উপজেলা পরিষদ নির্বাচন
কমছে ভোটের হার
স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমান সরকারের অধীনে ভোট বর্জন করছেন সাধারণ ভোটাররা। যার চিত্র গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর চলতি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আবারো দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলো গত জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী ছিল না। কারণ দলগুলো নিশ্চিত ছিল যে, দলীয় সরকারের অধীনে ভোটারদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে না। কিন্তু নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক এবং অংশগ্রহণমূলক দেখাতে একদল নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যক্তিকে ট্রাকে তুলে দিয়ে, ঈগল দিয়ে এবং গৃহপালিত বিরোধীদল জাতীয় পার্টিসহ মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে ভোটে যায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু ডামি ভোটও জনগণ বর্জন করেন। এরপর চলতি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ ভোটে নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগ বনান আওয়ামী লীগে। এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ঘোষণা দিয়ে বর্জন করেছে, পাশাপাশি অন্য মিত্র দলগুলোও ভোট বর্জন করে। এদিকে আওয়ামী লীগের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোও উপজেলা নির্বাচনে নেই। তারাও এ ভোট বর্জন করে। শুধু পার্থক্য হচ্ছে তারা বর্জনের ঘোষণা দেয়নি। জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে ভোটে গিয়ে বিরোধীদলের আসনের কুশীলব জাতীয় পার্টিও উপজেলা নির্বাচনে নেই। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নেই। আর রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ না থাকায় জনগণও ভোট কেন্দ্রে যাননি।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, মিরসরাই ও সন্দ্বীপ উপজেলায় গত ৮ মে সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতসহ শক্তিশালী বিরোধীদলের কোনো প্রার্থী অংশ নেননি। ফলে আওয়ামী লীগের নেতারাই বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ তিন উপজেলায় ভোটগ্রহণের শুরুতে কিছু ভোটার উপস্থিতি ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কমে যায়। কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি একেবারে দেখা যায়নি। এতে অলস সময় কাটাতে হয় ভোটগ্রহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
বিরোধীদলের অংশগ্রহণ থাকবে না ভেবে আগেই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা উন্মুক্ত করে দেয় আওয়ামী লীগ। যাতে ভোটারের উপস্থিতি বাড়ে। কিন্তু এ কৌশল কাজে আসেনি দলটির। বলা যায়, কৌশলে ব্যর্থ হয়েছে দলটি। জানা যায়, গত দেড় দশকের মধ্যে এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের হার সর্বনিম্ন। গত তিনটি উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার ধারাবাহিকভাবে কমেছে। তবে এবার ভোটের হার সবচেয়ে নিচে নেমেছে। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ১৩৯টি উপজেলার মধ্যে ৮১টিতেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ২০ শতাংশের কম ভোট পেয়ে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাসের মধ্যে উপজেলার প্রথম ধাপের ভোট হয় গত ৮ মে বুধবার। সংসদ নির্বাচনের ভোটের হার কম হওয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছিল। এমন পটভূমিতে উপজেলায় ভোটের হার আরও কম হয়েছে। ফলে নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের অনীহার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
গত তিনটি উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার ধারাবাহিকভাবে কমেছে। তবে এবার ভোটের হার সবচেয়ে নিচে নেমেছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হিসাবে, ৮ মে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে ইভিএমে ভোটের হার ৩১ দশমিক ৩১ আর ব্যালটে ৩৭ দশমিক ২২ শতাংশ। এটি সরকারি হিসাবে, কিন্তু বাস্তব ছিত্র ভিন্ন। বিরোধীদলগুলো বলছে, ৫ শতাংশ লোক ভোট কেন্দ্রে যাননি। ১৫ বছর আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। এরপর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬১ শতাংশের মতো। আর ২০১৯ সালে প্রথমবার দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল ৪০ দশমিক ২২ শতাংশ। এবার প্রথম ধাপে ভোটের হার ৩৬ শতাংশে নেমে এসেছে। পরপর চারটি উপজেলা নির্বাচনে ভোট কমেছে ধারাবাহিকভাবে। অবশ্য ভোটের এ হার নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গত ৮ মে বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া ভোট শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে। এ বিষয়টিকেই তারা গুরুত্ব দিতে চাইছেন।
তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষক বা বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভোট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন মানুষ, যা গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগের। এ পরিস্থিতির দায় কার, সেই প্রশ্নও তুলছেন তারা। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচনের প্রতি মানুষের অনাস্থার প্রতিফলন এ ভোটের ফলাফল। আর এ অনাস্থার কারণে মানুষ এখন ভোটবিমুখ। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ১৩৯টি উপজেলার মধ্যে ৮১টিতেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ২০ শতাংশের কম ভোট পেয়ে।
বেশিরভাগ উপজেলায় খুব কম ভোট পেয়েও চেয়ারম্যান পদে বসতে যাচ্ছেন নির্বাচিত ব্যক্তিরা। প্রথম ধাপের ১৩৯টি উপজেলার মধ্যে ৮১টিতে ২০ শতাংশের কম ভোট পেয়ে যারা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ১০ জন মোট ভোটারের ১০ শতাংশের কম ভোট পেয়েছেন। অবশ্য প্রদত্ত ভোটের হিসাবে তাদের ভোট পাওয়ার হার আরও বেশি। এর বাইরে দুটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী বিনাভোটে জয়ী হয়েছেন।
‘নৌকা প্রতীক’ না দেওয়ার পেছনে উপজেলা নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করাও অন্যতম লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগের। কিন্তু সেই লক্ষ্যও পূরণ করা যায়নি। প্রথম ধাপের ৬৩টি উপজেলায় তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। এসব উপজেলায় বিজয়ী প্রার্থীর সঙ্গে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটের ব্যবধান ১০ হাজারের বেশি।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- বিদেশি ঋণের চাপে সরকার
- কৃষি ও শিল্পোৎপাদন ব্যাহত
- মেয়েরা এগিয়ে, ছেলেরা পিছিয়ে
- সকল দলের অংশগ্রহণে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে : মাওলানা আবদুল হালিম
- ছাত্রশিবির জাতিকে মেধাবী ও নৈতিকতাসম্পন্ন নাগরিক উপহার দিতে নিরলসভাবে কাজ করছে : সেক্রেটারি জেনারেল
- দীর্ঘদিনের চুলকানিতে অবহেলা নয়
- দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে : মুহাম্মদ শাহজাহান
- মুসলিম জনসংখ্যা কমছে ভারতে
- কার ওপর হজ ফরজ
- দেশে উইলসন রোগের নতুন দুটি মিউটেশন শনাক্ত
- বেড়ায় মাওলানা নিজামীর জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা সভা