সংবাদ শিরোনামঃ

সাঁড়াশি অভিযানের আড়ালে প্রতিপক্ষ দলন ** ঈদের পরে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে ২০ দল ** বাজেট বৈষম্যমূলক-অসহনীয়, ব্যবসাবান্ধব নয় ** সিয়ামের প্রকৃত শিক্ষাকে ধারণ ও বাস্তব জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে হবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল ** বিরোধী রাজনীতিকদের চাপে রাখার কৌশল ** নিরপরাধ নেতাকর্মীদের জীবন নিয়ে নির্মম তামাশা মেনে নেয়া যায় না : ছাত্রশিবির ** দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম-গঞ্জে ** নেপথ্য খলনায়কদের আড়াল করতেই ক্রসফায়ার! ** সমাজে বিভক্তির কারণেই মৃত্যুর পরেও সম্মান পাননি মনিরুজ্জামান মিঞা : ড. এমাজউদ্দিন ** ‘অভিযান ছিল লোক দেখানো, বাণিজ্য হয়েছে পুলিশের’ ** ক্রসফায়ার : একটি ধারাবাহিক গল্প ** ক্রসফায়ার নয়, আদালতের মাধ্যমেই দোষীদের শাস্তি দিতে হবে ** টাকার ‘সাগর’ এবং অর্থমন্ত্রী ** রোজার তাৎপর্য ** একটি পারিবারিক বৈঠকের কিছু কথা ** ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত কুষ্টিয়ার বুটিকস কারিগররা ** ‘বিশেষ’ অভিযান শেষ হলেও বন্ধ হয়নি গণগ্রেফতার ** সারাদেশে বিভিন্ন সংগঠনের ইফতার মাহফিল **

ঢাকা, শুক্রবার, ১০ আষাঢ় ১৪২৩, ১৮ রমজান ১৪৩৭, ২৪ জুন২০১৬

মো. আলী আশরাফ খান
কোনভাবেই যেন মাদকের নীলবিষ থেকে ফেরানো যাচ্ছে না মানুষজনকে। ক্রমশই এক ভয়াল অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে সমাজ, দেশ-জাতি। বিশেষ করে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ কিশোর-তরুণরাই এখন এই মাদকের পঙ্কিল নেশায় জড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। তাদেরকে কোনভাবেই মাদকের অভিশপ্ত পথ থেকে সরানো যাচ্ছে না। অভিভাবকদের একরকম তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে এসব কিশোর-তরুণরা দিনের পর দিন নানা রকম মরণ নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। বলার যেমন কেউ নেই, তেমনি দেখারও নেই কেউ। সরকার গা ছাড়া ভাব নিয়ে দেশ চালাচ্ছেন। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির প্রতি তেমন নেই কোন গুরুত্ব। প্রশাসনেরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দেখতে পাচ্ছে না জাতি। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। মাদকের কাছে আমরা হার মানতে পারি না। আমাদের চোখের সামনে মাদকের ভয়াবহতায় ধ্বংস হবে কিশোর-তরুণ তথা প্রায় সব বয়সের মানুষ-তা মেনে নেওয়া যায় না। এর একটা বিহিত-ব্যবস্থা হওয়া  জরুরি বলে মনে করছি।

যদিও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের বক্তব্য, জনবল ও সরঞ্জাম সঙ্কটসহ নানা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তারা মাদকের বিস্তার ঠেকাতে ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচারণার মাধ্যমে জনসচতেনতা তৈরি, মাদকদ্রব্য জব্দ ও ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনসহ অনেক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরকম উদ্যোগ প্রশাসনেরও রয়েছে।’  কিন্তু বাস্তবে আমরা এর বাস্তবায়ন কতটুকু দেখতে পাচ্ছি? এই প্রশ্ন আজ কোটি কোটি মানুষের। যা দেখছি, তা হলো-এসব কার্যক্রমে সরকারের বিপুল অর্থ গচ্চা অর্থাৎ জলে যাওয়ার মতো ব্যাপারই। এসব কার্যক্রম থেকে জাতি যেমন তেমন একটা সুফল পাচ্ছে না, তেমনি কোন সুফল পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরাও।

সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান এক প্রতিবেদককে বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। সেই নির্দেশনানুযায়ী অধিদফতরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে বলা হয়েছে। শুধু কাগজ-কলমের পরিসংখ্যান নয়, দুই মাসের মধ্যে মাদকবিরোধী কার্যক্রম লোকজনের মধ্যে দৃশ্যমান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে’। আমরা এই বক্তব্যের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা বাস্তবে প্রতিফলিত হোক-এমনটাই জাতির প্রত্যাশা।

কিন্তু দেশে মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ড যেভাবে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তাতে তো মনে হয় না যে, আমরা সফল হবো। আজ রাজধানীসহ সারাদেশে মাদকবিরোধী কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় মাদকবিরোধী কমিটির সভা হয়নি সাড়ে চার বছর। সম্প্রতি কর্মকর্তাদের এক সভায় সচিব এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পর গত ৬ অক্টোবর এক সভার আয়োজন করা হয়। একইভাবে আড়াই বছরেরও বেশি সময়ের পর গত ৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সভা। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের এই দুটি কমিটি সক্রিয় না থাকায় মাদকবিরোধী কার্যক্রম গতিহীন হয়ে পড়ে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী সচেতনতা গড়ে তুলতে গঠন করা ১৫ হাজার ৫৮টি কমিটিরও কোনো তৎপরতা নেই। তবে নতুন কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে এই কমিটিগুলোকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লিফলেট বিলি, দেয়াল লিখন, বিলবোর্ড ও পোস্টারের মাধ্যমে মাদকবিরোধী প্রচারণাও জোরদার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে অধিদফতর। 

