দীর্ঘদিন আমরা এমন একটি সুবিচারপূর্ণ রায়ের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম-ডা. শফিকুর রহমান

স্টাফ রিপোর্টার
২৯ মে ২০২৫ ০৯:৪৯

স্টাফ রিপোর্টার : আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। দীর্ঘদিন আমরা এমন একটি সুবিচারপূর্ণ রায়ের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিগত শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে ভয়ঙ্কর জুলুমের শিকার হয়েছিল। জুলুম করে আমাদের বুক থেকে এক এক করে ১১ শীর্ষ দায়িত্বশীল নেতাকে মিথ্যা, সাজানো ও পাতানো মামলায় এবং মিথ্যা সাক্ষী প্রদানের মাধ্যমে কার্যত জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে। যে জায়গায় বসে আজকে আমি কথা বলছি, সেখানে আগে আপনারা দীর্ঘদিন যাদের বসতে দেখেছেন, যাদের মুখের কথা শুনেছেন কার্যত তাদেরই একজন ছাড়া দুনিয়া থেকে সবাইকে নির্মমভাবে বিদায় করে দেয়া হয়েছে। আমি সেই সব পরম শ্রদ্ধেয় নেতৃবৃন্দ এবং তাদের যেসব সহকর্মীকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছেÑ মহান রবের দরবারে কাতরকণ্ঠে তাদের জন্য আমি শাহাদাতের সর্বোচ্চ দরজা কামনা করছি। গত ২৭ মে বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানী ঢাকার কাকরাইলস্থ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে মুক্তিযোদ্ধা হলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ও ফ্যাসিবাদের চরম জুলুমের শিকার মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অপার মহিমায় তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়ায় আমীরে জামায়াতের আহ্বানে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেছেন।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এড. মতিউর রহমান আকন্দের সঞ্চালনায় সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মাওলানা মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুর রব, সাইফুল আলম খান মিলন, অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মো. সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি এড. জসিম উদ্দীন সরকার, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ডা. রেজাইল করিম, শহীদ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী, শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন, শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমাদ মাবরুর, এটিএম আজহারুল ইসলামের ছেলে তাসনিম আজহার সুমন, শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিল, এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলার আইনজীবীগণ প্রমুখ।
সম্মেলনে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শুকরিয়া আদায় করে বলেন, দীর্ঘদিন আমরা এমন একটি সুবিচারপূর্ণ রায়ের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। সেই রায় দিয়ে আজ আল্লাহ তায়ালা আমাদের আরও বেশি কৃতজ্ঞ করেছেন। সেই মহান রবের দরবারে হৃদয়ের গভীর থেকে শুকরিয়া আদায় করছি, আলহামদুলিল্লাহ।
