সংক্ষিপ্ত বিশ্ব সংবাদ


৩০ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:২২

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এখন কার্যকর নয় : লুলা
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা বলেছেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এখন কার্যকরভাবে কাজ করছে না। গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় ও বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈশ্বিক নেতৃত্ব আজ অনুপস্থিত। গত শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানী কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে লুলা মন্তব্য করেন, ‘আজ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ কোনো কাজ করছে না, একদমই না। সাম্প্রতিক বড় বড় যুদ্ধ শুরু করেছে সেই দেশগুলোই যারা নিজেরাই এ পরিষদের সদস্য। কোনো পরামর্শ ছাড়াই, কোনো জবাবদিহি ছাড়াই তারা এসব যুদ্ধ করছে।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘ফিলিস্তিনের গাজায় যখন দীর্ঘদিন ধরে গণহত্যা ও মানবিক বিপর্যয় চলছে, তখন এদেশগুলো কেমন করে চুপ করে বসে থাকতে পারে?’ লুলা আরও বলেন, জাতিসংঘ আজ কার্যকরভাবে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে পৃথিবীতে কোনো কার্যকর বৈশ্বিক নেতৃত্ব আর নেই। তিনি বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নিজেদের প্রতিশ্রতি পূরণ করছে না, যার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর। প্রেসিডেন্ট লুলা বর্তমানে তিন দিনের সরকারি সফরে মালয়েশিয়ায় রয়েছেন। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর এটিই তার প্রথম মালয়েশিয়া সফর। সফরের মধ্যে তিনি আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেবেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম লুলাকে শ্রমজীবী মানুষের মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিকতার পক্ষে কথা বলা একজন নেতা হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি গাজার মানুষের দুঃখ-দুর্দশা অবসান এবং জলবায়ু সংকটে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য লুলার আহ্বানকে প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করেন। বৈঠক শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে আনোয়ার জানান, ‘আমরা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জ্বালানি, খাদ্য ও কৃষি প্রযুক্তি, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং উচ্চপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছি।’ টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

