সকল মতবাদ ও দর্শন নিয়ে জাতি হোঁচট খাচ্ছে
১ মে ২০২৫ ১৭:৩৫
॥ মাহবুবুল হক ॥
নদী বহমান থাকে কেন? তার একটা লক্ষ্য থাকে। কী তার লক্ষ্য। তার লক্ষ্য হলোÑ যেভাবেই হোক, সে অতল সমুদ্রে অবগাহন করবে। সেই নদীর ওপর যখন বাঁধ দেয়া হয়, বা তার স্বাভবিক প্রবাহকে ভিন্নমুখী করা হয়, তখন তা প্রাকৃতিক নদী থাকে না। তখন তা হয়ে ওঠে অপ্রাকৃত এক জলধরায়। সে নানামুখী হয়। সমুদ্রে পৌঁছার জন্য সে উন্মত্ত হয়ে ওঠে। আমাদের দেশের নদীগুলোকে যারা ৭০-৮০ বছর ধরে নিরীক্ষণ করছেন, তারা বিষয়টি যথাযথভাবে অবশ্যই উপলব্ধি করবেন। জুলাই-আগস্টের বিপ্লবকে এখন নানাভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। বিশ্লেষণ করাই মানুষের কাজ। যত ধরনের বিশ্লেষণ করা হোক না কেন, প্রধান যে বিষয়টি উঠে আসবে, তা হলো এদেশ থেকে স্বৈরাচারকে চিরতরে উৎখাত করা, যার শুরুটা হয়েছিল বৈষম্য নিয়ে।
বৈষম্য কোনো নদীর মতো প্রাকৃতিক বিষয় নয়, মহান আল্লাহর গোটা সৃষ্টিটাই সহজ-সরল-স্বাভাবিক ও সাবলীল। পুরো সৃষ্টির মধ্যে গরল বলতে কিছু নেই। বৈষম্য বলতে কিছু নেই। মানুষসহ প্রকৃতির মধ্যে বা সৃষ্টির মধ্যে ব্যতিক্রম যা কিছু দেখা যায় বা উল্টাপাল্টা যা কিছু পরিদৃষ্ট হয়, তা মনুষ্যসৃষ্ট। এ ব্যতিক্রম ব্যবধান ঠিক করতে করতেই মানবজীবন শেষ হয়ে যায়। মানুষ যেমন প্রাকৃতিক নদীকে হতাহত করে, ঠিক তেমনি মানবজাতি নিজেদেরও সর্বযুগে-সর্বকালে ক্ষত-বিক্ষত ও হতাহত করে আসছে, মানুষে মানুষে বা মানুষের সাথে অন্য সৃষ্টির বৈষম্য মানুষই সৃষ্টি করেছে। একদল বৈষম্য সৃষ্টি করে আরেকদল এসে সেই বৈষম্য দূর করার জন্য নতুন করে নানা ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করে। এরপর যুগে যুগে, কালে কালে বৈষম্য দূর করার নামে মানবজাতিকে শুধু ক্ষত-বিক্ষত ও হতাহতই করা হয়েছে। মাঝখানে বৈষম্যের নানা নাম, তৈরি হয়েছে। সেসব দূর করার জন্য নানা আদর্শ, নানা মতবাদ তৈরি হয়েছে। আদর্শে আদর্শে বা উত্থিত মতবাদগুলোর মধ্যে শত শত বছর ধরে যুদ্ধ-বিগ্রহ চলছে। এসব আমরা জানি।
শুরুটা খারাপ ছিল না। দেখা গেল, ক্ষমতায় যারা আছে তারা এত বড় শক্তিধর যে, তারা ছোট-খাটো এসব বিষয়কে পাত্তাই দিতে চাইল না। ছাত্রদের দাবি-দাওয়াকে তারা অবজ্ঞা করল, উপেক্ষা করল এবং নস্যাৎ করতে চাইল। বাধা পাওয়ায় নদীর মতো বিষয়টা নানামুখী হয়ে গেল। দীর্ঘ বর্ণনায় রেশ টানতে হবে। সময়ের মূল্য এখন যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। নদীকে বাধা দিলে যেমন নদী থেমে থাকে না। যেকোনোভাবেই হোক সাগরে গিয়ে সে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করে, তেমনি বৈষম্যকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলন উদ্ভাসিত হয়েছিল, তা যখন অত্যাচার-অবিচার-জুলুম ও হতাহতের শিকার হলো, তখন সামনে একটা সমুদ্র দেখা গেল। কাল্পনিক সমুদ্র। সেটা কী? সেটা হলো স্বৈরাচারের পতন। লড়াইটা সমুদ্রের সাথে। স্বপ্নটা বড় হয়ে উঠলো। খুব বেশি সময় লাগেনি, লক্ষ্যটা গোটা জাতির মধ্যে স্থির হয়ে গেল। লক্ষ্য অনুযায়ী আপসে-আপ কর্মসূচি তৈরি হয়ে গেল।
লক্ষ্যটাই বড়। কর্মসূচি বড় নয়। লক্ষ্য নড়চড় হলে কর্মসূচিও নানাভাবে বিভক্ত হয়ে যায়। এখানে লক্ষ্য মানে গন্তব্য। সেই গন্তব্য কী ছিল? ছিল এক দফা স্বৈরাচার পতন। আমরা সবাই জানি, আমাদের গন্তব্য যদি গুলিস্তান থাকে, তাহলে গুলিস্তানের চারপাশ দিয়ে সবরকম যানবাহনের মাধ্যমে সর্বদিক দিয়ে গুলিস্তানে পৌঁছা যাবে। যার যেখানে অবস্থান, সেখান থেকে সে তার সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী সময়মতো গুলিস্তানে পৌঁছার চেষ্টা করবে। এসব তো আমরা চাক্ষুস দেখেছি এবং এখনো দেখছি।
এখানে এসে উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যকে একটু বিশ্লেষণ করতে হবে। আমরা আসলে পরিপূর্ণভাবে লক্ষ্য স্থির করে বিপ্লব করিনি। ক্ষমতাসীনরা কোনোকিছু শুনছে না, কোনোকিছু মানছে না, হত্যাযজ্ঞ চালাতে মানুষ ও সম্পদের ক্ষতি করছে। যে উদ্দেশ্যে দেশ স্বাধীন করা হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য বহু আগেই লোপাট হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধ লক্ষ্য ছিল না। লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা অর্জন। কেন স্বাধীনতা? দেশে মানুষ ও সৃষ্টির অধিকার ফিরে পাওয়া। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। শুধু মানুষের অধিকার নয়, সৃষ্টির অধিকারও প্রতিষ্ঠা করা মুক্তিযুদ্ধের সময় শুধু নয়, বহু আগে এসব বিষয় নিয়ে বহু আলাপ-আলোচনা হয়েছিল। নানামাত্রিক আলোচনা করার সুযোগ এখানে নেই। যা আমরা হারিয়েছি, তা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা যেহেতু ক্ষমতাধরদের কাছে পাওয়া যাবে না; সুতরাং ক্ষমতাধরদের উৎখাত করতে হবে। প্রকৃত দেশবাসীকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। এ উৎখাতের আন্দোলনই ছিল স্বাধীনতা আন্দোলন। সেই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য অনিবার্যভাবে প্রয়োজন হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের। মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীনতা আসবে, স্বাধীনতাকে অর্থবহ ও সমুজ্জ্বল করতে ভূমিপুত্র-কন্যাদের ক্ষমতাসীন করতে হবে, সেটা কী করে হবে? ভোটের মাধ্যমে, নির্বাচনের মাধ্যমে অর্থাৎ গণতন্ত্রের মাধ্যমে। তাহলে এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি কখনো কখনো উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য একাকার হয়ে যাচ্ছে। কখনো কখনো লক্ষ্য উন্নত পর্যায়ে অভিমুখে সরে যাচ্ছে। লক্ষ্য স্থির থাকছে না। লক্ষ্য পরিণতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সে কারণে আমরা সবসময় বলে থাকি, গণতন্ত্রকে হাসিলের জন্য আমরা লড়াই করেছি, মুক্তিযুদ্ধ করেছি, জীবন ও সম্পদ হারিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিলÑ আমরা আমাদের দেশকে স্বাধীন করব। সেখানে আমরা দেশবাসীকে ক্ষমতাধর করব। যারা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। আল্টিমেটলি দেখা গেল, আমাদের আন্দোলন সফল হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয় লাভ করেছি, স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বদেশবাসীকে ক্ষমতার সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা করেছি। কিন্তু যে লক্ষ্যে এত সফলতা, এত বিজয়, এত অর্জন, তা-কি আমরা শেষমেশ রক্ষা করতে পেরেছি?
লক্ষ্য শিফট হতে হতে ‘গণতন্ত্র অর্জন’ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছিল। এখন বলুন তো গণতন্ত্র কি আমরা অর্জন করতে পেরেছি। আমরা কি আমাদের দেশকে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত করাতে পেরেছি? দুনিয়ার কোনো দেশের মানুষ কি আমাদের দেশকে গণতান্ত্রিক দেশ বলে? গত ৫৩ বছরে দেশ-বিদেশে আমরা যে উপাধি পেয়েছি, সংক্ষেপে তা হলোÑ হতদরিদ্র দেশ, দরিদ্র দেশ, ঝড়-বন্যার দেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ, আমদানির দেশ, অনুৎপাদনের দেশ, মূর্খ মানুষের দেশ, অপ্রগতিশীল দেশ, অল্প শিক্ষিতের দেশ, লুটেরার দেশ, তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ, দুর্নীতির জন্য চ্যাম্পিয়ন দেশ, অপুষ্টি দেশ, বিশ^াস ও আস্থাহীনতার দেশ, পরনির্ভরশীল দেশ, আন্দোলনের নামে জানমাল ধ্বংসের দেশ, অনৈক্যের দেশ, বিশৃঙ্খলার দেশ, ঘুষের দেশ, পরাণুকরণের দেশ, জাতিসত্তা ও আত্মপরিচয়হীন দেশ, সর্বশেষ যে পরিচয়ে আমরা উন্নীত হয়েছি, তা হলো মহাস্বৈরাচারের দেশ।
একের পর এক উন্নত লক্ষ্য নির্ধারণ করার পরও এবং উদ্দেশ্য হাসিল হলেও আমরা মূল লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। বরং ৫০ দশকে পূর্ব অবস্থানে ফিরে গেছি। পরিশেষে আমরা লক্ষ্যচ্যুত জাতিতে পরিণত হয়েছি। এটা বাংলাদেশি জাতির জন্য একটা বড় ধরনের কলঙ্কময় অধ্যায়। আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন জাতি হলে আমাদের আপসোসের অন্ত থাকতো না। প্রবীণরা না বুঝলেও প্রকৃত শিক্ষার্থী তরুণরা এটা এখন সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারছে।
এবার আমাদের নিকটাতীতে অস্পষ্ট লক্ষ্যহীন বিপ্লবের কথায় আসি। কবি নজরুলের চার লাইন কবিতা পাঠ না করে পারছি না।
ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর
প্রলয় নতুন সৃজন বেদন
আসছে যারা অনাগত
অসুন্দরের করতে ছেদন।
আনন্দের কথা, মনে হয় নজরুলের ব্যক্ত অনাগতরা আল্লাহর রহমতে এসে গেছে। তাদের এক দফা দাবি সফল হয়েছে। কিন্তু সফলের পর তারা কী লক্ষ্য অর্জন করবে বা করতে হবেÑ এ বিষয়টি চর্চা করার সময় তাদের ছিল না। ঐ সময়ে কর্মসূচিটাই ছিল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য। কর্মসূচি পালন করার জন্য তারা জীবন দিয়েছে, ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়েছে। হতাহত হয়েছে, শাহাদাতবরণ করেছে, পঙ্গু হয়েছেÑ আল্লাহর রহমতে কর্মসূচি সফল হয়েছে। যেমন সফল হয়েছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। শিক্ষার্থী যোদ্ধারা বার বার দেশের প্রকৃত অভিভাবকদের প্রশ্ন করেছে। তাদের শিক্ষকদের প্রশ্ন করেছে। কিন্তু কেউ কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। কারণ অধিকাংশের মাথায় এমন ধরনের সফলতার আশা-ভরসা ছিল না। বড় থেকে ছোট সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশের মধ্যে বিভ্রম ছিল, দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। অধিকাংশই তাদের পরামর্শ দিয়েছেন যুদ্ধ কর, দেখা যাবে। দু-একটি রাজনৈতিক দলসহ চিন্তাবিদ, দার্শনিক, আইনজ্ঞ, কিছু দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব নদীর মতো বিপ্লবের বহমানতা অব্যাহত রাখার উপদেশ ও পরামর্শ দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, আইনকানুন ছাড়। বিপ্লবের লংমার্চ অব্যাহত রাখ। এ লং-মার্চই তোমাদের বলে দেবে বা নির্দেশ করবেÑ কোন গন্তব্যের দিকে তোমাদের যেতে হবে। বঙ্গোপসাগরের দিকে না ভারত মহাসাগরের দিকে। তরুণ যোদ্ধারা ভারত মহাসাগরের কথা শুনে বিব্রতবোধ করেছে, তারা বঙ্গোপসাগরের দিকে ইউটার্ন করতে চেয়েছে। কিন্তু দুটি মহাসাগর এতই কাছাকাছি যে, সেটা নির্ণয় করা বা চিহ্নিত করা খুব সহজ ছিল না। ফলে স্বৈরাচারী সরকারসমূহের বিকল্প বলে পরিচিত একটি বড় রাজনৈতিক দল যখন ভারত মহাসাগরের দিকে ইউটার্ন করে বসল, তখনই বিপত্তি দেখা দিল। যাদের স্বৈরাচারের বিকল্প বলে মনে করা হয়েছিল, তারা যখন বঙ্গোপসাগরের পানিতে গোসল করতে চাইল না, বরং ভারত মহাসাগরে ¯œান করতে চাইল, তখন তো স্বাভাবিকভাবেই সবার মনে পড়ে গেল বিশিষ্ট ব্যঙ্গ সাহিত্যিক, অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছাত্রদের দরিদ্রতা দূর করার জন্য বিকল্প আয়ের উৎস সৃষ্টি করেছিলেন। তার জীবিত অবস্থায় সেই সুবর্ণ বিকল্প আয়ের উৎস নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল। যে দলটির উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যই ছিল ‘বিকল্প আয়োজনের’ অর্থাৎ যারা অগণতান্ত্রিক একদলীয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে চায় না, তাদের জন্য দয়া করে একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছিল। জাগদল। তার পরবর্তীতে বিস্তৃত নাম সবাই জানেন, সেদিকে আর গেলাম না। লুৎফর রহমান সরকারের বিকল্প অর্থনীতি যেমন টেকসই হয়নি, ঠিক তেমনি জিয়াউর রহমানের বিকল্প প্ল্যাটফর্ম বা রাজনৈতিক দলও সেভাবে টেকসই হয়নি। বিকল্প কোনো কিছু টেকসই হয় না। এটা জীবন ও জগতের জন্য একটা নেগেটিভ এপ্রোজ। দুনিয়ায় যত দর্শন, যত মতবাদ, যত আদর্শ বিকল্প এঙ্গেলে নির্মিত হয়েছিল, তা টেকেনি, ডারউইনের বানরের বিকল্প মানুষতত্ত্ব দুনিয়ার কিছু বেকুব ছাড়া অথবা অর্থগৃন্ধ কিছু বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পরিচালক ছাড়া কেউ এসব সার্কাসকে পছন্দ করে না। ময়ূরের বিকল্প কাক হতে পারেনি। বাঘের বিকল্প বিড়াল হতে পারেনি। পারবে না। বিকল্পরা কখনো আসল হতে পারে না। নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো, এসব বলে তৃপ্তির ঢেউ ওঠানো যায়, কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছু হয় না।
লক্ষ্যের বিষয়ে ‘পরে দেখা যাবে বলে’ যে মুরুব্বি বা অভিভাবকরা আশ^াস প্রদান করেছিল তারা কেউ স্বার্থের কারণে, কেউ নির্দিষ্ট আদর্শের কারণে, কেউ এজেন্সির কারণে নিশ্চুপ হয়ে গেল। লক্ষ্য আর সেভাবে নির্ধারণ করা গেল না। দেশি-বিদেশি উপদেশ ও পরামর্শের ভিত্তিতে আচম্বিতে যে সরকার গঠিত হলো তার প্রধানকে দেশবাসীসহ সারা বিশে^র মানুষ বাংলাদেশের জন্য একজন শ্রেষ্ঠ নেতা বিবেচনা করল। সেই বিবেচনা উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ হতে লাগল, সমুজ্জ্বল হতে লাগল এবং বিস্তৃত হতে লাগল। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে যারা প্রধান শাসক হিসেবে শাসন করেছেন, তার মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠতর ননÑ শ্রেষ্ঠতম। কিন্তু তার উপদেষ্টা পরিষদে যারা সহসঙ্গী আছেন, তাদের মধ্যে কয়েকজন নন্দিত, বরেণ্য ব্যক্তি থাকলেও সবাই সমভাবে নন্দিত নন। কাউকে কাউকে জনগণ উপযুক্ত বলে বিবেচনাও করেন না। তবুও এ নিয়ে দেশবাসী খুব বড় একটা রা’টি করেন না। দেশবাসী ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছেন এবং এ সরকারের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছেন।
দেশ ও জাতি পুনর্গঠনের জন্য বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল, তারা রিপোর্ট সময়মতো পেশ করে প্রশংসিত হয়েছে। দেশবাসীও বুঝে না বুঝে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু রিপোর্টগুলোর পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এবং বিভিন্ন আদর্শ ও মতবাদসহ এসব প্রণয়ন করা হয়েছে। লক্ষ্যের বিষয়ে রিপোর্টগুলোয় জাতীয় আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন নেই। আমরা তো সংকর জাতি নই; বিশেষ করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন যে রিপোর্ট পেশ করেছে তা নিয়ে দেশের শতকরা ৭০ শতাংশ মানুষ বিব্রত ও বিক্ষুব্ধ। জানি না, আমাদের লক্ষ্য কবে ঠিক হবে।