আলোকে তিমিরে

আমলাদের জন্য কাউন্সেলিং দরকার


২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪১

॥ মাহবুবুল হক ॥
সামনে নির্বাচন। সুতরাং এখন ঘুরে-ফিরে যেখানেই হোক, নির্বাচনের কথাই উঠবে। এখন দেশময় নির্বাচনকালের সুবিধা এবং অসুবিধা এসব নিয়েই কথাবার্তা হচ্ছে। শহর, নগর, বন্দরসহ আরবান এলাকার কথা আমরা মোটামুটি জানি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও সিনিয়র মাদরাসার শিক্ষকদের কমনরুম, ছাত্রদের কমনরুমসহ সবখানেই নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব পেশার সব ধরনের মানুষ নির্বাচনের কথাই বলছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, পাড়াগাঁয়ে এবং হাট-বাজারে প্রায় সব জায়গায় এখন একই কথা। এসব আলোচনায় সুবিধার কথা যেমন উঠে আসছে, তেমনি উঠে আসছে অসুবিধার কথাও। এখন শহর আর গ্রামের মধ্যে চিন্তার তেমন কোনো ব্যবধান খুব একটা নেই। এটা অবশ্যই আমাদের উন্নতি। আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে উন্নত হওয়ায় আজ যে কথাটি শহর, নগর ও বন্দরে হচ্ছে, তা অল্প কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে। গত ১৫ বছরে নির্বাচন নিয়ে যত আলাপ-আলোচনা, বিবৃতি, লেখালেখি যা কিছু হয়েছে বা এখনো হচ্ছে, তার মধ্যে অসুবিধার ক্ষেত্রে সর্বতোভাবে উঠে এসেছে সরকারি আমলা ও কর্মচারীদের অসাধুতার কথা। নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটা একটা বড় বিষয় বলে গত ১৫-১৬ বছর ধরে চিহ্নিত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারি আমলা ও কর্মচারীগণ সবচেয়ে বড় অন্তরায়। যে সরকারের অধীনেই নির্বাচন হোক না কেন, তারা সেই সরকারকে সাধারণভাবে সমর্থন করে থাকে। কারণ অনেক। নির্বাচন আসার বহু পূর্ব থেকেই সরকারসমূহ, সরকারি আমলা ও কর্মচারীদের নানাভাবে তোয়াজ করতে থাকে। তাদের জীবন ও জীবিকাকে কমফোর্ট করার জন্য নানারকমের বিধিব্যবস্থা ও ফাঁকফোকর খুঁজতে থাকে। ন্যায় হোক, অন্যায় হোক, আয় বৃদ্ধির সুযোগ বাংলাদেশে কে হারাতে চায়?
পূর্বে সরকারি চাকরিতে বেতন-ভাতা বা সুযোগ-সুবিধা কম ছিল। আধাসরকারি বা বেসরকারি চাকরিতেই বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বেশি ছিল। খাঁটি সরকারি আমলা বা কর্মচারী হওয়ার চেয়ে সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকায় এক ধরনের বুদ্ধিমান মানুষ কর্পোরেশন, ব্যাংক, বীমা বা শিল্প-কারখানায় চাকরি পাওয়ার ব্যাপারে দারুণভাবে আগ্রহী ছিল। এখন আর সেদিন নেই, যেদিন সরকারি চাকরি করলে ভালো পাত্রী পাওয়া যেত না। উচ্চ মধ্যবিত্তরা সরকারি বরকে পছন্দ করতো না। কারণ বেতন-ভাতা ছাড়া উপরি আয়ের কোনো সুযোগ-সুবিধা সব ক্ষেত্রে ছিল না। তাছাড়া লেখাপড়া করে বা সঠিক জ্ঞান অর্জন করে অনেকেই চোর-ডাকাত হতে চাইতো না। যারা ঘুষ খেত বা উপরি আয় করার চেষ্টা করতো, তারা হয়তো দিন গুজরান করার মতো উপরি আয়ের চিন্তা করতো। কারণ সরকারি আয় দিয়ে বেশিরভাগ আমলা ও কর্মচারীর ১৫-২০ দিনের বেশি চলতো না। তারা অনেকে আবার সৎ জীবনযাপনের অঙ্গীকারে টিউশনি, ছোট-খাটো ব্যবসা ইত্যাদি করার চেষ্টা করতো। কিন্তু বাস্তবে এসবও তখন পুরোপুরি সততার মধ্যে পড়তো না। কারণ একজন সরকারি আমলা বা কর্মচারী চাকরি ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে আয়-উপার্জন করার অধিকারীও ছিল না। কারণ তারা ছিল ২৪ ঘণ্টাই জনগণের সেবক। দেশ ও দশের কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য তাদের সবসময় সতর্ক থাকতে হতো। যেকোনো কাজ করার জন্য তাদের প্রস্তুত থাকতে হতো। শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতা অটুট ও অক্ষুণ্ন রাখতে হতো। বিশ্বব্যাপী চাকুরেদের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ছিল ৪০ ঘণ্টা। