রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৮ম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ॥ ৮ জিলকদ ১৪৪৫ হিজরী ॥ ১৭ মে ২০২৪

বৈদেশিক মুদ্রার প্রকল্প বন্ধের দাবি অর্থনীতিবিদদের
টাকার মান ধরে রাখা যাচ্ছে না

॥ উসমান ফারুক॥
১৫ বছর আগে ২০০৮ সালে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ বিলিয়ন ডলারের সামান্য বেশি। অর্থনীতির আকার ও বাস্তবায়ন সক্ষমতার চেয়ে বেশি প্রকল্প নেওয়ায় অস্বাভাবিক হারে বিদেশি ঋণ বেড়ে ২০২৩ সাল শেষে তা ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বিদেশি ঋণ গ্রহণ পাঁচগুণ বাড়িয়েছে সরকার। আর গত আট বছরে তা দ্বিগুণ হয়েছে। ঋণ বাড়ালেও বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে না পারায় এখন সুদসহ কিস্তি পরিশোধের চাপে ভেঙে পড়েছে সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনা। গত এক বছরেই ঋণ পরিশোধের হার বেড়েছে ৬৭ শতাংশ। চাপ বাড়ায় রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে নেমেছে ১৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ঋণের অর্থ ব্যবহারে তদারকির অভাব, নীতি ব্যর্থতা, অর্থ পাচার, দুর্নীতি ও অনিয়মে ভরে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে ডলারের তীব্র সংকট। ঋণের তুলনায় ডলারের আয় বাড়াতে পারেনি সরকার। ঋণ পরিশোধে নতুন করে ঋণ নিতে হচ্ছে। এতে টাকার মান দিন দিন কমে যাচ্ছে। যার ফলে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গিয়ে ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। টাকার মান ধরে রাখা ও ডলারের রিজার্ভ ন্যূনতম মানে নিয়ে আসতে বৈদেশিক ঋণনির্ভর প্রকল্প অনতিবিলম্বে বন্ধ করার দাবি করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
টাকার মান ধরে রাখা যাচ্ছে না
বৈদেশিক মুদ্রার এ মহাসংকটের সময়ে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে অর্থনীতিতে। বিশেষ করে আগামী ২০২৬ সাল থেকে নতুন কয়েকটি প্রকল্পের ঋণের কিস্তি শুরু হবে। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে আগামীতে ডলারের চাহিদা আরো বাড়বে। তা জোগান দিতে ব্যর্থ হলে টাকার মান আরো কমে যাবে ডলারের বিপরীতে। আর সুদ ও মূল ঋণ মিলিয়ে কিস্তি দিতে গিয়ে টাকার পরিমাণেও বেশি খরচ বাড়বে সরকারের। গত বছরে সরকার যখন পৌনে তিন বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছিল, তখন টাকার মান ছিল ১০৭ থেকে সর্বোচ্চ ১১০ টাকায়। বর্তমানে তা ১১৭ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে। গত তিন বছর আগে ডলারের বিপরীতে যেই টাকার মান ছিল ৮৪-৮৫ টাকা। এতে সরকারের খরচও বাড়বে। যেখানে আমাদের অর্থনীতির মূলনীতি হচ্ছে স্বল্প সুদ ও সর্বনিম্ন খরচে সর্বোচ্চ সুবিধা নেয়া।
বিদেশি ঋণ বাড়ছে হু হু করে
গত ২০০৮ সালে সরকার ক্ষমতা নেওয়ার সময়ে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই ঋণ ২০২৩ সাল শেষে ১০০ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১৭.৫০ টাকা ধরে) এ ঋণের পরিমাণ ১১ লাখ ৮২ হাজার ৫০ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিদেশি ঋণ ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এভাবে গত ১৫ বছরে দেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৭৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৯ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। আর বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ২০ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। অর্থাৎ এসব ঋণের ৭৯ শতাংশই নিয়েছে সরকার এবং বাকি ২১ শতাংশ ঋণ নিয়েছে বেসরকারি খাত।
২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে তা দাঁড়ায় ৯৮ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারে। এর মানে গত ৮ বছরে দেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়িয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৮ সালের পর বিদেশি ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৮ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮১ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলারে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ ঋণের পরিমাণ ৯৫ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৯৮ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। আর গত বছর শেষে এ ঋণের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলার। ঋণের এসব অর্থ  গেছে রামপাল, রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট, পায়রা বন্দর, মেট্রোরেলসহ একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে। এর বিপরীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ দিতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ বেড়ে গেছে দেশের।
বেসরকারি খাতের এসব ঋণ স্বল্পমেয়াদি বা এক বছরের জন্য নেওয়া। বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা রপ্তানি আয়ের মাধ্যমে ডলারের এসব ঋণ পরিশোধ করে দিতে পারবেন। তাদের সেই সক্ষমতা আছে। কিন্তু সরকারের কোনো আয়ের খাত নেই। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বাবদ যা আয় আসে, তার একটি অংশ চলে বেসরকারি খাতের নিয়মিত পণ্য আনতে। জ্বালানি তেল, গ্যাস, এলএনজি ও বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির মাধ্যমে বেশি দরে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতিনিয়ত রিজার্ভ কমছে বাংলাদেশের।
