অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে সরকার সচেষ্ট


৩০ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৫১

ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক বলয় থেকে বের করা ॥ সব খাতে সচ্ছতা ॥ টেকসই ঋণ ব্যবস্থাপনা

॥ উসমান ফারুক॥
প্রায় দেড় বছর হতে চলা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে অনেকটা স্থিতিশীলতা ফিরেছে, তা বোঝা যায় দাবি আদায় নিয়ে বিভিন্ন দল, উপদল ও সংগঠনের আন্দোলন সংখ্যা কমে যাওয়ায়। এতে খাদের কিনারা থেকে ফিরে আসা অর্থনীতি শক্তি সঞ্চয় করতে পারছে। কয়েকটি ছাড়া রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বৈদেশিক দায় পরিশোধ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এত অসন্তোষের মধ্যেও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকা ও বিনিময়হার নিয়ে স্বস্তিতে রয়েছে অর্থনীতি। শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বেড়ে যাওয়া ইঙ্গিত দেয় অর্থনীতি আপন গতিতে ফেরার চেষ্টায় রয়েছে। সার্বিকভাবে অর্থনীতি গত এক বছরে স্বাভাবিক পথচলাটা শুরু করতে পেরেছে।
অর্থনীতিতে গতি আনতে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকার তো একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে অর্থনীতিকে আগের মতো কর্মচঞ্চল করতে। সেখানে বেসরকারি খাতকে সম্পৃৃক্ত করতে পারলে অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে। ব্যবসায়ীদের আস্থায় নিয়ে বোঝাতে হবে কোনো সংস্থা তাদের হয়রানি করবে না।
সরকারের একগুচ্ছ উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগ সংস্থা ছয়টিকে একটিতে পরিণত করা, চালের দর নিয়ন্ত্রণে আমদানি কমিয়ে ফেলা, ব্যাংক আমানতে প্রবৃদ্ধি পাওয়ায় নীতি সুদের হার কমানো, সব ধরনের এলসিতে মার্জিন সুবিধায় ছাড় দেওয়া, রাজস্ব আদায় বাড়াতে নতুন করে সাড়ে ৩ হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বন্ধ হওয়া কারখানা সচল করতে নীতি সুবিধা দেয়া। রাজনৈতিক সরকারের পতনের পর নানা কারণে অচল কারখানার ঋণ নিয়মিত করতে নীতি সুবিধা দেয়া ও এলসির ওপর থেকে মার্জিন সুবিধা ব্যাংকের ওপর ছেড়ে দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত।
এসব নিয়ে সরকারের উদ্যোগ থাকায় শ্লথ হয়ে যাওয়া অর্থনীতিতে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য ফিরবে- এমন আশাবাদ দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে আমানতে প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। এর ফলে প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ হয়ে গেছে ঋণ প্রবৃদ্ধি। একইসঙ্গে সরকার ১ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার ১৩টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এর ওপর ভর করে বেসরকারি খাতেও গতি সঞ্চার হবে। বেসরকারি খাতে অর্থের প্রবাহ বাড়াতে অবরুদ্ধের আদেশ তুলে নেয়া হচ্ছে অনেক ব্যাংক হিসাবের ওপর থেকে। সামনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নতুন রাজনৈতিক সরকার এলে বিনিয়োগ নিয়ে দোটানা ভাবও কেটে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, অর্থনীতির পুরোটাই বলা যায় বেসরকারি খাতের। সরকার তো শুধু নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলো দিতে পারে। তাদের যদি সচল করা না যায়, তাহলে অর্থনীতিতে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব না। আগের সরকারের রাজনৈতিক পরিচয় বহন করা সবাই তো পালিয়ে যায়নি। অর্ধশত কোম্পানির উদ্যোক্তা তাদের কারখানা চালু রাখতে পেরেছে, কারণ তারা ঋণ কেলেঙ্কারিতে যায়নি। সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টান্ত সামনে এনে সবাইকে আশ্বস্ত করতে পারে। কর্মচাঞ্চল্য ফেরাতে তাদের সম্পৃক্ততা জরুরি।