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান আমলে সরকারি চাকুরেদের কর্মঘণ্টা ছিল ৪৪ ঘণ্টা। এদিকে সপ্তাহে কর্মঘণ্টা ৪ ঘণ্টা বেশি ছিল, বেতন-ভাতা কম ছিল এবং বাইরে অতিরিক্ত কাজ করার ক্ষেত্রেও নানারকম বাধা-বিপত্তি ও বিধিনিষেধ কার্যকর ছিল। বাংলাদেশ আমলে ধীরে ধীরে সবই চলে যায়। প্রথমদিকে বেতন-ভাতা কম থাকলেও একসময় ধীরে ধীরে তাও চলে যায়। কর্মঘণ্টা কমে যায়। বাইরের আয়-উপার্জনের বিধিনিষেধও চলে যায়।
এরশাদের আমল থেকেই সরকারি আমলা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবধিা নানা রকমভাবে বৃদ্ধি পায়। সামরিক সরকার সেনাবাহিনীর সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করায় সরকারি আমলা ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষোভ ধীরে ধীরে ছড়াতে থাকে। এরই ফলে দুর্নীতিবাজ সামরিক সরকার সরকারি আমলা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং সুযোগ-সুবিধা ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকে। এ বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় সরকারি আমলা ও কর্মচারীদের মধ্যে ভালো-মন্দ ও ন্যায়-অন্যায়ের প্রভেদ দূর করতে সক্ষম হয়। তাদের ছোট ছোট স্বপ্ন বড় বড় স্বপ্নে রূপান্তরিত হয়। একজন ক্যাপ্টেন বা মেজর বাড়ি, গাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিক হওয়ার সাথে সাথে সরকারের ছোট আমলা থেকে বড় আমলা স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে আকাশে উঠতে চায়। চাওয়া মানেই পাওয়া। ক্ষমতায় থাকার জন্য দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া শুরু হয়। সেই প্রশ্রয় ধীর ধীরে বাড়তে বাড়তে বর্তমানে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, সব বিষয় ওলট-পালট হয়ে যায়। যেমনÑ একসময় যেখানে ছিল শতকরা ৮০ জন সরকারি আমলা ও কর্মচারী সততার অভিলাষী, সুনীতির প্রত্যাশী, সেখানে কালক্রমে সৃষ্টি হয়ে যায় শতকরা ৮০ জনের অন্যায়-অবিচার ও লুটপাটের অভিলাষ। মূল্যবোধের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণভাবে ভিন্নমুখী হয়ে যায়। একসময় যেখানে ছিল শতকরা ২-৩ জন দুর্নীতিপরায়ণ, সেখানে এখন পরিসংখ্যানটি দাঁড়িয়েছে শতকরা ২-৩ জন মাত্র সুনীতিপরায়ণ।
বাংলাদেশের রাস্তা-ঘাট এখন কোটি কোটি টাকার গাড়িতে ভরে গেছে। ঢাকা মহানগরসহ সকল শহর ও বন্দরের মাটি ইটের আকারে আকাশে উঠে গেছে। এসব দেখে দেখে সৎ মানুষ হয়রান হয়ে যাচ্ছে। এদের ভবিষ্যৎ কী হবেÑ এ কথা ভেবে। যারা প্রত্যাদিষ্ট জ্ঞানের অধিকারী, তারা তো খুব ভালো করেই অনুধাবন করেন যে, আজ যারা এসবের স্বত্বাধিকারী, কাল তাদের কাছে এসব থাকবে না। কিয়ামত পর্যন্ত এসব স্থাপত্য টেকসই হবে, সে ধরনের সম্ভাবনাও তো নেই। ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাই তো বেশি। কুরআনে হাজার হাজার বছর আগের ঘটনা তো মানবজাতির সামনেই রয়েছে। যার সিলসিলা এখনো চলছে। মাঝে মাঝেই তো পৃথিবীর কোনো কোনো অঞ্চল ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে। ধুলায় লুণ্ঠিত হচ্ছে মানবজাতির সম্পদ। অন্যায়ভাবে যারা এসব অর্জন করছেন, তারাও ভালোভাবে জানেন, এসব থাকবে না। তবু তারা করছেন। দেখাদেখি অনবরত এসব হচ্ছে। মানুষ অবিরতভাবে অন্যায়ের পথে পাড়ি জমাচ্ছে।