মুসলিম মালিককে জেলে পাঠিয়ে রেস্তোরাঁ গুঁড়িয়ে দিলো ভারতীয় প্রশাসন
উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে মোহাম্মদ আলম নামে এক মুসলিম যুবককে জেলে পাঠিয়ে তার মালিকানাধীন একটি ধাবা (রেস্তোরাঁ) বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। অনেকে এ ঘটনাকে আইন প্রয়োগের আড়ালে মুসলিমদের বিরুদ্ধে আরেকটি লক্ষ্যযুক্ত পদক্ষেপ বলে মনে করছেন। কথিত ধর্মান্তরকরনের অভিযোগে জেলে পাঠানো অভিযুক্ত আলম যমুনানগরের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ স্টেশন এলাকায় ‘কোহিনূর হিন্দুস্তান ধাবা’ নামে একটি ছোট রেস্তোরাঁ চালাতেন। কাঠামোটিকে ‘অবৈধ’ বলে ঘোষণা করে পূর্ত দপ্তর (পিডব্লিউডি) এবং রাজস্ব বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। কর্মকর্তারা দাবি করেন, রেস্তোরাঁটি কোনো আনুষ্ঠানিক অনুমতি ছাড়াই তৈরি করা হয়েছিল। তবে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া ভাঙার ওপর সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও এ বুলডোজার পদক্ষেপ স্থানীয় জনগণ এবং কমিউনিটি নেতাদের সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তারা এটিকে বৈষম্য ও ভীতি প্রদর্শনের কাজ বলে অভিহিত করেছেন। ধ্বংসের কয়েক দিন আগেই এক হিন্দু নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মোহাম্মদ আলমকে গ্রেপ্তার করে। ওই নারী অভিযোগ করেন, আলম তাকে জোর করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করেছেন। মামলাটি ঘুরপুর থানায় দায়ের করা হয় এবং আলমকে পরে জেলে পাঠানো হয়। আলমের পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র অনুযায়ী, আলম এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন, তাকে হয়রানি করতে মামলাটি সাজানো হয়েছে। আলমের বড় ভাই বলেন, ‘আমার ভাই নির্দোষ। সে শুধু জীবিকা নির্বাহের জন্য একটি ছোট ধাবা চালাতো। এ মিথ্যা মামলা আমাদের পরিবারের শান্তি ও জীবিকা ধ্বংস করে দিয়েছে।’ পূর্ত দপ্তরের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, একটি অভ্যন্তরীণ তদন্তের মাধ্যমে নির্মাণের অনুমোদনহীনতার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরেই ধ্বংসের কাজ চালানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পিডব্লিউডি কর্মকর্তা বলেন, ‘কাঠামোটি সরকারি জমিতে ছিল এবং এর কোনো সরকারি অনুমোদন ছিল না।’
কিন্তু মুসলিম কমিউনিটির সদস্যরা এ কাজটিকে একটি উদ্বেগজনক ধারার ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখছেন। স্থানীয় সমাজকর্মী রাশিদ আহমেদ বলেন, ‘যখনই কোনো মামলায় প্রমাণিত হোক বা না হোকÑ কোনো মুসলিম নাম আসে, তখনই কয়েক দিনের মধ্যে বুলডোজার চালানো হয়। এটা ন্যায়বিচার নয়। এটা বিচার ছাড়াই শাস্তি।’ আইন বিশেষজ্ঞরা এবং কর্মীরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, শীর্ষ আদালত যেখানে বুলডোজারকে বিচারবহির্ভূত শাস্তি হিসেবে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করেছে। লক্ষেèৗ ভিত্তিক মানবাধিকার আইনজীবী সানা খান বলেন, ‘এমনকি যদি একটি কাঠামো অবৈধও হয়, তবে এর জন্য নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছেÑ নোটিশ, শুনানি এবং জবাব দেওয়ার সময়। রাজ্য একাধারে আদালত এবং জল্লাদের মতো কাজ করতে পারে না। এ বুলডোজার রাজনীতি সংবিধান এবং মানবিকতা উভয়কেই লঙ্ঘন করে।’ প্রয়াগরাজে কমিউনিটি নেতারাও প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ এনে বলছেন, আইনি বিতর্কে থাকা হিন্দুদের সম্পত্তি প্রায়শই অক্ষত থাকে। স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা ফারুক বলেন, ‘যদি একই মান সবার জন্য প্রয়োগ করা হতো, তবে শহরের অর্ধেক দোকান বন্ধ হয়ে যেত। কিন্তু কেবল মুসলিম প্রতিষ্ঠানগুলোই ভেঙে ফেলা হয় এবং তাও যে কোনো অভিযোগের পরেই তাৎক্ষণিকভাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা একজন মানুষকে অভিযুক্ত করে, প্রমাণ ছাড়াই তাকে জেলে পাঠায় এবং তারপর তার বাড়ি বা ব্যবসা ধ্বংস করে দেয়। এমন ভয়ের মধ্যে গরিব মানুষ কীভাবে টিকে থাকবে?’ চলতি বছরের শুরুর দিকে এক যুগান্তকারী আদেশে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বুলডোজারকে শাস্তির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করার বিরুদ্ধে রাজ্য কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে। আদালত বলেছিলেন, পূর্ব নোটিশ এবং শুনানির সুযোগ না দিয়ে কোনো ধ্বংসের কাজ করা উচিত নয়। সমালোচকরা বলছেন, প্রয়াগরাজের এ পদক্ষেপ প্রকাশ্যেই এ নির্দেশিকাকে অগ্রাহ্য করেছে। ক্লারিয়ন ইন্ডিয়া।

ইসরাইলের সমালোচনা করায় ব্রিটিশ ভাষ্যকর গ্রেফতার
ইসরাইলের সমালোচনা করায় ব্রিটিশ ভাষ্যকরকে গ্রেফতার করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গত রোববার (২৬ অক্টোবর) তাকে গ্রেফতার করা হয়। ফিলিস্তিনপন্থী ওই ভাষ্যকরের নাম সামি হামদি। আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ওই ভাষ্যকারকে গ্রেফতার করে তার ভিসা বাতিল করে দেয়। এ বিষয়ে মার্কিন প্রশাসন বলেছে, উগ্রবাদকে সমর্থনের দায়ে তাকে অচিরেই দেশে ফেরত পাঠানো হবে। ভিসার বাকি মেয়াদ পূর্ণ করার সুযোগ দেয়া হবে না। মার্কিন স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগের মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলওয়েন নিশ্চিত করেছেন যে, ফিলিস্তিনপন্থী ওই ভাষ্যকর এখন ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের হেফাজতে রয়েছেন। এ মুখপাত্র এক এক্সবার্তায় বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের সময় উগ্রবাদের সমর্থনকারী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যারাই দেশের ভেতরে থেকে কিংবা ভিজিটে এসে মার্কিন নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করবে, তাদেরকে ক্ষমা করা হবে না।’ তবে ব্রিটিশ এ ভাষ্যকরকে কবে নাগাদ ফেরত পাঠানো হবে, সুনির্দিষ্ট করে তিনি তা বলেননি।
গত ২৫ অক্টোবর শনিবার ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রামেন্টোয় মুসলিম কমিউনিটির একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সামি হামদি। ওই কমিউনিটির দায়িত্বশীলগণ বলেন, গত ২৬ অক্টোবর রোববারে ফ্লোরিডার একটি কাউন্সিল অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার কথা ছিল হামদির। কিন্তু মার্কিন প্রশাসনকে তাকে সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করায় তিনি ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
তারা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, এ বিশিষ্ট ব্রিটিশ মুসলিম সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকরকে ইসরাইলি গণহত্যার বিষয়ে মুখ খোলায় মার্কিন প্রশাসন গ্রেফতার করে বাকস্বাধীনতাকে অবমাননা করেছে। মুসলিম কমিউনিটিটির ডেপুটি প্রধান ইদওয়ারিদ আহমাদ মেশাল বলেন, যারা হামদিকে উগ্রপন্থী বলে আখ্যায়িত করেছে, তিনি ইতোপূর্বে তাদের এ দাবিকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি আরো বলেন, তাকে গ্রেফতার করার পর থেকে এখন পর্যন্ত আইনজীবীদের তার সাথে দেখা করার সুযোগ দেয়া হয়নি। আল-জাজিরা।

