অরক্ষিত বর্ষীজোড়া ইকোপার্ক


১ মে ২০২৫ ২২:৫৮

মৌলভীবাজার সংবাদদাতা: মৌলভীবাজার শহরতলীর বর্ষীজোড়া ইকোপাকর্টি অরক্ষিত, অযতেœ ও অবহেলায় পড়ে আছে। দীর্ঘদিন যাবত পর্যটকদের যাতায়াত না হওয়াতে যেন বিরান বাড়িতে পরিণত হয়েছে পার্কটি। এছাড়া স্থানীয় দুজন বন রক্ষাকারী পাহারাদার থাকার পরও বনের মূল্যবান বৃক্ষ কেটে উজাড় করা হচ্ছে। এতে স্থানীয় বন বিভাগ বৃক্ষখেকোদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিলেও প্রাণ ফিরে পাচ্ছে না একসময়ের হাজারো পর্যটকদের বিনোদনের স্থলটি।
মৌলভীবাজার শহর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে সবুজ অরণ্যে অবস্থিত বর্ষীজোড়া ইকোপার্ক। এটিকে সরকারিভাবে ইকোপার্ক ঘোষণা করা হয় ২০০৬ সালের জুলাই মাসে। রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা করা হয় ১৯১৬ সালে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, আয়তনে ৮৮৭ একর ভূমি নিয়ে অবস্থিত এই ইকোপার্কটি মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় অবস্থিত।
উত্তরে বর্ষীজোড়া এলাকা, দক্ষিণে বিমান বাহিনীর রাডার স্টেশন, প্রেমনগর চা-বাগান, পূর্বে দেওড়াছড়া চা-বাগান ও পশ্চিমে জগন্নাথপুর। চিরসবুজ এ বনে রয়েছে শাল, গর্জন, শিমুল, বনাক, সেগুন, জারুল, লোহাকাট, আমলকীসহ আরো হরেক রকমের বৃক্ষ। জীবজন্তুদের মধ্যে রয়েছে বানর, হনুমান, শিয়াল, মেছবাঘ, উঁদ, কাঠবিড়ালি, সজারু, বনরুই, কাঁকড়া, খড়গোশ, অজগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তু।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, পার্কটির প্রধান ফটক তালাবদ্ধ। পাশের ছোট একটি ফটক দিয়ে ইকোপার্কটির ভেতরে স্থানীরা যাতায়াত করেন। পার্কের ভেতরের একটি স্থাপনায় কর্তব্যরত কর্মচারীরা থাকলেও ঘরটি বেশিরভাগ সময়ে তালাবদ্ধ থাকে। বনের একটু ভেতরে গেলে দেখা যায় দুই টিলার দুই ধারে দুটি কটেজ রয়েছে। কটেজে গেলে দেখা যায়, নতুন করে নির্মিত এ স্থাপনার দরজা-জানালা ভেঙে চৌচির। কটেজে কোনো আসবাবপত্র নেই। উন্মুক্ত কটেজ দুটিতে মরীচিকা ধরেছে। এখানের স্থানীয়দের গরু-বাছুর ও বন্য প্রাণীদের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে দুটি কটেজ। বনের ভেতরের বিশাল আয়তনের যতদূর চোখ যায়, এখানকার কর্তব্যরত কোনো চৌকিদার কিংবা গার্ডদের কাউকে দেখা যায়নি।
তবে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, বর্ষীজোড়া ইকোপার্কে ২০০৬ সাল থেকে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো উন্নয়নমূলক কাজ না হলেও উন্নয়নে এখন নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এদিকে বনের ভেতর থেকে গাছ চুরির ঘটনায় একাধিক মামলা হলেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি দায়ের করা মামলাগুলো। বন বিভাগ জানিয়েছে, মামলা নিষ্পত্তি হতে আরও ৪/৫ বছর সময় লাগবে।
স্থানীয় অনেকের সাথে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে তারা জানান, এই পার্কে লোকবলের অভাব। রাতের বেলা বনের যে কোনো জায়গা থেকে বৃক্ষ কেটে নিলে মানুষ তো দূরের কথা, কোনো কাকপক্ষীও টের পাবে না।
এ সুযোগে দিনের পর দিন কেটে নেয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকার গাছ। এ নীরবতার সুযোগে স্থানীয় মাদকসেবীরা এখানে এসে আড্ডা দেয়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় দূরের পযটকরা আসতে চান না। ইকোপার্কের গোয়ালাবাড়ী এলাকার ফনি মালাকার বলেন, ‘সারা বাগানেই গাছ কাটা হচ্ছে। কারা কাটে কইতাম (বলতে) পারি না। আমরা সকালে কাজে যাই, রাতে বাড়ি ফিরি।’
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সরক্ষণ বিভাগ, সিলেট (সদর তফতর মৌলভীবাজার) ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বর্ষীজোড়া ইকোপার্ক নিয়ে একাধিক মামলা রয়েছে। নিষ্পত্তি হতে ৪/৫ বছর সময় লাগতে পারে। ইকোপার্কের সস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, পার্কটির উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রজেক্ট পাঠানো হবে। পাস হলে এরই আলোকে সংস্কার করা হবে। মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা পশাসক (রাজস্ব) মোছা. শাহীনা আক্তার বলেন, জায়গাটি বন বিভাগের। এরপরও ইকোপার্ক সংস্কারে সাবেক জেলা প্রশাসক ড. উমি বিনতে সালাম একটা প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। আপডেট আমার জানা নেই।