তিনি বলেন, তার পাশাপাশি স্বৈরশাসনের আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন, বিডিআর সদস্যরা এবং সাধারণ প্রতিবাদী জনগণ যাদের নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে; বিশেষ করে চব্বিশের বিপ্লবের সময় যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করি তিনি তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করুন। এ সকল শহীদ পরিবারের সকল সদস্যবৃন্দের প্রতি আমাদের সীমাহীন শ্রদ্ধা, ভালোবাসা রইল। তাদের জন্যও মহান রবের দরবারে দোয়া করিÑ তিনি যেন এর বদলা দুনিয়া এবং আখিরাতের উত্তম জাজা দান করেন এবং শহীদদের সাথে তাদেরও যেন পরম জান্নাতের ঠিকানা দান করেন। আমরা যারা তাদের দায়িত্ব নিয়েছি আমাদের সীমাহীন ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও এগিয়ে চলার চেষ্টা করছি। আল্লাহ তায়ালা তার কুদরতি হাত দিয়ে এ জাতি এবং দীনের জন্য আমাদের কবুল করুন।
তিনি বলেন, আজকে (২৭ মে) বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আমাদের রিভিউ আবেদন শুনানির পর রায় ঘোষণা করেছেন। এ রায়ে আমাদের সম্মানিত মজলুম নেতা এবং আমাদের প্রিয় ভাই এটিএম আজহারুল ইসলামকে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জাতির এ সংকট মুহূর্তে আমাদের মাথার তাজ এসব নেতৃবৃন্দ যদি বেঁচে থাকতেন, তারা তাদের প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা-অভিজ্ঞতা দিয়ে এ জাতিকে পথ দেখাতে পারতেন। ক্যাঙ্গারু কোর্ট এভাবে এক একজন করে তাদের হত্যা করেছে। দুনিয়ার কেউ তাদেরকে আর আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। কিন্তু তাদের স্মৃতি এবং কর্ম ও তাদের অবদান আল্লাহর দীনের জন্য অম্লান থাকবে এবং বার বার ফিরে আসবে।
তিনি বলেন, এ মামলাগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে সীমাহীন জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। কীভাবে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয়েছিল, সাবেক বিচারপতি এসকে সিনহা তার লেখা নিজের বইয়ে স্বীকার করেছেন। কীভাবে পরিকল্পনা মাফিক, ঠাণ্ডামাথায় এ নেতৃবৃন্দকে খুন করতে হবে, তার ছক তৎকালীন বিচার বিভাগ এবং সরকার মিলে তৈরি করেছিলেন। আপনারা দেখেছেনÑ এক একটা রায় হয়েছে, বাস্তবায়ন হয়েছে। যাকে খুন করা হয়েছে বিচারিক আদালতের মাধ্যমে, তিনি তো আল্লাহর দরবারে চলে গেলেন। কিন্তু পাশাপাশি একই সময় পরিবারের সদস্যদের ওপর নির্মম কষাঘাত এবং অত্যাচার করা হয়েছে। আমাদের সম্মানিত ভাই আবদুল কাদের মোল্লাকে যেদিন রাতে জোর করে ফাঁসি কার্যকর করা হলো, সেই রাতে তার বাসায় হামলা করা হয়েছে। তার পবিারের সদস্যদের নাজেহাল ও শারীরিক কষ্ট দিয়ে তাদের জেলে ভরে দেয়া হয়েছিল। একেকটা পরিবার ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল।
তিনি বলেন, স্কাইপ কেলেঙ্কারির ঘটনা গোটা বিশ্ববাসীর নিকট নিন্দিত হয়েছে, তিরস্কৃত হয়েছে। গোটা বিচার প্রক্রিয়ার সময় দুটি টর্চার সেল গঠন করা হয়েছিলো। একটার নাম দেয়া হয়েছিলো সেইফ হোম, আরেকটার নাম দেয়া হয়েছিলো সেইফ হাউস। সেইফ হোমে ভিকটিম নেতৃবৃন্দকে নিয়ে নাজেহাল করা হতো। সেখানে উচ্চ আদালতের ডিরেকশনে সেইফ হোমে রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন তাদের ওপর অত্যাচার চালানো হয়েছে। আমরা তখন নীরবে সহ্য করেছি। আমরা প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছি। চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে বলেছি।
