পর্দার আড়ালে চলছে জোট গঠনের তৎপরতা
১৩ মার্চ ২০২৫ ১৬:১১
॥ ফেরদৌস আহমদ ভূইয়া ॥
বাংলাদেশের রাজনীতিতে মেরুকরণ তথা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জোট গঠন ও জোট ভাঙা-গড়া একটি স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। রাজনীতিতে জোট গঠন ও মেরুকরণ অতীতেও ছিল এবং বর্তমানেও আছে। এককথায় গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে মেরুকরণ অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও চলবে। তবে যখন কোনো নির্বাচন; বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসে, তখন এ রাজনৈতিক মেরুকরণটা বেশ জোরেশোরে হয়। কারণ হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দলের ওপর পুরো জনগোষ্ঠী বা অধিকাংশ জনগণের কোনো সমর্থন নেই। যার প্রেক্ষিতে কোনো একক দল নির্বাচনে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না। তাই আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোট গঠন ও মেরুকরণটা একটু নীরবে হলেও জোরালোভাবে চলছে। এটা যেমন এখন হচ্ছে, শত বছর আগেও আমাদের এ বাংলায় জোট ও কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়েছে।
ব্রিটিশ ভারতে বাংলা ভূখণ্ডে সরকার গঠনের জন্য প্রথম অ্যাসেম্বলি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩৭ সালে। সেই নির্বাচনেও বাংলায় কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়। সেই থেকে শুরু করে ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে অনেকগুলো দল মিলে নির্বাচন করে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করে। তারপর ১৯৭০-র দশক, ১৯৯১-র দশক ও ২০০১ সালেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জোটবদ্ধ নির্বাচন করেই সরকার গঠন করেছে। বাংলাদেশের হাল আমলের রাজনৈতিক বাস্তবতা হচ্ছে বর্তমান সময়ে কোনো একক রাজনৈতিক দল সুষ্ঠু নির্বাচনে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী ১৯৩৭ সালের বঙ্গীয় প্রাদেশিক (বেঙ্গল অ্যাসেম্বলি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটা ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম নির্বাচন। এ নির্বাচনে বাংলা প্রদেশে প্রধান তিনটি দল যথা কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ও কৃষক প্রজা পার্টি অংশগ্রহণ করে। এ নির্বাচনে মুসলিম লীগ ৪০ আসনে বিজয়ী হয়, কৃষক প্রজা পার্টি ৩৫ আসনে, স্বতন্ত্র মুসলিম প্রার্থীরা ৪১ আসনে এবং স্বতন্ত্র হিন্দুরা ১৪ আসনে বিজয়ী হয়। এ নির্বাচনে কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হলে মুসলিম লীগ ও কৃষক প্রজা পার্টি মিলে কেয়ালিশন সরকার গঠন করে। এ কোয়ালিশন মন্ত্রিসভায় শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে কৃষক প্রজা পার্টি গঠিত হয় ১৯৩৬ সালে।
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারকে বাদ দিলে এর আগে ২০০১ সালে যে সরকার ছিল, তা-ও ছিল একটি জোট সরকার। ২০০১ সালে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী ঐক্যজোটের সমন্বয়ে গঠিত চারদলীয় জোট একসাথে নির্বাচন করে। চারদলীয় জোট নামে পরিচিত এ গ্রুপটি দুই শতাধিক আসনে বিজয়ী হয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠন করে। এ চারদলীয় জোট ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করে।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে অবশ্য প্রকাশ্য কোনো জোট ছিল না। কিন্তু সরকার গঠনের জন্য বড় দুই দলের কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়নি। ঐ নির্বাচনে বিএনপি ১৪০ আসনে বিজয়ী হয়েছিল, কিন্তু সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন ১৫১ থেকে কম ছিল। তাই জামায়াতের ১৮ আসনের সমর্থন নিয়ে তখন বিএনপি সরকার গঠন করেছিল। আওয়ামী লীগ ৮৮ আসন আর জাতীয় পার্টি ৩৫ আসন পেয়েছিল। সরকার গঠন করতে আওয়ামী লীগ জামায়াতের সমর্থন চেয়েছিল।
তারপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটটি সম্প্রসারণ করে ১৮ দলীয় জোট হিসেবে নির্বাচন করে। অবশ্য বর্তমানে এ জোটটি কার্যকর নেই। এ জোটের প্রধান দুই শরিক এখন পৃথক পৃথকভাবেই নির্বাচন করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। তবে এককভাবে নয়, বরং জোটগতভাবেই নির্বাচন করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