অন্যদিকে পোশাক খাতের উদ্যোক্তা ও সুরমা গার্মেন্টসের পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, সরকার তো তার চেষ্টাটা করছে। এখন যারা প্রকৃত ব্যবসায়ী, তারা ব্যবসা করতে পারছে। একটা লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ডে কারো সমস্যা হওয়ার কথা না। যেভাবে ঋণ কেলেঙ্কারি হয়েছে, তা সামলে নিতে তো একটু সময় লাগবে। আমরা আশাবাদী আমাদের রফতানি বেড়েছে, রেমিট্যান্স বাড়ছে। রিজার্ভও অনেক ভালো অবস্থানে গেছে। তাই একটু সময় লাগলেও অর্থনীতিতে কর্মচাঞ্চল্য ফিরবে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) অক্টোবর মাসের অর্থনীতি সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে গেছে, ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণে ধীরগতি দেখা দিয়েছে, সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় উদ্যোক্তারা নতুন উদ্যোগ নিতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। আগামী ডিসেম্বরের পর থেকে নীতি সুদহার কমে গেলে সেই অনিশ্চয়তা কেটে যাবে। অন্যদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর রাজনৈতিক পরিবেশ আরো সহায়ক হলে বিনিয়োগও বাড়তে থাকবে- এমন ইঙ্গিত দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও।
ব্যাংকে ফিরছে আমানত
গত দেড় দশকের আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট মেয়াদে শুধু গুম, খুন, নির্যাতন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সম্পত্তি কেড়ে নেয়ার ঘটনাগুলোর নজির যেমন লাখ লাখ, তেমনি রাষ্ট্রীয়ভাবেও ব্যাংক লুটপাট করায় অর্থনীতি একেবারে খাদের কিনারায় চলে গিয়েছিল। নিজ প্রয়োজনে কৃষকের চাষাবাদ অব্যাহত রাখা ও সব অর্থ ব্যাংকে না থাকায় অর্থনীতি কোনোরকমে টিকে গিয়েছিল।
করোনা মহামারির পর থেকে ধীর ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় থাকা অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ে ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগের বছরে। এ সময়ে ইতিহাসের রেকর্ড পরিমাণ অর্থ পাচার হয়। ফ্যাসিস্ট সরকারের মেয়াদের সময়ে পুরো পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ সাময়িক হিসাবে ২৮ লাখ কোটি টাকার বেশি।
এতে ব্যাংক খাতে এক ধরনের আস্থাহীনতা তৈরি হয়। তাতে মানুষ ব্যাংকে অর্থ না রেখে বিভিন্ন উপকরণে রাখতে শুরু করে। এর মধ্যে রয়েছে স্বর্ণ, গহনা ও জমি। সংস্কারের উদ্যোগ চলমান থাকায় আমানতকারীরা ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় মোট আমানত ১০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১৯ লাখ কোটি টাকার বেশি। এক বছর আগেও ছিল ১৭ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা।
আমানত বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ বিতরণও বেড়ে গিয়ে গত আগস্ট মাসে দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের এ সময়ে ছিল ২০ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা। এক বছরে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয় ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। আমানতের চেয়ে ঋণের পরিমাণ ও প্রবৃদ্ধির হার দুটিই বেশি হওয়ায় বোঝা যায়, অর্থনীতিতে চাহিদা তৈরি হয়েছে। এখন আমানত বাড়তে থাকলে ঋণের পরিমাণও বাড়তে থাকবে।