বাংলাদেশে প্রায় ৬৮ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত বলে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। আসক্তদের মধ্যে ৮৪ ভাগ পুরুষ ও ১৬ ভাগ নারী। অবশ্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৪৭ লাখ। আর আসক্তদের শতকরা ৯০ ভাগই কিশোর-তরুণ।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তো বটেই, খোদ রাজধানীতে হাত বাড়ালেই মেলে সব রকমের মাদকদ্রব্য। এমনকি গোপনে চালু আছে হোম ডেলিভারি সার্ভিস। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে ব্যবসায়ীরা নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেয় ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল বা হেরোইনসহ সব ধরনের নেশা। অভিযোগ রয়েছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই চলছে মাদকদ্রব্যের রমরমা বেচাকেনা।

ঢাকার অভিজাত এলাকার আলোচিত কয়েকটি মাদক স্পট ও ক্লাব : গুলশান -২ এর দি- ক্যাপিটাল ক্লাব। সম্পূর্ণ অনুমোদনহীনভাবে মদ বিক্রির অভিযোগ অনেক পুরনো। সম্প্রতি র‌্যাব-১ এর একটি দল ব্যাপক অভিযান চালায় সেখানে। উদ্ধার হয় কোটি কোটি টাকার মদ-বিয়ার। এ ব্যাপারে গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য, নিয়ন্ত্রণ আইনে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাও  করে। এ ঘটনাটি দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় স্থান পায়। কিছু দিনের জন্য থেমে থাকে মাদক বিক্রি। পরে দেখা যায় আবারও প্রকাশ্যই মদ বিক্রি চলছে সেখানে। এমনকি প্রায় প্রতি রাতেই কেসিও নামক জুয়া খেলাও চলে বলে জানা যায়। এমনি করে দেশব্যাপীই চলছে মাদকবাণিজ্য ও জুয়াখেলা। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের কেউ কেউ এসব অনৈতিক বাণিজ্যে সম্পৃক্ত বলে ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। তাছাড়া প্রশাসনও জড়িত রয়েছে এসব মাদকবাণিজ্যে-এটা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকার অল কমিউিনিটি ক্লাব, হলিডে ইন, লিভার ডোর, কোয়ালিটি ইন, গার্ডেন ইন, বোনভিটা ইন, ইস্টার্ন রেসিডেন্স, ডি ক্যাসল, স্কাই পার্ক, ম্যারিনো, লোরেল, ফুজি ইন, পিনাকলসহ কয়েকটি রেস্ট হাউজে নানা ধরনের অশালীন কর্মকাণ্ড ও মাদক বিক্রির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়।

যদিও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তরফ থেকে গত বছর নভেম্বরে অবৈধ মদ-বিয়ার বিক্রির সঙ্গে যুক্ত এসব হোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিককে ডেকে অবিলম্বে মদ-বিয়ার বিক্রি বন্ধ করতে বলা হয়। একই সঙ্গে রেস্টুরেন্টের প্রকাশ্য স্থানে মদ-বিয়ার বিক্রি করা হয় না মর্মে নোটিশ টাঙিয়ে দিতে বলা হয়। মদ-বিয়ার বিক্রির অভিযোগে বেশ কিছু হোটেল-রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়। কিন্তু তালিকাভুক্ত এসব হোটেল-রেস্তোরাঁ এই নির্দেশনা কতটুকু মেনে চলছেন? তা দেখার বিষয়। যদিও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) খন্দকার তৌফিক আহমেদ বলেন, ‘আমরা নতুন এক তালিকা তৈরি করেছি। এই তালিকা ধরে অভিযানের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। শিগগিরই যে সকল বার, ক্লাব, রেস্টুরেন্ট এমনকি রেস্ট হাউসের নামে মদ বিয়ারসহ মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িতরা যতই শক্তিশালী হউক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।

অধিদফতর সূত্র জানা যায়, শিশু-কিশোরদের মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এ কারণে তাদের জন্য ১০টি বেড নিয়ে চালু হয়েছিল চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম। তবে বেড থাকলেও চিকিৎসা কার্যক্রম চলমান নেই। নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় এই কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে অধিদফতর। সাত বছর ধরে বন্ধ থাকা খুলনা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রেও চালু হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে। আগামী বছরের মধ্যে অনলাইন কাউন্সেলিং কার্যক্রম চালুরও পরিকল্পনাও রয়েছে অধিদফতরের’। এ অবস্থায় কাগজে বাঘের মতই মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এ উদ্যোগ ধামাচাপা পড়বে কিনা তা ভাবছেন অনেকে।

মাদকের অবাধ বিস্তারের ফলে অকালে ঝরছে অনেক প্রাণ। এমন দৃষ্টান্ত আমাদের দেশে ভূরি ভূরি। অনেক ব্যক্তি, পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের স্বপ্ন ভেঙ্গে যাচ্ছে মাদকের এই করালগ্রাসে। দেশের প্রায় পাড়ায়-মহল্লায় মাদক বেচাকেনা এখন মামুলি ব্যাপার। সহজলভ্য হওয়ায় প্রাইমারি শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সব বয়সের লোকজনই অবাধে মাদক নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। দেশ-জাতিকে দ্রুত এক অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এই মাদক নামের মহাবিষ। আমাদের এখন একটাই প্রশ্ন, সরকার কি পারবে মাদকের এই অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে? নাকি জাতি চিরতরে মাদকসন্ত্রাসের কাছে হেরে গিয়ে নিকষ কালো অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে??

লেখক : কবি, কলামিস্ট ও সংগঠক, গৗরীপুর, দাউদকান্দি, কুমিল্লা।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।