সংবাদ শিরোনামঃ

আন্তর্জাতিক চাপে সরকার ** গুমের সঙ্গে এই সরকার জড়িত ** যেমন কর্ম তেমন ফল ** শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ** উৎপাদন খরচ কমলেও বাড়লো বিদ্যুতের দাম ** গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : বিএনপি ** প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নজিরবিহীন বিক্ষোভ, উত্তাল মালয়েশিয়া ** দেশ আতঙ্কিত অথচ সরকার বলছে শান্তিপূর্ণ ** রাষ্ট্র ও সরকারকে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ** অনুভূতির সাগরে কুরআনের দেশে ** গুম দিবসও গুম হয়ে গেলো! ** ছোটদের বন্ধু নজরুল ** বন্যায় সারাদেশে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি অপর্যাপ্ত সরকারি সাহায্য ** রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ** যশোরের শার্শায় বাণিজ্যিকভাবে বেদানা চাষ **

ঢাকা, শুক্রবার, ২০ ভাদ্র ১৪২২, ১৯ জিলকদ ১৪৩৬, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

অনভিজ্ঞতায় পদ্মার ভাঙনে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড

‘সেতু নির্মাণে ব্যয় ও সময় বাড়বে’

‘পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় ও সময় বাড়বে’

রানা হানিফ, দ্য রিপোর্ট : পদ্মা বহুমুখী সেতুর নদী শাসনকাজের জন্য নির্মিত কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়াকে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি ও তদারকি প্রতিষ্ঠানের অনভিজ্ঞতা ও পদ্মার প্রকৃতি সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা না থাকাকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে প্রকল্পটির মাস্টারপ্ল্যানের (মহাপরিকল্পনা) সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ কতটুকু মিল রেখে করা হচ্ছে তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।

তাদের মতে, পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রজেক্টের কাজে এমন দুর্ঘটনাকে তুচ্ছ হিসেবে দেখার কোনো অবকাশ নেই। পদ্মা নদীর গতি-প্রকৃতি ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে যে পরিবর্তিত হয় সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও তদারককারী প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট স্টাডি ও অভিজ্ঞতা রয়েছে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

গত ২৪ আগস্ট প্রবল স্রোতে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নদী শাসনকাজের জন্য নির্মিত কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড এলাকার আনুমানিক প্রায় চার হাজার বর্গফুট এলাকা নদীতে ভেঙে যায়। মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের প্রকল্প এলাকার ২নং জেটি, ২নং মিকচার প্ল্যানসহ পদ্মা সেতুর জরুরী সরঞ্জামাদি ওই দিন রাতে পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। জরুরীভাবে জিও ব্যাগে বালু ফেলে এই ভাঙন রোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপ। এর আগের মাসে (জুলাই) কয়েক দফায় এই প্রকল্প এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়।

এর পর গত ২৬ আগস্ট আবারও পদ্মার ব্যাপক ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা। পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ও তীব্র স্রোত ও ঘূর্ণাবর্তের কারণে এই এলাকায় আকস্মিক ভাঙন দেখা দেয়। জরুরী ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ও বাঁশ দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে এবং বালু ফেলে প্রাথমিকভাবে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়। তবে ভাঙন রোধ করা যায়নি।

২৬ আগস্ট রাতের ওই ভাঙনে পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা। এ সময় বিপুল পরিমাণ নির্মাণসামগ্রী ও কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের শেড নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এতে চরমভাবে বিঘিœà¦¤ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে পদ্মা সেতুর কাজ। পাশাপাশি পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় আরও বড় ধরনের ভাঙনের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

গত বছরের ১১ নভেম্বর চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশনকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদী শাসনের কাজ দেওয়া হয়। মোট ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় ধরে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি স্বারিত হয়। প্রকল্প এলাকায় প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার এলাকার নদী শাসনের কাজ করবে সিনোহাইড্রো।

এর আগে ১৩ অক্টোবর পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতু ও নদী শাসনকাজ তদারকির জন্য পরামর্শক হিসেবে ‘কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন’কে নিয়োগ দেওয়া হয়।

দণি কোরিয়ার এ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে মোট ৩৮৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে কাজের চুক্তিপত্র স্বারিত হয়।

মূল সেতুর কাজ শুরু হওয়ার আগে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক অধ্যাপক ড. এম এ মতিন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এমন দুর্ঘটনার ফলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্মাণকাজের সময়সীমা আরও বেড়ে যাবে। এতে করে প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ওপরও তার প্রভাব পড়বে। নতুন করে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড তৈরি করতে যে ব্যয় হবে তা প্রকল্পের মোট ব্যয়ের সঙ্গে যোগ হবে। ফলে প্রাক্কলিত বাজেটে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ করা সম্ভব হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু একটা মেগা প্রজেক্ট। আমাদের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের এমন মেগা প্রজেক্ট সম্পন্ন করার অভিজ্ঞতা হাতেগোনো দু-একটা। যমুনা বহুমুখী সেতুর পর পদ্মা সেতুই বড় ধরনের কোনো অবকাঠামো। সেখানে অবশ্যই আমাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।’