হাতকড়া ও পায়ে বেড়ি পরিয়ে আরও অর্ধশতাধিক ভারতীয়কে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র
অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার অভিযোগে ৫৪ ভারতীয় নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসব ভারতীয় অবৈধভাবে আমেরিকায় বসবাস করছিলেন। গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। গত রোববার পুলিশের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ভারতে ফেরত পাঠানো সবাই ‘ডংকি রুট’ নামে পরিচিত অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। সম্প্রতি তারা সবাই দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। পুলিশের তথ্যানুযায়ী, ফেরত পাঠানোদের মধ্যে ১৬ জনই হরিয়ানার করনাল জেলার বাসিন্দা। এছাড়া ১৫ জন কাইথালের এবং ৫ জন আম্বালার বাসিন্দাও রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত এসব ভারতীয়র বেশিরভাগের বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে বলে জানিয়েছে পুলিশ। করনাল পুলিশ জানায়, সবাইকে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে এবং কোনো দালালের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যায়নি। করনালের ডিএসপি সন্দীপ কুমার বলেন, “আজ আরও কিছু ভারতীয়কে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে হরিয়ানার ৫০ জন। কেবল করনাল জেলা থেকেই রয়েছেন ১৬ জন।
সবাই ‘ডংকি রুটে’ যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছিল, কিন্তু আজ ফেরত এসেছে।” তিনি জানান, পুলিশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে এবং কেউ যেন অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা না করে সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়া বিপজ্জনক এবং ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যার কারণ হতে পারে। তদন্ত চলছে, কারও বিরুদ্ধে অপরাধমূলক রেকর্ড থাকলে তা তদন্তেই ধরা পড়বে।’ প্রসঙ্গত, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বিপুলসংখ্যক অবৈধ ভারতীয়কে। এ বছরই শত শত ভারতীয়কে দেশটিতে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, যারা বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থান করছে বা অভিবাসন আইন ভঙ্গ করছে, তাদের নিয়মিতভাবেই বহিষ্কার করা হয়। এনডিটিভি।

 

