রোজার মাসের সবচেয়ে বড় আমল
৬ মার্চ ২০২৫ ১৩:০৪
॥ মাহমুদা সিদ্দিকা ॥
দীন ইসলামের পাঁচটি রোকনের একটি হলো রোজা। বছরে একবার রমজান মাসে ত্রিশ রোজা রাখা ফরজ প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য। বছর ঘুরে আবার আমাদের মাঝে এসে দাঁড়িয়েছে মাহে রমজান।
১১ মাস আমরা আকুল হয়ে অপেক্ষা করি পবিত্র এ রমজান মাসের জন্য। এ মাস রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস। মাগফিরাতের মাস। গুনাহ মাফের মাস। আমলনামা নেকি দ্বারা ভারী করার মাস। এ মাস ইবাদত বন্দেগি করার মাস। তাসবীহ-তাহলীল, জিকির-আজকার করার মাস।
রোজা শুধু আমরাই রাখি না, আমাদের পূর্ববর্তী লোকেরাও রেখেছেন।
এ মাস সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন পাকে বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।” (আল বাকারা – ১৮৩)।
রমজান আসে মুমিন মুসলমানকে আরো দীনদার-পরহেজগার বানাতে। আল্লাহমুখী করতে। ১১ মাসের জমানো পাপরাশি মোচন করতে। হিদায়েতের আলো ছড়াতে।
হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে লোক রমজান মাসের রোজা রাখবে ঈমান ও চেতনা সহকারে, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারী)।
রমজান এলে বেড়ে যায় ইবাদত-বন্দেগি। রমজান মাসের অবশ্য করণীয় কিছু আমল আছে। কিছু আমল আছে করলে সওয়াব না করলে গুনাহ নেই। এ মাসে শয়তানকে বন্দি করা হয়। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। নফল আদায় করলে সুন্নতের সওয়াব পাওয়া যায়। সুন্নত আদায় করলে ফরজের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। আর ফরজের সওয়াব তো আল্লাহ অগণিত দান করবেন। তাই আল্লাহর মুমিন বান্দারা এ রমজান মাস পেয়ে নেকি করার প্রতিযোগিতায় নামে। সারা বছর ধরে যারা মসজিদমুখী হয় না তারাও নামাজ পড়তে মসজিদে আসে। জিকির-আজকার করে। মাথায় টুপি পরে পাঞ্জাবি পরে। রোজা রাখে। আলহামদুলিল্লাহ। সবাই কমবেশি আল্লাহকে ভয় করে।
হাট-বাজারে হোটেলগুলোয় পর্দা দিয়ে চলে খানাপিনা। এমন একটা ভাব যেন পর্দা দিলে কেউ দেখতে পায় না। কিন্তু সবাই বুঝতে পারে এখানে দিনের বেলা খানাপিনা চলছে। এটা নিষিদ্ধ রমজান মাসের জন্য। স্বয়ং আল্লাহ নিষেধ করেছেন। আল্লাহর নিষেধ উপেক্ষা করে দিনের পর দিন চলে নিষিদ্ধ কাজ দিনের বেলা রান্না ও খানাপিনা। আল্লাহ এ রমজানে এদের হিদায়েত দান করুন। বিরত রাখুন নিষিদ্ধ কাজ থেকে।
“গণনার কয়েকটি দিনের জন্য অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে রোগাক্রান্ত হয় অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি খুশির সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণ কর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার।” (আল বাকারা : ১৮৪)।
রমজানে প্রথম ও প্রধান আমল এবং করণীয় কাজ হচ্ছে রোজা রাখা। সুবহে সাদিকের আগে সাহরি খেয়ে ইফতার অর্থাৎ মাগরিবের আজান পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে খানাপিনা ও নিষিদ্ধ কাজসমূহ পরিত্যাগ করাকে রোজা বলে।