সেইফ হোমে নির্যাতনের পাশাপাশি সেখান থেকে সেইফ হাউসে এনে রাখা হতো যাত্রাবাড়ীর একটি ঠিকানায়। এসব মিডিয়ায় উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংগঠন এ বিচার প্রক্রিয়াকে নিন্দা জানিয়েছে। তাদেরকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে কিন্তু তারা তা আমলে নেয়নি। কারণ তারা জানতো স্বচ্ছ বিচার হলে খুন করা যাবে না। কারোরই কথা তারা শুনেনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা এ দেশকে ভালোবাসি। আমাদের প্রিয় নেতৃবৃন্দরাও এ দেশকে ভালোবাসতেন। ভালোবাসার জায়গা থেকে তারা চেষ্টা করেছেন দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করার। তাদের সবটুকু যোগ্যতা উজার করে দিয়ে তারা বাংলাদেশে সুস্থধারার রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন। শুধু রাজপথে নয়, সরকারের একটি অংশ হওয়ার পরও তারা সরকারি ব্যবস্থাপনাগুলোকে ভালো করার চেষ্টা করেছেন।
আপনারাই সাক্ষী, দুজন মন্ত্রী তিনটা মন্ত্রণালয় চালিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা তার এ বান্দাদের বিশেষ সাহায্য করেছিলেন। তারা সততা এবং দক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব পুরোটা সময় ধরে পালন করেছিলেন। এক বিরল প্রমাণ বাংলাদেশের জনগণের জন্য তারা রেখে গেছেন। সততার নজিরবিহীন উদাহরণ তারা রেখে গেছেন। আমরা আশা করি, তাদের এ অবদান জাতিকে অনুপ্রাণিত করবে যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, সম্মানিত ভাইয়েরা আদালতে মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে কী হয়েছে, তা আপনারা দেখেছেন। আদালত প্রাঙ্গণে যে পরিবারের মানুষকে খুনের অভিযোগে নেতৃবৃন্দের ট্রায়াল চলছে সেই পরিবারের কারো সাক্ষ্য নেয়া হয়নি। বরং এক ভাই সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন; ইসা বালির ভাই সুখরঞ্জন বালি, তাকে আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীর গাড়ি থেকে সাদা পোশাকের পুলিশ অপহরণ করেছে। তাকে অপহরণ করে নির্যাতন করে ভারতের মাটিতে ফেলে রেখেছিল। জেল খেটে দীর্ঘদিন পর তিনি দেশে ফিরে এসেছেন।
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী শুধু জামায়াতে ইসলামীর সম্পদ ছিলেন না বা তিনি শুধু বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন বিশ্বের বিশ্বাসী মানুষের সম্পদ। তার সাথে কী আচরণ করেছে, আপনারা দেখেছেন। তার এ মামলার ব্যাপারে সঠিক কথাটা বলতে সুখরঞ্জন বালি এসেছিলেন। কিন্তু আইনজীবীর গাড়ির দরজা খুলে তাকে তুলে নেয়া হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশের আদালতে এরকম ঘটনা ঘটেনি।
তিনি বলেন, এপিলেট ডিভিশনে হিয়ারিংয়ের সময় প্রধান বিচারপতি সরকার পক্ষের কৌঁসুলিকে বলছেন, যা কিছু বললেন, তাতে মতিউর রহমান নিজামীকে একদিনের জন্য বা এক মিনিটের জন্যও শাস্তি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা আশা করেছিলাম, সত্য কথাটা খোলা কোর্টে বলার পরে অন্তত তার কথার মর্যাদা রাখবেন। কিন্তু না ঐ যে আগের চক্রটা বিদেশ থেকে সাপ্লাই দেয়া রায়ের ভিত্তিতে তাকেও শাস্তি দেয়া হলো।
আদালত আমাদের নেতৃবৃন্দের ওপর জুলুম করেছে। বহু কায়দা-কানুন করে তাদের মুখ থেকে জোর করে যা নয় তা স্বীকার করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি রায় বাস্তবায়নের আগেও ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু না তারা ছিলেন স্থিরচিত্ত, তারা ছিলেন ঈমানের বলে বলীয়ান, তারা ছিলেন সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এজন্য মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে ফাঁসির কাষ্ঠে দাঁড়িয়েছেন কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি। তারা আমাদের শিখিয়ে গেছেন যে, মর্যাদাবান জাতি সত্যের ওপর অবিচল থাকলে ফাঁসি কোনো বিষয় নয়। মৃত্যু একবারই হবে অপমানজনক মৃত্যু নয়, মৃত্যুটা হোক বীরের মতো। তাদের মৃত্যু ছিল বীরোচিত মৃত্যু। আল্লাহ তাদের নেক খেদমতগুলো কবুল করে বারাকাহ দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিন। আমরা অনুপ্রাণিত হই তাদের শেষ সময়টুকু পর্যন্ত জাতিকে যা যা দিয়ে গেছেন তার থেকে।
তিনি বলেন, এ মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কাস্টমারি যে ল’ আছে, তা ফলো করা হয়নি। আবার ডোমেস্টিক যে ল’ আছে, তাও ফলো করা হয়নি। আমাদের দেশে যে এভিডেন্স ল’ আছে, এটা মোটেই ফলো করা হয়নি। সেদিন সংবিধান কোনো বিষয় ছিল না, আইন কোনো বিষয় ছিল না। যাদের ইশারায় কোর্ট পরিচালনা করা হতো, তাদের ইচ্ছাই ছিল আইন; সেটা বৈধ হোক কিংবা অবৈধ হোক। এভাবে তাণ্ডব চালানো হয়েছে আমাদের ওপর।
বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ মামলার বিষয়ে ব্রিটেনের উচ্চ আদালত তাদের রায়ে বলেছে এ মামলাগুলো বিচারের নামে প্রহসন; জাস্ট জেনোসাইড অব দ্য জাস্টিস। বিচারকে গণহত্যা করা হয়েছে। তারা কিলিং অব দ্য জাস্টিস বলে নাই। কারণ সিঙ্গেল কেস হলে বলত কিলিং কিন্তু এখানে ছিল একাধিক কেস। এ কারণেই তারা বলেছে ইট ওয়াজ এ জেনোসাইড টু জাস্টিস। ব্রিটিস আদালত এটাকে জেনোসাইড বললেও বাংলাদেশের তৎকালীন কোর্ট তা বলেনি। তবে বাংলাদেশের কোর্ট আজ সেটাই বলেছেন তাদের রায়ের মাধ্যমে। আমরা আমাদের শহীদ নেতৃবৃন্দ সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম, সাবেক নায়েবে আমীর শায়খ আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ, সাবেক আমীর শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ কামারুজ্জামান ও শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা, সাবেক নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য শহীদ মীর কাসেম আলী (রহ.), সাবেক নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আবদুস সুবহান (রহ.), সাবেক কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুল খালেক মণ্ডল (রহ.)সহ যাদের খুন করা হয়েছে অন্যায় রায়ের মাধ্যেমে, তাদের আরেকবার গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। তাদের দুনিয়া থেকে সরানো হয়েছে, কিন্তু আমাদের বুক থেকে সরাতে পারবে না। আমরা তাদেরকে আমাদের কর্মের মাধ্যমে স্মরণ করবো, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর কাছে দোয়া করিÑ তাদের রেখে যাওয়া আমানত আল্লাহ যেন আমাদের বহন করার তাওফিক দান করেন।
ব্রিটেনের আদালত বলেছে জেনোসাইড টু দ্য জাস্টিস। আজকে আমাদের আদালত বলেছেন, আপিল বিভাগ মিসক্যারেজ অব দ্য জাস্টিস। ন্যায়ভ্রষ্ট রায়, অন্যায় রায়।
শত কষ্ট আমাদের বুকে থাকা সত্ত্বেও আমরা দেশকে ভালোবাসি। আমরা প্রতিশোধ নিইনি আপনারা দেখেছেন, কিন্তু আমরা ন্যায়বিচার চাই। এ রায়ের মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে, এ রায় ছিল ইচ্ছাকৃত; গণহত্যার মাধ্যমে নেতৃত্বশূন্য করা। একটা দেশ ও দলের নেতৃত্বশূন্য করার মানেই হচ্ছে জনগণকে অন্ধকারের মাঝে ঠেলে দেয়া।
এ রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে সত্যকে চেপে রাখা যায় না। সত্য মেঘের আড়াল ভেদ করে আলোর ঝলক নিয়ে আসে, সে সত্যটাই আজ প্রমাণিত হলো।
আমরা জাতির কাছে কথা দিচ্ছি মহান আল্লাহর একান্ত ইচ্ছায় প্রিয় দেশবাসীর সমর্থন সহযোগিতায় যদি এ দেশের সেবা করার সুযোগ আমাদের কাছে আসে, তাহলে আমরা ইনশাআল্লাহ প্রতিশোধের রাজনীতির অবসান ঘটাব। বৈষম্যের রাজনীতির অবসান ঘটাব এবং সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করার জন্য প্রিয় জনগণকে সাথে নিয়ে আমাদের সবটুকু উজাড় করে দেব। পাশাপাশি আমরা চাইব আমাদের সমাজ দুর্নীতিমুক্ত হোক, দুঃশাসনমুক্ত হোক, অপরাধমুক্ত হোক, বৈষম্যমুক্ত হোক, কল্যাণধর্মী সমাজ হোক, মানবিক সমাজ হোক, সেই সমাজ গঠনে আমরা আপনাদের সাহচর্য, সমর্থন, সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করি।
তিনি আরও বলেন, হে আল্লাহ! আপনি বাংলাদেশের জনগণের জন্য আমাদের কবুল করুন। পদ-পদবী ও নেতৃত্বের বাহাদুরির জন্য নয়, প্রিয় মানুষদের জন্য ভাল কিছু করতে চাই। আপনি আমাদের সেই তাওফিক দান করুন। আমরা শত বিপদাপদের মধ্যেও দেশবাসীর পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। এমনকি গণঅভ্যুত্থানের পর আমাদের শহীদ, আহত ও পঙ্গু ভাই-বোনদের পাশে থাকার। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা আমাদের সবটুকু দিয়ে আমাদের পুরো কর্তব্য আদায় করতে পারিনি, আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে। এখনো অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আপনারা আমাদের ক্ষমা করবেন, আমাদের কোনো আচরণে এবং কোনো কথা ও কাজের মাধ্যমে কষ্ট পেয়ে থাকলে যখন যেভাবে হোক। কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, দল হিসেবেও আমরা দাবি করি না, আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে। এ সংগঠনের কোনো নেতাকর্মী বা সহকর্মীদের দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন, সবার কাছে বিনাশর্তে ক্ষমা চাই। আপনারা আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।
শত ব্যস্ততার মধ্যেও কষ্ট করে আমাদের ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য আমরা আপনাদের প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট এবং কৃতজ্ঞ। আমাদের এসব আবেদন দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দেবেন।
আল্লাহ এ জাতির সহায় হোন। জাতির অনেকগুলো বার্নিং ইস্যুজ এখনো অমীমাংসিত। রাজনৈতিক সকল দল ও সংশ্লিষ্ট অংশীজন দেশকে ভালোবেসে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা যেন সবাই যথাযথ ভূমিকা পালন করি।
আমরা কথা দিচ্ছি মহান আল্লাহর একান্ত ইচ্ছায় প্রিয় দেশবাসীর সমর্থন ও সহযোগিতায় যদি দেশের সেবা করার দায়িত্ব আমাদের ওপর আসে, আমরা ইনশাআল্লাহ প্রতিশোধের রাজনীতির অবসান ঘটাব। বৈষম্যের রাজনীতির অবসান ঘটাব। সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করার জন্য প্রিয় জনগণকে সাথে নিয়ে আমাদের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে চেষ্টা করব। আমরা চাই আমাদের সমাজ দুর্নীতিমুক্ত হোক, দুঃশাসনমুক্ত হোক, অপরাধমুক্ত হোক, বৈষম্যমুক্ত হোক, কল্যাণধর্মী সমাজ হোক, মানবিক সমাজ হোক। সেই সমাজ পরিগঠনে আমরা আপনাদের সাহায্য, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, সমর্থন, দোয়া কামনা করি। আল্লাহ তায়ালা দেশবাসীকে হেফাজত করুন। প্রিয় দেশকে হেফাজত করুন। প্রিয় দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আল্লাহ তায়ালা অক্ষুণ্ন রাখুন। সবাই মিলেমিশে একটা সোনালি সমাজ যেন বিনির্মাণ করতে পারি আল্লাহ তায়ালা এ দেশের মানুষকে সেই সাহায্য দান করুন।
আপনাদের সবাইকে আরেকবার ধন্যবাদ ও গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সম্মেলনের কার্যক্রম এখানেই শেষ করছি।