গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : বিএনপি

গত ২৯ আগস্ট শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন : সোনার বাংলা

স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্ববাজারে তেলের দাম যখন কমছে, তখন গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সরকারের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য অভিহিত করে অবিলম্বে বর্ধিত মূল্য বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। একই সাথে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) নতুনভাবে গণশুনানি করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য পুনর্নিধারণের দাবিও জানানো হয়েছে। বিইআরসির ঘোষণার দুইদিন পর গত ২৯ আগস্ট  শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন এই দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, সরকারের আজ্ঞাবাহী বিইআরসি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য দেশের অস্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বেছে নিয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে তারা তিন দিনব্যাপী যে গণশুনানি করেছিলো, তার রায় ছিলো দাম না বাড়ানোর প।ে কিন্তু লোক দেখানো শুনানির নামে নিজেদের ইচ্ছামতো বিইআরসি গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। আমরা মনে করি, এই মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। আমাদের দল বিইআরসির মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণাকে বাতিলের দাবি জানাচ্ছে। একসঙ্গে বিএনপি স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন করে গণশুনানির আয়োজন করে বিএনপিসহ সকল স্টেক হোল্ডারদের মতামত নেয়ার আহ্বানও জানাচ্ছে। আমরা আশা করবো, সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির যে গণবিরোধী পদপে নিয়েছে, তা থেকে সরে আসবে এবং জনগণের কথা ভাববে।” বিদ্যুৎ ও গ্যাসের এই মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপি আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে কিনা প্রশ্নের জবাবে রিপন জানান, এ বিষয়ে আমাদের দলের নীতিনির্ধারকরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। দুইদিন আগে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিদ্যুতের দাম গড়ে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়, যা সেপ্টেম্বর থেকেই কার্যকর হবে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে মাসে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের খরচ বাড়বে ২০ টাকা; ৬০০ ইউনিটের বেশি খরচে অতিরিক্ত গুণতে হবে কমপে ৩০ টাকা। গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে আবাসিক গ্রাহকদের অক্টোবর থেকে অতিরিক্ত ২০০ টাকা খরচ করতে হবে। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের খরচ বাড়বে প্রতি ঘনমিটারে প্রায় ২ টাকা। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে মতাসীন দলের উপদেষ্টা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বক্তব্য উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য পুনরায় পযার্লোচনার জন্য শাসক দলের এক নেতার দাবি করায় বিষয়টি প্রমাণিত, বিএনপি শুধু বিরোধিতার নীতি থেকে বর্তমান সরকারের এই মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টিকে প্রতিবাদ করছে না, বরং জনগণের স্বার্থের কথা বলছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ও বিইআরসি চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির স্বপে যেসব যুক্তি তুলে ধরেছেন, আমাদের দল এর সারবত্তা না থাকায় তা প্রত্যাখ্যান করছে। আমরা মনে করি, গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি ও সিস্টেমলস কমাতে পারলে মূল্য বৃদ্ধির বোঝা জনগণের ওপর চাপাতে হতো না। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য হ্রাসের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমা সত্ত্বেও সরকার উল্টো বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। গ্যাস খাত লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও গ্যাসের দামও তারা বৃদ্ধি করেছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষেরা আরেক দফা দুর্ভোগে নিপতিত হবেন। আমরা সরকারের গণবিরোধী নীতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তেলের দামের সাথে সমন্বয় করার আহ্বান জানিয়ে রিপন বলেন, বিইআরসি ঘোষিত বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা বাতিল করে মানুষের দুর্ভোগ-কষ্টের প্রতি মানবিক হতে হবে। কারণ এই দুর্ভোগ ও অর্থনৈতিক চাপ ঘরে ঘরে চুলা থেকে শুরু করে পরিবহনের যাত্রীভাড়া, ঘর-বাড়িতে বর্ধিত বিদ্যুতের বিল মানুষের সহ্য সীমাকে ছাড়িয়ে যাবে। কৃষি-শিল্প-ব্যবসা-রফতানিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম কম থাকলে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হতো বলেও মনে করেন রিপন। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, গ্যাস খাতে যেখানে সরকারের ভুর্তকি দিতে হয় না এবং লোকসানও নেই। বরং পাঁচ বছরে যেখানে পেট্রোবাংলা ২০ হাজার ৮০ কোটি টাকা লাভ করেছে, সেখানে গৃহস্থালি কাজে এক ও দুই বার্নার চুলায় একলাফে ২শ’ টাকা বৃদ্ধির ঘোষণা নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের প্রতি নিদারুণ অবিচার বলে আমরা মনে করি। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে চা রফতানি খাতকে আরো হুমকির মুখে ফেলবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপির মুখপাত্র। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের চা রফতানি যখন কমে গেছে এবং এ খাত যখন প্রবল চাপের মধ্যে রয়েছে, তখন চা বাগানে গ্যাস  সরবরাহ মূল্য বৃদ্ধি (পূর্বে ৫ দশমিক ৮৬ টাকা, ঘোষিত মূল্য ৬ দশমিক ৪৫ টাকা) চা রফতানি খাতকে আরো হুমকির মধ্যে ফেলে দেবে। তিনি বলেন, গ্যাস ও বিদু্যুতের বর্ধিত মূল্য বৃদ্ধির ফলে ব্যবসা খাতে অর্থনৈতিক চাপ পড়বে। বেসরকারি খাতে কল-কারখানায় বিদ্যুতের লোডশেডিং মোকাবেলায় যে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হতো, তার মূল্য একলাফে দ্বিগুণ করায় শিল্পোৎপাদনের বড় ধরনের আঘাত সৃষ্টি করবে। এটা কী সরকারের শিল্পবান্ধব নীতি নাকী শিল্প ধ্বংস করার নীতি- আমরা তা জানতে চাই। বিদু্যুৎ-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির  েেত্র ধনিক শ্রেণীর ভোক্তাদের বেশি উপশম দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে রিপন বলেন, আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি, গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিটে গরিব-মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের তুলনায় ধনিক শ্রেণীর ভোক্তাদের বেশি উপশম দেয়া হয়েছে। সর্বনি¤œ ধাপে ব্যবহারকারীদের জন্য যেখানে প্রতি ইউনিটের মূল্য বেড়েছে দশমিক ২৭ পয়সা। পান্তরে সর্বোচ্চ ধাপে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী যারা সচরাচর ধনিক শ্রেণী হয়ে থাকেন, তাদের জন্য প্রতি ইউনিটে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হয়েছে মাত্র দশমিক ৫ পয়সা। কৃষি খাতে অর্থাৎ সেচ পাম্পে বিদ্যুৎ সরবরাহে ইউনিট প্রতি মূল্য বৃদ্ধির ফলে কৃষি উৎপাদনের ব্যয়  বেড়ে যাবে এবং পল্লী বিদু্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে গ্রামীণ জনগণকে বাড়তি দুর্ভোগ পোহাতে হবে বলে মনে করেন তিনি। মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয় ও সামাজিক সংঘের বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং বিদ্যুৎ খাতে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের নামে প্রতিবছর ২ হাজার কোটি টাকা ভুর্তকি দেয়ার সরকারের ভ্রান্ত নীতির সমালোচনাও করেন বিএনপির মুখপাত্র। সংবাদ সম্মেলনে রিপনের সঙ্গে ছিলেন, দলের ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ,  চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এএসএম আব্দুুল হালিম, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম আজাদ, আব্দুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ।