই ভালো।
তাহলে কী করতে হবে?
হাতে ও পায়ে গোটা বা ফুসকুড়ি অনেক ধরনের চর্মরোগের কারণেও হয়। একেকটির চিকিৎসা একেক রকম। দীর্ঘদিন এমন হলে, শরীরে এমন লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। চর্ম বিশেষজ্ঞ ডা. ফারজানা ফেরদৌস বলেন, বেশি চুলকালে অ্যালার্জির ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। ত্বক বেশি শুকনা হয়ে গেলে  ময়েশ্চারাইজিং লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করা যাবে। তেল ব্যবহার করেও ত্বকের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পানি লাগলে চর্মরোগ বেড়ে যায়। সে অবস্থায় পানি কম ধরাই উচিত। আবার দূষিত পানিতে; বিশেষ করে পুকুরের পানিতে গোসল করলে চর্মরোগ হতে পারে। তখন পুকুরের পানিতে গোসল করা বন্ধ করে দিতে হবে। ভালো কোম্পানি ছাড়া নামহীন কোম্পানির অথবা বিদেশি হলেই প্রসাধনী ব্যবহার করা যাবে না। বাংলাদেশে বিএসটিআই’র সার্টিফিকেট নেই এমন প্রসাধানী ব্যবহার না করাই ভালো। অন্যের ব্যবহার্য জিনিসপত্র না ধুয়ে ব্যবহার না করাই ভালো। ঘন ঘন হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নেয়া ভালো, তাহলে হাত থেকে রোগ-জীবাণুর পরিমাণ কমে যাবে। তবে যাদের সাবানে অ্যালার্জি থাকে তাদের সাবান ব্যবহার না করাই ভালো। সাধারণ পানি অথবা গরম পানিতে হাত ধুয়ে নেয়া যেতে পারে।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।