আলোকে তিমিরে

স্বৈরাচারের মাথা পালালেও…


৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৫৩

॥ মাহবুবুল হক ॥
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করে প্রতিদিন কর্মিসভা বা জনসভা করছেন। আমাদের রাজনৈতিক দিগন্তে এ এক চমকপ্রদ নবতর মাত্রা সংযোজন করেছে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে টেলিভিশনের সামনে বসে পূর্বে আমরা যেমন একত্রিত হয়ে দেশের বা রাষ্ট্রের প্রধানদের ভাষণ শুনতাম, ঠিক সে ধরনের একটা আবহ এখানে আমরা অনুভব বা উপভোগ করি। ভালোই লাগে। টেলিভিশনের সংবাদ পাঠকরা যেভাবে ‘দেখে পড়ে’ সংবাদ পাঠ করেন, সেই একই কায়দায় তারেক রহমান লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। প্রতিদিন একই স্থানে বসে ধীরে-সুস্থে তার নিজস্ব ভঙ্গিতে তিনি বক্তব্য প্রদান করেন। যে জায়গায় বসে তিনি তার ভাষণ পাঠ করেন, সম্ভবত সেটা তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরি বা পাঠাগার। সিম্পল-সাধারণ। বাড়তি কিছু নেই। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু নেই। দেশের মধ্যবিত্ত জনগণ অন্যদের দেখাদেখি যেমনভাবে নিজেদের ঘর বা কামরাগুলো আসবাবপত্র দিয়ে গুদাম বানিয়ে ফেলেছে, তেমনটি নয়। ছিমছাম। পড়ালেখা বা চিন্তার জন্য যুৎসই শান্ত পরিবেশ। বর্তমানের একজন প্রধান রাজনীতিকের কাছ থেকে এ ধরনের একটা আয়োজন শুধু উপভোগ্যই নয়, চিন্তারও খোরাক জোগাচ্ছে। দেশের চিন্তক মানুষ এ বিষয়টি মূল্যায়ন করা শুরু করেছেন।
তারেক রহমান দেশে অবস্থান করলে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু করতেন কিনা জানি না। কারণ তার দলের অন্য নেতৃবৃন্দ ভার্চুয়াল আবহে যোগ দিচ্ছেন না।
যারা রাজনীতি বলতে মিটিং-মিছিল, সভা-সমাবেশ বোঝেন, অর্থাৎ হইচই বা হুড়-হাঙ্গামা তথা দৌড়াদৌড়ি, ঝাঁপাঝাঁপি বোঝেন, থানা-পুলিশ, মারামারি, লাঠা-লাঠিসহ হিংসা-বিদ্বেষ বোঝেন, তারা হয়তো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এ প্রসেসকে সমর্থন নাও করতে পারেন। তবে এর মধ্যে শুধু বিএনপির কল্যাণ ও মঙ্গল রয়েছে এমনটি নয়, সার্বিকভাবে আমাদের রাজনৈতিক মনন তৈরিতে সাহায্য করছে।
আমাদের দেশের মানুষ বসে বসে কথা শুনতে অভ্যস্ত। জনসভা ও ওয়াজ মাহফিল এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মন লাগিয়ে এসব শুনতো, কিন্তু সেই অবয়বটা আমরা নিজেরাই এলোমেলো করে ফেলেছি। মুগ্ধতার সৌরম্য প্রকাশটা এখন আর নেই। বক্ষ্যমাণ প্রয়াস পূর্বের সেই নিষ্ঠাকে ফিরিয়ে আনতে পারে। মানুষ যখন কোনো কিছু লিখে তখন সে পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ খুব সাবধানতা ও সতর্কতার সাথে ভাবে, চিন্তা করে। নিজের, দলের, আদর্শের মানুষের সাথে মানুষের যে অবারিত সম্পর্ক, তা যেন অক্ষুণ্ন থাকে ইত্যাকার পজিটিভ বিষয়গুলো তখন পাহাড়ের মতো সামনে এসে দাঁড়ায়। সে ঈমানের দিকে, ঐক্যের দিকে, ইতিহাসের দিকে, ঐতিহ্যের দিকে অর্থাৎ দেশ, দীন, জাতি ও বিশ্বের দিকে ফিরে তাকায়। ফিরে তাকায় পরলোকের দিকে অর্থাৎ জান্নাত বা জাহান্নামের দিকে। এ পরিস্থিতিতে মানুষ মননশীল হয়। মননশীল মানুষ সংস্কৃতিমান হয়। আল্লাহভীরু হয়। তার মধ্যে দায়িত্বশীলতা সৃষ্টি হয়, কর্তব্যবোধ জাগ্রত হয়। সংযম, ধৈর্য, পরমতসহিষ্ণুতাসহ এক ধরনের সহনশীলতা তার মধ্যে বাসা বাঁধে।