জাতীয় সঞ্চয়পত্রে সুদের হার হ্রাস করার পরিকল্পনা, ই-মনি ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি এবং সরকারি অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণের মতো পদক্ষেপ আমানত বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে বলে ধরা হচ্ছে। শক্তিশালী প্রবাসী আয়ও এ প্রবণতাকে সহায়তা করেছে। আগামী নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সাময়িকভাবে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করে বিনিয়োগকারীদের মনোভাবকে চাঙ্গা করে তুলবে বলে জিইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
একটিতে রূপান্তরিত হচ্ছে ছয় সংস্থা
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বিনিয়োগ সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় ছয় সংস্থাকে একটিতে রূপান্তরিত করতে যাচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান নিযুক্ত করেছে। ইতোমধ্যে নতুন সংস্থার পরিচালনা পর্ষদ গঠন শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানটির পরামর্শে একটি রোডম্যাপও ঠিক করা হয়েছে। সেই পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো একত্রিত করা হবে। এক্ষেত্রে পুরো প্রতিবেদন একসঙ্গে না নিয়ে খাতভিত্তিক নিয়ে বাস্তবায়ন শুরু করবে সরকার।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, দেশের শীর্ষ বিনিয়োগ সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা বিডা, বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনকে (বিসিক) একটিতে রূপান্তরিত করা হবে।
এটি হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন ও অনুমোদন পেতে সময়ের দীর্ঘসূত্রতা কেটে যাবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সব সেবা একটি ছাদের নিচে পাবে। ওয়ান স্টপ সেবা সুবিধা সব কেন্দ্রকে একটিতে নিয়ে আসবে। এতে বিনিয়োগ পরিকল্পনা সাজাতে বিনিয়োগকারীদের সুবিধা হবে।
চাল আমদানি নিয়ন্ত্রণ
সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি বজায় রেখেছে, যা বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ এবং বিনিয়োগকে কিছুটা সীমিত করেছে। বিনিয়োগে শ্লথগতির জন্য আওয়ামী লীগের পতন-পরবর্তী সময়ে প্রতিবিপ্লবের অপচেষ্টায় বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নানামুখী তৎপরতাও দায়ী। গত দেড় বছরের মধ্যে ৩০০ দিনের মতো শুধু আন্দোলনই হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বঞ্চিতরা এ সময়ে তাদের দাবি নিয়ে রজপথে নেমেছে। এর মধ্যে নাশকতা তৈরিকারী কয়েকটি গ্রুপও ছিল। সরকারের সঠিক ব্যবস্থাপনা সেই সমস্যা কেটে এখন অনেকটা স্বস্তিতে ফিরেছে দেশ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে সরকার চাল আমদানি বাড়িয়েছে। কিন্তু উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া স্থানীয় কৃষকদের চালের বাজার ঠিক রাখতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছে ট্যারিফ কমিশন। চালের ঘাটতি না থাকলেও সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে চাল আমদানি বাড়িয়েছিল। তাতে সুফল আসায় এখন চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছে সরকারের অপর সংস্থাটি। তারা মনে করছে, বাজারে উৎপাদন-মজুদ নিয়ে যে চাল আছে, তাতে সংকট হবে না। এখন আরো বেশি আমদানি করলে চালের দাম উৎপাদন খরচের চেয়েও কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিতে পারে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে চালের চাহিদা প্রায় ৩ কোটি ৭ লাখ থেকে ৩ কোটি ৯ লাখ টন। স্থানীয়ভাবে চাল উৎপাদন হয় ৪ কোটি ৪৩ লাখ টন। তারপরও দাম বাড়লে আমদানি হয়। বেশিরভাগ চাল আমদানি হয় মূলত ভারত থেকে।
ট্যারিফ কমিশন বলছে, দেশে গত এক বছরে ধানের দাম ১১ শতাংশ, সরু চালের দাম ১১ শতাংশ, মাঝারি চালের দাম ১৩ শতাংশ ও মোটা চালের দাম সাড়ে ৭ শতাংশ বেড়েছে। যদিও গত অর্থবছরে চালের উৎপাদন ২৩ লাখ টন বেশি ছিল। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক বছরে চালের দাম কমে চলেছে। অর্থাৎ দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশে গত এক বছরে চালের দাম বেড়েছে।
