আওয়ামী লীগের পতাকাতলে ‘অবৈধ বিক্ষোভের’ সাহস দেখালে আইনের মুখোমুখি হতে হবে: প্রেস সচিব


৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০০

স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগের পতাকাতলে কেউ যদি ‘অবৈধ বিক্ষোভ’ করার সাহস করে, তবে তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
গত ২৯ জানুয়ারি বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা দেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার কোনো ধরনের চেষ্টাকে সুযোগ দেব না।’
আওয়ামী লীগ মঙ্গলবার রাতে দলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রচারপত্র বিলি, অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শফিকুল আলম এসব কথা লেখেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। দলের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দলটির নেতা-কর্মীদের অনেকেই বিদেশে। দেশে থাকা নেতারাও আত্মগোপনে। এমন অবস্থায় ফেসবুকে দলটি কর্মসূচির কথা জানাল।
শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘আগস্টে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো ন্যায্য বিক্ষোভ বন্ধ বা নিষিদ্ধ করেনি। আমরা সমাবেশ করার স্বাধীনতা এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। গত ২৯ জানুয়ারি বুধবার সকালে গণমাধ্যমের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সাড়ে পাঁচ মাসে কেবল ঢাকায় কমপক্ষে ১৩৬টি বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বিক্ষোভের ফলে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবু সরকার কখনো বিক্ষোভ-সমাবেশের ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি।’
সরকারের কি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে বিক্ষোভ করার সুযোগ দেওয়া উচিতÑ এ প্রশ্ন তুলে শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘জুলাই-আগস্টের ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগের কর্মীরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের হত্যায় অংশ নিয়েছিল। তাদের পরিচালিত হত্যাকাণ্ডে শহীদ হয়েছেন কয়েকশ’ তরুণ শিক্ষার্থী; এমনকি নাবালক শিশুরাও। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় গণহত্যা, খুন ও তাণ্ডবের জন্য দায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার।’
‘গত ২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার কয়েকজন বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মীর সাক্ষাৎকারের বরাতে নিউইয়র্কভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, শেখ হাসিনা তার ১৬ বছরের একনায়কত্বের শাসনামলে সরাসরি হত্যা এবং জোরপূর্বক গুমের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি একটি চোরতন্ত্র (ক্লেপ্টোক্রেসি) এবং খুনি শাসনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। নিরপেক্ষ ও স্বাধীন একটি প্যানেল বলছে, শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে তার ঘনিষ্ঠরা ২৩৪ বিলিয়ন (২৩ হাজার ৪০০ কোটি) ডলার পাচার করেছে। দুর্নীতিগ্রস্ত চুক্তি থেকে কোটি কোটি ডলার চুরির দায়ে হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে এখন তদন্ত চলছে।’ যোগ করেন শফিকুল আলম।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘প্রায় সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তি জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন। প্রায় তিন হাজার জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে 12হত্যা করা হয়েছে। শাপলা চত্বরের সমাবেশ এবং মাওলানা সাঈদীর বিচারিক রায়ের পর বিক্ষোভকারীদের ওপর গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। পুলিশ বাহিনী হাসিনার শাসনামলে পুলিশ লীগে পরিণত হয়েছিল। হাসিনার একনায়কতন্ত্রে প্রায় ষাট লাখ বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ভুয়া ও গায়েবি মামলা দেওয়া হয়। এমনকি দেশের প্রথম হিন্দু প্রধান বিচারপতিকেও নির্মমভাবে মারধর করা হয়, পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় এবং নির্বাসনে পাঠানো হয়।’
যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ এ গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড এবং প্রকাশ্য দুর্নীতির জন্য ক্ষমা না চাইবে; যতক্ষণ তাদের অন্যায়কারী নেতা-কর্মীরা বিচার ব্যবস্থার কাছে আত্মসমর্পণ করে তাদের অপরাধের জন্য বিচারকার্যের প্রক্রিয়া শুরু করে পাপমোচন করতে উদ্যোগ না নেবে; যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ তাদের বর্তমান নেতৃত্ব ও ফ্যাসিবাদী আদর্শ থেকে নিজেকে আলাদা না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ করার অনুমতি দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করেন শফিকুল আলম। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘মিত্রবাহিনী কি নাৎসিদের বিক্ষোভ করার অনুমতি দিয়েছিল?’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব আরও লিখেছেন, পৃথিবীর কোনো দেশ কি একদল খুনি এবং দুর্নীতিবাজ চক্রকে আবার ক্ষমতায় আসতে দেবে? কোনো দেশই জবাবদিহিতা ছাড়া স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরার অনুমতি দেয় না। বাংলাদেশে খুনিরা কোনো প্রতিবাদ-সমাবেশ করলে জনগণ তার বিরুদ্ধে কঠিন জবাব দেবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার কোনো ধরনের চেষ্টাকে সুযোগ দেব না। আওয়ামী লীগের পতাকাতলে কেউ যদি অবৈধ বিক্ষোভ করার সাহস করে, তবে তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে।’
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে নির্যাতন ও নিপীড়নের প্রতিবাদ এবং দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন দাবিতে ১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি লিফলেট বা প্রচারপত্র বিলি, ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ, ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ, ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক কঠোর হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।