মাদারীপুরে মুড়িকাটা পেঁয়াজের বাজারমূল্যে দিশেহারা কৃষক


৬ মার্চ ২০২৫ ১২:৫৪

গোলাম আজম ইরাদ, মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার পাঁচটি উপজেলার মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা মুড়িকাটা পেঁয়াজ তোলায়। এ উপজেলাগুলো হলো মাদারীপুর সদর, রাজৈর, কালকিনি, ডাসার ও শিবচর। তবে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। সংরক্ষণাগারের অভাবে উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
এ বছর মাদারীপুর জেলায় ৪,০৬৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ হয়েছে, যার মধ্যে শিবচর উপজেলায়ই উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩,০০০ হেক্টর জমিতে। এখানকার মাটি ও জলবায়ু উপযুক্ত হওয়ায় উৎপাদিত পেঁয়াজের মানও উন্নত। কিন্তু সারের দাম, বীজ, কীটনাশক, দিনমজুর ও জমি চাষের খরচ মিলিয়ে প্রতি বিঘায় (৩৩ শতক) ১ লাখ থেকে ১.২০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে কৃষকদের। উৎপাদনও আশানুরূপ হয়নিÑ বিঘাপ্রতি মাত্র ৩০-৪০ মণ। এতে প্রতি মণ পেঁয়াজ উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ৪,০০০ টাকা অথচ কৃষকরা তা মাত্র ১,৪০০-১,৬০০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
আমদানি ও সংরক্ষণাগারের অভাবে লোকসানে কৃষক: দেশীয় কৃষকের আগাম পেঁয়াজ বাজারে আসার মৌসুমেই ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির কারণে স্থানীয় বাজারে দরপতন ঘটেছে। সংরক্ষণাগারের অভাবে কৃষকরা উৎপাদিত পেঁয়াজ বেশিদিন সংরক্ষণ করতে পারছেন না, ফলে কম দামে বিক্রি করতেই বাধ্য হচ্ছেন।
কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের কুলচরি গ্রামের কৃষক কালাম সরদার জানান, আমরা ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজের বীজ কিনেছি, কখনো ৩০,০০০-৩২,০০০ টাকায়ও বীজ কিনতে হয়েছে। বিঘাপ্রতি বিপুল খরচ হলেও এখন যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে, তাতে কোনো লাভ নেই। এ মুহূর্তে ভারত, পাকিস্তান থেকে আমদানি বন্ধ না হলে আমরা চরম ক্ষতির মুখে পড়ব। অন্তত দুই মাস আমদানি বন্ধ রাখার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাই। শিবচর উপজেলার ২য় খণ্ড ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জুলহাস মিয়া বলেন, শিবচরে একটি কোল্ডস্টোরেজ প্রয়োজন, যাতে কৃষকরা উৎপাদিত কৃষিপণ্য সংরক্ষণ করতে পারে। কৃষকদের বাঁচাতে এবং ভোক্তাদের ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ কিনতে সাহায্য করতে আমাদের সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
পেঁয়াজ উৎপাদন ভালো হলেও দাম কম। মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক জীবাংশু দাস বলেন, এ বছর মাদারীপুরে যথেষ্ট ভালো মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে এবং কৃষকরা আশানুরূপ ফলাফল পেয়েছেন। সারা দেশের চাহিদা পূরণে মাদারীপুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি। তবে বাজারদর এত কম থাকার জন্য কৃষকরা সরাসরি বিদেশি পেঁয়াজ আমদানিকেই দায়ী করছেন। তাই পেঁয়াজ উত্তোলন মৌসুমে আমদানি বন্ধের পাশাপাশি উৎপাদন এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সংরক্ষণাগার নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।