সংবাদ শিরোনামঃ

সাঁড়াশি অভিযানের আড়ালে প্রতিপক্ষ দলন ** ঈদের পরে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে ২০ দল ** বাজেট বৈষম্যমূলক-অসহনীয়, ব্যবসাবান্ধব নয় ** সিয়ামের প্রকৃত শিক্ষাকে ধারণ ও বাস্তব জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে হবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল ** বিরোধী রাজনীতিকদের চাপে রাখার কৌশল ** নিরপরাধ নেতাকর্মীদের জীবন নিয়ে নির্মম তামাশা মেনে নেয়া যায় না : ছাত্রশিবির ** দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম-গঞ্জে ** নেপথ্য খলনায়কদের আড়াল করতেই ক্রসফায়ার! ** সমাজে বিভক্তির কারণেই মৃত্যুর পরেও সম্মান পাননি মনিরুজ্জামান মিঞা : ড. এমাজউদ্দিন ** ‘অভিযান ছিল লোক দেখানো, বাণিজ্য হয়েছে পুলিশের’ ** ক্রসফায়ার : একটি ধারাবাহিক গল্প ** ক্রসফায়ার নয়, আদালতের মাধ্যমেই দোষীদের শাস্তি দিতে হবে ** টাকার ‘সাগর’ এবং অর্থমন্ত্রী ** রোজার তাৎপর্য ** একটি পারিবারিক বৈঠকের কিছু কথা ** ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত কুষ্টিয়ার বুটিকস কারিগররা ** ‘বিশেষ’ অভিযান শেষ হলেও বন্ধ হয়নি গণগ্রেফতার ** সারাদেশে বিভিন্ন সংগঠনের ইফতার মাহফিল **

ঢাকা, শুক্রবার, ১০ আষাঢ় ১৪২৩, ১৮ রমজান ১৪৩৭, ২৪ জুন২০১৬

এইচ. এম. মুশফিকুর রহমান
মানব সন্তান যাদের মাধ্যমে পৃথিবীর মুখ দেখতে পান তাদের মধ্যে বাবা অন্যতম। বাবাকে নিয়ে প্রতিটি সন্তানের মাঝেই রয়েছে এক অন্যরকম অনুভূতি। এ অনুভূতি অন্য দশটি অনুভূতির চেয়ে ভিন্ন। ১৯ জুন বাবা দিবস। সারা বিশ্বের সন্তানরা পালন করবেন এই দিবসটি।

বিশ্বের প্রায় দেশই জুন মাসের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস পালন করে আসছে। আমাদের দেশে বাবা দিবসের ধারণা খুব পুরানো না হলেও এখন অন্যান্য দিবসের সাথে পালন করা হয়। এ দিবস উপলক্ষে পৃথিবীর সব বাবার প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা। আর যেসব বাবা দুনিয়া থেকে বিদায় হয়েছেন, তাদের জন্য রইল দু‘আ। বস্তুত বাবার মাধ্যমেই সন্তানের জীবনের শুরু। কোন সন্তান বাবার ঋণ কখনো পরিশোধ করতে পারে না। কঠোর শাসন, কোমল ভালোবাসা আর ত্যাগে অগ্রগামী যিনি, তিনিই তো বাবা। বাবারা যে কোনো ধরনের দুঃখ-কষ্ট অকাতরে সহ্য করেন। সবসময় চেষ্টা করেন সামান্য কষ্ট যেন সন্তানকে স্পর্শ না করে। সন্তানের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবে সারাজীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তারপরও বাবাদের সঙ্গে আমাদের সমাজের অনেকেই খারাপ আচরণ করে থাকেন। এটা কুরআন, হাদীস ও  ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ। এ কাজের প্রতি স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে শরীয়তে-ইসলামে।

এনসাইক্লোপেডিয়া জানাচ্ছে, জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বের প্রায় ৭৪টি দেশে বাবা দিবস উদযাপিত হয়। তৃতীয় রোববার হিসেবে এ বছর ১৯ জুন উদযাপিত হচ্ছে বাবা দিবস। বাবার প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা জানানোর জন্যই এই দিবস। যদিও বাবার প্রতি সন্তানের সে চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ প্রতিদিনই ঘটে। তার পরও পৃথিবীর মানুষ বছরের একটা দিনকে বাবার জন্য রেখে দিতে চায়। যেমনটা মায়ের জন্য করেছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাবা দিবসের প্রচলন। ইংরেজিতে ফাদার বা ড্যাড, জার্মানিতে ফ্যাটা, বাংলায় বাবা কিংবা ভারতীয়দের ভাষায় পিতাজি- যে নামেই ডাকুন না কেন পিতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা একই প্রকাশ পায়।

জানা যায়, বাবা দিবসের প্রচলন বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই। ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই প্রথম বাবা দিবস পালিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় প্রথম এ দিবসটি পালন করা হয়। আবার সনোরা স্মাট ডড নামে ওয়াশিংটনে এক নারীর মাথাতেও বাবা দিবসের আইডিয়া আসে।

যদিও তিনি ১৯০৯ সালে ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা একেবারেই জানতেন না। ডড এই আইডিয়াটা পান গির্জায় এক পুরোহিতের বক্তব্য থেকে, সেই পুরোহিত আবার মাকে নিয়ে অনেক ভালো কথা বলেছিলেন। তার মনে হয়েছিল মায়ের পাশাপাশি বাবাদের নিয়ে কিছু করা দরকার। ডড আবার তার বাবাকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর ১৯১০ সালের ১৯ জুন বাবা দিসব পালন শুরু করেন।

১৯১৩ সালে আমেরিকার সংসদে বাবা দিবসে ছুটি ঘোষণার জন্য একটি বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯২৪ সালে সে সময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। পরে ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বাবা দিবসে ছুটি ঘোষণা করেন।

গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশেও বাবা দিবস বেশ ঘটা করে পালিত হচ্ছে। উপহারের দোকানে ভিড় হচ্ছে, টেলিভিশন এবং বেতারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে, সংবাদপত্রে বিশেষ লেখা ছাপা হচ্ছে। বাবার  স্মৃতি এবং বাবাকে নিয়ে বিভিন্ন অনুভূতির কথা লিখছেন পাঠকরাও; বাবা দিবসে পাঠকের সে লেখাগুলো নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকা বিশেষ সংখ্যা বের করছে।

ইদানীং সবদেশেই বাবা দিবস উদযাপনের চিত্র অনেকটা একই রকম। বাবা দিবসে ছেলে-মেয়েরা বাবাকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠায়, শুভেচ্ছা কার্ড, ফুল, মগ, টাই, টি শার্টসহ বিভিন্ন ধরনের স্মারক উপহার দেয়।

বাবার জন্য এক দিনের ভালোবাসা নয়; বরং বছরের ৩৬৫টি দিনই ভালোবাসা ও ভালোলাগার জন্য হওয়া উচিত।

ইসলামে সন্তান প্রতিপালনকে যেমন বাবা-মায়ের ওপর সন্তানের হক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তেমনি বাবা-মায়ের সেবা এবং তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকে বাবা-মায়ের হক বা অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এটা নির্দিষ্ট কোন সময়, নির্দিষ্ট কোন দিন বা বছরে সীমাবদ্ধ নয়।

পবিত্র কুরআনের সূরা নিসার ৩৬ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে, “আল্লাহর ইবাদাত কর, কোন কিছুতে তার শরিক কর না এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার কর।” মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের আচরণ কেমন হবে সে সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা বনি ইসরাইলের ২৩ ও ২৪ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘‘তাদের কেউ অথবা উভয়ই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন তাদের সঙ্গে সুআচরণ কর এবং কখনো ওহ শব্দটিও উচ্চারণ কর না। তাদের সঙ্গে নম্রভাবে কথা বল এবং বল, হে আল্লাহ! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন করে আমাকে তারা  শৈশবে লালনপালন করেছেন।”

সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি নবী করিমকে (সা.) জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ কোনটি? তিনি বললেন- সময়মতো সালাত আদয় করা। আমি বললাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সঙ্গে উত্তম আচরণ করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। [বুখারি ও মুসলিম]

এই হাদীস থেকে জানা যায়, আল্লাহর তিনটি অতি প্রিয় কাজের মধ্যে একটি হলো বাবা-মা’র সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। অন্য আরেক হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল যোগ হতে থাকে- ১. সদকায়ে জারিয়া, ২. কল্যাণময় শিক্ষা ও ৩. এমন সৎ সন্তান- যে মৃত পিতা-মাতার জন্য দু‘আ করে।’’ [মুসলিম]

সৎ সন্তানের বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ট। এই হাদীসে, মৃত ব্যক্তির জন্য সৎ সন্তানের দু‘আ অনেক উপকারী এ কথা বলা হয়েছে।

পবিত্র কুরআন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসে বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে বারবার সচেতন করে দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় প্রয়োজনে জিহাদে অংশগ্রহণকে ইসলামে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বাবা-মায়ের সেবায় সন্তানের আত্মনিয়োগকে তার চেয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বুখারি শরিফের একটি হাদীস এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। ‘‘একবার এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিহাদে অংশগ্রহণের অনুমতি প্রার্থনা করল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার বাবা-মা কি জীবিত আছেন? লোকটি জবাব দিল, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, তুমি তাদের সেবাযতেœ নিজেকে আত্মনিয়োগ কর। বাবা-মায়ের প্রতি অনুগত থাকাকে ইসলাম এতটাই গুরুত্ব দিয়েছে যে, তারা যদি মুশরিকও হয় তারপরও আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হুকুমের পরিপন্থী না হলে তাদের অবাধ্য হওয়া যাবে না।

ইসলামে বাবা-মার প্রতি সন্তানদের যে গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে, সেই বাবা-মার জন্যে আজকের সভ্য দেশগুলোতে বৃদ্ধাশ্রম তৈরি করা হচ্ছে। বাবা দিবসে বৃদ্ধাশ্রমে থাকা বাবাটি দীর্ঘদিন পর দেখা পান প্রিয় সন্তানের। বাংলাদেশে অনেক সন্তান তাদের পিতাকে ভাবে অভাজন। পিতার বুকফাটা আর্তনাদ না শোনার মতো সন্তানও এই সমাজে রয়েছে অনেক।

বাবার জন্য আমাদের অনুভূতি হওয়া  উচিত প্রতিদিনকার। প্রতি মুহূর্তের। তার জন্য আলাদা দিনের দরকার নেই। বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় তার প্রতি যতœ নিতে হবে সর্বদা। আর ভালোবাসবে প্রতিটি মুহূর্ত। আর মৃত্যুবরণ করলে তার নাজাতের জন্যে আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু’আ করতে হবে।

 

লেখক : প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।