পঞ্চগড়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে টিউলিপ


৬ মার্চ ২০২৫ ১২:৫০

আসাদুজ্জামান আসাদ, পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দর্জিপাড়া গ্রামে চাষ হচ্ছে টিউলিপ ফুল। গত ১২ ফেব্রুয়ারি বুধবার দর্জিপাড়ার টিউলিপ বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সূর্যের আলোভরা তাপ নিয়ন্ত্রণ ছাউনির নিচে সারি সারি টিউলিপ ফুল ফুটেছে। দর্শনার্থীরা কেউ কেউ ফুল ছুঁয়ে, কেউবা ছবি ও ভিডিও করছে। অনেকে আবার ফুল কিনে নিচ্ছে। টিউলিপ বাগানে প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে দর্শনার্থীরা ভিড় করছে। প্রতিজন ৫০ টাকার টিকিট কেটে বাগানে প্রবেশ করে আনন্দ উপভোগ করছে।
সূত্রে প্রকাশ, টিউলিপ ফুল শীত দেশের ফুল। আমাদের দেশ শীতের দেশ। সে হিসেবে এ ফুল তেঁতুলিয়া উপজেলায় ক্ষুদ্র চাষিরা প্রায় ৭০ শতাংশ জমিতে খামার হিসেবে চাষ শুরু করেছে। টিউলিপ ফুল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) চাষের উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রকল্পটিকে আর্থিকভাবে সহযেগিতা করেছে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএএফ)। শীত প্রধান দেশে টিউলিপ ফুল ভালো হয়। এ ফুল চাষে দিনে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকতে হয়। এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রা হলে ফুল না ফোটার সম্ভাবনা থাকে। স্বাভাবিকভাবে দেখা যায় যে, টিউলিপ ফুল রোপণের ১৮ থেকে ২০ দিনের মধ্যে গাছে কলি আসে। ২৫ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত টিউলিপ ফুল স্থায়ী হয়।
তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়ার মাটি টিউলিপ ফুল চাষের জন্য খুবেই উপযোগী। এখানকার চাষিরা বেসরকারি এনজিও মাধ্যমে টিউলিপ ফুল চাষ করছে। বাগানে টিউলিপ ফুলে গাছ অতি তরতাজা হয়েছে, যা দেখে পথিকের পা থমকে য়ায়। এ ফুলের বাগানে প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী ভিড় করছে। ঢাকা থেকে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আহসান হাবিব জিনান, ইমরান, সাকিবসহ কয়েকজন ছাত্র তেঁতুলিয়া বেড়াতে এসেছেন। জিনান ও ইমরান বলেন, তেঁতুলিয়ায় লোক মুখে শুনি, দর্জিপাড়া গ্রামে টিউলিপ ফুলের বাগান রয়েছে। বাগানে অনেক ফুল ফুটেছে। বাস্তবে পেপারে ছবি ও খবরের সময় যা টিভিতে দেখেছি। কখেনো সরাসরি বাস্তবে দেখার সুযোগ আসেনি। লালচে কালারের টিউলিপ ফুলটি দেখতে খুবই মনোমুগ্ধকর। সেই কৌতূহল নিয়ে টিউলিপ বাগান দেখতে দর্জিপাড়া গ্রামে ছুটে আসি। তারপর বিদেশি এ ফুল ছুঁয়ে আনন্দ অনুভব করি। বাহ! কী সুন্দর টিউলিপ ফুল। পঞ্চগড় ধাক্কামারা থেকে সাইকা সাদিয়া বলেন, হৃদয় ভরে গেল টিউলিপ ফুল দেখে। তবে খামারে প্রবেশের মূল্যটা যদি একটু কম হতো, তাহলে সব শ্রেণির মানুষ দেখে প্রশান্তি পেত। টিউলিপ চাষি আয়শা সিদ্দিকা বলেন, পিকেএসএফ ও ইএসডিওর সহযোগিতায় আমরা ১৩ জন নারী ৯ প্রজাতির টিউলিপ ফুল চাষ করেছি। ফুল ফোটার পর প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন এখানে এসে ভিড় জমাছে। নেদারল্যান্ডস থেকে টিউলিপ ফুলের একেকটি বাল্প আনতে প্রায় ১শত টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমান বাগান থেকে একেকটি ফুলের স্টিক ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে বিক্রি করছি। তাছাড়া এ ফুল ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। স্বল্প সময়ে, অল্প খরচে উৎপাদন করা এ ফুল বিক্রি করে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি। ইএসডিওর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ শহীদউজ্জামান বলেন, চতুর্থবারের মতো তেঁতুলিয়া নারীরা টিউলিপ ফুল ফুটিয়েছে, যা গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলেছে। তেঁতুলিয়ায় ইকো ট্যুরিজমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যে। বিগত ২০২২ সালে সর্বপ্রথম তেঁতুলিয়া উপজেলার সারিয়াল জোত ও দর্জিপাড়া গ্রামের ৮ নারী ৪০ শতাংশ জমির ওপর ৬ প্রজাতির ৪০ হাজার টিউলিপ ফুল চাষ করেছে।