অধ্যাপক এম এ মতিন বলেন, ‘কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড কিন্তু কোনো টেম্পোরারি (অস্থায়ী) কাঠামো নয়। এটা পাঁচ বছরের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে, এমনকি সেতু প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর এই ইয়ার্ড অন্য কাজে ব্যবহার হবে। যেমনটি যমুনা সেতুর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে এখন যমুনা রিসোর্ট তৈরি করা হয়েছে।’

এই নদী বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘কেন এমন দুর্ঘটনা ঘটল- এমন প্রশ্ন সবার মনে উঠতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, নদী শাসনের কাজ যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে বা যারা এই কাজ কন্সালট্যান্সি (তদারকি) করছে তাদের কি আদৌ পদ্মার গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা আছে? পদ্মা সেতু নির্মাণের আগে তো এখানে সম্ভাব্যতা যাচাই হয়েছে, জিওগ্রাফিক্যাল সার্ভে হয়েছে। তাহলে এ সব কাজের ফলাফলটা কী? এখন কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে, এর আগে টেস্ট পাইলিং ধসের ঘটনাও ঘটেছে। পরবর্তীকালে যে অন্য কোথাও ভাঙন দেখা দেবে না সে আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। যে স্থানে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডটি বিলীন হয়েছে সে স্থানকে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত মনে করেই তো স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের ধারণা যে ভুল সেটা এখন প্রমাণিত। এখন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে তাদের ইয়ার্ড স্থানান্তর করতে হতে পারে। এর পর যেখানে ইয়ার্ড স্থাপন করবে সেটাও নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত হবে, তার নিশ্চয়তা কোথায়?’

অধ্যাপক মতিন আরও বলেন, ‘ছয় ঋতুর বাংলাদেশে প্রতিটি নদীর গতি-প্রকৃতি প্রতি ঋতুতেই পরিবর্তিত হয়। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সময় এ সব বিষয়কে আমলে নেওয়া উচিত ছিল। একটা সেতুর সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো নদী শাসন। আর এ জন্য নদীর প্রকৃতি জানাটা অত্যন্ত জরুরী। এখন কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড ভেঙে গেছে। পরে নদী শাসনের জন্য যে কাজ করা হবে তা যেন ধসে না যায় সে ব্যাপারে কর্তৃপকে সতর্ক থাকতে হবে।’

একই বিষয়ে কথা বলা হলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান এবং ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহসিন উদ্দিন আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের যে ভাঙন দেখা দিয়েছে সেটার জন্য সরাসরি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা তদারকি প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করা যাবে না। কারণ আগে দেখতে হবে এই প্রকল্পের প্ল্যানে কী আছে। যখন সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে তখন এক্সপার্টিজ (বিশেষজ্ঞরা) কী বলেছেন। তারা কী কী সমস্যা ফাইন্ডআউট (শনাক্ত) করেছেন, যেগুলো প্ল্যান ইমপ্লিমেন্টেশনের (বাস্তবায়ন) সময় দেখা দিতে পারে। ওই সব ফাইন্ডিংসগুলোকে আমলে নিয়ে প্ল্যান্ট ইমপ্লিমেন্টেশন হচ্ছে কিনা, এটাই দেখার বিষয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটা প্রজেক্ট প্ল্যান করতে হলে সাইটের ওপর অনেক সার্ভে করতে হয়। অনেক সম্ভাব্যতা যাচাই, জিওগ্রাফিক্যাল সার্ভে, সোসিও ইকোনমিক্যাল সার্ভে, টেকনিক্যাল সার্ভে। এর পর এ ধরনের কাজে যারা অভিজ্ঞ তাদের কমেন্টস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্ল্যানে কী আছে আর বাস্তবায়নে কী’ সেটার পার্থক্য খুঁজে দেখলেই পরিষ্কার হবে কেন এমন দুর্ঘটনা ঘটছে কিংবা ভবিষ্যতে ঘটবে কি-না?’

এ ব্যাপারে কথা বলা হলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নদীর ভাঙনের মুখে ধসে যাওয়াটা নিছক একটি দুর্ঘটনা। এতে মূল প্রকল্পের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। বিশ্বের অভিজ্ঞ কোম্পানিগুলোকেই নদী শাসন, মূল সেতু নির্মাণ ও তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ সব প্রতিকূলতা তারা মোকাবেলা করতে পারে। কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড ধসে যাওয়ায় তাদের কাজ থেমে নেই। আগের গতিতেই কাজ চলছে এবং নির্দিষ্ট সময়েই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে।’

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।