নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের সাথে দূরত্ব কমছে রাজনৈতিক দলগুলোর
৪ জুন ২০২৫ ১১:২৯
স্টাফ রিপোর্টার: গত ২ জুন সোমবার রাজধানীর বেইলি রোডস্থ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ২৮ রাজনৈতিক দল। সেখানে গণহত্যার বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের তারিখ নিয়ে দলগুলো নিজের অবস্থান তুলে ধরে। বিএনপি প্রয়োজনীয় সংস্কার সেরে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেছে। জামায়াতে ইসলামী জুলাইয়ের মধ্যে সংস্কার শেষ করে আগামী জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। এনসিপি জুলাই সনদের পর নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো স্ব-স্ব দলীয় অবস্থান ব্যক্ত করেছে।
বিএনপি
সংবিধান বাদে অন্যসব সংস্কার ১ মাসেই সম্ভব বলে দাবি করেছে বিএনপি। একইসঙ্গে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে দলটি। প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে গত ২ জুন বিকেলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে দলটির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। বৈঠক শেষে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা মনে করি, ডিসেম্বরের ভেতরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব। আগেই জরুরি ভিত্তিতে যেসব সংস্কার করা প্রয়োজন; বিশেষ করে নির্বাচনমুখী, সেই সংস্কারগুলোকে চিহ্নিত করে আমরা ঐকমত্যের মাধ্যমে সেগুলো বাস্তবায়ন করি। এমন কোনো সংস্কার নেই, যেগুলো এক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।
জামায়াত
জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘সংস্কারের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। জুলাইয়ের মাঝে সংস্কার শেষ করতে হবে। বেশিরভাগ বিষয়ে একমত। কিছু বিষয়ে সামান্য দ্বিমত আছে, সব দলকে একসাথে করে বৈঠক করে তা ঠিক করার চেষ্টা করা হবে। যেসব বিষয় মৌলিক কিন্তু একমত হচ্ছে না, তাও আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা যাবে বলে মনে করি। একেবারে একমত না হলে কী করা যাবে, তা নিয়ে আলোচনা করবো।’ গত ২ জুন সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের মধ্যে রিফর্ম হবে। তারপর একটি জুলাই সনদ হবে, তাতে আমরা সকল দল নীতিগত একমত, এ চার্টারে আমরা স্বাক্ষর করবো।’
বাংলাদেশের বাইরে ১ কোটি ১০ লাখ প্রবাসী আছে, যারা রেমিট্যান্স দিয়ে এদেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। তাদেরকে ভোট সংশ্লিষ্ট করতে হবে। এজন্য যে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে যাওয়া উচিত, তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ নিতে দেখছি না। এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। আমরা প্রহসনমূলক নির্বাচন চাই না। তাই প্রত্যেকটি জায়গায় স্বচ্ছতা যাতে তৈরি হয়, এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক জায়গাগুলো ঠিক করতে হবে। আগে থেকে কাজ করে উৎসবমুখর নির্বাচন চাই। এ বিষয়গুলো নির্বাচনের অনেক আগেই ঠিক করতে হবে। ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে আপত্তি আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা প্রস্তুতি নিয়ে সংস্কার, লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড ও প্রবাসীদের ভোটের বিষয় ঠিক করে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মাঝে যেকোনো সময়ে নির্বাচন দিলেই আমাদের জন্য ঠিক আছে।’
এনসিপি
জুলাই সনদের পর নির্বাচনের তারিখে ঘোষণা চেয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আগামী ৫ আগস্ট আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হবে। এটি আমরা উদযাপন করতে চাই। ৫ আগস্টের আগেই জুলাই মাসে যেন জুলাই সনদ রচিত হয়। জুলাই সনদের মাধ্যমে দেশের মানুষ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা এবং শাসনকাঠামো দেখতে চান। জুলাই সনদ হওয়ার আগে যেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করা হয়। এতে সংস্কার প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। গত ২ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
নাহিদ বলেন, যেসব রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছে, আমরা তাদের প্রতি এবং সরকারের প্রতি আহ্বান রেখেছি- ১৬ বছর অপেক্ষা করেছি, ১০ মাস অপেক্ষা করেছি, আরো দুই মাস যেন অপেক্ষা করি। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি এবং সরকারকে সময় দিই। এ দুই মাসের মধ্যে আমরা জুলাই সনদ রচনা করে ফেলি। তিনি বলেন, জুলাই সনদের পরই সরকার যেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে।
বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ছাড়াও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নিতে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আসেন- গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, এলডিপি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনসহ ২৮ রাজনৈতিক দলের নেতারা। এর আগে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশনে সংলাপ করে ঐকমত্য কমিশন।