সংবাদ শিরোনামঃ

সাঁড়াশি অভিযানের আড়ালে প্রতিপক্ষ দলন ** ঈদের পরে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে ২০ দল ** বাজেট বৈষম্যমূলক-অসহনীয়, ব্যবসাবান্ধব নয় ** সিয়ামের প্রকৃত শিক্ষাকে ধারণ ও বাস্তব জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে হবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল ** বিরোধী রাজনীতিকদের চাপে রাখার কৌশল ** নিরপরাধ নেতাকর্মীদের জীবন নিয়ে নির্মম তামাশা মেনে নেয়া যায় না : ছাত্রশিবির ** দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম-গঞ্জে ** নেপথ্য খলনায়কদের আড়াল করতেই ক্রসফায়ার! ** সমাজে বিভক্তির কারণেই মৃত্যুর পরেও সম্মান পাননি মনিরুজ্জামান মিঞা : ড. এমাজউদ্দিন ** ‘অভিযান ছিল লোক দেখানো, বাণিজ্য হয়েছে পুলিশের’ ** ক্রসফায়ার : একটি ধারাবাহিক গল্প ** ক্রসফায়ার নয়, আদালতের মাধ্যমেই দোষীদের শাস্তি দিতে হবে ** টাকার ‘সাগর’ এবং অর্থমন্ত্রী ** রোজার তাৎপর্য ** একটি পারিবারিক বৈঠকের কিছু কথা ** ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত কুষ্টিয়ার বুটিকস কারিগররা ** ‘বিশেষ’ অভিযান শেষ হলেও বন্ধ হয়নি গণগ্রেফতার ** সারাদেশে বিভিন্ন সংগঠনের ইফতার মাহফিল **

ঢাকা, শুক্রবার, ১০ আষাঢ় ১৪২৩, ১৮ রমজান ১৪৩৭, ২৪ জুন২০১৬

মোহাম্মদ উবাইদুল্লাহ
গ্রীষ্মকাল বাংলা সনের প্রথম ঋতু। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ এই দুই মাস মিলে গ্রীষ্মকাল।  খাঁ-খাঁ রোদ আর দমবন্ধ গরমে অতিষ্ঠ প্রাণ। কাঠফাটা রোদ আর প্রাণ আইঢাই করা গরম। অসহ্য ভ্যাপসা গরম আর রৌদ্রদগ্ধতা ও লোডশেডিং বিড়ম্বনাসহ তাপদাহের ধকল কাটিয়ে ওঠতে, একটু স্বস্তি পেতে শহর ও গ্রামের মানুষ গাছের ছায়ায় মাদুর পেতে শ্রান্ত-ঘর্মাক্ত দেহ এলিয়ে দেয়। রাস্তার মানুষ ছায়াঘন জায়গায় ক্ষণিকের জন্য থমকে দাঁড়ায়। এছাড়া শহরের বৈদ্যুতিক পাখা ও এয়ারকন্ডিশন যখন আকার্যকর হয়ে পড়ে তখন হাতপাখা ও বরফকুচির শরবত হয়ে ওঠে নাগরিকদের প্রশান্তির শেষ অবলম্বন। দুরন্ত শিশু-কিশোরদের দল নদী-পুকুর কিংবা খাল-লেকের পানিতে স্বস্তির খুঁজে দাপাদাপি করে বেড়ায়। প্রাণীকুল পানিতে শরীর ডুবিয়ে আরামবোধ করে।