ব্যাংক হিসাব সচল
দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার শঙ্কা ও অর্থ পাচার হয়ে যেতে পারে এমন অনেক আওয়ামী ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আওয়ামী রাজনীতি থেকে বেরিয়ে শুধু ব্যবসায় মনোযোগ দেওয়া ও গুম-খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত নয়- এমন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব সচল করতে শুরু করেছে সরকার।
আবার দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া উদ্যোক্তাদের কারখানা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সচল করা শুরু করেছে শ্রম মন্ত্রণালয়। বেক্সিমকো ও নাসা গ্রুপ সচল করা এরই একটি অংশ। দুটি প্রতিষ্ঠানে ৬০ হাজারের বেশি ব্যক্তির কর্মসংস্থান হচ্ছে। দুটি প্রতিষ্ঠানই সচল করতে চাচ্ছে সরকার। এভাবে আওয়ামী রাজনীতির বাইরে গিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে নতুন ব্যক্তি নিয়োগ দিতে শুরু করেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। তাতেই আগামী কয়েক মাসের মধ্যে অর্থনীতিতে একটি ঝড়ো গতি তৈরির পরিবেশ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বস্তির রিজার্ভ
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি এখন স্থিতিশীলতার পর্যায়ে চলে গেছে। গত মার্চ মাসে থাকা ২৫.৫ বিলিয়ন ডলার সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১.৪ বিলিয়ন ডলার। বিশাল এ রেমিট্যান্স অর্থনীতিকে প্রতিনিয়ত শক্তি জুগিয়ে চলছে। এর পেছনে রয়েছে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়ে যাওয়া ও রফতানি আয় বৃদ্ধি পাওয়া। অন্যদিকে বিনিময়হারও একটি মানদণ্ডে পরিচালিত হওয়ায় টাকার মান আর পড়ছে না। তথ্যানুযায়ী, গত জুন থেকে সেপ্টেম্বরে টাকার বিনিময়হার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল ছিল প্রতি মার্কিন ডলারে ১২১-১২২ টাকা। একই সময়ে রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেট (আরইইআর) সামান্য বেড়ে ১২১.২ থেকে ১২৭.২ হয়েছে, যা উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতার ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন নির্দেশ করে বলে মনে করে জিইডির প্রতিবেদন। দীর্ঘদিন ধরে একই অবস্থা থাকায় ভবিষ্যতে ডলারের দর সংশোধন হয়ে কমে যেতে পারে।
বাড়ছে রাজস্ব আদায় ও জনবল
চলতি বছরের গত জুলাই-আগস্ট সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৫৪ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করেছে। তা আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ভ্যাট আদায় বেড়েছে ৩৩.৮ শতাংশ, আয়কর ২৪ শতাংশ। রাজস্ব আদায় বাড়াতে ও প্রশাসনে গতি আনতে এনবিআর ১২টি নতুন কমিশনারেট ও কাস্টমস হাউস স্থাপন এবং ৩ হাজার ৬০০ নতুন পদ তৈরি করেছে। আশা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহ ও নজরদারি আরও জোরদার করা হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে সরকারের নানামুখী চেষ্টার পর। ব্যবসায়ীদের রাজনৈতি বলয় থেকে বের করা, আইন অনুযায়ী ব্যবসা পরিচালনা করা, টেকসই ঋণ ব্যবস্থাপনা ও সব খাতে স্বচ্ছতা আনার উদ্যোগ চলমান থাকলে জনগণের আস্থা থাকবে। বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি খাতকে আরো ঢেলে সজানোর উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। বর্তমানে ব্যবসার পরিবেশ অনুকূলে থাকলেও জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ থাকলে বিনিয়োগ আসবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা।