রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ২য় সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ॥ ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী ॥ ২৯ মাচ ২০২৪

॥ ইবরাহীম খলিল ॥
সংবাদপত্র কিংবা সাংবাদিকদের ভয় পান না- এরকম অপরাধী তাবৎ দুনিয়ায় কয়জন আছে, সেটা হয়তো গবেষণা করে পাওয়া যাবে কিনা, সন্দেহ আছে। তবে সর্বজনীনভাবে এটা নির্দিদ্বায় বলা যায়- অধিকাংশ অপরাধীই চান না, তার অপরাধ সাংবাদিক জেনে যাক কিংবা পত্রিকাতে প্রকাশিত হোক। তবে ব্যতিক্রম নাই, সেটা বলা যাবে না। অনেকে আবার নিজেকে জাহির করার জন্য সংবাদপত্রের শিরোনাম হতে চান বৈ-কি? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের একাধিক ব্রিফিংয়ে এসব কথা শোনা গেছে। তবে সরল দৃষ্টিতে দেখা যায়, যদি কোনো অপরাধী জানতে পারেÑ তার পেছনে কোনো সংবাদপত্র কিংবা সাংবাদিক লেগে আছে, তাহলে আদৌ অপরাধ করবে কিনা, তা একবার নয়, অনেকবার ভেবে দেখবে। অনেকাংশে সেই অপরাধী তার অপরাধ কার্যক্রম লুকাতে চাইবে নয়তো অপরাধ ছেড়ে দেওয়া ছাড়া তার আর কোনো উপায় থাকবে না।  
প্রাসঙ্গিক কারণেই সাপ্তাহিক সোনার বাংলার পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, সভ্য দেশের তকমাওয়ালা যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া ‘ওয়াটার গেট’ কেলেঙ্কারি কথা।  বিশ্বের তাবৎ কেলেঙ্কারির মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত এবং জনপ্রিয়ও বটে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭তম প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এ ঘটনার খলনায়ক। ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধী ডেমোক্রেট পার্টির রাজনৈতিক তথ্য শুনতে ওয়াশিংটন ডিসির ‘ওয়াটার গেট’ ভবনে আড়িপাতার যন্ত্র বসায় ক্ষমতাসীন রিপাবলিক পার্টির প্রশাসনিক কর্মকর্তা। পরে এ ঘটনা ফাঁস করে দেন ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা। রিচার্ড নিক্সন এ ঘটনার সাথে হোয়াইট হাউসের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে পুরো ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সাংবাদিকরা পেছনে লেগে থাকার কারণে সেটা আর সম্ভব হয়নি। তদন্তে রিপোর্টে ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এর ফলে নিক্সনের সম্পৃক্ততা সামনে চলে আসে। নিক্সনের অফিস থেকে ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারির তদন্ত কর্মকর্তারা একটি টেপ রেকর্ডার উদ্ধার করেন যেটিতে নিক্সনের কথোপকথন রেকর্ড করা ছিল। এখানেই ফেঁসে যান তিনি।  অভিশংসন হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ৯ আগস্ট ১৯৭৪ সালে প্রেসিডেন্ট পদ হতে পদত্যাগ করেন। এ ঘটনার পুরো কৃতিত্ব সংবাদপত্রের। এত গেল আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কথা।
এবার আসি দেশের একটি ঘটনায়। বাংলাদেশে কিশোর গ্যাং রয়েছে, সে কথা কিছুদিন আগেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অস্বীকার করতো। কিন্তু সংবাদপত্রে ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রচার হওয়ায় কিশোর গ্যাংদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একইভাবে ধনীর দুলালরাও যে এ কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত, সেটাও প্রতিষ্ঠিত করে সংবাদপত্রগুলো। আবার রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে যে কিশোরগ্যাং গড়ে ওঠে তাও জনসম্মুখে আনে সংবাদপত্র। এখন কয়েক দিন পরপরই কিশোর গ্যাংদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার খবর পাওয়া যায়। কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধের ধরন, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার কারণ, এ অপরাধের বিস্তারসহ নানা দিক উদ্ঘাটনে সাংবাদপত্রের তৎপরতা উল্লেখযোগ্য। এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাংয়ের উপস্থিতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জনসাধারণের কাছে তুলে ধরার মাধ্যমে এ ভয়াবহ অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতেও সহায়তা করে।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এবং চাকরির প্রশ্ন ফাঁস সম্পর্কিত অনুসন্ধান ও এর পেছনে জড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদের কথাও তুলে ধরা হয়েছে সংবাদপত্রে। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়। এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও সংবাদপত্রে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার কারণে এসব ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরীক্ষার আগে এসব বিষয়ে পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে ইদানীং আর প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর শোনা যাচ্ছে না।
মহামারি করোনাকালীন ভুয়া করোনা সনদ ব্যবহার, নকল চিকিৎসাসামগ্রী বিক্রয়সহ ইত্যাদি অভিনব অপরাধের  ঘটনা দেশে ঘটেছে। এসব ভয়াবহ অপরাধের অনুসন্ধান করেছে সংবাদপত্রগুলো। ফলে অপরাধীরা বিচারের আওতায় এসেছে। তাদের অনেকের দীর্ঘদিন জেলে বাস করতে হয়েছে। কারো কারো দীর্ঘমেয়াদি সাজা হয়েছে। সংবাদপত্রের দায়িত্ব মূলত এসব অপরাধ উদ্ঘাটন এবং জনগণকে সচেতন করা। বিশেষ করে সামাজিক বিভিন্ন আন্দোলনে সংবাদপত্র জনসাধারণ এবং সরকারের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেন। জনসাধারণের মতামত উপস্থাপনের মাধ্যমে এবং সরকারের নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে সংবাদ উপস্থাপনার মাধ্যমে সামাজিক সংস্কারেও সংবাদপত্র গুরুদায়িত্ব পালন করে থাকে।
তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে অপরাধ দুভাবে ঘটে। প্রথমত, প্রকাশ্যে এবং দ্বিতীয়ত, গোপনে। প্রকাশ্যে ঘটা অপরাধ গুলো যেমন দিনে কিংবা রাতের বেলা অনেক মানুষের সামনে খুন-জখম রাহাজানি এসবকে বুঝি। প্রকাশ্যে যেসব অপরাধ ঘটে তার চাক্ষুষ প্রমাণ পাওয়া যায়। সাক্ষী পাওয়া যায় সহজেই। ফলে এর বিচারিক প্রক্রিয়া সহজ হয়। তবে এখানে বলার বিষয় হলো- ঘটে যাওয়া অপরাধ যদি বড় হয়, তাহলে স্থান পায় সংবাদপত্রের পাতায়। মনস্তাত্ত্বিক কারণেই কোনো অপরাধের ঘটনা সংবাদপত্রের পাতায় ছাপা হলে সেই অপরাধের গুরুত্ব বেড়ে যায়। সেই ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে থাকে। অনেক সময় পত্রিকার খবরের কারণে তারা নিজেরাও তদন্তের সঙ্গে সংযুক্ত হন। তাগিদ দেন। ফলে তদন্ত হয় দ্রুততার সঙ্গে। কেবল সংবাদপত্রে ছাপা হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে বিচার প্রক্রিয়াও শেষ হয় দ্রুত। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগী দ্রুত বিচার পেয়ে যান। সুতরাং মনেই করা হয় সংবাদপত্রে ছাপা হওয়া মানেই দ্রুত বিচার পাওয়া। বিষয়টি যদি এভাবে বলি যে, সংবাদপত্র ফোর্থ স্টেটের ভূমিকা পালন করার কারণে একশ্রেণির লোক অপরাধই করে না। তারা মনে করে অপরাধ করলে ধরা খেয়ে যাওয়ার ভয় আছে। বিশেষ করে সংবাদপত্রে তা ছাপা হলে তার সম্মান হানি হবে। সমাজে মুখ দেখানো যাবে না। মানুষ আমাকে ঘৃণার চোখে দেখবে। মামলা হবে জেল-জরিমানা হবে। অবশ্য এ কাতারে খোদাভিরু মানুষও রয়েছেন। অপরাধের ক্ষেত্রে তারা মনে করে গোপেনে অপরাধ করলেও পরকালে এর জবাবদিহি করতে হবে। দুনিয়ায় লাঞ্ছনার পাশাপাশি আখিরাতে ভোগ করতে হবে কঠোর আজাব।  
পেশাগত জীবনে বহুবার দেখেছি কোথাও ন্যায়বিচারপ্রাপ্তি নিয়ে সংশয় দেখা দিলে ভুক্তভোগী চলে আসেন সংবাদপত্র অফিসে। সেই খবর সত্য হলে অনুসন্ধান করে সংবাদপত্রে ছাপা হওয়ার পর ন্যায়বিচার নিশ্চিত হওয়ার ঘটনা অহরহ রয়েছে। আবার অনেকেই জাতীয় প্রেস ক্লাব কিংবা ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে বিচার চান সংশ্লিষ্টদের কাছে। ফেনীতে আগুনে পুরিয়ে মাদরাসাছাত্রী নুসরাতকে হত্যার কথা যদি উদাহরণ দিই, তাহলে এটা হবে এর একটি উদাহরণ। এই দেশে হাজার হাজার মামলা রয়েছে, যেখানে বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। কিন্তু সংবাদপত্রগুলো নিয়মিত নজরদারি এবং ফলোআপ করার কারণে খুব দ্রুত সময়ে মামলার রায় হয়ে গেছে।
এবার আসি গোপনে কিংবা ছদ্মবেশে ঘটে যাওয়া অপরাধের পর্যালোচনায়। রাতের আঁধারে কিংবা অপ্রকাশ্যে ঘটে তার রহস্য উদ্ঘাটন করতে হয়। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয় সংবাদপত্রকে। অপরাধ উদ্ঘাটনের পাশাপাশি অপরাধের কারণ নির্ণয় করতে হয়। ঘটনাটি সামনে আসে অনুসন্ধানের মাধ্যমে। সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করে কিছু বিশেষ রিপোর্ট সংবাদপত্রে ছেপে দেন। ফলে চারদিকে হইচই শুরু হয়। নজরে আসে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হয় অপরাধীদের বিরুদ্ধে। ‘ওয়াটার গেট’ কেলেঙ্কারির ঘটনা এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মাদকদ্রব্য পাচার সম্পর্কিত অনুসন্ধানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি কথিত কতিপয় সাংবাদিকরাও মাদকদ্রব্য পাচারের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন অপরাধ চক্রের তথ্য জনসাধারণের কাছে উপস্থাপন করছেন। সংবাদপত্রে এসব রিপোর্ট ছাপা হলে তৎপর হয়ে ওঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বেড়ে যায় গ্রেফতার আটকের মাত্রা। গা-ঢাকা দিতে বাধ্য হয় মাদক কারবারিরা। বাধ্য হয়েই অপরাধীদের অবাধে অপরাধ করা থেকে বিরত থাকতে হয়। কেউ কেউ গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘ জেলখানার বাসিন্দা হন। সংবাদপত্রের এহেন ভূমিকা পরিবারিক, সামাজিক এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ফলে পরিবার সমাজ দেশ বড় রকমের ক্ষতি থেকে বেচে যায়। তাই রাষ্টের ৪র্থ স্তম্ভখ্যাত সংবাদপত্র অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যাক- ১৮৭২ সালের মাঝামাঝিতে জুলুস চেম্বার্স নামের নিউইয়র্ক ট্রিবিউনের এক সাংবাদিক মানসিক হাসপাতালের ভেতরে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে, কীভাবে সেখানে মানসিক বিকারগ্রস্তদের রাখা হচ্ছে, তা জানার জন্য নিজেই মানসিক রোগী সেজে ভর্তি হয়ে যান ব্লুমিংদাল এসাইলাম নামের শহরের এক মানসিক হাসপাতালে। তিনি পর্যবেক্ষণ করে জানতে পারেন অন্তত ১২ জন লোককে আটকে রাখা হয়েছে, সেখানে যারা অসুস্থ বা মানসিক বিকারগ্রস্ত নয়। খবর ছাপার সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শুরু হয় এবং প্রমাণিত হয় তার অভিযোগের সত্যতা। পরবর্তীতে তদন্ত রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে মুক্তি পায় সেই ১২ রোগী, যারা সুস্থ হওয়া সত্ত্বেও মানসিক বিকারগ্রস্ত হিসেবে সেই হাসপাতালে ছিলেন। এ রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে আমেরিকান সরকার তাদের দেশের লুনাসি অ্যাক্ট বা পাগলামি আইনে পরিবর্তন ঘটাতে বাধ্য হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলে থাকেন, ‘কোনো অপরাধই চিরতরে নির্মূল করা সম্ভব না’। তবে সকলের সহযোগিতা পেলে অপরাধ দমন করা যায। উন্নত রাষ্ট্রগুলোয়ও অপরাধ হচ্ছে। কোনো দেশই অপরাধ মুক্ত নয়। আমাদের সমাজে অনেক সমস্যা রয়েছে। অনেক অপরাধ সংঘটিত হয়। এসব অপরাধ দমনে সবাই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম বা সংবাদপত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সুন্দর এবং স্বচ্ছ সমাজ বির্নিমাণে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরসীম।
