সংবাদ শিরোনামঃ

সাঁড়াশি অভিযানের আড়ালে প্রতিপক্ষ দলন ** ঈদের পরে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে ২০ দল ** বাজেট বৈষম্যমূলক-অসহনীয়, ব্যবসাবান্ধব নয় ** সিয়ামের প্রকৃত শিক্ষাকে ধারণ ও বাস্তব জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে হবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল ** বিরোধী রাজনীতিকদের চাপে রাখার কৌশল ** নিরপরাধ নেতাকর্মীদের জীবন নিয়ে নির্মম তামাশা মেনে নেয়া যায় না : ছাত্রশিবির ** দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম-গঞ্জে ** নেপথ্য খলনায়কদের আড়াল করতেই ক্রসফায়ার! ** সমাজে বিভক্তির কারণেই মৃত্যুর পরেও সম্মান পাননি মনিরুজ্জামান মিঞা : ড. এমাজউদ্দিন ** ‘অভিযান ছিল লোক দেখানো, বাণিজ্য হয়েছে পুলিশের’ ** ক্রসফায়ার : একটি ধারাবাহিক গল্প ** ক্রসফায়ার নয়, আদালতের মাধ্যমেই দোষীদের শাস্তি দিতে হবে ** টাকার ‘সাগর’ এবং অর্থমন্ত্রী ** রোজার তাৎপর্য ** একটি পারিবারিক বৈঠকের কিছু কথা ** ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত কুষ্টিয়ার বুটিকস কারিগররা ** ‘বিশেষ’ অভিযান শেষ হলেও বন্ধ হয়নি গণগ্রেফতার ** সারাদেশে বিভিন্ন সংগঠনের ইফতার মাহফিল **

ঢাকা, শুক্রবার, ১০ আষাঢ় ১৪২৩, ১৮ রমজান ১৪৩৭, ২৪ জুন২০১৬

মীর্যা সিকান্দার
প্রত্যেকটি মসজিদই আল্লাহর ঘর। সে কারণে প্রতিটি মুসলমানের কাছে মসজিদ অত্যন্ত পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ। কাল কিয়ামতে যে দু’টি বস্তুর সুপারিশে একজন মানুষ জান্নাত বা জাহান্নামে যাবে তার একটি হলো আল-কুরআন অপরটি হলো মসজিদ। যারা এ দু’টি বস্তুর প্রতি আদব রক্ষা করে চলবে এ দু’টি সুপারিশ করে তাদের জান্নাতে নিয়ে যাবে। আর যারা যথার্থ আদব রক্ষা করবে না তাদের জন্য কোনো সুখবর নেই।

আল কুরআনের আদব রক্ষা হলো

১. সহীহ ও সুন্দর করে নিয়মিত তিলাওয়াত করা।

২. পঠিত আয়াতের অর্থ বুঝা।

৩. আয়াতটি কোথায় কখন ও কেন নাজিল হয়েছিল তা জানা।

৪. শিক্ষণীয় কি আছে তা অনুধাবন করা।

৫. আল্লাহর বাণী যতটুকু জানা হয়েছে তা আল্লাহর বান্দার কাছে পৌঁছে দেয়া।

৬. কুরআনের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা।

৭. যেহেতু কুরআনের সমাজ চালু না থাকলে পরিপূর্ণরূপে কুরআনের আদেশ নিষেধ মেনে চলা যায় না। তাই আল কুরআনের সমাজ গড়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপ্রাণ চেষ্টা সাধনা করা।

দুনিয়ার সব থেকে পবিত্র স্থান হলো মসজিদ আর নিকৃষ্ট স্থান হলো বাজার। মসজিদের আদব হলোÑ

১. মসজিদকে পাক-সাফ ও সাধ্যমত সুগন্ধময় করে রাখা।

২. নিয়মিত যথাসময়ে আজান একামতসহ জামাতে নামাজ আদায় করা।

৩. মসজিদে প্রবেশ করে ২ রাকাত দাখিলিল মসজিদ নামাজ আদায় করে বসা।

৪. কুরআন-হাদীস ও মাসায়াল-মাসায়েল শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা।

৫. মসজিদকে জ্ঞান চর্চা ও গবেষণার কেন্দ্র রূপে গড়ে তোলা।

৬. মসজিদই হবে সমাজ পরিচালনার মূল প্রতিষ্ঠান।

৭. সমাজের যাবতীয় বিচার-ফয়সালা ক্লাবে নয় মসজিদে হতে হবে।

৮. দুস্থ সেবা ও মানবতার যাবতীয় সেবামূলক কর্মকাণ্ড মসজিদ থেকেই হতে হবে।

এছাড়া মসজিদে কি কি কাজ করা যায় এবং কি কি কাজ করা যায় না সে ব্যাপারেও সকল মুসলমানের জ্ঞান থাকা উচিত।

১. কোনো প্রকার ময়লা-আবর্জনা পেশাব-পায়খানা ও অপবিত্র কিছু দ্বারা মসজিদকে নোংরা করে রাখা সঙ্গত নয়।

২. মসজিদে থু থু কফ ইত্যাদি ফেলা অন্যায় কাজ।

৩. নাপাক অবস্থায় অথবা পিঁয়াজ-রসুন দুর্গন্ধযুক্ত কোনো খাবার খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করা নিষেধ।

৪. বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা গুল-জর্দা তামাক মদ ইত্যাদি মাদকজাত দ্রব্য খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করা যাবে না।

৫. মসজিদে হারানো জিনিস খোঁজ করা নিষেধ।

৬. মসজিদের ভেতরে কোনো বেচা-কেনা করা যাবে না।

৭. অসার বাজে কোনো গান-বাজনা, কবিতা পাঠ ইত্যাদি করা যাবে না।

৮. মসজিদে হট্টগোল করা উচ্চস্বরে কথা বলা যাবে না। এমনকি কেউ নামাজরত থাকলে উচ্চস্বরে কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে না।

৯. মোবাইল ফোন সঙ্গে নিলে তা খোলা রাখা ঠিক নয়। বিশেষ করে নামাজের সময়।

১০. মসজিদের আশেপাশে মাইক, টেপরেকর্ড রেডিও প্রভৃতি বাজিয়ে বা কোনো রং তামাশা দ্বারা মসজিদের পবিত্রতা হানি করা মোটেই উচিত নয়।

১১. কোনো হারাম জিনিস সঙ্গে নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা বৈধ নয়।

১২. মসজিদের ভেতরে হদ (ইসলামী দণ্ডবিধি) মদখোরকে চাবুক মারা চোরের হাতকাটা, ব্যাভিচারীকে কোড়া মারা যাবে না।

মসজিদে যে সকল কাজ করা বৈধÑ

১. কুরআন-হাদীসের আলোচনা করা।

২. কুরআন-হাদীস শিক্ষা দেয়া ও শিক্ষা করা।

৩. মাসায়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দেয়া ও শিক্ষা করা।

৪. বৈধ আলোচনা। প্রয়োজনীয় সাংসারিক কথা বলা যেতে পারে।

নবী করীম (সা.) ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্য না ওঠা পর্যন্ত মসল্লা থেকে উঠতেন না। মুসল্লিদের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথাবার্তা বলতেন। অনেক সময় মুসল্লিরা ইসলামপূর্ব জাহিলিয়াতের কথা আলোচনা করতেন। নবী করীম (সা.) জাহিলিয়াতের অসারতার কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসতেন। সূর্য ওঠে পড়লে তিনি উঠে যেতেন।

৫. মসজিদে পানাহার করা বৈধ। আব্দুল্লাহ বিন হারেস (রা.) বলেন, আমরা রাসূল (সা.) আমলে মসজিদের ভেতর গোশত রুটি খেয়েছি।

৬. মসজিদে শয়ন করা জায়েজ আছে। একদা আব্বাদ বিন তামিমের (রা.) চাচা দেখলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) এক পায়ের ওপর আরেক পা রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। সাঈদ বিন মুসাইয়ির (রা.) বলেন, উমর (রা.) ও উসমান (রা.) এরূপ করতেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, আমরা রাসূলের (সা.) যুগে মসজিদে ঘুমাতাম। আমরা তখন যুবক ছিলাম।

তবে প্রয়োজন ছাড়া মসজিদকে শোয়ার ঘর বা বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যবহার করা ঠিক নয়।

অনেক সময় দূর দূরান্ত থেকে কোনো ব্যক্তি মসজিদে এসে নামাজ আদায় করে ক্লান্তি দূর করার জন্য কিছু সময়ের জন্য মসজিদের মেঝেতে গা এলিয়ে দেয়। দুঃখের বিষয় হলো অধিকাংশ  মসজিদের মুয়াজ্জিন বা খাদিম বিশ্রামরত ব্যক্তিকে জোর জবর করে মসজিদ থেকে উঠিয়ে দিয়ে থাকেন। গ্রামের কথা যাই হোক শহুরে মানুষের বিশ্রাম নেবার জায়গার দারুণ অভাব। সফররত ব্যক্তির বিশ্রামের জন্য যদি কোনো ব্যবস্থা রাখা হতো তাহলে মুসাফিরদের জন্য কতই না ভালো হতো। এ কথাও ঠিক যে মসজিদ খুলে রেখে মুয়াজ্জিন বা খাদেম চলে গেলে অনেক সময়ই মসজিদের মাল-সামানা খোয়া যেতে দেখা যায়। সে কারণেই মুয়াজ্জিন বা খাদেমগণ কাউকে মসজিদে বিশ্রাম নিতে দেয় না। তবে মসজিদ কমিটির উচিত মসজিদের বারান্দা খোলা রাখা। কেউ বিশ্রাম নিতে চাইলে খাদেমগণ বিনীতভাবে বারান্দায় বিশ্রাম নেবার জন্য অনুরোধ জানাবেন।

৭. মসজিদ নির্মিত হবে মুসল্লিদের নিজস্ব পবিত্র অর্থ বা মাল দ্বারা। জাকাত, ফিৎরা সদকা, ভিক্ষার পয়সা সুদ-ঘুষ বা জুয়ার হারাম পয়সা দিয়ে নয়।

৮. মসজিদে ওয়াকফ করা কোনো জিনিস বিক্রি করা যাবে না। কেউ তার ওয়ারিশ হতে পারে না। মসজিদের জায়গা বিক্রি করে মসজিদের উন্নয়নের কাজে বা অন্য কোনো মসজিদে নির্মাণের কাজে লাগানো যায়।

৯. এক মসজিদের জিনিসপত্র অন্য মসজিদে ব্যবহার করা যায়। মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও ব্যবহার করা জায়েজ নয়।

১০. মসজিদে মেয়েদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা থাকা উচিত যা পর্দা দ্বারা পুরুষদের থেকে পৃথক থাকবে।

১১. মসজিদের জায়গায় দোকান-পাটের জন্য ভাড়া দেয়া যায়। এবং উক্ত আয় মসজিদের কাজেই ব্যয় করতে হবে। তবে কোনো হারাম মালের বেচাকেনা মসজিদের দোকানপাটে চলবে না। কোনো হারাম মালের অর্থ মসজিদের কোনো কাজে ব্যয় ব্যবহার করা যাবে না। মসজিদের ওপরে বা নিচে বসবাস করা যায়।

১২. মসজিদ হবে সাদাসিধে প্রকৃতির। এতে অধিক নকশা ও চাকচিক্য পছন্দনীয় নয়। রাসূল (সা.) বলেন, আমি মসজিদগুলোকে রঙ চং করতে আদিষ্ট হইনি।

সব শেষে যে কথাটা বলতে চাই তা হলো মসজিদ হবে আল্লাহভীরু উন্নত মানুষ গড়ার বিশ্ববিদ্যালয়। মসজিদ থেকে শিক্ষা নিয়েই মুসল্লিরা হবে সুশাসক ও সুনাগরিক। বিশেষ করে প্রতি জুমাবারের খুৎবাগুলো এত মানসম্পন্ন হওয়া উচিত। যে মুসল্লিরা তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাত সম্পর্কে যেমন সুস্পষ্ট জ্ঞানের অধিকারী হবে তেমনি দুনিয়ার জীবনের যাবতীয় সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের অধিকাংশ মসজিদগুলোতে যে অসার ও অবৈজ্ঞানিক খুৎবা দেয়া হয়, তাতে না আছে তাওহীদ, রিসালাত ও অখিরাত সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান লাভের কিছু না আছে জীবন সমস্যা সমাধানের কোনো দিকনির্দেশনা। ফলে এক বছর খুৎবা শোনার পর যদি কোনো মুসল্লিকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, আপনি এই এক বছর খুৎবা শোনার পর কি জ্ঞানার্জন করেছেন? সে কিছুই বলতে পারবে না। সে কারণে ইসলামকে জীবন সমস্যার কোনো সমাধান নেই ভেবেই কেউ ধর্মনিরপেক্ষী কেউ নাস্তিক ইত্যাদি বনে যায়।

যত পছন্দ আল কুরআন ও মসজিদের প্রতি যথাযথ যথার্থ আদব রক্ষা করতে আমরা সচেষ্ট হতে পারব না। ততদিন পৃথিবীবাসীর জন্য কোনো সুখবর নেই।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।