ধুলায় মলিন ঢাকা, চরম অস্বস্তিতে নগরবাসী


১৩ মার্চ ২০২৫ ১৬:০৩

# বিশ্বব্যাপী বছরে ৪২ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে
# অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর অধিকাংশই বায়ুদূষণজনিত

স্টাফ রিপোর্টার : অকল্পনীয় ধুলায় মলিন পুরো রাজধানী। শুষ্ক মৌসুম শুরুর পর থেকে রাজধানী ঢাকায় ধুলার পরিমাণ মারাত্মকভাবে বেড়েছে। এ কারণে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ ঠাণ্ডা, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ বহুবিধ রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, ধুলার কারণে রাজধানীর অনেক জায়গায় যানবাহন চালাচল করা কষ্টকর। পথচারীরাও নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন না; রয়েছেন চরম অস্বস্তিতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা দুই সিটি কর্পোরেশনের কার্যকর পদক্ষেপ দেখছেন না নগরবাসী। রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায়ই ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ পথচারীরা। ধুলা দমনে নিয়মিত পানি ছিটানোর কথা থাকলেও কয়েকটি প্রধান সড়ক ছাড়া পানি ছিটাতেও দেখা যাচ্ছে না। ফলে দিন দিন ঢাকার বাতাস দূষিত ও চরম অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে।
চলতি বছরের শুরুতেই টানা কয়েকদিন ঢাকার বাতাসের মান খুবই অস্বাস্থ্যকর ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১০ মার্চ সকালেও ঢাকার বাতাস ছিল চরম ‘অস্বাস্থ্যকর’। এদিন সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার থেকে এ তথ্য জানা যায়। ২৪৭ স্কোর নিয়ে ১০ মার্চ বায়ুদূষণে শীর্ষে রাজধানী ‘ঢাকা’, যা এখানকার বাতাসের মান নাগরিকদের জন্য ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’। একই সময়ে ২০৭ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল পাকিস্তানের শহর ‘লাহোর’।
এদিকে ১৯৩ স্কোর নিয়ে অস্বাস্থ্যকর শহরের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে ভারতের শহর ‘দিল্লি’। আইকিউ এয়ার স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়, আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলে মনে করা হয়। ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) মতে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বায়ুদূষণে প্রধানত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যানসার ও শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থেকে মৃত্যুর হার বাড়ে। এছাড়া ৩০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকা আইকিউ এয়ার ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, যা নগরের বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। সাধারণত একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি ধরনকে ভিত্তি করে। যেমন- বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন (ও৩)। বায়ুদূষণ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে থাকে। এটা সব বয়সী মানুষের জন্য ক্ষতিকর। তবে শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, প্রবীণ ও অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য বায়ুদূষণ খুবই ক্ষতিকর।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বায়ুদূষণ বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। যার মধ্যে ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ অন্যতম। এছাড়া কিডনির ওপরেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে বায়ুদূষণ। এছাড়া রক্তচাপ, প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্ষতি, চোখ ও ফুসফুসের সমস্যা, ক্যানসার ও হৃদরোগেরও অন্যতম কারণ হতে পারে বায়ুদূষণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণের কারণে বছরে ৪২ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী যেসব অসংক্রামক রোগে মানুষের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে তার অধিকাংশই বায়ুদূষণজনিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুদূষণ একাধিক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
চিকিৎসকদের আরও ভাষ্য, শিশুদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ব্যাহত ও স্নায়ুর ক্ষতি করে বায়ুদূষণ। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণের শিকার দরিদ্র নারী, শিশুরা ব্যাপকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। কারণ তারা বেশিরভাগই দূষিত এলাকায় বসবাস করেন। ফলে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে ও স্নায়ুবিক ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া গর্ভবতীদের শারীরিক ক্ষতির অন্যতম কারণ হলো বায়ুদূষণ।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, দূষিত এলাকায় বসবাসের ফলে গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এছাড়া চোখ ও শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি হয়, ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা ও রক্তচাপ বাড়ে এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে বায়ুদূষণ।