রংপুর অঞ্চলে কৌশলে বাড়ছে তামাক চাষ
১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৪২
মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, রংপুর : রংপুর অঞ্চলে অন্যান্য ফসলের সাথে তামাক চাষ এখন কৌশলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনোভাবেই চাষিদের তামাক চাষ থেকে বিবৃত করা যাচ্ছে না। বরং প্রতিনিয়ত নতুন এলাকায় তামাক চাষ বেড়েই চলছে। তবে কৌশলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস প্রতি বছর ‘সংখ্যায় কম’ দেখিয়ে ঢাকা অফিসকে রিপোর্ট দিচ্ছে, যা বাস্তবতার সঙ্গে কোনো মিল নেই।
রংপুর জেলা কৃষি অফিসের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২৩-২৪ রবি মৌসুমে জেলায় তামাক চাষ হয়েছে ১ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে। অথচ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, জেলায় তামাক চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৬৩৬ হেক্টর জমিতে। এক বছরেই তামাক চাষ বেড়েছে দুইগুণ। জেলা কৃষি অফিস থেকে ঢাকায় প্রধান কার্যালয়ে প্রেরত তথ্যানুযায়ী, জেলায় ২০২৩-২৪ রবি মৌসুমে তামাক চাষ হয়েছে ১ হাজার ৭৫ হেক্টর, ২০২৩ সালে ১ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে, ২০২২ সালে ১ হাজার ৮৮৫ হেক্টরে, ২০২১ সালে ১ হাজার ৯২৫ হেক্টরে এবং ২০২০ সালে ২ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। প্রতি রবি মৌসুমে সংখ্যায় কম দেখিয়ে ঢাকায় তথ্য পাঠানো হচ্ছে।
রংপুর জেলা কৃষি অফিসে দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২৩-২৪ রবি মৌসুমে মহানগর এলাকায় তামাক চাষ হয়েছে ১০ হেক্টর জমিতে। অথচ মেট্রোপলিন কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী, কেবল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় তামাক চাষ হয়েছে ২০ হেক্টরে। মাঠপর্যায়ের এ তথ্যের সঙ্গে কোনো মিল নেই বাস্তবতার। রংপুরের বিভিন্ন উপজেলায় দিগন্তজুড়ে রয়েছে তামাকের চাষ। সদর উপজেলায় ৩৪৫ হেক্টরের কথা বলা হলেও বাস্তবে তিনগুণের বেশি আমাক চাষ হয়েছে কেবল সদর উপজেলায়।
সদর কৃষি অফিস বলছে, ৯৫০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। বদরগঞ্জ উপজেলায় ১৫ হেক্টরের দাবি করা হলে এবার চাষ হয়েছে ৫১ হেক্টর জমিতে। এ উপজেলায় ২০২১-২২ রবি মৌসুমে ২০ হেক্টর, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৫ হেক্টর। ভয়াবহ অবস্থা তারাগঞ্জ উপজেলায়ও। জেলা অফিসের তথ্যানুযায়ী এ উপজেলা ৯৬০ হেক্টর তামাক চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, তামাক চাষ হয়েছে ১ হাজার ৯৯৫ হেক্টর জমিতে। ২০২৩ সালে ৮০০ এবং ২০২২ সালে ৭৬৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। গঙ্গাচড়া উপজেলায় ৫১০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হলেও এবছর ৬০০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। মিঠাপুকুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে দেউলপাড়া ও হরিপুর গ্রামের বালার পাথারে বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। তামাক চাষি খয়রুজ্জামান, কুদ্দুস মিয়া, বাচ্চা মিয়া জানান, বিভিন্ন সিগারেট কোম্পানির পক্ষ থেকে গত কয়েক বছর থেকে প্রতি কেজি তামাক ১৭৫ দরে ক্রয় করছে। তারা সার কিটনাশক এবং অগ্রিম টাকাও দিচ্ছ তামাক চাষিদের।
মিঠাপুকুর উপজেলায় তামাক চাষ হয়েছে ২০ হেক্টর জমিতে। জেলা কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যের সাথে এর কোনো মিল নেই। জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে তামাক চাষ করেছেন কৃষক। রবি মৌসুমের ফসল হিসেবে এ এলাকায় আলুচাষ হলেও তামাক চাষে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। চাষিদের ব্যস্ত সময় কাটছে তামাকের ক্ষেতে সেচ প্রদান, পাতা সংগ্রহ ও শুকানোর কাজে। রংপুর সিটি করপোরেশনের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ড, গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তার চর ছাড়াও রংপুর সদর উপজেলার পাগলাপীর, মমিনপুর, তারাগঞ্জের শলেয়া শাহ এলাকার বিভিন্ন এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত সবুজে ছেয়ে গেছে। চাষিরা জানান, তামাক চাষে উৎসাহিত করতে কৃষকদের সার, বীজ, কীটনাশকসহ সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা দিচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। এ বছর তামাকের দাম বাড়বে এমন গুজব কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে অনেকই তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর এলাকার কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেন, ১ বিঘা জমিতে ৭-৮ মণ তামাক উৎপন্ন হয়। এতে খরচ হয় ১৫-১৬ হাজার টাকা। গত বছর প্রতি মণ তামাক সাড়ে ৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছি। এ বছর তামাকের দাম আরও বাড়বে এমন আশ্বাসও পাওয়া গেছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জানান, তামাক চাষ যেন কৃষকরা কমিয়ে আনেন সেজন্য আমরা কাজ করছি। গত ৫ বছরে ধীরে ধীরে তামাক চাষ কমছে। তামাক চাষ শূন্যের কোটায় আনতে চাই। কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য সঠিক কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা থেকে পাঠানো তথ্যানুযায়ী আমাদের তথ্য ঠিক আছে। উপজেলার তথ্যের সঙ্গে কৃষি বিবাগের তথ্যের মিল নেই বিষয়টি নজরে আনলে তিনি বলেন, তাহলে নতুন করে পরিসংখ্যান করা হবে।