ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:৩৬
সোনার বাংলা ডেস্ক: স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের গুরুতর প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন। তদন্তে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমনে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং খুন ও গুমের সাথে শেখ হাসিনা, তার সরকার এবং দলের সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ। নির্ভরযোগ্য বেশ কয়েকটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ দিকে নিজেদের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের (তদন্ত কমিশন) একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠায় জাতিসংঘ। ওইসময় সরকারের কাছ থেকে এ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে সেটি দেওয়া হয়। এরপরই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে জাতিসংঘ।
প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে সরকারের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্টের নৃশংসতায় বিগত সরকারের প্রত্যক্ষ জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন। বিশেষ করে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্বের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটিতে জুলাই-আগস্টে কী কী ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে করণীয় নিয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি ও বেসরকারি হিসাবের পাশাপাশি অন্যান্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়ে থাকতে পারেন। তাঁদের বেশির ভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত মারণাস্ত্র ও শটগানের গুলিতে নিহত হয়েছেন। হাজারো মানুষ গুরুতর ও চিরতরে আহত হয়েছেন। ১১ হাজার ৭০০-এর বেশি মানুষকে গ্রেফতার করেছে র্যাব ও পুলিশ। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ শিশু। পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী শিশুদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে ‘টার্গেট কিলিং’, ইচ্ছাকৃতভাবে পঙ্গু করা, নির্বিচার গ্রেফতার, অমানুষিক নির্যাতন ও নানাভাবে বল প্রয়োগ করেছে। আন্দোলনের শুরুতে নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সদস্যরা নারীদের ওপর হামলা করেছেন। এগুলো যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ছিল। এগুলোকে প্রতিশোধমূলক সহিংসতা বলেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদনে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়েছে। সারা বিশ্বে আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠা আবু সাঈদের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে নানা বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। পুলিশ গুলি করার সময় আবু সাঈদ যে নিরস্ত্র ছিলেন, প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ‘গুলি করার পরও মানুষ সরে যায় না’ বলতে শোনা ওই পুলিশ কর্মকর্তার ভিডিও, রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের নির্বিচারে গুলি করে মানুষ মারার দৃশ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে জুলাইয়ের বেশ কিছু ঘটনার জন্য সরেজমিন থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এছাড়া হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা এবং ছাদ থেকে শিক্ষার্থীদের ফেলে দেওয়ার ঘটনা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।