রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ২য় সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ॥ ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী ॥ ২৯ মাচ ২০২৪

॥ সরদার আবদুর রহমান॥
সাধারণভাবে নীতির রাজাকে বলা হয় ‘রাজনীতি’। অর্থাৎ দুনিয়ায় যত ‘নীতি’ আছে, তার শীর্ষে হলো রাজনীতি। একটি দেশ ও সমাজ মূলত এ রাজনীতির দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত হয়। তাই এ রাজনীতির নিয়ন্ত্রক ও পরিচালকরা সমাজের শীর্ষ স্থানে অবস্থান নিয়ে থাকেন।
আধুনিক সময়ের রাজনীতি বিভিন্ন মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত হয়ে চলেছে। কিন্তু এর মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামের অবস্থান কেন শূন্য থাকবে- সেটি একটি বড় প্রশ্ন হিসেবে থেকে গেছে। বাস্তবে ইসলাম তো অন্য কোনো মতবাদ বা মতাদর্শের অধীনে কোণঠাসা হয়ে থাকার কথা নয়। বরং তার নেতৃত্ব প্রদান করার কথা। এ বিষয়টি বহুল আলোচিত হলেও এর অনুসারী হওয়ার দাবিদার লোকদের একটি বড় অংশ এ দাবিকে উচ্চে তুলে ধরার জন্য সচেষ্ট হয়নি। আর যারা সচেষ্ট হয়েছে এবং এ অধিকারকে সামনে নিতে চেষ্টা করেছে, তাদের নানাভাবে বাধা-প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু তাতে বিষয়টি থেমে থাকেনি। সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা সর্বদাই অব্যাহত থেকেছে।
এ কথা জানা যে, ইসলাম এমনই একটি নীতি ও ব্যবস্থার নাম, যাকে নিছক ‘ধর্ম’ নামক একটি পরিচয়ে আবদ্ধ করে রাখার সুযোগ নেই। এটি সেই নীতি, যা দেশ ও সমাজকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ভূমিকায় থাকার কথা। তাই এ যেমন কেবল একটি ধর্মমাত্র নয়, তেমনি প্রচলিত রাজনীতিও নয়। উভয়ের সমন্বয়ে দুনিয়া ও আখিরাতমুখী একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। তাই একে বর্তমান বিশ^ব্যবস্থায় প্রচলিত আবহের মধ্যে ‘ইসলামী ধারার রাজনীতি’ অথবা ‘রাজনীতির ইসলামী ধারা’ হিসেবে উল্লেখ করলে ভুল হবে না। একটি সময়ে এ বয়ান নানাভাবে অস্বীকৃত হলেও সময় ও কালের প্রবাহে তা আজ পূর্ণভাবে স্বীকৃত।
ইসলামী ধারার রাজনীতির বিকাশে সাপ্তাহিক সোনার বাংলার ভূমিকা সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে এদেশে এ রাজনীতির বিকাশের পটভূমি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনার সুযোগ আছে। একই সঙ্গে আলোচনায় আসতে পারে, এদেশে মুসলিম জাতিসত্তা ও সংস্কৃতির বিকাশ, জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার ও ইসলামীকরণ, সুস্থধারার রাজনীতির বিস্তার, গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা রক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার প্রভৃতি প্রসঙ্গ। তবে সর্বোপরি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইসলামী আদর্শের বাস্তবায়নকারী ও একমাত্র মডেল রাসূলে করিম (সা.)-এর জীবনচর্চা। বলা যুক্তিযুক্ত যে, সোনার বাংলা পত্রিকা মূলত এসব বিষয় ও প্রসঙ্গগুলো সর্বদা গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে অগ্রসর হয়েছে। আর এ সবকটি আলোচ্য বিষয়ই ইসলামী ধারার রাজনীতির অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। সোনার বাংলা একটি সংবাদপত্র হিসেবে তার নিয়মিত প্রতিবেদন রচনা, সম্পাদকীয় প্রকাশ, উপসম্পাদকীয়, মত-অভিমত প্রভৃতির মাধ্যমে উপরোক্ত বিষয়গুলোকে উপস্থাপন করে এসেছে।
ইসলামী রাজনীতির পটভূমি
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ভারত বিভাগের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ইসলামপন্থী রাজনীতির বিকাশ ঘটতে থাকে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। কেননা পাকিস্তান-পরবর্তী বড় রকমের রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম গড়ে ওঠে মূলত যুক্তফ্রন্টকে কেন্দ্র করে। আর এতে একাধিক ইসলামপন্থী দলের অংশগ্রহণ ছিল। এ সময় যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ বিপুলভাবে পরাজিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় একের পর এক গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং তার কর্মসূচি গৃহীত হতে থাকে। এসব আন্দোলন ও কর্মসূচিতে ইসলামী ধারার রাজনীতির অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে। মাঝখানে কয়েকটি বছর (১৯৭১-১৭৭৬) বলতে গেলে এ রাজনীতি ছিল খুবই সীমিত ও অপ্রকাশ্যে।
বাংলাদেশ বিভিন্ন পর্যায়ে মোটদাগে তিন প্রকার রাজনীতির অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। এর একটি হলো গণতান্ত্রিক ধারা, দ্বিতীয়টি স্বৈরশাসনের ধারা এবং তৃতীয়টি সন্ত্রাসের ধারা। কিন্তু শেষোক্ত দুটি ধারা সাধারণ মানুষের দ্বারা বরাবর প্রত্যাখ্যাত হয়ে এসেছে। মাত্রার কমবেশি হওয়া সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক ধারাকেই মানুষ স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেছে এবং এর স্থিতিশীলতার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করে এসেছে।
এ ধারার সঙ্গে ইসলামপন্থী বলে বিবেচিত রাজনৈতিক দলগুলোর বরাবর সম্পৃক্ততা লক্ষ করা গেছে। রাজপথের আন্দোলন-কর্মসূচি, বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনসমূহে অংশগ্রহণ, সংসদ তথা পার্লামেন্টে ভূমিকা রাখা প্রভৃতিতে বিপুল মাত্রায় সক্রিয় থাকতে দেখা যায়। এগুলোই গণতান্ত্রিক রাজনীতির অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
গণতান্ত্রিক কলাকৌশলের মধ্যে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনায় জনগণ ও তাদের রাজনৈতিক দলের সুযোগ লাভ অন্যতম একটি পদ্ধতি। এছাড়া নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ, জাতীয় সংসদে ভূমিকা রাখা, সময়ে সময়ে দাবিনামা উপস্থাপন করা, প্রচলিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা, সরকার পদ্ধতি ও নির্বাচন অনুষ্ঠান পদ্ধতি নিরূপণেও রাজনৈতিক দলগুলো অবদান রেখে থাকে। আর এর সবগুলোতেই ইসলামপন্থী দলসমূহের সক্রিয় অবস্থান লক্ষ করা যায়।
এদেশের রাজনীতির বিকাশে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অবদান অনস্বীকার্য। প্রাপ্ত বিবরণে দেখা যায়, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করে ভাষা আন্দোলন শুরু হয়নি। বরং বলা যায় সেদিনের ঘটনা ছিল এর চূড়ান্ত পরিণতি পর্ব। এর আগে পাকিস্তান নামক ভূখণ্ড জন্মলাভের সূচনাকাল থেকেই ভাষার প্রশ্নটি উঠতে থাকে এবং ১৯৪৭ সালের পর থেকেই তা আন্দোলন আকারে দানা বাঁধতে থাকে। অন্যদিকে এ আন্দোলন সেসময় তেমন রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করেনি। কিছু বুদ্ধিজীবী ও কিছু সচেতন সাধারণ ছাত্র এ আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছেন। বরং বলা যায়, সূচনাকালের আন্দোলনে এর সঙ্গে আদর্শিক কোনো সম্পর্ক যদি স্থাপন করতে হয় তবে বলতে হয় যে, ইসলামপন্থী ব্যক্তিবর্গ ও ইসলামের প্রতি ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিবর্গই এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যদিও পরবর্তীকালে এর সঙ্গে সরকারপন্থী নেতৃবর্গ ছাড়া অন্য প্রায় সকলেই এর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন।
ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ষাট ও সত্তরের দশকের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, আইউববিরোধী সংগ্রাম, স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন প্রভৃতিতে ইসলামপন্থীদের খুবই উজ্জ্বল ভূমিকা রাখতে দেখা যায়। একাত্তরের গণতন্ত্রবিহীন সময়ের পটভূমি অতিক্রম করে স্বাধীন বাংলাদেশের আশি ও নব্বইর দশকের কালে বহুদলীয় গণতন্ত্রে উত্তরণের আন্দোলন এবং পরবর্তীকালের জাতীয় সংসদসহ ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ প্রভৃতি স্থানীয় নির্বাচনসমূহে বিপুলভাবে অংশগ্রহণ করার চিত্র পাওয়া যায়। এছাড়া সময়ে সময়ে কেয়ারটেকার তথা তত্ত্বাবধায়ক ও নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশগ্রহণ, রোডমার্চ-লংমার্চ কর্মসূচি, নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ, দফাওয়ারি দাবিনামা উপস্থাপন, সমাবেশ-মহাসমাবেশর আয়োজন, জাতীয় সংসদে ভূমিকা-অবদান রাখা প্রভৃতিতেও সক্রিয় দেখা যায় এসব দলকে।
অতঃপর আমরা সাপ্তাহিক সোনার বাংলা রাজনীতির যেসব অনুষঙ্গকে গুরুত্ব প্রদান করে এসেছে, সেগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করবো।
রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার ও ইসলামীকরণ
ইসলামী রাজনীতির প্রধানতম লক্ষ্য হলো দুনিয়ায় আল্লাহর সার্বভৌমত্ব এবং মানুষের প্রতিনিধিত্বভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এর মূল ব্যক্তব্যটি হলো, ইসলামী রাষ্ট্রের পুরো অট্টালিকা আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত। এর মূল কথা হলো, বিশ্ব সাম্রাজ্য আল্লাহর। তিনিই এ বিশ্বের সার্বভৌম শাসক। কোনো ব্যক্তি, বংশ, শ্রেণি, জাতি; এমনকি গোটা মানবজাতিরও এ সার্বভৌমত্বের ওপর বিন্দুমাত্র অধিকার নেই। আইন প্রণয়ন ও নির্দেশ প্রদানের অধিকার কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট।
এ রাষ্ট্রের প্রকৃত স্বরূপ হচ্ছে, এখানে মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে। আর এ প্রতিনিধিত্বের মর্যাদা মানুষ সঠিকভাবে লাভ করতে পারে মাত্র দুটি পন্থায়। হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো মানুষের নিকট আইন ও রাষ্ট্রীয় বিধান অবতীর্ণ হবে এবং তিনি তা অনুসরণ ও কার্যকর করবেন। কিংবা মানুষ সেই ব্যক্তির অনুসরণ ও অনুবর্তন করবে, যার নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে আইন ও বিধান অবতীর্ণ হয়েছে।
এই খেলাফত পরিচালনার কাজে এমন সব লোকই অংশীদার হবে, যারা এ আইন ও বিধানের প্রতি ঈমান আনবে এবং তা অনুসরণ ও কার্যকর করার জন্য প্রস্তুত থাকবে। তাদের এমন স্থায়ী অনুভূতির সাথে এ মহান কাজ পরিচালনা করতে হবে যে, সামষ্টিকভাবে আমাদের সকলকে এবং ব্যক্তিগতভাবে আমাদের প্রত্যেককে এর জন্য সেই মহান আল্লাহ তায়ালার সম্মুখে জবাবদিহি করতে হবে, গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছুই যার অবগতিতে রয়েছে। যার জ্ঞানের বাইরে কোনো কিছুই গোপন নেই।
উপরোক্ত ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেই রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার ও ইসলামীকরণ করা হবে। সেই প্রচেষ্টা বিগত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী যাবত উপমহাদেশের দেশগুলোয় অব্যাহত রয়েছে। সাপ্তাহিক সোনার বাংলার বিভিন্ন সংখ্যায় এ চেতনাকে সামনে রেখে অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এ পত্রিকার পক্ষ থেকে এটি অন্যতম প্রধান এজেন্ডা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
সুস্থধারার রাজনীতির বিস্তার