এমনকি বিদেশি বিক্রেতারা এখন বাংলাদেশকে বাকিতে জ্বালানি দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। উপায়ন্তর না পেয়ে সরকার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কাছে তদবির করছে বাকিতে তেল দেয়ার জন্য। সেই প্রস্তাবের কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি এখনো। শেষে খরচ সামাল দিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে সরকার।
সরকারের ঋণ বেড়েই চলছে, বেসরকারি কমছে   
প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে সরকারের বিদেশি ঋণের পরিমাণ। বেসরকারি খাতের ঋণের পরিমাণ গত বছরের শেষের দিকে কমে এলেও সরকারের বেলায় তা উল্টোটা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষ তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) দেশের বিদেশি ঋণ ৪ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। এর মধ্যে সরকারের বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৪ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এসময়ে নেওয়া মোট ঋণের ৯২ শতাংশই সরকারের। অন্যদিকে বেসরকারি খাত এ সময়ে ঋণ নেওয়া কমিয়েছে ৩৩ কোটি ডলার আগের বছরের তুলনায়।
তথ্যানুযায়ী, এসব ঋণের ৫৯ শতাংশই বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে নেওয়া। বাকি ঋণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশ রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে পাওয়া। গত ১৫ বছরে রাশিয়া ও চীন থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে।
ঋণ করে ঋণ পরিশোধ
বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়েছে গত এক বছরে ৬৭ শতাংশ। কিন্তু এ সময়ে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটেনি। উল্টো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে নেমেছে ১৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে বাংলাদেশের আড়াই মাসের আমদানি দায় মেটানো যায়। বাংলাদেশ প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানি করে। আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী কোনো দেশের আমদানি দায় মেটাতে অন্তত তিন মাসের সক্ষমতা থাকতে হয়।
বৈদেশিক মুদ্রার এমন অবস্থার প্রেক্ষাপটে বিদেশি ঋণদাতারা পরিশোধ চাপ বাড়িয়েছে। ডলার সংকটে পড়ে ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। আর অর্থনীতিবিদ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুর রাজধানীতে এক সেমিনারে বলেছেন, ঋণ পরিশোধের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার এখন নতুন ঋণ করে পুরনো ঋণ পরিশোধ করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ২ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে বিদেশি ঋণের কিস্তি। আর এ সময়ে নতুন ঋণ নিয়েছে ৪ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে গতবারের চেয়ে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বেশি ৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার, আগামী অর্থবছরে চার দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার ও পরের বছরে তা দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে। এভাবে দিন দিন বৃদ্ধি পাবে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ পরিশোধের পরিমাণ। এজন্য প্রতি বছরই আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বাড়বে। যেখানে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে বাণিজ্য ও চলতি হিসাবে ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশের। আর্থিক হিসাবে ঘাটতি রয়েছে ৯ বিলিয়ন ডলারের।
নীতি ব্যর্থতা গত চার বছরে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে
অর্থনীতি নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থাপনা যে ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে, তা ফুটে উঠেছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের বক্তব্যে। গত চার বছর আগে ২০২০ সালের এপ্রিলে হঠাৎ করেই ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ ঠিক করে দেয় সরকার ব্যবসায়ীদের চাপে। এরপর আমানতের সুদহার কমে গিয়ে সাধারণ ও মধ্যবিত্তের আয় কমে যায়। এতে ব্যয় কমানোর ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যায়। অর্থনীতি দিক হারাতে শুরু করে। প্রবাসীরা বেশি অর্থের আশায় হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেন। এতে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে যায়, অন্যদিকে হুন্ডিতে অর্থ পাচারের পরিমাণ বেড় যায় দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি না থাকায়। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গণতান্ত্রিক সংকটে তারা দেশ ছাড়তে শুরু করেন।
অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে জোর করে টাকার মান ধরে রাখা হয়। এতে অর্থ পাচারের পরিমাণ আরো বেড়ে যায় অর্থনীতিতে। এতে রিজার্ভ কমে গিয়ে বাংলাদেশ ২০২২ সালে আইএমএফের কাছে ঋণ সহায়তা চায়। সংস্থাটির শর্তে বিনিময় হার ধরে রাখা ও সুদহার ৯ শতাংশ থেকে তুলে দিতে বলে। চার বছর বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেয়ার পর অবশেষ গত সপ্তাহে দুটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এখন ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশের বদলে বাজারভিত্তিক হবে অর্থাৎ ব্যাংক নিজেদের মতো ঋণ সুদ নিতে পারবে। আর টাকার মান একদিনেই কমানো হয় সাড়ে ছয় শতাংশ বা ৭ টাকা। পরের দিন টাকার মান আরো কমে যায় ৫০ পয়সা। বর্তমানে প্রতি ডলারের বিপরীতে ১১৭ টাকা ৫০ পয়সায় পাওয়া যাচ্ছে।
অর্থনৈতিক এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া ও চার বছর গিনিপিগের মতো পরীক্ষা চালিয়ে তা বাতিল করাকে ভুল নীতি বলে আখ্যা দিয়েছেন সরকার সমর্থক অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। গত ১৩ মে সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের দুটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, নীতিতে ভুল ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। তাই নীতিতে বার বার পরিবর্তন হচ্ছে। পূবালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুরুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের আগের নীতিগুলো ব্যর্থ হয়েছে। ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বার বার নীতি পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। নীতি ব্যর্থ না হলে পরিবর্তনের দরকার ছিল না। ভুল ছিল বলেই নীতিতে পরিবর্তন করতে হচ্ছে।
আর বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের (বিএবি) চেয়ারম্যান ও সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই সুদহার নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় না। সুদহার আপন গতিতে চলবে। পরে এক জায়গায় থেমে যাবে। নামবে আবার উঠবে। এটাই অর্থনীতির নিয়ম। সুদহার নির্ধারণ করে দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ নয়। অবশেষে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।
তিনি বলেন, ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার বিকল্প নেই। অন্য দেশেও ডলারের দাম বেশি। আমাদের এখানে এতদিন জোর করে চাপিয়ে রাখা হয়েছিল, যা এখন বাজারের কাছাকাছি চলে এসেছে। বাজারদর অনুযায়ী ডলার হাতবদল হলে সরবরাহ বেড়ে যেতে পারে।
ডলার আনতে না পারলে ঋণনির্ভর প্রকল্প বন্ধের দাবি অর্থনীতিবিদদের
ডলারের জোগান বৃদ্ধি না পাওয়ায় বিদেশি ঋণনির্ভর প্রকল্প বন্ধ করার দাবি করেছেন অর্থনীতিবিদরা। আর নিতান্তই প্রয়োজন হলে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন স্থগিত বা ধীরগতিতে চালিয়ে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ঋণ পরিশোধে সরকারের সামনে ক্ষেত্রে দুটি পথ আছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে সরকারি আয় বাড়ানো। এ আয়ের মধ্যে রয়েছে কর থেকে আয় এবং করবহির্ভূত আয়। এ আয় বাড়িয়ে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, নতুন ঋণ দিয়ে পুরনো ঋণকে পরিশোধ করা। একে ‘রিফাইন্যান্সিং’ বলা হয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ধরা যাক ১০০ টাকার একটি ঋণ, যা আগামী বছর পরিশোধ করার কথা রয়েছে। তো আগামী বছর আবার আরেকটি ১০০ টাকার ঋণ নিয়ে আগেরটি পরিশোধ করা হলো। এতে নতুন ঋণটি পরের বছর পরিশোধ করতে হবে বিধায় কিছুটা অতিরিক্ত সময় পাওয়া গেল। এ দুটি উপায় ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের হাতে আর কোনো পথ নেই বলে মনে করেন তিনি।
রাজস্ব আয় যদি বাড়ানো সম্ভব না হয়, তাহলে এর বিকল্প হতে পারে সরকারের ব্যয় কমানো। এর মাধ্যমে উচ্চাভিলাষী ও ব্যয়বহুল প্রকল্পগুলো বাদ দিতে দেওয়ার পরামর্শ তার। ঋণ পরিশোধে খরচ কমাতে হবে। জাহিদ হোসেন বলেন, নতুন ঋণ নিয়ে রিফাইন্যান্সিং তো বার বার করতে পারবেন না। আর রিফাইন্যান্সিং করে তো আপনি প্রবলেমটাকে পোস্টপোন করছেন, সলভ করছেন না। সরকারের ব্যয়কে যৌক্তিকীকরণ বা অপচয় কমানোর পথে জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের মেগা প্রকল্পসহ সব ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় যাতে যৌক্তিক অর্থাৎ কমিয়ে আনতে হবে।
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনীতি ভেঙে পড়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে দরিদ্র, নিম্ন ও স্বল্পআয়ের মানুষকে। ডলারের দর বাড়লেই টাকার মান পড়ে গিয়ে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। যার সরাসরি প্রভাব পড়ে এ কয় খাতের মানুষের ওপর। গত এপ্রিলেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি ফের বেড়ে গিয়ে সাড়ে ১২ শতাংশ হয়েছে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস বলেছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বেসরকারি হিসাবে তা আরো বেশি। এজন্য অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা ও জবাবদিহি। এটি সম্ভব হবে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরলে। এজন্য সাধারণ মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশে।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।