এমনি একটি প্রেক্ষাপটে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে জোট বাঁধা নিয়ে পর্দার আড়ালে চলছে নানা আলোচনা। বড় দল হিসেবে বিএনপি যেমন ডান-বাম ও ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের চিন্তা করছে, তেমনিভাবে প্রাচীন ও বড় ইসলামী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীও নতুন একটি জোট গঠনের দিকে এগোচ্ছে। নতুন করে আলোচনায় আসা ছাত্র তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিও জোট গঠন নিয়ে ছোট-বড় দলগুলোর সাথে আলোচনা করছে বলে জানা গেছে। দলটি বিএনপি নাকি জামায়াতের সঙ্গে জোট করবে, নাকি এর বাইরে নতুন চমক নিয়ে আসবে, তা নিয়ে জনমনে কৌতূহল রয়েছে। তবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে দল গোচাচ্ছে ছাত্রদের নতুন দল এনসিপি। দল ও জোট গঠন নিয়ে দলটির নেতারা বিভিন্ন হিসাব-নিকাশও করছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টি দুই দফায় ২১৬ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছে। তাছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির ৪৩০-এর অধিক জেলা-উপজেলা কমিটি বিদ্যমান রয়েছে। কমিটিগুলো এনসিপির কমিটি হিসেবেই কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। দুই সপ্তাহ আগে গঠিত একটি রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী নির্বাচনে আমরা জয়ী হবো। তবে এ নির্বাচনই শেষ নয়… আমাদের লক্ষ্য আরও ৫০, ১০০ বা তারও বেশি বছর ধরে এ শক্তি ধরে রাখা।’
এএফপিকে তিনি বলেন, হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে এখনো সমস্যার মুখে পড়ছে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই নির্বাচন বিলম্বের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলা হয়। তবে এটা সত্যি নয়।’
একটি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচনের দিকেই জোর দিতে চাচ্ছে এনসিপি। এরই মধ্যে দলটি নির্বাচনে এককভাবে নাকি জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নেবে, তা নিয়েই বেশ আলোচনা চলছে। দেশের সর্ববৃহৎ দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে তৃতীয় দল হিসেবে নির্বাচনী মাঠে নামতে যাচ্ছে এনসিপি। দলটির নেতারা মনে করেন, ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে এনসিপির। তবে তৃণমূল শক্তিশালী না হলে বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোট করতে পারে দলটি। এক্ষেত্রে জামায়াতের সঙ্গে জোটের আগ্রহ নেই বেশিরভাগ নেতাকর্মীর। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি দলটি।
বিএনপির সাথে এনসিপির জোট হবে নাকি জামায়াতের সাথে জোট হবে- এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ভিন্ন ভিন্ন খবর রয়েছে। জানা গেছে, এনসিপি রাজনৈতিক জোট করতে বিএনপির সাথে যোগাযোগ করছে। বিগত কয়েক সপ্তাহে বিএনপির সাথে এনসিপির নেতাদের একাধিক বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে জাতীয় সংসদের আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথা হয়েছে, তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি এনসিপিসহ অন্য দলগুলোকে ৫০ আসন ছেড়ে দিতে রাজি আছে। ২৫-৩০টি আসন এনসিপির জন্য আর অন্য ছোট দলগুলোর জন্য ২০-২৫টি আসন।
একটি সূত্র বলছে, নতুন দল এনসিপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বিএনপির একজন নীতিনির্ধারককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকারের দুজন প্রভাবশালী ব্যক্তি বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করছেন। এদিকে এনসিপির একটি সূত্র বলেছে, তারা ১০০ আসন নিয়ে জামায়াতের সাথে নির্বাচনী জোট করতে চায়। জোট গঠনের এ আলোচনা চলছে, তবে এখন পর্যন্ত কোনো দলের সাথেই চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সবকিছু ঠিক থাকলে এপ্রিলের শেষে এ নিয়ে দৃশ্যমান কিছু অগ্রগতি দেখা যেতে পারে।
অন্তর্র্বর্তী সরকারের শপথের পর দেশের বৃহত্তর দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে জামায়াত জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয় নির্বাচনের দাবি জানালেও বিএনপি আগেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। শেখ হাসিনা পতনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি গঠনের পরে দেশের নির্বাচনী মাঠে নতুন হাওয়া বইতে শুরু করে। দ্রুত সময়ের মধ্যে দলটি নিজেদের তৃণমূল গোছাতে পারলে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে বা বৃহত্তর দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ‘বাজিমাত’ করতে পারে বলেও আশাবাদী দলটির নেতারা।
এনসিপির এক শীর্ষনেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটি গণপরিষদ নির্বাচন। আমরা সম্ভব হলে এককভাবেই ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিয়ে ভোটে যেতে চাই। তবে যদি জোটের প্রয়োজন হয়, আমরা জোটবদ্ধ হতে পারব। সেক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াতের প্রশ্ন আসে। এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের টার্গেট ৩০০ আসন। আমরা সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। তবে নির্বাচনের পরিস্থিতি বুঝে জোট গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে দলটির শীর্ষনেতারা নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় ভোট বাড়াতে প্রচারণা শুরু করেছেন। অনেকে ঢাকায় থেকে এলাকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাজে লাগালেও কেউ কেউ আবার নিজ এলাকায় মাঝেমধ্যে দৌড়ঝাঁপ করছেন। সব আসনেই তারা যোগ্য প্রার্থী দিয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিতে চান। দলের নেতারা নিজ নিজ সংসদীয় আসন এলাকায় শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারলে নির্বাচনে জোটবদ্ধ হলে আসন নিয়ে হিসাব-নিকাশ সহজ হবে। তাই আসনভিত্তিক নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে কাজ করছেন নেতারা।
এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম রাজধানীর দুটি আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। আসনগুলো হলো ঢাকা-৯ ও ঢাকা-১১। এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন নিজ এলাকা রংপুর-৪ থেকে নির্বাচন করতে পারেন।
এনসিপি সূত্রে জানা গেছে, এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী চাঁদপুর-৫ কিংবা ঢাকা-১৮, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ভোলা-১, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বরিশাল-৫, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ কুমিল্লা-৪, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম পঞ্চগড়-১, যুগ্ম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬ থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। অন্যদিকে দুই ছাত্র উপদেষ্টা পদত্যাগ করে দলে যোগ দিলে মাহফুজ আলম লক্ষ্মীপুর-১ এবং আসিফ মাহমুদ কুমিল্লা-৩ থেকে নির্বাচন করতে পারেন ।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীও সারা দেশেই তাদের প্রার্থী মনোনয়নের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো জেলায় দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণাও করা হয়েছে। তবে দলের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, এ মনোনয়টা হচ্ছে প্রাথমিক, চূড়ান্ত মনোনয়ন নয়। দলের আমীরের এ ঘোষণা দিয়ে বোঝা যাচ্ছে জামায়াত জোট গঠন করলে দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তন হতে পারে।
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ মধ্যম, ডান ও ইসলামপন্থি দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক জোট গঠন ও আসন ভাগাভাগির বিষয়টি শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনেই আলোচনার বিষয় নয়, সাধারণ জনগণের মধ্যেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ বিগত পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার পরিবর্তে বিরোধ ও সংঘাতই বেশি হয়েছে। যার কারণে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশটা কোনো সময়ই সুস্থ, স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ থাকেনি। রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে সহ্য করা ও মেনে নেয়ার কোনো সংস্কৃতি বাংলাদেশে গড়ে ওঠেনি, তাই সবসময় রাজনৈতিক ময়দানে দ্বন্দ্ব-কলহ চলে আসছে। সাধারন জনগণ দেশে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কলহ আর দেখতে চায় না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার যদি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি নিজেদের মধ্যে একটি পারস্পরিক সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে পুরো দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি সুস্থ ও স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হবে বলে আশা করা যায়। আর এটার মাধ্যমে সারা দেশের জনগণের কাছে একটি নতুন আশা ও পরিবর্তনের বার্তা পৌঁছবে। যে ইতিবাচক পরিবর্তন ও একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য জুলাই-আগস্টে হাজার হাজার তরুণ, যুবক ও ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠন করবে- এটাই সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা।