সংবাদ শিরোনামঃ

গাজায় ইসরাইলি হামলা : বিপন্ন মানবতা ** ঈদের পর আন্দোলন ** ঈদবাজারের সিংহভাগই বিদেশী পণ্যের দখলে ** দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও দেশ গড়তে হলে রোজার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করতে হবে : মাওলানা আব্দুল হালিম ** রাজনীতিতে বদ্ধ ও গুমোট অবস্থা বিরাজ করছে ** ঈদের আনন্দ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে ** এ যেন সেই ‘ভাতে মারবো, পানিতে মারবো’র মতো ব্যাপার-স্যাপার! ** সারাদেশে বিভিন্ন সংগঠনের ইফতার মাহফিল ** ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ ** ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য ** সেকালের ঈদ **

ঢাকা, শুক্রবার, ১০ শ্রাবণ ১৪২১, ২৬ রমজান ১৪৩৫, ২৫ জুলাই ২০১৪

ঘূর্ণি

মোশাররফ হোসেন খান
বেলা তিনটা।

গেটে তালা ঝুলছে। চোর-বাটপাড়দের ভয়েই এই ব্যবস্থা।

ঘর্মাক্ত ও কান্ত অবস্থায় বেল টিপলেন আজিজ। প্রতিদিন এই সময় তিনি অফিস থেকে বাসায় ফেরেন।

আঙ্গুলের চাপটা একটু বেশি পড়লো। কারণ তার অবসাদগ্রস্ত শরীরের ভারটা যেন সুইচের ওপর ছেড়ে দিলেন। ভিতরে বেল বাজার শব্দ শুনা যাচ্ছে।

ছেলে-মেয়ে দু’জনই বেড়াতে গেছে গ্রীষ্মের ছুটিতে, গ্রামের বাড়িতে। বাসায় জাকিয়া একা।

বেলের শব্দ শুনে দ্রুত চাবি হাতে দোতলা থেকে নেমে এলেন জাকিয়া।

ঘরে ঢুকেই তিনি ফ্যানটা ছাড়লেন। ফুলস্পিডে মাথার ওপর ফ্যান ঘুরছে। ক্রমাগত।

দুপুরে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। সূর্যটা এখনো মেঘের নিচে ঢাকা। গত কদিনের মতো তাপ এখন আর নেই। তবুও ফ্যানের নিচে বেেস ঘামছেন আজিজ।

জাকিয়া লুঙ্গি, গামছা এগিয়ে দিয়ে চলে গেলেন রান্নাঘরে। খাবার রেডি করছেন। এক সাথে খাবেন বলে তিনিও এ পর্যন্ত না খেয়ে আছেন।

লুঙ্গি হাতে আজিজ দাঁড়ালেন।

অন্যদিনের মতো আজ তার খাবার জন্য তেমন একটা তাড়া নেই। তিনি বরং স্টিলের আলমারি-সংলগ্ন বড় আয়নাটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। ঘুরে ফিরে কেবল নিজেকে দেখছেন। কতণ যাবত তিনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, তার খেয়াল নেই। জাকিয়ার ডাকে তিনি হতচকিত হয়ে ফিরে দাঁড়ালেন। গামছাটা ঘাড়ে নিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করলেন।

বাথরুমেও বেসিনে আয়না আছে। হাতমুখ ধোয়ার পর আবার আয়নার সামনে দাঁড়ালেন। দেখছেন নিজেকে। দরোজা না খোলায় এক সময় জাকিয়া বাইরে থেকে দরোজায় নক করলেন।

আয়না থেকে মুখ ফিরিয়ে আজিজ বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলেন।

দুজন খেতে বসেছেন। অন্যদিনের মতো আজ আর খেতে খেতে রাজ্যির গল্প করছেন না আজিজ। কেমন যেন চুপচাপ।

জাকিয়ার ভেতর আজিজের এই ব্যতিক্রমী নীরবতায় কম্পন তুললো। এক অজানা আশঙ্কায় তিনি উদ্বিগ্ন। জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার এত গম্ভীর কেন?

জাকিয়ার প্রশ্নের জবাবটা এড়িয়ে গেলেন আজিজ। বললেন, আজও ওরা এলো না!

জাকিয়া বুঝতে পারলেন, তার নীরবতার কারণ এটা নয়, অন্য কিছু। কিন্তু সেটা কি?

খাওয়া শেষ করে আজিজ বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন।

 

দুই.

খাবার পর জাকিয়াও শুয়েছেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন।

ছেলেমেয়ে বাসায় না থাকায় কাজও অনেকটা কমে গেছে। ফলে দুপুরে শোবার একটু ফুরসৎ পেয়েছেন জাকিয়া।

জাকিয়া ঘুমালেও আজিজের চোখে ঘুম নেই। অথচ আজ তারই ঘুমের প্রয়োজন ছিল সবচেয়ে বেশি। তিনি দেখলেন, তার পাশে জাকিয়া কেমন নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন। ভাবলেন, ঘুমাক। সংসারের ধকল সইতে গিয়ে তো অকালেই কাহিল হয়ে পড়েছেন। জাকিয়ার প্রতি তার সহমর্মিতার ঢল যেন উথলে উঠলো।

খাট থেকে আস্তে করে নামলেন আজিজ। আবারও তিনি বড় আয়নাটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। নিজেকে দেখছেন বারবার। দেখছেন আর ভাবছেন।

এক সময় নিজের কাছেই প্রশ্ন করলেন, আমাকে দেখতে কি...

নিজের ভেতর প্রশ্ন, নিজের ভেতরই আবার ভাঙ্গা-গড়া।Ñ

এখন সামনে যেন সেই লোকটিকেই দেখতে পাচ্ছেন আজিজ।

 

তিন.

হ্যাঁ, সেই লোকটি।

বেলা দেড়টায় দোকানে যার সাথে দেখা হলো।

একটা শার্ট কেনার জন্য দোকানে ঢুকেছেন আজিজ। ঘুরে ফিরে শার্ট দেখছেন।

হঠাৎ একজন এসে বললেন, আপনি?

তার দিকে তাকিয়ে হোঁচট খেলেন আজিজ। বললেন, আমি তো আপনাকে ঠিক চিনতে পারছিনে?

লোকটার চোখেমুখে রহস্যের হাসি। বললেন, কিন্তু মনে হচ্ছে আপনাকে আমি চিনি। কোথায় দেখেছি বলুন তো?

আজিজ বললেন, সেটা তো আমার জানার কথা নয়। কারণ আমি যে আপনাকে দেখেছি, এমনটিতো মনে পড়ছে না।

রহস্যজনক লোকটি কথাবার্তায় কেতাদুরস্ত। হেসে বললেন, আপনার বাড়িটি কোথায় যেন?

আজিজ জবাব দিলেন। নিজের জেলার নাম শুনে লোকটি এক গাল হেসে বললেন, ও তাই বলুন। আমিও ওখানে ছিলাম অনেক দিন।

আজিজের কণ্ঠে বিস্ময়! অনেকদিন মানে? লোকটি কৌশলে কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ঢাকায় এসেছেন কবে? কি করেন?

আজিজ বললেন, ঢাকায় এসেছি বিশ বছর আগে। আপনি ওখানে ছিলেন কত আগে?

তিনি বললেন, ওই তো তা প্রায় আপনার মতো সময়ে!

Ñআমার মতো, তার মানে?

Ñবুঝলেন না, আমিও প্রায় বিশ বছর আগে আপনার শহর ছেড়েছি। ওখানে থাকতে আপনাকে অনেক দেখেছি বোধ হয়।

আজিজের মনে এবার খটকা লাগলো। একটা সন্দেহের কাঁটা যেন তার বুকের ভেতর গেঁথে গেল। জিজ্ঞেস করলেন, ওখানে আপনি কি করতেন?

এই প্রশ্নে লোকটি এবার কিছুটা অপ্রস্তুত হলে গেলেন। একটু সময় নিয়ে বললেন, আমি গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি করতাম।

আজিজের সন্দেহটা দূর হয় না। হবার কথাও নয়। তিনি লোকটির বয়সের সাথে তার পেশাটাকে মেলাতে চেষ্টা করলেন। বয়সে তিনি আজিজের চেয়েও কম। অথচ বিশ বছর আগে তিনি গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি করতেন, তার এই কথার মধ্যে কোনো সত্যতা খুঁজে পেলেন না। তিনি এবার জিজ্ঞেস করলেন, কিন্তু এবার বলুন আমাকে কিভাবে চেনেন?