গত ১৬ বছরে যারা শাসনক্ষমতায় ছিল, তারা শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য হাজার হাজার সরকারি আমলা ও কর্মচারীদের মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দিয়েছে। শাসকবর্গ এমন এক সরকারি বাহিনী গঠন করেছে, যারা ছিল তাদেরই তাঁবেদার। সরকারের হুকুমেই তারা রাষ্ট্রের মৌল সকল ইনস্টিটিশন ধ্বংস করে দিয়েছে।
যারা গত সরকারকে সেভাবে মানতে চায়নি, তাদের ওপর নানারকম জুলুম-অত্যাচার করেছে। তাদেরকে ওএসডি করেছে, দুর্গত এলাকায় বদলি করেছে। পদোন্নতি বন্ধ রেখেছে। গুম করেছে। আয়নাঘরে রেখেছে। চাকরিচ্যুত করেছে। আরও অমানবিক বিধিব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে এমন ভয় ও শঙ্কা এবং ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে, যাতে সরকারি আমলা ও কর্মচারীরা নিজের জীবন, পরিবার, মান-সম্মান ও ইজ্জতের ভয়ে সরকারের অন্যায় নির্দেশ পালন করতে বাধ্য হয়েছে। এই শ্রেণির আমলার সংখ্যাও খুব একটা কম নয়।
একদল উচ্চাশার বশে শৃঙ্খলার বাইরে চলে গেছে। অন্যদল নানা ধরনের বাধ্যবাধকতায় পড়ে মূল্যবোধ থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। সরকারি কাঠামোকে ঠিক রেখে, দেশ ও দশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রধান স্বৈরাচার চলে গেছে, কিন্তু বাদবাকি স্বৈরাচারের অধঃস্তনরা তো রয়েই গেছে। জানা যায়, তারা পূর্বতন মালিকের নির্দেশেই এখনো চলার চেষ্টা করছে। অন্তর্বর্তী সরকার এদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
প্রফেসর ইউনূস একজন শিক্ষক। তার ক্লাসে সবসময় ভালো ছাত্র ছিল এমন তো নয়। ভালো এবং মন্দ ছাত্র নিয়েই তো শিক্ষকের পথচলা। শিক্ষক হিসেবে মন্দকে ভালো করার স্বপ্নই তিনি দেখছেন, এটাই স্বাভাবিক। এ স্বাভাবিক পথেই তিনি হাঁটছেন। কিন্তু দেশ, জাতি বা রাষ্ট্র তো ক্লাসরুম নয়। এর বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ অত্যন্ত কঠিন ও কঠোর। একটা জাতির জীবন তো এখন আর নিজস্ব পরিবেশ ও প্রতিবেশে আবদ্ধ নয়। আঞ্চলিক বিষয়-আসয়ের সাথে রয়েছে নানামাত্রার আন্তর্জাতিক বিষয়। বিশ্বায়নের ঝড়-ঝাঁপটা ও ঘূর্ণিঝড় সব জাতির ওপর সুস্পষ্ট। কোনো জাতি এখন আর নিজের ইতিহাস, ধর্ম, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সনাতন চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এককভাবে চলতে পারছে না। সব জাতিকেই উঠতে-বসতে নানামাত্রিক ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে। কেউ সুখে-শান্তিতে এবং স্বস্তিতে বসবাস করতে পারছে না। যারা শক্তিশালী, যাদের কাছে মারণাস্ত্র তৈরির বিশাল বিশাল চুল্লি আছে, যারা অবিরত ও অবারিতভাবে মারণাস্ত্র তৈরি করতে পারছে, তারাই এখন সত্যিকারভাবে রাষ্ট্রসমূহের মালিক-মুখতারে রূপান্তরিত হয়েছে। এ ধরনের একটা অবকাঠামোর মাঝে আমাদের নতুন করে দেশপ্রেমিক সরকারি বাহিনী গড়ে তোলা অনেকটাই অসম্ভব বলে মনে হয়।
