শেখ হাসিনা শুধু ফ্যাসিস্ট নয় স্যাডিস্টও- মিয়া গোলাম পরওয়ার
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৪২
স্টাফ রিপোর্টার : পিলখানায় ৫৭ সেনা অফিসারকে নির্মমভাবে হত্যা, পলাতক হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে দেশে যত গুম, খুনসহ নৃশংসতা হয়েছে, তার বিচার করতে হবে। শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাঝে এখনো যারা ফ্যাসিবাদের দোসর রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। একই সাথে প্রতিটি সেক্টরে সংস্কার করে এরপর জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।
গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দাবিতে ‘ন্যায়বিচার ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা আন্দোলন’র ব্যানারে রাজধানীর শাহবাগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বিকেলে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নেক্সাস ডিফেন্স এন্ড জাস্টিসের প্রধান নির্বাহী ব্রি. জে. (অব.) মোহাম্মদ হাসান নাসিরের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। এছাড়া পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনকালে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আজকে বক্তব্য দিয়ে জাতিকে জানানোর প্রয়োজন নেই ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডব, ২০০৯ সালে পিলখানার নির্মম-নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড, ২০১০ সালে তথাকতিথত মানবতাবিরোধী অপরাধের নামে জুডিশিয়াল কিলিংয়ে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ মানুষকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা, শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যা চালানো, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পর প্রতিবাদী জনতার মিছিলে গুলি করে শত শত মানুষ হত্যা, এরপর ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে রাজপথে হাজার হাজার আমাদের সোনার টুকরোকে গুলি করে হত্যা করা, আয়নাঘরে গুম, ক্রসফায়ার সব হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনা। এ কথা চিৎকার করে বলার প্রয়োজন নেই, দেশ এবং সারা দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত সব হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা এত নিষ্ঠুর এবং ফ্যাসিস্ট যে, তার ক্ষেত্রে শুধু ফ্যাসিস্ট শব্দটি প্রযোজ্য নয়, তাকে আমি স্যাডিস্টও বলি। স্যাডিস্ট ইংরেজিতে তাকে বলা হয় যে খুন, গুম নিষ্ঠুরতা এবং রক্তপাত দেখে পাষাণ হৃদয় একটুও কাঁপে না, বরং উপভোগ করে।
আজকে বিভিন্ন মহল থেকে হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য, সেই খুনি মাস্টারমাইন্ডকে আবার রাজনীতিতে আনার জন্য নিজের পদপদবিকে রক্ষা করার জন্য অথবা তার আমলে সুবিধা ভোগ করে পিলখানার মতো নৃশংসতাকে আড়াল করার কথা যারা ভাবছেন, তাদের ধিক্কার জানাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাড়ে ৬ মাস পার করছেন, আমরা জানি পতিত শেখ হাসিনার খুনি সরকারের কাছে কোনোদিন ন্যায়বিচার পেতাম না। কিন্তু হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে যে সরকার গঠিত হয়েছে, আমরা অবশ্যই তার কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি। ফলে বিলম্ব হলেও আজকে যে কমিশন গঠন করা করা হয়েছে বিডিআর, পিলখানা এবং সেনা হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগ এবং তাদের প্রেতাত্মদের কী ভূমিকা ছিল, আধিপত্যবাদী বিদেশি শক্তির কী ভূমিকা ছিলÑ এসব তদন্ত করে জাতির কাছে এ কমিশনকে সেই তথ্য দিতে হবে। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পেছনে আধিপত্যবাদী শক্তির কী ভূমিকা ছিল, তা প্রকাশ করতে হবে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের সাড়ে সাত বছর কারাগারে ছিলাম। হাজার হাজার বিডিআর জওয়ানের কাছে শুনেছি পিলখানায় কীভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, লাশগুলো কীভাবে কেটে ড্রেনে ফেলে দিয়েছে। তারা তখন হিন্দিতে কথা শুনেছে। পরিচয় গোপন করতে তারা মুখোশ পরে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। ফলে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করার অর্থ হলো বিচার প্রক্রিয়াকে চাপা দিতে চাওয়া। অন্তর্বর্তী সরকার যে তদন্ত কমিশন গঠন করেছে, তারা বিলম্ব না করে এর পেছনে রাজনৈতিক শক্তি জড়িত ছিল কি না, বিদেশি শক্তির কী হাত ছিল, ফ্যাসিবাদী খুনি হাসিনার কী ভূমিকা ছিল জাতির সামনে তার শ্বেতপত্র অবিলম্বে প্রকাশ করুন।
পরিশেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, স্বামীহারা, সন্তানহারা, মানুষের আকুতি এবং মানবিক ঘটনা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জাতির কাছে তুলে ধরুন। রাষ্ট্রের কোনো অংশ থেকে বিভ্রান্তিকর কোনো কথা বলে থাকলে সেই কথার সত্যতা তুলে ধরুন। জাতির প্রতিবাদের ভাষা আপনাদের মাধ্যমে প্রকাশিত হোক সেই প্রত্যাশা রাখি।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, আমিও একজন ভুক্তভোগী, আমিও শেখ হাসিনার নিষ্পেষণের শিকার, আমাকেও রাজপথে গুলি করা হয়েছে। আমি তিনবার গুমের শিকার হয়েছি। অথচ অনেক মা এখনো তার সন্তানের খোঁজ পাননি।
তিনি বলেন, পিলখানায় ৫৭ চৌকস সেনা অফিসারকে হত্যার আসামি শেখ হাসিনা, তাকে যদি ধরা যায়, জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়, তাহলে কেবল আসল রহস্য উদ্ঘাটিত হবে।
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পুত্র শামীম সাঈদী বলেন, পিলখানার ঘটনা সম্পর্কে শেখ হাসিনার আগে থেকেই জানা ছিল। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলায়, ভারতের বিরোধিতা করায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সারা জীবন যিনি মানবতার পক্ষে কথা বলেছেন আর ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা তাকেই বলেছে মানবতাবিরোধী। তিনি বলেন, আল্লামা সাঈদীর মামলায় স্কাইপ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে স্পষ্ট যে কীভাবে মিথ্যা কথা বলে আদালত পরিচালিত হতো।
আলী আহমাদ মাবরুর বলেন, আমি দেখেছি কীভাবে একটি পরিবার নিঃশেষ হয়ে যায়। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিমের পরিবারকে আমি নিঃশেষ হয়ে যেতে দেখেছি। একজন মানুষ ফ্যাসিবাদী শাসনের শিকার হলে পুরো পরিবার কীভাবে কত কষ্ট নিয়ে জীবন কাটে আমি দেখেছি। এখনো অনেকেই তাদের স্বজনদের ফিরে পায়নি। পিলখানার ট্র্যাজেডিকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছিল ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা।
মোহাম্মদ হাসান নাসির বলেন, আমরা ২০০৬ সাল থেকে গুম, খুন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার যারা, আমরা সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিচার চাইতে এখানে সমবেত হয়েছি। তিনি বলেন, নেক্সাস ডিফেন্স এন্ড জাস্টিস এটি একটি নির্দলীয় প্রতিষ্ঠান। অবসরপ্রাপ্ত নির্যাতিত পরিবারের সদস্যরা আমাদের সাথে আছেন। গত সাড়ে ১৬ বছর ধরে গুম-খুনের শিকার পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হলে অবশ্যই এর বিচার হবে। আমরা জাতীয় শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা পেয়েছি কিন্তু এর মাঝে যে একটি বক্তব্য এসেছে তার সাথে একমত নই। আমরা যেসব তথ্য পেয়েছি, যেসব তথ্য ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে তার বিচার করতে হবে। পিলখানায় ৩০ ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব চালিয়েছে এর বিচার করতে হবে।
এছাড়া সমাবেশে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের দফতর সম্পাদক মাওলানা আফসার মাহমুদ, গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, আমজনতা দলের সদস্য সচিব তারেক রহমান, শহীদ মেজর তানভীরের স্ত্রী তাসনুভা মাহা, মেজর রেজাউল করিম (বরখাস্ত), মেজর ফিরোজ ইফতেখার ফুয়াদ, লে. ক. হাসিনুর রহমান (বীর প্রতীক), কর্নেল মো. শাহ নুর রহমান, হেফাজতে ইসলামের সহকারী মহাসচিব মাওলানা মুসা ইজহার, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সচিব মুফতি মনির হোসাইন, মায়ের ডাকের সানজিদা ইসলাম তুলি, কূটনীতিক ক্যাপ্টেন মারুফ জামান, গুম ফেরত বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল চৌধুরী প্রমুখ।