সংবাদপত্রের তৎপরতার কারণে অপরাধজগতের বিভিন্ন সিন্ডিকেটের খবরসহ করপোরেট অনিয়মজনিত নানা বিষয় উদ্ঘাটিত হয়।  সমাজের ভোক্তা সাধারণের অধিকার খর্ব করার প্রক্রিয়া, দেশের সীমান্তে চোরাচালানের তথ্য, পরিবেশ দূষণের কারণসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ঘটনা জনগণের সামনে তুলে ধরে সংবাদপত্র। সংবাদপত্রের কারণে বহু অপরাধী শাস্তি পেয়েছে। অনেক অপরাধী সংবাদপত্রকে ভয় পান জমের মতো।
বিভিন্ন ঘটনা অনুসন্ধান করার মাধ্যমে অপরাধ দমনে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারেন সংবাদমাধ্যম। পুলিশ যেমন নিজেদের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে অপরাধ দমনের উদ্দেশ্যে অপরাধীকে আইনের আওতায় আনে, তেমনি সংবাদপত্র  মানুষের কল্যাণে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে পুলিশকে সহযোগিতা করতে পারেন। সংবাদপত্রে অপরাধ ও দুর্নীতি সম্পর্কিত তথ্য প্রতিবেদন উপস্থাপনের প্রতিফলন হিসেবেই পরবর্তীতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
বাংলাদেশের দৃশ্যপট ছাড়াও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং অপরাধ দমনে সংবাদপত্রের ভূমিকা অপরিসীম। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোয় ঘটে যাওয়া অপরাধগুলো এবং বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কিত তথ্যের সত্যতা মানুষের চোখের সামনে তুলে ধরে সংবাদপত্র। সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তান, ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ণনা বিশ্বদরবারে তুলে ধরার মাধ্যমে বিশ্ব রাজনীতিকদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করতে পারে সংবাদমাধ্যমগুলো।
দুঃখজনকভাবে বর্তমান যুগের একটি আলোচিত বিষয় হচ্ছে মিডিয়া ট্রায়াল। কিন্তু আইনি বিচারব্যবস্থা সম্পন্ন হওয়ার আগে কোনো ব্যক্তিকে অপরাধী বলে সাব্যস্ত করে সংবাদ মাধ্যমগুলোয় প্রচার করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।  অপরাধের অনুসন্ধানের বিষয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এমন তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকা এবং তদন্তের স্বার্থে গোপনীয়তা রক্ষা করার ব্যাপারেও তাদের সতর্ক থাকা উচিত।
অন্যভাবে বলতে গেলে একটি দেশের সংবাদপত্র যদি সমাজের সমস্যা এবং অপরাধ আলোকপাতের ক্ষেত্রে সরব ভূমিকা পালন না করে তা জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে একটি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকতার নীরবতা একটি দেশকে গণহত্যার মতো অপরাধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
যেহেতু সংবাদপত্রের সম্পাদক ও প্রকাশকদের জনসাধারণের মাঝে সতর্কতা সৃষ্টির গুরুদায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন, তাদের অবশ্যই নীতি-নৈতিকতা মেনে খবর প্রচার করতে হবে। যেসব বিষয়ের ফলে সমাজে অসহিষ্ণু পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে, সে ধরনের সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আমার মনে হয় বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোর নতুন করে ভাববার সময় এসেছে। যেহেতু স্থান, কাল, পাত্রভেদে অপরাধের ধরন ও কারণ ভিন্ন ভিন্ন। একেক দেশে অপরাধের ধরন একেক রকম। বাংলাদেশে যা অপরাধ, অন্য দেশে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য নাও হতে পারে। তাই প্রত্যেকটা অপরাধের পেছনের কারণ খুঁজে আনতে হবে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এটা বেশি জরুরি। এক্ষেত্রে সংবাদপত্রগুলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।
লেখক : সাংবাদিক, অপরাধ বিশ্লেষক।



এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।