যেসব সরকারি আমলা ও কর্মচারী রাষ্ট্রবিরোধী কাজে তৎপর ছিলেন, তাদেরকে অন্তর্বর্তী সরকার কিছুটা শাস্তির অবকাশ তৈরি করেছেন। কিন্তু এটা সাকুল্যে যথেষ্ট নয়। কারণ বাহিনীটি বিরাট, খুব ছোট-খাটো নয়। অন্যদিকে এ সরকার যদি বিপ্লবী সরকার হতো, তাহলে সেই সরকার ভালো হোক, মন্দ হোক নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিতে পারতো। কিন্তু এ সরকার তো অন্তর্বর্তী সরকার। এরা উত্তরে যেতে পারবে না, দক্ষিণেও যেতে পারবে না। পারবে না পূর্ব ও পশ্চিমে যেতে। সবদিকে তাদের বাধা। তাদের শুধু বাধা আর বাধা। চলার পথ খোলা নেই। এর ভেতর দিয়ে ছোট ছোট কোণা পথ তৈরি করে তাদের চলতে হচ্ছে। এ চলা খুব কঠিন। স্বাধীনতার পথে স্বাধীনতা নেই। শুধু বেড়াজাল। নতুন নিয়োগ দান করে পুরনোদের অবসর দেয়ারও অবস্থা-ব্যবস্থা এ সরকারের নেই। সাময়িকভাবে বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদানের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে যে ধরনের উদ্যোগ নেয়া জরুরি ও প্রয়োজন, তাও করা যাচ্ছে না। করতে পারলে কিছু ভালো হতো। কিছু মন্দ হতো। সামনে নির্বাচন না থাকলে একটু অবসর পেলে কিছু একটা তো করা যেত। কিন্তু সামনে তো নির্বাচনের মুলা ঝুলছে। এ মুলা তো অর্জন করতে হবে। সুতরাং ‘ঠক’ বাছা যাচ্ছে না। গাঁও উজাড় হয়ে যাবে। নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় নানা সংকট তৈরি হবে। এসব চিন্তা করেই আমলাতন্ত্রের জন্য কোনো কমিশন গঠন করা হয়নি।
আমলাদের নিয়ে বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে কিছু আলাপ-আলোচনা হয়েছে। সেসব খোলামেলা আলোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের সেন্টার ফরওয়ার্ডরা আকার-ইঙ্গিতে বুঝিয়েছেন “সব ভুলে যান। পুরনো দিনের কথা ভেবে লাভ নেই। নতুন পরিস্থিতিকে মেনে নেয়ার জন্য আগ্রহ সৃষ্টি করুন। ‘গতস্ব : শোচনা নাস্তি’, ‘গুজাস্তা জামানা ফের আতা নেহি।’ সুতরাং আবেগের জায়গায় সন্যাসীর মতো চুপচাপ বসে না থেকে বাস্তবের জায়গায় আনন্দচিত্তে ফিরে আসুন। নতুন পরিস্থিতির মধ্যে নিজেদের সেটেল করার চেষ্টা করুন। এতে আপনাদের আমাদের সবার কল্যাণ ও মঙ্গল হবে।”
কিন্তু কেন যেন জট খুলছে না। আমলাদের মধ্যে একটা দারুণ স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সংস্কারের কাজগুলো যেমন পড়ে থাকবে, তেমনি নির্বাচনের কাজও এগোবে না। যারা অবিলম্বে নির্বাচন চাচ্ছেন, তারা দুইবার সরকারে ছিলেন। আমলাদের নিয়ে কত সংকট তৈরি হয়, সেটা তারা উত্তমভাবেই জানেন। যারা সরকারি ‘কল’ নাড়াবে, তারা যদি বসে বসে ঝিমাতে থাকেন, তাহলে নির্বাচনের হিমালয়সদৃশ কাজ কারা করবে? সরকারি আমলাতন্ত্রকে উপেক্ষা করে নির্বাচন সম্পন্ন করা কি সম্ভব? আমলাতন্ত্রকে বাদ দিয়ে শুধু শিক্ষাক্ষেত্রের লোকজন দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করা কি যথাযথ হবে? এখানে কি আমলাতন্ত্র নেই? পুলিশ বাহিনী কোথায়? সেনাবাহিনী তো এসব কাজে হাত দিতে ইচ্ছুক নয়। তাহলে কারা করবে নির্বাচন? অথবা বর্তমানের নিত্য-নৈমিত্তিক সরকারের কাজকর্ম?
একটু সময় দরকার ছিল, রিকনসিলনের প্রয়োজন ছিল। পুনর্গঠন জরুরি ছিল। তাহলে এত কিছু ভাবতে হতো না। আবার এ ভাবনা-চিন্তাকে উপেক্ষা বা এড়িয়ে যাওয়াও যাবে না। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, আমলাতন্ত্র নিয়ে যে সংকট বিরাজিত, তার কোনো সুরাহা এখন হচ্ছে না।
সুতরাং জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের মতো মহান আল্লাহর ওপর আমাদের বিশ্বাস ও আস্থা রাখতে হবে। যদি আমরা ঐক্য, ঈমান ও শৃঙ্খলা চাই, তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ একটা সুব্যবস্থা করে দেবেন। তবে এদিকে আমলাতন্ত্রের অভ্যন্তরে গ্রুপ কাউন্সেলিংয়ের বিশাল কাজ করে যেতে হবে। এ কাউন্সেলিং কারা করবে? সেটাই এখনকার বিবেচ্য বিষয়।