আগে গণভোট দিতে হবে : ডা. তাহের
৩০ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:৪২
স্টাফ রিপোর্টার : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠিক সময়ে হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তবে নির্বাচন কোনো কারণে পিছিয়ে গেলেও জুলাই সনদের বাস্তবায়ন যেন না পেছায়, সেজন্য আগে গণভোট করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
গত ২৯ অক্টোবর বুধবার রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে আবদুল্লাহ তাহের এ দাবি জানান। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির নেতাদের সঙ্গে কমনওয়েলথের ‘ইলেকটোরাল সাপোর্ট’ শাখার উপদেষ্টা ও ‘প্রি-ইলেকশন অ্যাসেসমেন্ট’ প্রধান লিনফোর্ড অ্যান্ড্রুজের নেতৃত্বাধীন সফররত প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে এ ব্রিফিং করা হয়। বৈঠকে কমনওয়েলথ প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন দিনুষা পণ্ডিতরত্ন, ন্যান্সি কানিয়াগো, সার্থক রায় ও ম্যাডোনা লিঞ্চ। বৈঠকে জামায়াত নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলটির নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন ও মোবারক হোসাইন।
ব্রিফিংয়ে আবদুল্লাহ তাহের বলেন, ‘কোনো কারণে যদি জাতীয় নির্বাচন সঠিক সময়ে নাও হতে পারে, আমরা আশা করি, সঠিক সময়ে ইনশাআল্লাহ হবে, তখনো তো জুলাই সনদ আমাদের পাস করতে হবে। জুলাই সনদ তো একটা সংস্কারও। সুতরাং দুটোকে একসঙ্গে জুড়ে দেওয়াটা এটা আমরা কোনোভাবেই সঠিক মনে করি না এবং এটা জুলাই সনদকে অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যেতে পারে।’
জাতীয় নির্বাচন ঠিক সময়ে না হলেও গণভোট আগে হতে হবে বলে মন্তব্য করেন আবদুল্লাহ তাহের। তিনি বলেন, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট হওয়া উচিত নয়। অনতিবিলম্বে গণভোটের তারিখ ঘোষণা করতে হবে।
আবদুল্লাহ তাহের বলেন, ঐকমত্য কমিশন নির্বাচনের দিন বা এর আগে গণভোটের সুপারিশ করেছে সরকারের কাছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটই সঠিক সিদ্ধান্ত। কারণ গণভোট হবে সংস্কার প্রক্রিয়ার ওপর। আর জাতীয় নির্বাচন হবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নির্ধারণের জন্য। দুটোর চরিত্র আলাদা।
এনসিসির (জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল) বিষয়ে সরকারকে দ্রুত একটি আদেশ দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন আবদুল্লাহ তাহের। তিনি বলেন, সরকার যেন এ বিষয়ে আর সময়ক্ষেপণ না করে। এ আদেশের পরই গণভোট হবে।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তারিখ ঘোষণা হলে মাসের শেষ দিকে গণভোট হতে পারে। কারণ এতে জাতীয় নির্বাচনের মতো সময় লাগবে না। খুব বেশি খরচও হবে না।
গণভোটের সময় ভোটারের ঢেউ লেগে যাবে বলে মন্তব্য করেন আবদুল্লাহ তাহের। তিনি বলেন, গণভোটে সংস্কার বিষয়ে ‘হ্যাঁ’-এর পক্ষে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোই ভোটার নিয়ে আসবে। সরকারকে গণভোট করে এরপর জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান আবদুল্লাহ তাহের।
ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানান সাবেক এ সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, অনেকে এর বিরোধিতা করছে। তাদের নিয়ত নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে পুলিশের মতো সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবিসহ অন্য বাহিনীগুলোও রাখতে হবে। নির্বাচন যত সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক করা যায়, সেটিই জামায়াতের দাবি থাকবে।
এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ তাহের বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিন প্রার্থীদের জেতানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়বে। সেদিন গণভোট হলে তার গুরুত্ব কমে যাবে।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কমনওয়েলথের ‘ইলেকটোরাল সাপোর্ট’ শাখা উপদেষ্টা এবং ‘প্রি-ইলেকশন অ্যাসেসমেন্ট’ প্রধান লিনফোর্ড অ্যান্ড্রুজের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফররত একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাথে বৈঠকে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন, গণতন্ত্রকে টেকসইকরণ, সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ শক্তিশালীকরণ এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের অগ্রগতির বিষয়ে তারা বিশদ আলোচনা করেন। নির্বাচনের লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করা হয়। আগামী নির্বাচনে কমনওয়েলথের পর্যবেক্ষক দল আসবে বলেও তারা জানিয়েছেন।