প্রেস ক্লাবে জামায়াতের আলোচনা সভায় ডা. তাহের

পাঁচ বিষয়ে ঐকমত্য হয়ে জাতির সামনে শপথের আহ্বান


২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৩৩

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে। ভারত আওয়ামী লীগকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় রাখার স্বপ্ন দেখিয়ে আওয়ামী সরকারের মদদে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ঐ হত্যাকাণ্ড পরিচালিত করেছে ভারতীয় আজ্ঞাবহ বিডিআর। কিন্তু তাদের কোনো বিচার না করে নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের আটক করে বিচারের নামে অবিচার করে দণ্ড দিয়েছে, চাকরিচ্যুত করেছে।
গত মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ২০০৯ সালে পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত পিলখানা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কমিশনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপিসহ সকল দলকে পাঁচটি বিষয়ে ঐকমত্য হয়ে জাতির সামনে শপথ করার আহ্বান জানিয়ে ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ্ মোহাম্মদ তাহের বলেন, স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নো কম্প্রোমাইজ (কোনো আপস নয়), দুর্নীতি-চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, জাতীয় স্বার্থে এক ও অভিন্ন, দেশের উন্নয়নে জন্য দলের চেয়ে দেশ বড় নীতি অবলম্বনÑ এ পাঁচ বিষয়ে ঐকমত্য হয়ে জাতির সামনে শপথ গ্রহণ করতে না পারলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ারও আহ্বান জানান। এ সময় তিনি বলেন, ভিন্নমত ও দল থাকবে, থাকতে পারে। কিন্তু দেশ ও জাতির স্বার্থে এ পাঁচ বিষয়ে ঐকমত্য হতে পারলে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ হবে একটি শক্তিশালী জাতি ও রাষ্ট্র। প্রসঙ্গক্রমে ডা. তাহের বলেন, সিঙ্গাপুরের একটি প্রতিনিধিদল জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অফিসে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করতে আসেন। সেসময় তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, ১৯৬৭ সালে স্বাধীন হয়ে এত অল্প সময়ে কীভাবে সিঙ্গাপুর এত সমৃদ্ধ হলো? প্রতিনিধি দলের একজন মুহূর্তে জবাব দিলেন, আমরা একজন সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক আদর্শিক নেতা পেয়েছি। যিনি আমাদের দেশকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছেন। ডা. তাহের বলেন, পক্ষান্তরে বাংলাদেশের জনগণ দেশ স্বাধীনের পর একজন দুর্নীতিবাজ নেতা পেয়েছে। সেজন্যই আমাদেরকে আজও সংগ্রাম করতে হয়। ১৯৪৭ সালে আমরা প্রথম স্বাধীন হয়েছি তারপর ১৯৭১ সালে। কিন্তু জনগণ পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা পায়নি বলেই ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই তথা ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদের হাত থেকে জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আর কোনো সংগ্রাম, সংঘাত নয় উল্লেখ করে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে আড়াল করতে নানারকম ষড়যন্ত্রের আয়োজন করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ছিল একটি কালো অধ্যায়। স্বাধীনতা সংগ্রামের চেয়েও অধিক সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে।
সভায় কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির বলেন, সেদিন পিলখানার দরবার হলে শেখ হাসিনার উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেদিন সেখানে কেন যাননি? কারণ পিলখানা হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত, তাই তিনি সেখানে যাননি।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, শেখ হাসিনা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার কিছু দিনের মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংস হত্যা করেছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলরুমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে ড. আব্দুল মান্নান ও শামসুর রহমান, ঢাকা বারের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট এসএম কামাল উদ্দিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, পল্টন থানা আমীর শাহিন আহমেদ খান প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম, কর্মপরিষদের সদস্য সৈয়দ সিরাজুল হক, শাহজাহানপুর পূর্ব থানা আমীর শরিফুল ইসলামসহ নেতৃবৃন্দ।