লোকটি বললেন, না মানেÑআমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনার এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। ‘মিথ্যা’ শব্দটি ঠোঁটের আগায় এলেও তিনি তা টেনে নেন গলার ভেতর।

লোকটি বললেন, ঢাকায় কি করেন?

Ñচাকরি করি। আর কিছু জানার আছে?

-না মানে।Ñ

-সেই মানেটা কি?

-কোথায় যেন একটা মিল পাচ্ছি।Ñ

কোথায়?

আপনার ছবি কি পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে?

-কেন হবে না?

-সত্যিই হয়েছে!

লোকটি আনন্দে চিৎকার করে উঠলেন। কিছু একটা পেয়ে গেছেন এমনি খুশি খুশি ভাব।

আজিজ একটু দৃঢ়তা ও ুব্ধস্বরে বললেন, আমার ছবি ছাপা হয়েছে, তবে ক্রিমিনালদের তালিকায় নয়, অন্য পাতায়।

-তার মানে?

-মানেটা সহজ। আমার ছবি পত্রপত্রিকায় ছাপা হয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে। ক্রিমিনাল হিসাবে নয়।

-তাই নাকি!

-মানেটা এর আগে যতটা খুশি হয়েছিলেন, তার চেয়েও শতগুণে তিনি এবার হতাশ হলেন। বললেন, কিছু মনে নেবেন না। আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম। আই এ্যাম স্যরি!

 

চার.

এবার আজিজের পালা।

লোকটিকে ডেকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনার চাকরিটা কি এখনো আছে?

-জ্বি, আছে

-আমার চেহারা সত্যিই ক্রিমিনালদের মতো?

-জ্বি না। এখন মনে হচ্ছে, আপনি মূলত একজন গুরুত্বপূর্ণ সম্মানীর ব্যক্তি। কিন্তু কার চেহারার সাথে যেন মিল পাচ্ছিলাম।

আজিজ বললেন, আমার চেহারার সাথে অন্য কারোর মিল নেই। এটা আপনার সন্দেহ-বাতিক।

লোকটি লজ্জিত হয়ে বললেন, দেখুন তো কি কাণ্ডটাই না ঘটে গেল! বাংলাদেশের সকল পেশার মানুষের জন্য পরিচয়পত্র আছে। যদি আপনাদের জন্যও পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা থাকতো, তাহলে কতই না ভালো হত। আজিজ বললেন, আমাদের পরিচয়পত্রে স্বার করবেন কে? আপনার মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন কোনো ব্যক্তি? আমাদের জন্য কারুর স্বারবাহী পরিচয়পত্রের প্রয়োজন পড়ে না। তারা নিজেরাই সকল পরিচয়পত্রের ঊর্ধ্বে। কারণ আমলা, কর্মকর্তা, পুলিশÑএসব তৈরি করা যায়, কিন্তু কাউকে কবি বানানো যায় না। নিজেকেই কবি হয়ে উঠতে হয়।

-তা বেশ, তা বেশ!

বলতে বলতে লোকটি চলে গেলেন।

 

পাঁচ.

লোকটি চলে গেলেন বটে, কিন্তু আজিজের মধ্যে এক অসম প্রশ্ন এবং জিজ্ঞাসা কেবলই ঘুরপাক খাচ্ছে। সত্যিই কি তার চেহারার সাথে কোনো ক্রিমিনালের মিল আছে? সত্যিই কি বেলা দেড়টায় এমন কোনো লোকের সাথে তার সাাৎ ঘটেছিল? বেলা দেড়টায় তার জামার দোকানে যাবার কথা নয়। কারণ তখনো তো অফিস টাইম। তাহলে!...

আয়নার সামনে নিজেকে দাঁড় করিয়ে বারবার জিজ্ঞাসার ঘূর্ণিটি শূন্যে ভাসিয়ে দেন আজিজ।

শূন্যে নয়, মূলত সেটা যেন নিজের দিকেই।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।