রৌদ্রদগ্ধতায় মানুষের জ্যৈষ্ঠকে শুধুই নিন্দাবাদ দেয়ার কথা। কিন্তু ঘটনাটি উল্টো ঘটে থাকে। পুরাকালের পাণ্ডুলিপি জুড়ে জ্যৈষ্ঠবন্দনাই উজ্জ্বল। এর কারণ আর কিছু নয়। বাহারী ফলের রসালো আয়োজন। বর্ণময় ফলের কোনটি গোল, কোনটিবা লম্বা, কোনটির গায়ে ভোঁতালো কাঁটা রয়েছে। মোহনীয় ঘ্রাণের এসব ফলের মিষ্টি-মধুর রসে পাগলপারা হয় মাছি-মৌমাছির মতো কীটও। বাংলার বারো মাসের মধ্যে জ্যৈষ্ঠের বিশিষ্টতা মহান আল্লাহরই সমহিমা প্রচারণা। সঙ্গতকারণেই এদেশের আমুদে, রসনা বিলাসীসহ কবি-সাহিত্যিকদের জ্যৈষ্ঠের পোশাকী নাম ‘মধুমাস’। দুঃসহ আগুনের হলকার মধ্যেও নানান প্রাকৃতিক রসে তেষ্টা মেটানোর গৌরবময় প্রয়াসে বৈশাখ বিদায় নিয়েছে, এসেছে অনন্য সাধারণ মধুমাস। অনন্য মাস জ্যৈষ্ঠ। জ্যৈষ্ঠের আছে বাহারি রূপ, রস ও গন্ধ। এ সময়ে আম, জাম, লিচু, কাঁঠালসহ প্রায় সব ধরনের মওসুমী ফল পাকতে শুরু করে। বাতাসে থাকে মিষ্টি ফলের মৌ-মৌ গন্ধ।

এই সময়ের মধুর রসে ভরা ফলে বাঙালির রয়েছে বিশেষ দুর্বলতা। বাহারি ফলের মিষ্টি স্বাদ আর নানা উপলক্ষ তাই ফলের মাস জ্যৈষ্ঠকে এনে দিয়েছে স্বতন্ত্র পরিচিতি।

আমাদের প্রিয় কবি পল্লীকবি জসীম উদ্দীন এর সেই আলোড়িত পদ্যটি মনে পড়ে

‘আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা/ ফুল তুলিতে যাই

ফুলের মালা গলায় দিয়ে/ মামার বাড়ি যাই

মামার বাড়ি ঝড়ের দিনে/আম কুড়াতে সুখ

পাকা জামের মধুর রসে/রঙিন করি মুখ।’

পাকা জামের মধুর রসে মুখ রাঙা করার মাস জ্যৈষ্ঠকে তাই মধু মাস বলা হয়। এ মাসে ফলের রাজা আম, মুখ রাঙানো জাম, আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, আতা আনারস, ফুটি, জামরুল, গোলাপজাম, লটকনসহ আরও কত রকমের ফল পাওয়া যায়। শহর-বন্দর-গ্রামে যেখানেই যাই দমের হাওয়ায় মিষ্টি একটা গন্ধ পাই। যা প্রাণকে সুবাসিত আবেশে ভরিয়ে তোলে। রসালো ফলের সহজলভ্যতার কারণে জ্যৈষ্ঠ মাস মধু মাস। কিন্তু জ্যৈষ্ঠ মাস যে ফুলেরও মাস। এ মাসে নানা রঙের, নানা গন্ধের ফুলও ফোটে। গ্রামকে হলুদ রঙে সাজিয়ে হলদে পরী বানায় সোনালু ফুল, পাশাপাশি জুঁই, জারুল, কৃষ্ণচূড়া আর মৌ মৌ সৌরভে আকুল করা চাঁপা, গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা, টগর আরও কত কী অপরূপ ফুল ফোটে। এ ফুল শুধু বাগানের বা প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ায় না পুজো-পার্বনে, বিয়ে, গায়ে হলুদ এমনকি অতিথি বরণেও ফুলের কদর দিন দিন বাড়ছে। আজকাল তো শহরে-বন্দরে যত্রতত্র ফুলের দোকানও গড়ে উঠেছে। ফুলের সমাদর বাড়বেই তো। ফুল পছন্দ করে না এমন মানুষ কি কেউ আছে? মনে পড়ে কবিতার এই দুইটি পংক্তি.. জুটে যদি মোটে একটি পয়সা / খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি জুটে যদি মোটে দুইটি পয়সা / অর্ধেকে তার ফুল কিনিও হে অনুরাগি

বৈশাখ মাস মেলার মাস হিসেবে পরিচিতি পেলেও জ্যৈষ্ঠ মাসেও যে মেলা বসে আমরা তা অনেকেই জানি না। বাংলাদেশের অনেক জেলায় জ্যৈষ্ঠ মাসে মেলা বসে। আমাদের নরসিংদীতে অনেকমেলা হলেও কখনো জ্যৈষ্ঠ মেলা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। জ্যৈষ্ঠ মাস আরও দুটো কারণে আমাদের জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলা সাহিত্যের একজন বড় কবির জন্ম এই মাসে। ১১ জ্যৈষ্ঠ আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবেও বিশ্বে সমধিক পরিচিত। এছাড়া আমাদের প্রিয় মরমী শিল্পী, পল্লী গানের সম্রাট আব্বাস উদ্দিন আহমদের জন্মদিনও এ মাসের ১৩ জ্যৈষ্ঠ। তাঁর সুললিত কণ্ঠে গাওয়া গান এখনও আমাদের মন-প্রাণকে আলোড়িত করে, আবেগে আপ্লুত করে। দুঃসহ গরম আর প্রাণ আইঢাই করা দাবদাহ বাদ দিলে জ্যৈষ্ঠ মাস অতি প্রিয় মাস বাঙালির জীবনে। একদিকে রসালো ফলের হাতছানি অন্যদিকে ফুলের সুরভী জীবন ধন্য করে। সব মিলিয়ে জ্যৈষ্ঠ মাস আমাদের কাছে অনন্য, অপরূপা।

বাংলা সনের প্রচলন যেভাবে শুরু

১৫৮৪ সালে মুঘল সম্রাট আকবরের সময় সরকারিভাবে চালু করা হয় বাংলা ক্যালেন্ডার, যা বাংলা সাল নামে পরিচিত। এটা প্রথমে তারিখ-এ-এলাহি নামে পরিচিত ছিল এবং ১৫৮৪ সালের ১১ মার্চ এই প্রথা চালু করা হয়। যদিও এটা আকবর-এর রাজত্বের ২৯ বছর চালু করা হয় তবুও এর গণনা করা হয় ৫ নভেম্বর ১৫৫৬ সাল থেকে যখন সম্রাট আকবর সিংহাসনে বসেন তখন থেকে।

উৎপত্তির কারণ তারিখ-এ-এলাহি-র উদ্দেশ্য ছিল আকবরের রাজত্বকে আরো গৌরবময় করে তোলা এবং রাজস্ব আদায়ে কিছু সুবিধার জন্য। এর আগে মোঘল সম্রাট হিজরি সাল ব্যবহার করতেন রাজস্ব আদায়ের কাজে। কিন্তু হিজরি সাল ব্যবহার এর কারণে কৃষকদের সমস্যা হত কারণ চন্দ্র ও সৌর বছরের মধ্যে ১১ বা ১২ দিনের পার্থক্য ছিল। ফলে ৩১টি চন্দ্র বছর ৩০টি সৌর বছর এর সমান হয়ে যেত।

তখন রাজস্ব চন্দ্রবছর অনুযায়ী আদায় করা হত আর চাষাবাদ করা হত সৌরবছর অনুযায়ী। সম্রাট আকবর তার শাসনের প্রথমেই এই সমস্যা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন এবং এর একটি বৈজ্ঞানিক কিন্তু কার্যকর সমাধান খুঁজছিলেন। তাই তিনি প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক এবং জ্যোতির্বিদ আমির ফাতুল্লাহ শিরাজীকে পরিবর্তন আনার আদেশ দেন।