গাজায় গণহত্যার নিন্দা ও সেনা হতে অস্বীকার করায় ইসরাইলি কিশোরীর ‘করুণ পরিণতি’
ইসরাইলের এক কিশোরী গাজা-হিংসা ও গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে সামরিক বাহিনীতে যোগদানের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার এমন সিদ্ধান্তের ফলে তাকে এখন ‘করুণ পরিণতি’ ভোগ করতে হচ্ছে। কিশোরীটি ইসরাইলের সেনাবাহিনী ও সমাজের ওপর সরাসরি সমালোচনা করেছেন; বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান নিপীড়ন এবং ডানপন্থি রাজনৈতিক মনোভাবের বিরুদ্ধে। ড্যানিয়েল শুল্টজ নামের কিশোরী ২৩ অক্টোবর এক্সে একটি ২৫-পোস্টের থ্রেডে তার মতামত প্রকাশ করেন। তিনি জানিয়েছে, এটি তার নৈতিক বাধ্যবাধকতা এবং সবচেয়ে মানবিক কাজ। শুল্টজ বলেছেন, শিশুদের অনাহারে মারা, গ্রাম উচ্ছেদ ও বেসামরিকদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে অন্য কোনো বিকল্প নেই। শুল্টজের বক্তব্য অনুযায়ী, সে একসময় ইয়েশ আতিদ যুব আন্দোলনের সদস্য ছিলেন এবং ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে বিশ্বের সবচেয়ে নৈতিক সেনাবাহিনী মনে করতেন। তবে মিশ্র বোর্ডিং স্কুলে ফিলিস্তিনি সহপাঠীদের ওপর নির্যাতন প্রত্যক্ষ করার পর তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়। সামরিক পোশাককে সে তার সহপাঠীদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি এবং চলমান নিপীড়নের প্রতীক হিসেবে দেখেছে। তিনি ইসরাইলি সমাজ ও রাজনীতিকেও দায়ী করেছেন। শুল্টজ বলেছেন, ‘যে সত্ত্বা অন্য মানুষদের ধ্বংস করে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তাদের নিরাপত্তার কোনো অধিকার নেই। যারা হলোকাস্টের মতো নিপীড়নের জন্য নিজেদের সংকল্পবদ্ধ করে, তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের কোনো অধিকার নেই।’ তিনি ইসরাইলি নাগরিক সমাজকেও দায়ী করেছেন, যারা সৈন্যদের সমর্থন দিয়ে গণহত্যার কার্যক্রমকে সমর্থন করছে। শুল্টজ ইহুদিবাদকে ‘মানসিক-বিকারগ্রস্ত জাতীয় উগ্রতাবাদ’ আখ্যা দিয়েছেন। তার মতে, ইসরাইলের সমস্ত প্রতিষ্ঠান বহু দশক ধরে দখলদারিত্ব ও বর্ণবাদের কারণে সৃষ্ট হত্যা ও রক্তপাতে গভীরভাবে জড়িত। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, যতক্ষণ ইহুদিবাদ তার উগ্র নীতি থেকে সরে আসবে না, ততক্ষণ ইসরাইলি সমাজের পুনর্বাসন সম্ভব নয়। প্রেস টিভি।

আসিয়ানের সদস্যপদ পেল পূর্ব তিমুর
মালয়েশিয়ায় গত রোববার (২৬ অক্টোবর) দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সংগঠন (আসিয়ান)-এর শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলনে পূর্ব তিমুর এ জোটের ১১তম সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছে। ফলে ২৬ বছর পর প্রথমবারের মতো নতুন সদস্য পেয়েছে আসিয়ান। এবার আসিয়ানের ৪৭তম শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, যা রোববার থেকে শুরু হয়ে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত চলে। ১৯৬৭ সালের পর পঞ্চমবারের মতো মালয়েশিয়া এ জোটের সভাপতিত্ব করছে। কুয়ালালামপুর কনভেনশন সেন্টারে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জোটের নেতারা পূর্ব তিমুরকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য একটি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পূর্ব তিমুর প্রথম ২০১১ সালে সদস্যপদের জন্য আবেদন করে এবং ২০২২ সালে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা লাভ করে। ‘অন্তর্ভুক্তি ও স্থায়িত্ব’ প্রতিপাদ্যের অধীনে শীর্ষ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নেতাদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের নেতা ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ১৩ লাখ জনসংখ্যার দেশ পূর্ব তিমুর ২০০২ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। দেশটি ১৯৯৯ সালে কম্বোডিয়ার অন্তর্ভুক্তির পর দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোটে যোগদানকারী প্রথম দেশ। উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালের ৮ আগস্ট ব্যাংককে আঞ্চলিক সংস্থা আসিয়ান প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদস্যদের মধ্যে রয়েছে ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের ওপর ইসরাইলের হামলা
এবার ইসরাইলি নরপিশাচদের হামলার শিকার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের কাফার কিলার কাছে নিযুক্ত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী (ইউনিফিল)। জানা গেছে, ইসরাইলি ড্রোন এবং ট্যাঙ্কের গোলায় আক্রান্ত হয়েছে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর টহলদারি দল। যদিও এ ঘটনায় কেউ আহত বা নিহত হয়নি। ইসরাইলি হামলার ঘটনা নিয়ে ইউনিফিল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ১৭০১ এবং লেবাননের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন এবং দক্ষিণ লেবাননে নিরাপত্তা পরিষদের নির্দেশিত কাজ বাস্তবায়নকারী শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে।’ শান্তিরক্ষা মিশন জানিয়েছে একটি ইসরাইলি ড্রোন ইউনিফিল টহল দলের ওপর দিয়ে উড়ে বেড়াতে দেখা গেলে শান্তিরক্ষী বাহিনী সেটিকে নির্মূল করার জন্য প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এ প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখা ভালো, দক্ষিণ লেবাননে ইউনিফিল ১৯৭৮ সাল থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গত বছর নভেম্বরে লেবাননের আন্দোলন হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ইসরাইল লেবাননের ওপর আক্রমণ করছে। কখনো ড্রোন উড়িয়ে এবং কখনো লেবাননের মানুষদের লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে দক্ষিণ লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা ছিল ইসরাইলের। এটাই ছিল যুদ্ধবিরতির শর্ত। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইসরাইল পাঁচটি সীমান্তে সেনাদের বহাল রেখেছে। এপি।

কারচুপির অভিযোগে ২০২০ সালের নির্বাচনের তদন্তের আহ্বান ট্রাম্পের
মার্কিন রাজনীতিতে আবারও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দাবি করেছেন, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছিল ‘কারচুপিপূর্ণ ও চুরি করা’। এ অভিযোগ তুলে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগকে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর এ মন্তব্যে নতুন করে তীব্র আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে, যেখানে আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং রিপাবলিকান-ডেমোক্র্যাট দ্বন্দ্ব ইতোমধ্যেই চরমে। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজিত হয়েছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে। পাঁচ বছর পর, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে, ট্রাম্প আবারও সেই নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর দাবি, ‘ডেমোক্র্যাটরা কারচুপি করে নির্বাচন চুরি করেছে।’ এ অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি মার্কিন বিচার বিভাগকে আহ্বান জানিয়েছেন, ‘আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ কেলেঙ্কারির তদন্তে’ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে। ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী, যদি এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে ‘২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে’ ও একই ঘটনা ঘটতে পারে। গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) প্রকাশিত টিআরটি ওয়ার্ল্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্ট দেন, যেখানে তিনি সরাসরি অভিযোগ তোলেন ‘কারচুপি করে তাস খেলা এনবিএ খেলোয়াড়দের চেয়েও খারাপ হচ্ছে নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের কারচুপি! ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছিল কারচুপিপূর্ণ ও চুরি করা, এটাই সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি।’
পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘আমাদের দেশকে দেখুন, একজন দুর্নীতিগ্রস্ত বোকা প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর কী অবস্থা হয়েছে! এখন সবই পরিষ্কার।’ তাঁর এ বক্তব্যে তিনি স্পষ্টতই বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে উদ্দেশ করে সমালোচনা করেন। এরপর ট্রাম্প মার্কিন বিচার বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান, এ ‘ভয়াবহ কেলেঙ্কারি’র তদন্তে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যদি তদন্ত না হয়, তাহলে এমন ঘটনা ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে আবারও ঘটবে।’ ট্রাম্প তাঁর পোস্টে আরও বলেন, আগাম ভোট এবং ডাকযোগে ভোট দেওয়ার প্রথা তিনি সমর্থন করেন না। তিনি দাবি করেন, ‘এ ব্যবস্থার সুযোগ নিয়েই ডেমোক্র্যাটরা লাখ লাখ ব্যালট পাঠিয়েছে।’ ক্যালিফোর্নিয়ার ভোট নীতির কড়া সমালোচনা করে তিনি অভিযোগ করেন, ‘সেখানে লাখ লাখ ব্যালট পাঠানো হচ্ছে, যা নির্বাচনের সততা নষ্ট করছে।’ অভিযোগ এখানেই থেমে থাকেনি। পোস্টের শেষ দিকে ট্রাম্প রিপাবলিকান দলের সদস্যদের উদ্দেশে লেখেন, ‘বুদ্ধি খাটাও রিপাবলিকানরা, খুব বেশি দেরি হওয়ার আগেই।’ তাঁর এ বার্তাটি মূলত দলের নেতৃত্ব ও সমর্থকদের উদ্দেশে একটি সতর্ক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে যাতে তাঁরা আসন্ন নির্বাচনে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ট্রাম্পের এই মন্তব্য এবং তদন্ত দাবি এমন সময়ে এলো, যখন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালের নির্বাচনের প্রভাব এখনো টিকে আছে এবং আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার হচ্ছে। ট্রাম্প নিজেও পুনরায় প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এ বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং তাঁর ভোটার বেসকে আরও দৃঢ় করার কৌশলের অংশ। ২০২০ সালের নির্বাচনের পর থেকেই তিনি বারবার দাবি করে আসছেন যে নির্বাচন তাঁকে ‘চুরি’ করা হয়েছে, যদিও সেই অভিযোগের পক্ষে এখনো কোনো প্রমাণ আদালতে টিকেনি। টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
গ্রন্থনা ও সম্পাদনা : আবদুল কাইউম খান