সংবাদ শিরোনামঃ

আন্তর্জাতিক চাপে সরকার ** গুমের সঙ্গে এই সরকার জড়িত ** যেমন কর্ম তেমন ফল ** শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ** উৎপাদন খরচ কমলেও বাড়লো বিদ্যুতের দাম ** গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : বিএনপি ** প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নজিরবিহীন বিক্ষোভ, উত্তাল মালয়েশিয়া ** দেশ আতঙ্কিত অথচ সরকার বলছে শান্তিপূর্ণ ** রাষ্ট্র ও সরকারকে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ** অনুভূতির সাগরে কুরআনের দেশে ** গুম দিবসও গুম হয়ে গেলো! ** ছোটদের বন্ধু নজরুল ** বন্যায় সারাদেশে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি অপর্যাপ্ত সরকারি সাহায্য ** রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ** যশোরের শার্শায় বাণিজ্যিকভাবে বেদানা চাষ **

ঢাকা, শুক্রবার, ২০ ভাদ্র ১৪২২, ১৯ জিলকদ ১৪৩৬, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বিএসএফের বাধা, বিজিবির সতর্কতা

ভারত থেকে গরু আসছে না

স্টাফ রিপোর্টার : ভারতীয় সীমান্তরী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)-র বাধার মুখে ভারত থেকে বাংলাদেশে কোনো গরু আসছে না। ভারত থেকে যাতে বাংলাদেশে গরু ঢুকতে না পারে, সে জন্য পাহারা বসিয়েছেন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের কর্মীরা। তাই ভারত সীমান্তে বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও গরু আনা শ্রমিকেরা কোনো গরু আনতে পারছে না।

গরু ব্যবসায়ীরা বলছেন, সীমান্ত এলাকাগুলোয় ভারতের ব্যবসায়ীরা গরু এনে জড়ো করেছেন। কিন্তু ভয়ে সীমান্তের কাছাকাছি আসতে পারছেন না। সীমান্তের বাসিন্দারা বলছেন, ওপারের মতো এপারেও গরু না আনার জন্য মাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে সমাবেশ করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

সীমান্তের গরু ব্যবসায়ী ও বিজিবির কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশী গরু ব্যবসায়ী ও গরু আনা শ্রমিকদের দেখামাত্রই সীমান্তে গুলি করার মতো অবস্থানে রয়েছে বিএসএফ। ফলে বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও রাখালেরা ভারত সীমান্তে এখন ঢুকতে সাহস দেখান না। গত ছয় মাসে গরু আনতে গিয়ে শার্শা সীমান্তের পুটখালী, রুদ্রপুর, গোগা ও অগ্রভুলোট করিডোর এলাকায় বিএসএফের গুলিতে একজন নিহত এবং পাঁচ ব্যবসায়ী ও শ্রমিক আহত হয়েছেন। এ সময় সীমান্ত থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো এক গরু ব্যবসায়ীর লাশও উদ্ধার করা হয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বিজিবির হিসাব অনুসারে, প্রতিবছর গড়ে ২০ লাখ গরু ভারত থেকে আনা হয়। এ খাতে লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। সরকারি হিসাবে, ২০১৪ সালে গরু এসেছে ২০ লাখ ৩২ হাজার। ২০১৩ সালে আসে ২৩ লাখ ৭৪ হাজার, অর্থাৎ মাসে প্রায় ২ লাখ করে গরু এসেছে। কিন্তু এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে গরু আসা কমতে থাকে। যেখানে গত জানুয়ারিতে গরু আসে ১ লাখ, সেখানে ফেব্রুয়ারিতে আসে মাত্র ৪৮ হাজার ৪৫০টি, মার্চে আসে ৪৪ হাজার ৯৪৫টি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই মাসে ২০ হাজারের বেশি গরু আসেনি। আগস্টে প্রতিদিন মাত্র দুই হাজারের মতো গরু এসেছে। অথচ আগে প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ হাজার করে গরু আসত সীমান্তের ওপার থেকে।

বাংলাদেশ গোশত ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, গাবতলীর হাটে এখন গরুর সংখ্যা ২৫ শতাংশ কম। কোরবানির সময় পরিস্থিতি কী হবে, তা বলা মুশকিল। কারণ, দেশী গরু হাটে আসে সাধারণত কোরবানির ৮-১০ দিন আগে থেকে। দেশী গরু হাটে আসার পরই বোঝা যাবে কোরবানির পশুর হাটে গরুর দাম কেমন হবে।

তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অজয় কুমার রায় বলেন, সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছে। কোরবানির পশুর বাজারে কোনো ঘাটতি হবে না। কারণ, এখনো কৃষকের ঘরে বিক্রির উপযোগী ৩৪ লাখ গরু-মহিষ ও ৭৯ লাখ ভেড়া-ছাগল আছে। এগুলো কোরবানির বাজারের জন্য প্রস্তুত আছে।

এ বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং গরু পাচার বন্ধ করতে বিএসএফের প্রধান আশিস মিত্রকে নির্দেশ দেন। এরপরই গরু নিয়ে সীমান্তে কড়াকড়ি শুরু হয়। এখন দু-একটি সীমান্ত ছাড়া অন্য সব সীমান্ত দিয়ে গরু আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, গরু নিয়ে কোনো ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটুক, সেটা কেউ প্রত্যাশা করে না। সীমান্ত অতিক্রম করে গরু না আনার জন্য সীমান্তবাসীকে সতর্ক করা হচ্ছে। এ জন্য সীমান্ত এলাকায় সাড়ে তিন হাজারের বেশি সচেতনতামূলক সমাবেশ করা হয়েছে।

বিজিবির কর্মকর্তারা বলছেন, গরু আনা-নেওয়া বন্ধ হলে সীমান্তে গুলির ঘটনাও কমে যাবে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে যেসব গুলির ঘটনা ঘটে, তার ৯০ শতাংশ ঘটনার পেছনেই থাকে গরু-বাণিজ্য। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সীমান্তে গুলিবর্ষণের ঘটনায় ২৮৮ জন নিহত হয়েছেন। ২০১৪ সালে মারা যান ৪০ জন। আর এ বছরের ছয় মাসে মারা গেছেন ২০ জন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৫০ লাখ গরু জবাই হয়। শুধু কোরবানির ঈদেই জবাই হয় ২৫ লাখ পশু। মোট চাহিদার প্রায় অর্ধেকই আসে ভারত থেকে। কিন্তু ভারত বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতির কথা বিবেচনা করে কখনো গরু রফতানির অনুমতি দেয়নি। এ অবস্থায় গরুর গোশতের বাজার স্থিতিশীল রাখতে দেড় দশক আগে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে করিডোর-ব্যবস্থা চালু করে সরকার। এ ব্যবস্থায় প্রথমে সীমান্তের ওপার থেকে আসা গরু একটি খোঁয়াড়ের মতো স্থানে জড়ো করা হয়। এরপর শুল্ক কর্মকর্তারা মালিকানাবিহীন দেখিয়ে গরুগুলোকে ‘বাজেয়াপ্ত’ ঘোষণা করেন। এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে বাজেয়াপ্ত করার জন্য কাগজে কলমে সংপ্তি বিচার দেখানো হয়। এরপর ‘রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাজেয়াপ্ত’ গরু মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময়ে গরু ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। বৈধভাবে এটাই গরু আনার ব্যবস্থা।

তবে ভারতের কাছে এ ব্যবস্থার কোনো স্বীকৃতি নেই। ভারত থেকে এভাবে গরু আনতে সীমান্তের রাজশাহী অঞ্চলে ১২টি, যশোরে ৯, খুলনায় ৪, সিলেট ও চট্টগ্রামে ৩টি করে মোট ৩১টি করিডোর স্থাপন করা হয়েছে। দেশের কয়েকটি সীমান্ত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে কিছু গরু ও মহিষ আসছে। সেটা অন্যান্য বছরের তুলনায় খুবই কম। ঈদের আগে সরবরাহ বাড়বে কি না, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। জানতে চাইলে ২৩ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুর রহিম বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত শার্শা সীমান্তের চার করিডোর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার গরু আসত। এখন সেখানে দৈনিক ১০০ থেকে ১২৫টির মতো গরু আসছে। গরু ব্যবসায় ধস নামায় এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এখন ফেনসিডিল ব্যবসা, মানব পাচারসহ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ কাজে জড়িত হচ্ছে।

পুটখালী করিডোর দিয়ে ভারত থেকে গরু আনেন এমন একজন ব্যবসায়ী শার্শার সাতমাইল গ্রামের বাসিন্দা মাযহারুল আলম বলেন, সীমান্ত পাহারার জন্য ভারতের বিএসএফ সদস্যরা সম্প্রতি দুই দেশের সীমান্ত ভাগ করা ইছামতী নদীতে স্পিডবোট নামিয়ে পাহারা দেওয়া শুরু করেছেন। নদীর আশপাশে গরু ব্যবসায়ী দেখলেই তাঁরা গুলি করছেন।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌর সদরের ধরলা সেতু এলাকায় পাটগ্রাম কাস্টমস অফিসে ইসলামপুর শুল্ক করিডোর অবস্থিত। কাস্টমস অফিসের একটি সূত্রমতে, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার গরু ব্যবসায়ীরা ওই সীমান্ত দিয়ে আমদানি করা গরু পাটগ্রাম ইসলামপুর শুল্ক করিডোরে এনে থাকেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গরু ব্যবসায়ী জানান, বিএসএফের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আর আগের মতো গরু আসছে না।

হরিণমারি করিডোরের দায়িত্বে থাকা সিপাহি দিলদার হোসেন জানান, চার-পাঁচ মাস আগে হরিণমারি করিডোরে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি গরু-মহিষ থেকে শুল্ক আদায় করা হতো। এখন শুল্ক আদায়ের পশুর সংখ্যা কমে চার-পাঁচে দাঁড়িয়েছে।

তবে দেশের সব সীমান্ত দিয়ে গরু আসা কমলেও রাজশাহীর আটটি করিডরে গরু-মহিষ আমদানি বেড়ে গেছে। রাজশাহী কাস্টমস কমিশনারের কার্যালয়ের অধীনে ভারত থেকে গবাদিপশু আমদানির মোট আটটি করিডর রয়েছে।

রাজশাহী কাস্টমস কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই করিডোরগুলো দিয়ে গত জুনে ১৮ হাজার ৮৫৮টি গরু, ১০ হাজার ৭৬৫টি মহিষ ও ৩০৬টি ভেড়া-ছাগল এসেছে। জুলাই মাসে ১৯ হাজার ৭০০ গরু ও ১১ হাজার মহিষ এসেছে।

সাতীরা সীমান্ত থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ভারত থেকে গরু আসা একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ৫০ হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। গরু করিডোর করার জন্য গড়ে ওঠা খাটালগুলো খালি পড়ে আছে। সাতীরার সবচেয়ে বড় গরুর খাটাল পরিচালনাকারী সদর উপজেলার বৈকারী সীমান্তের সাতীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদুজ্জামান ওরফে ওসলে মেম্বার জানান, ভারত থেকে গরু আসছে না। এতে তাঁর খাটাল এলাকায় ও গরু ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত চার-পাঁচ হাজার মানুষ বেকার হয়ে বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছেন।

সাতীরার নীলডুমুর ৩৪ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক কর্নেল মোহাম্মদ খালিদ বিন ইউসুফ ও সাতীরা ৩৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মেজর নজির আহমেদ বকশী জানান, বাংলাদেশীদের সীমান্ত পেরিয়ে গরু আনতে ভারতে যাওয়ার ব্যাপারে লোকজনকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।