রোজা পরিপূর্ণ করার জন্য অনেকগুলো কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। রোজাকে সুন্দর ও নেকিতে পরিপূর্ণ করার জন্য কিছু কাজ করতে হবে। রোজার শর্তগুলো ঠিকঠাক আদায় করলেই কেবল রোজা পূর্ণ হবে।
মিথ্যা গীবত পরনিন্দা থেকে বিরত থাকতে হবে। রোজা রেখে কোনো অবস্থায় মিথ্যা বলা যাবে না। ঝগড়া-বিবাদ করা যাবে না। কোনো কিছু খাওয়া বা পান করা যাবে না। অন্যায়-অশ্লীল ও গর্হিত কাজ করা যাবে না।
“হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং তদনুযায়ী আমল পরিত্যাগ করতে পারল না, তবে এমন ব্যক্তির পানাহার পরিত্যাগ করার আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (বুখারী)।
রমজানে করণীয় কিছু কাজ
১. সাহরির সময় একটু আগে উঠুন। অজু করে তাহাজ্জুদ পড়ুন। অন্য সময় যেহেতু ওঠা হয় না, আলসেমি লাগে। ওঠার জন্য মনে চাইলেও তাহাজ্জুদ পড়া হয় না। তাই মাহে রমজানের এ সুযোগ লুফে নিন। মণপ্রাণ উজাড় করে আল্লাহর কাছে সঁপে দিন। মোনাজাতে চেয়ে নিন জীবনের সব চাওয়া। চোখের পানি ছাড়ুন। আল্লাহ খুশি হয়ে যাবেন।
২. সাহরিতে বাচ্চাদের ডেকে তুলুন। রোজা রাখুক না রাখুক, সাহরি খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে করে রোজা সম্পর্কে বাচ্চারা আগ্রহী হবে। ছোট থেকে রোজা রাখার অভ্যাস গড়ে তোলা গুরুজনের দায়িত্ব।
৩. সাহরি খেয়ে ঘুমাবেন না। বসে বসে কুরআন তেলাওয়াত করুন অথবা তাসবীহ জিকির করুন।
৪. আজান হলে ফজর পড়ুন। তারপর একটু কুরআন তেলাওয়াত করে ঘুমিয়ে পড়ুন।
৫. ঘুম থেকে উঠে ব্যক্তিগত কাজ, সাংসারিক কাজ করুন।
৬. বাড়ির ও আশপাশের ছোট-বড় কিছু লোকজন নিয়ে বসুন। নামাজের দোয়া-কালাম ও রোজায় করণীয় কাজ নিয়ে আলোচনা করুন। যে যেমন কুরআন পড়তে পারে, তেমনি পড়ার জন্য উৎসাহিত করুন। ইসলামিক গজল গান গাওয়াতে পারেন। এতে করে এ সময়টুকু আমলনামায় নেকি হিসেবে লেখা হবে।
৭. গোসল করুন।
৮. জোহরের সময় হলে নামাজ পড়ুন।
৯. কুরআন তেলাওয়াত করুন।
১০. সাংসারিক ও ব্যক্তিগত কাজ করুন।
১১. আসরের সময় হলে নামাজ পড়ুন।
১২. আবারো কুরআন তেলাওয়াত করুন।
১৩. জিকির করুন।
১৪. ইফতার সামনে নিয়ে বসে আজানের অপেক্ষা করুন।
১৫. মাগরিবের নামাজ পড়ুন।
১৬. একটু বিশ্রাম নিয়ে তারাবির নামাজের জন্য তৈরি হোন।
১৭. যেমনভাবে রোজা পরিপূর্ণ করেছেন, তেমনিভাবে তারাবি নামাজ পরিপূর্ণ আদায় করুন।
১৮. কেউ ঝগড়াঝাঁটি করতে এলে তাকে ২ বার বলুন আমি রোজাদার। কটুবাক্য শুনেও চুপ থাকুন।
ইয়া রাব্বুল আলামিন আমিসহ আমাদের সকলকে পরিপূর্ণভাবে রোজা পালন করার তাওফিক দান করুন। তারাবি নামাজ পরিপূর্ণ আদায় করার তাওফিক দান করুন।
রমজান মাসে বিশুদ্ধ আমল করার তাওফিক দান করুন।
অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখুন। শুদ্ধভাবে জেনে-বুঝে কুরআন তেলাওয়াত করার তাওফিক দান করুন। কুরআন নাজিলের এ পবিত্র মাসে। আমীন ইয়া রাব্বুল আলামিন।