কাউখালীর শীতলপাটি রক্ষায় প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ

কাউখালীর শীতলপাটি রক্ষায় প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ

সৈয়দ বশির আহম্মেদ, কাউখালী থেকে : পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের দুইশত বছরের পুরানো পাটি শিল্পের এখন দৈন্যদশা। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ঐতিহ্যবাহী পাটি শিল্প এখন কোনোমতে টিকে আছে। একসময় সুবিদপুরে পাইত্রা নামের একধরনের উদ্ভিদ জন্মাতো। এ পাইত্রা রোদে শুকিয়ে চিকন ছড়ি করে গ্রাম্য নারীরা একধরনের মাদুর তৈরি করতো। এসব মাদুর নিজেরা বাড়িতে ব্যবহার করতেন। পাইত্রার তৈরি মাদুর পেতে গরমের দিনে ঘুমাতে খুবই আরামদায়ক বলেই এর ব্যবহার বাড়তে থাকে। পাটিকরদের সুনিপুণ বুননে তা হয়ে ওঠে শীতলপাটি। মসৃণ আর আরামদায়ক বলেই শীতলপাটির ব্যবহার দিনদিন মানুষের কাছে বাড়তে থাকে। একসময় নিরবে শুরু হয়ে যায় সুবিদপুরের শীতলপাটির বাণিজ্যিক উৎপাদন। আর যুগযুগ ধরে সুবিদপুরের মানুষেরা শীতলপাটি বুনন ও বাজারজাত প্রক্রিয়ার সাথে জড়িয়ে পড়েন।

পাটিকর নিবাস চন্দ্র (৪৫) জানান, সুবিদপুরের মাটি এখন লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে পাটির কাঁচামাল পাইত্রা উদ্ভিদ আগের মতো জন্মে না। ঝালকাঠির রাজাপুর এলাকার আইলাকাঠি গ্রামে পাইত্রা উদ্ভিদের কিছু চাষ হয়। সুবিদপুরের পাটিকরদের সেখান হতে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে হয়। নানা সঙ্কটে পড়ে এ শিল্পের এখন দৈন্যদশা। অনেক পাটিকর এখন পেশা বদলে ফেলেছেন। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় বেশ কিছু পরিবার ভারতে আশ্রয় নিয়ে আর ফিরে আসেননি।

স্থানীয়রা জানালেন, সুবিদপুরের পাটিকরদের এখনও যারা একাজে জড়িত আছেন তাঁদের নিজস্ব জমি নেই। ফলে নিজেদের পক্ষে পাইত্রার আবাদ সম্ভব হয়না। একসময় সুবিদপুরে প্রায় ৩০০ একর জমিতে মসৃন পাইত্রার জলজ উদ্ভিদ বাগান ছিল। পরিকল্পিতভাব্ইে এর আবাদ করতেন সুবিদপুরের মানুষ। কালক্রমে পাইত্রার বাগান ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে সুবিদপুরে বর্তমানে ২০/২৫ একর জমিতে কিছু পাইত্রা উদ্ভিদ জন্মে।

সুববিদপুরের পাটিকরদের পুনর্বাসনের লক্ষে সরকারি-বেসকারি পর্যায়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ এ যাবৎ নেওয়া হয়নি।

পাটি শিল্পী বিভা রানী (৩৫)বলেন, পাটি বুনতে কোমড় ধরে । হাতের চামড়া ছিঁড়ে যায়। একাজে ধৈর্য আর কষ্ট করতে হয়। না করলে যে পেট চলে না।

কিছুটা অন্তর্মূখী আর পুরোটাই ভূমিহীন শীতলপাটির উদ্যোক্তা পাটিকর গোত্র। মুক্তিযুদ্ধ ও ঘূর্ণিঝড় সিডরে বিপন্নতার পর পাটি শিল্পকে বাঁচানোর স্বপ্ন দ্যাখেন পাটিকররা। গড়ে তুলেছিলেন সুবিদপুর পাটি শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেড। সমিতির বয়স ৪০ বছর গড়িয়েছে। উন্নয়ন হয়নি কোনো। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা ছাড়া সমিতি টিকে আছে কেবল নামমাত্র।

কাউখালীর সাংস্কৃতিজন সুব্রত রায় বলেন, শীতল পাটি কাউখালীর দুইশত বছরের ঐতিহ্য ও সম্ভাবনা। আমাদের ইতিহাসও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করা পাটি শিল্প এভাবে মরে গেলে তার দায় আমাদের নিতে হবে। এ শিল্পকে বাঁচাতে এখন সরকারি বেসরকারি সহায়তার প্রয়োজন।

কাউখালী উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আহসান কবির বলেন, শীতলপাটি এ জনপদের একটি সম্ভাবনাময় ঐতিহ্যবাহী শিল্প। পাটিকরদের বড় সমস্যা হচ্ছে এরা ভূমিহীন। পাটিকররা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত শীতলপাটি বাজারজাত করতে না পারা।