চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বার বার দুর্ঘটনা কেন?
১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৪১
ইমারান সোহেল, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় সম্প্রতি তিনটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৫ জন নিহতসহ কমপক্ষে ২৬ জন আহত হয়েছেন। একই স্থানে পরপর তিনটি দুর্ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন। খোঁজা হচ্ছে দুর্ঘটনার কারণ। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কটি সরু এবং ওই এলাকায় বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। এছাড়া ট্রাকে লবণ পরিবহন করার কারণে সড়কটি পিচ্ছিল থাকে। এসব কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় দুর্ঘটনার সব কয়টি ঘটে সকাল বেলা। এর মধ্যে গত ৩১ মার্চ সোমবার সকালে যাত্রীবাহী বাস ও মিনিবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচ তরুণ নিহত হন, আহত হন ৯ জন। গত ১ এপ্রিল মঙ্গলবার ভোরে পর্যটকবাহী দুটি মাইক্রোবাস উল্টে ৯ জন আহত হন। গত ২ এপ্রিল বুধবার সকালে বাস-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১০ জন নিহত এবং পাঁচ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, অতীব গুরুত্বপূর্ণ এ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কটি। গত ২০ বছরেও এ সড়ক প্রশস্ত করা হয়নি। সড়কটি সরু এরমধ্যে বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। সড়কটি চার লেন কিংবা ছয় লেন করা হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতো না। অথচ সরকার এ সড়কের উন্নয়নে এগিয়ে আসছে না।
লোহাগাড়া ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার রাখাল চন্দ্র রুদ্র সোনার বাংলাকে বলেন, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় গত তিন দিনে একই স্থানে তিনটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়। এসব দুর্ঘটনার জন্য আমরা বেশকিছু কারণ চিহ্নিত করেছি। এ সড়কে ট্রাকে লবণ পরিবহন করা হয়। এতে লবণ পানি পড়ে সড়ক পিচ্ছিল হয়। এ কারণে বার বার দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া ওই এলাকায় এ সড়কে আছে বিপজ্জনক বাঁক, অন্য জেলার চালকদের এ সড়কে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা না থাকাসহ নানা কারণে এখানে বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুভরঞ্জন চাকমা সোনার বাংলাকে বলেন, লোহাগাড়া চুনতির জাঙ্গালিয়া এলাকার যে স্থানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটি অত্যন্ত ঢালু। ভোরে সড়কে যানবাহন কম থাকে। ওইসময় ফ্রি রুটে যানবাহনের গতি থাকে বেশি। যেসব চালক নতুন তাদের এ সড়ক সম্পর্কে ধারণা থাকে না। যে কারণে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে দুর্ঘটনা ঘটছে।
জাঙ্গালিয়ায় সড়ক যে ঢালু অবস্থায় রয়েছে তা সংস্কার খুবই প্রয়োজন। এত দুর্ঘটনার পরও সড়ক ও জনপথ বিভাগের এ বিষয়ে কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে না।
দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জেলা পুলিশের সাতকানিয়া সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তৌফিকুল আলম সোনার বাংলাকে বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে এর মধ্যে জাঙ্গালিয়া এলাকায়ও একটি বড় বাঁক রয়েছে। গাড়ি ওভারটেক করার সময় বিপরীত দিক থেকে গাড়ি আসছে কিনা দেখা যায় না। এ কারণে মূলত দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক বিভাগে অতিরিক্ত দায়িত্বরত নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী বলেন, ভোরে লবণ পানির কারণে সড়ক পিচ্ছিল থাকে। এছাড়া সকালে কুয়াশার কারণেও ভেজা থাকে সড়ক। এসব কিছুকে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া যানবাহনের তুলনায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি সরু। এ কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি প্রশস্ত করার একটি প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্পটি বর্তমানে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মধ্যে আছে। সড়ক প্রশস্ত করা গেলে দুর্ঘটনা কমে আসবে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার-ছয় লেন করার দাবি : চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেন করার দাবিতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় জামায়াত ও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে বেশ কয়েকটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানুষের নির্বিঘ্নে চলার লক্ষ্যে মহাসড়কটি চার-ছয় লেনে উন্নীত করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আমীর আনোয়ারুল আলম চৌধুরী বলেন, প্রতিনিয়ত এ মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। ঈদ-পরবর্তী বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় অনেকের প্রাণহানি ঘটে। মহাসড়ক কখনো ওয়ানওয়ে হতে পারে না। দূরপাল্লার দ্রুতগামী যান চলাচলের জন্য নেই কোনো পদক্ষেপ। ফলে দিনদিন হতাহতের ঘটনা বেড়েই চলেছে। মহাসড়কের যত্রতত্র মানুষ ওঠানামার জন্য গতি কমানোর ফলে দ্রুতগামী যানবাহন ওভারটেকিং করতে গিয়ে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষের নির্বিঘ্নে চলার জন্য মহাসড়কটি চার লেনের করা সময়ের দাবি, তাই অতিসত্বর চার লাইনে উন্নীত করতে হবে।
লোহাগড়া চুনতির মানববন্ধনে এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন বলেন, মহাসড়কটি বিভিন্ন সময়ে চার লেন বা ছয় লেন করার দাবি দেয়ার পরও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকরী কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বছরের পর বছর দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে। অথচ ফ্যাসিস্ট সরকার দেশ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করলেও জনগণের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেননি। অল্প সময়ের মধ্যে এ মহাসড়ক চার-ছয় লেনে উন্নীত করে মানুষের দুর্দশা লাঘব করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
লোহাগাড়া চুনতির দুর্ঘটনাকবলিত জাঙ্গালিয়ায় মানববন্ধনে বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল মোস্তফা আমিন বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ছয় লাইনের সড়ক চাই চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ছয় লেনের সড়কে নির্মাণের দাবি জানান তিনি। এ মহাসড়কে গাড়ির চাপ থাকলেও সড়কটি প্রশস্ত করা হয়নি। মহাসড়ক বললেও এটা আসলে মহাসড়ক না। বেশিরভাগ অংশে সড়ক মাত্র ২ লেন। সড়কের জাঙ্গালিয়া, চকরিয়ার কচ্ছপিয়া এবং বানিয়াছড়া ঢালা এ তিন স্থান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ রাস্তা প্রশস্ত করা খুবই জরুরি। আমরা চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ছয় লেনে বিশিষ্ট সড়ক চাই। পরবর্তী একনেক সভায় চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়ক ৬ লেইন করার বিষয়টি অনুমোদন দিতে হবে। চার লেনের কথা বলে আমাদের সন্তুষ্ট করা যাবে না। এ সড়কে দুর্ঘটনা বন্ধে অবিলম্বে রাস্তার মাঝে ডিভাইডার দিয়ে ৬ লেনের রাস্তা করতে হবে, অন্যথায় হরতাল অবরোধের মতো বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। আমরা চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান প্রধান উপদেষ্টার সুদৃষ্টি কামনা করছি।