ইসলাম এমনই একটি ব্যবস্থা, যা সর্বদা সুস্থ সমাজব্যবস্থার প্রত্যাশা করে। তেমনই রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেও সুস্থ ও স্বাভাবিক গতিপথে পরিচালিত হওয়া উচিত বলে মনে করে। কিন্তু আমাদের চরম দুর্ভাগ্য যে, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরও দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। ফলে গণতন্ত্র অনেকটা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে। সঙ্গতকারণেই রাষ্ট্রব্যবস্থার শিরায় শিরায় স্থান করে নিয়েছে দুর্নীতি, অনিয়ম ও লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতা। রাজনীতি ও সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, সুস্থধারার রাজনীতির চর্চার স্থান দখল করেছে দুর্বৃত্তায়ন। আইন ও সাংবিধানিক শাসনের পরিবর্তে অবৈধ পেশিশক্তি, অনাচার সর্বোপরি সীমালঙ্ঘন তোর স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। রাজনীতি চলে গেছে সন্ত্রাসীবাহিনী ও অসৎপ্রবণ লোকদের নিয়ন্ত্রণে। দেশের চলমান রাজনীতিতে মেধা ও মননের চর্চার পরিবর্তে ‘নির্মূল’, ‘প্রতিরোধ’, ‘প্রতিহতকরণ’ ও ‘চামড়া তোলা’র স্লোগান উত্থিত হচ্ছে। এখন তার সাথে যুগপৎভাবে যুক্ত হয়েছে চামড়া বাঁচানোর রাজনীতিও। রাজনীতি সেবামূলক কাজ হলেও একশ্রেণির রাজনীতিকের ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণেই নিজেদের আত্মরক্ষা ও চামড়া বাঁচানোই রাজনীতির প্রধান উপজীব্য হয়ে উঠেছে। তাই মাঝে মাঝে শোনা যায়, ‘ক্ষমতায় না থাকলে কারো পিঠের চামড়া থাকবে না’। গণমানুষের কল্যাণের কথা বলে যখন রাজনীতি ক্ষমতা ও চামড়া বাঁচানোর অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে, তখন সে রাজনীতি আর কোনোভাবেই গণমুখী থাকে না বরং গণবিরোধী হয়ে ওঠে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এমন বাস্তবতার কারণেই চলমান রাজনীতি এখন সংহতির পরিবর্তে বিভক্তি, ঘৃণা ও বিদ্বেষের  পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে রাজনৈতিক মতপার্থক্য ও বোধ-বিশ^াসের ভিন্নতার কারণেই প্রতিপক্ষের ওপর জুলুম-নির্যাতন, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, এমনকি নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশে^র উদ্বেগও পরিস্থিতির ভয়াবহতার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
এ ভয়ানক রাজনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের প্রতি বরাবর দৃষ্টিপাত করে চলেছে জনপ্রিয় পত্রিকা সোনার বাংলা। সে মোতাবেক বরাবর তার ভূমিকা পালন করে চলেছে। এ বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন রচনা, সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় প্রকাশ, প্রবন্ধ-নিবন্ধ-অভিমত প্রকাশ অব্যাহত রেখেছে। কোনো আগ্রাসী ও তিরস্কারমূলক মনোভাব নয়- গঠনমূলক ধারায় পরিস্থিতির উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে।
গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা রক্ষা
একটি রাষ্ট্র ও সমাজে স্বাধীন মতপ্রকাশের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে পারার গুরুত্ব অপরিসীম। গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা রক্ষা ইসলামী রাজনীতির জন্যও সহায়ক বলে বিবেচিত হয়ে এসেছে। আবার স্বাধীন সংবাদপত্র গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্যও সহায়ক বটে। গবেষক-নিবন্ধকাররা উল্লেখ করে থাকেন, যে দেশে স্বাধীন সংবাদপত্র নেই, মিডিয়া স্বাধীন নয়, সেই দেশকে কোনোমতেই গণতান্ত্রিক বলা যাবে না। সংবাদপত্রে বিভিন্ন মত প্রতিফলিত হতে পারে। সংবাদপত্র রাষ্ট্র, সমাজ ও বিদ্যমান সরকারের ভুল-ত্রুটিগুলো তুলে ধরতে পারে। এতে করে সরকার ও সমাজের পরিচালকদের দৃষ্টি বিস্তৃত হয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন মত ও পথের মধ্য দিয়ে সঠিক মতটি গ্রহণ করে নিতে পারে সমাজ। কিন্তু গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যদি খর্ব হয়, তাহলে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না। যারা গণতন্ত্র চর্চা করেন, গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করেন, তারা জানেন গণতন্ত্র ও সংবাদপত্র পরস্পরের পরিপূরক। স্বাধীন সংবাদপত্র ছাড়া গণতন্ত্র অর্থহীন। আর গণতান্ত্রিক সমাজেই স্বাধীন সংবাদপত্র বিকশিত হয়। যেখানে গণতন্ত্র নেই, সেখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও নেই। বাংলাদেশের বিকাশমান গণতন্ত্রের জন্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খুবই জরুরি।
ইসলামী রাজনীতির বিকাশে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা রক্ষা করাকে সোনার বাংলা পত্রিকা নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একাত্ম করে নিয়েছে। ফলে বরাবরই লক্ষ করা যায় যে, এই গণমাধ্যমটি উল্লিখিত এ বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সেভাবেই তাদের নীতি ও কর্মপরিকল্পনা অনুশীলন করে এসেছে।
রাসূলের জীবনচর্চা  
ইসলামী আদর্শ ও রাজনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দু হলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)। তাঁর পবিত্র জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই মানবকল্যাণ ও মানবতার জন্য অনুকরণীয়। তাঁর জীবনচর্চা একজন মুমিনের জন্য যেমন আবশ্যক, ঠিক তেমনি মানবতাকে যদি মানবতার সঠিক মাপকাঠিতে নিয়ে আসতে হয়, তাহলে রাসূল (সা.)-এর অনুসরণ-অনুকরণ অপরিহার্য। তিনি দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের জন্য আদর্শ। একজন মানুষ যদি ঈমানের সঙ্গে তাঁর অনুসরণ করে, এর দ্বারা তার যেমন দুনিয়ার সাফল্য অর্জিত হওয়া সম্ভব, তেমন আখিরাতের সাফল্যও অনিবার্য। আর কেউ যদি ঈমান ছাড়াও রাসূলুল্লাহর জাগতিক জীবনের অনুসরণ করে, তবে সে জাগতিক জীবনে সাফল্য পাবে। এ বিষয়টিকে প্রবলভাবে গুরুত্ব প্রদান করে থাকে সোনার বাংলা পত্রিকা। তাই তারা প্রতি বছরই নবী (সা.)-এর জীবনীসহ বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধসম্বলিত স্মরণিকা বা বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে থাকে। এর মধ্য দিয়ে রাসূলের সিরাতকেন্দ্রিক ইসলামের পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থার চিত্র উঠে আসে।
উপসংহার : ইসলাম যেমন নিছক কোনো ধর্ম বা মতবাদমাত্র নয়, তেমনি ইসলামী রাজনীতি কোনো গতানুগতিক রাজনীতির নামও নয়। এটি যেমন আল্লাহর একমাত্র মনোনীত জীবনব্যবস্থা, তেমনি স্বাভাবিকভাবেই এর রাজনৈতিক প্রক্রিয়াও শ্রেষ্ঠতম হতে বাধ্য। তাই দেখা যায়, ইসলামী রাজনীতি বিগত দিনগুলোয় যেসকল নেতৃত্ব তৈরি করেছে, সেগুলো ইতিহাসের অন্যতম আদর্শ ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। জ্ঞান অর্জনে, আদর্শ ধারণে, চারিত্রিক দৃঢ়তায়, রাজনৈতিক কুশলতায়, সাংগঠনিক দক্ষতায়, ত্যাগ স্বীকারে এবং সর্বোপরি ব্যক্তিগত কুরবানি প্রদানে তাঁরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এসব দৃষ্টান্ত অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। এই পুরো বিষয়টি সোনার বাংলা পত্রিকা সার্বিকভাবে ধারণ করতে পেরেছে এবং এর আলোকে তার নীতি ও কর্মপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়েছে। ফলে এটি দেশের প্রত্যন্ত
অঞ্চল পর্যন্ত বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে। এ ধারা সামনের দিনগুলোয়ও অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গ্রন্থপ্রণেতা।



এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।