৯৬৩ মহররমের প্রথম মাসকে তারিখ-এ-এলাহির প্রথম মাস ধরে গণনা করা শুরু হয়। যেহেতু ৯৬৩ মহররমের প্রথম মাস বৈশাখ মাসের সাথে মিলে যায় তাই বৈশাখই হয় তারিখ-এ-এলাহি-র প্রথম মাস।(আগে শাকাব্দ অনুযায়ী চৈত্র মাসকে প্রথম মাস হিসেবে ব্যবহার করত বাঙালিরা) বাংলা সাল ও অন্যান্য সালের মিল ও তফাত তারিখ-এ-এলাহি-র শুরুর পর যে ৪০০+ বছর অতিবাহিত হয়েছে তাতে হিজরি এবং বাংলা সালের মধ্যে ১৪ বছরের ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে, কারণ হিজরি হিসাব করা হয় চন্দ্রকে ভিত্তি করে আর বাংলা সাল হিসাব করা হয় সূর্যকে ভিত্তি করে। কিন্তু বাংলা সাল আর গ্রেগরিয়ান সাল-এর মধ্যে কোনো পার্থক্য হয়নি কারণ উভয়-ই সূর্যকে ভিত্তি করে গননা করা হয়।

প্রথমদিকে মাস এর নাম ছিল ফারওয়ারদিন, খোরদাদ, তীর, মুরদাদ, শাহরিয়ার, আবান, আযার, দে, বাহমান ইত্যাদি। এটা জানা যায়নি যে কেন মাসগুলোর নাম এখন বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ দেয়া হয়েছে। তবে মনে করা হয় যে ৭৮ খ্রিস্টাব্দে শাকা জাতির রাজত্বের সময় প্রচলিত শাকাব্দ থেকে নেয়া হয়েছে। মাসের নামঃ ১.বিশাখা (Librae) থেকে বৈশাখ ২. জাইষ্ঠা (Scorpii) থেকে জ্যৈষ্ঠ ৩. আষাঢ়া (Sagittarii) থেকে আষাঢ় ৪. শ্রাবনা (Aquilae) থেকে শ্রাবণ ৫. ভাদ্রপাদা (Pegasi) থেকে ভাদ্র ৬. আশ্বিনী (Arietis) থেকে আশ্বিন ৭. কৃতিকা (Tauri) থেকে কার্তিক ৮. পুস্যা (Aldebaran) থেকে পৌষ ৯.আগ্রৈহনী (Cancri) থেকে অগ্রহায়ণ ১০.মাঘা (Regulus) থেকে মাঘ ১১.ফাল্গুনী (Leonis) থেকে ফাল্গুন ১২.চিত্রা (Virginis) থেকে চৈত্র । সঠিক হিসাবের জন্য পরিবর্তন বাংলা সালের দৈর্ঘ্য ৩৬৫ দিন।

কিন্তু পৃথিবীর সুর্যকে প্রদক্ষিণ করতে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড লাগে। এই ঘাটতি দূর করার জন্য গ্রেগরিয়ান সালে প্রতি চার বছর পর পর ফেব্রুয়ারি মাসের সাথে একদিন যোগ করা হয়।

শুরুর দিকে বাংলা সাল এই অতিরিক্ত সময়কে গণনায় নেয়নি। পরে এই ঘাটতি দূর করার জন্য বাংলা একাডেমির তত্ত্বাবধায়নে এবং মুহাম্মদ শহীদুল্লাহের পরিচালনায় একটা কমিটি গঠন করা হয় ১৯৬৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। পরে কমিটির সুপারিশ-এ বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রত্যেক মাস কে ৩১ দিনের এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র মাসগুলো ৩০ দিনের হিসাবে গননা করা শুরু হয়। আর প্রতি চার বছর পর পর চৈত্র মাস কে ৩১ দিন ধরা হয়। আর এভাবেই আজকের এই বাংলা সালের প্রচলন হয়।

লেখক পরিচিতি : সিইও, নরসিংদীবিডি ডট কম।

ই-মেইল : obyd_777@yahoo.com

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।