জনদুর্ভোগ চরমে : কমলগঞ্জে খানাখন্দে ভরা সড়ক
১৫ মে ২০২৫ ১৬:১৫
আবদুল হাই ইদ্রিছী, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : সড়কজুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত। বেশিরভাগ স্থানে পিচঢালাই নেই। একটু বৃষ্টি হলেই সেসব গর্তে পানি জমে যায়। প্রতিনিয়তই উল্টে পড়ছে যানবাহন। আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। কোথাও কোথাও ৩ ইঞ্চি থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত গর্ত। বেশ কিছু জায়গায় উঠে গেছে পিচ ও কার্পেট। বৃষ্টি হলেই এসব জায়গায় পানি জমে। যানবাহন উল্টে প্রায় প্রতিদিনই ঘটে দুর্ঘটনা। হতাহত হয় মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক ও ব্যবসায়ী। এ দুরবস্থা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার থেকে ইসলামপুর সড়কে। এমন বেহাল দশা প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কের। সড়কের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কজুড়ে রয়েছে খানাখন্দ। অনেক জায়গায় ধুলাবালি জমে, কাটায় পরিণত হয়েছে। এর মধ্যেই চলছে বিভিন্ন যানবাহন। বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চলছে ধীরে ধীরে। লোকজন যে আশপাশ দিয়ে হাঁটবেন, তারও কোনো উপায় নেই। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় লোকজন এ সড়ক সংস্কারের দাবি জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
স্থানীয়দের ভাষ্য, বিশেষ করে কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে আদমপুর বাজার পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। সড়কটি গত ১৫ বছর ধরে ভাঙা ও খানাখন্দে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন আদমপুর, ইসলামপুর, মাধবপুর, সদর ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ। সড়ক সংস্কার না করায় দিন দিন এসব খানাখন্দ গাড়ির চাকার চাপে ভাঙতে ভাঙতে বড় হচ্ছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, গর্ভবতী নারী ও হৃদরোগে আক্রান্ত মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। ভাঙা সড়কের কারণে মুমূর্ষু রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে না, যার কারণে সড়কের মধ্যেই রোগী মারা যায়। বর্ষার আগেই দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানান তারা।
অটোরিকশা ও ট্রাকচালকরা বলেন, ‘এ সড়কে চলার অবস্থা নেই। খানাখন্দে পড়ে অটোরিকশা উল্টে যায়। রাস্তার মাঝেই গাড়ি নষ্ট হয়। সড়কের বড় বড় আধলা ইটগুলো ট্রাকের চাকায় ঢুকে যায়। রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া যায় না। যাত্রীরা রাস্তায় পড়ে গুরুতর আহত হচ্ছেন ও দুর্ঘটনায় মারাও গেছেন।
তারা বলেন, সড়কটি নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সংস্কার করা হয়। তাই বৃষ্টি হলেই পানির তোড়ে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়। ফলে কৃষিপণ্য গ্রাম থেকে শহরে নিতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
স্থানীয় লেখক ও গবেষক আহমদ সিরাজ জানান, মৌলভীবাজার জেলা সদর ও কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ, শমশেরনগর এবং শ্রীমঙ্গল শহরে যাতায়াতের জন্য এ সড়কটি ব্যবহার করেন এ অঞ্চলের মানুষ। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি কোনো সংস্কার না করার কারণে সাধারণ মানুষসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকরা ভোগান্তিতে পড়েন। প্রায়ই এ সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। কৃষি ও পর্যটন অধ্যুষিত উপজেলার এ সড়ক দিয়ে পর্যটকরা হামহাম জলপ্রপাত, মনিপুরী কমিউনিটি বেইজ ট্যুরিজমসহ ঐতিহ্যবাহী রাসপূর্ণিমা দেখতে যান, সেইসাথে এ অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিশেষ করে টমেটো চাষিরা এ সড়ক দিয়ে উৎপাদিত ফসল শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার ও সিলেটে মালবাহী ট্রাক দিয়ে পণ্যসামগ্রী নেওয়ার সময় দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া ভাঙা এ সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটেছে।
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাইফুল আজম জানান, পুরো কমলগঞ্জে প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়ক বন্যাসহ নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়ক সংস্কার করতে ৮০ কোটি টাকার প্রয়োজন। ইতোমধ্যে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বাজেট পাস হলে দ্রুত সংস্কার করা হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর জানান, ‘বিগত বন্যায় উপজেলার অনেকগুলো গ্রামীণ সড়ক ও আঞ্চলিক সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। আশা করি, দ্রুত সময়ের ভেতরে এ সড়কগুলো সংস্কার করা সম্ভব হবে।’