এ কারণেই পাশ্চাত্য সভ্যতার রাজনীতিকগণ ৮-১০ লাইন হলেও লিখে কথা বলেন। যাতে কোনো ভুল না হয়। যাতে কোনো ক্ষতি না হয়। তারেকের এ প্রয়াস আমাদের দেশের রাজনীতিকদের মধ্যে গ্রহণযোগ্য হোক, সঞ্চারিত হোক- সেই আশা ও দোয়া করছি।
তার সব কথা সঠিক, সব কথা সত্য, সব কথা ইতিহাসভিত্তিক, সব কথা বাস্তবসম্মত, সব কথা আবেগহীন, সব কথা নিঃস্বার্থ, সে কথা কিন্তু আমরা বলছি না। আমরা এটাও বলছি না, তিনি দলের ঊর্ধ্বে বা সার্বিকভাবে দেশের স্বার্থে সব কথা বলছেন। তার দায়বদ্ধতা তার নিজ দলের প্রতি একটু বেশি রয়েছে বলে অনুভব করা যায়। তবুও ভালো, দলের মধ্যে তার মতো আরও নেতা আছেন। তার দলে দেশের রাজনীতিতে এমন একজন বড় নেতা এখনও আছেন, যিনি দল-মত, মতবাদ ও ধর্ম নির্বিশেষে প্রায় সবার কাছে সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য ছিলেন। শুধু দলের স্বার্থ দেখতে যাওয়ায় তিনি নিজেকে ও তার দলকে ছোট করেছেন এবং খাটো করেছেন। অবশ্য একটা কথা না বললেই নয়, তার দলে যে আপ্তবাক্যটি সবসময় চালু ছিল, তা হলো ‘ব্যক্তি থেকে দল বড়’। দল থেকে দেশ ও জাতি আরও বড়Ñ এ কথাটা তার দলে সোচ্চার বা উচ্চকিত হয়নি প্রবলভাবে। কিছু না কিছু সংকীর্ণতা ও কৃপণতা ব্যক্তিসহ গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অবশ্যই বিরাজমান রয়েছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিএনপির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান প্রধান অতিথির ভাষণে বলেন, ‘স্বৈরাচারের মাথাটা পালিয়ে গেছে। কিন্তু স্বৈরাচারের কিছু কিছু অবশিষ্ট রয়ে গেছে বাংলাদেশে। যেকোনো সময় তারা ভিন্ন আঙ্গিকে মাথাচাড়া দেয়ার অপচেষ্টা করছে। যদি দেশকে রক্ষা করতে হয়, দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হয়, তাহলে ঐক্যের বিকল্প নেই।’
এখানে বহু মূল্যবান ২টি বাণী রয়েছে। (১) ‘কিছু কিছু অবশিষ্ট রয়ে গেছে বাংলাদেশে’। (২) ‘তাহলে ঐক্যের বিকল্প নেই’।
আমরা আজ প্রথম বিষয়টা নিয়েই আলোচনা করব। তিনি বলেছেন, ‘কিছু বা কিছু কিছু অবশিষ্ট রয়ে গেছে বাংলাদেশে’। তিনি বড় মানুষ এবং বড় রাজনীতিবিদ। তিনি যদি রাজনীতিবিদ না হয়ে শুধু বড় মানুষ হতেন, তাহলে হয়তো কথাটা এভাবে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলতেন না। বলতেন, স্বৈরাচারের স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে যারা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তাদের অধিকাংশই এখনো বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তাদের বিরুদ্ধে এখনো অভিযোগই তোলা হয়নি, মামলা তো দূরের কথা। সাক্ষী-সাবুদ-বিচার-আচার তো আরও অনেক দূরের কথা। সহজ-সরল ও সাবলীল এমন সাদামাটা কথা না বলে, এমন সত্য ও বাস্তব কথা না বলে, তিনি বলেছেন, কিছু অবশিষ্ট এখনো বাংলাদেশে রয়ে গেছে। এ অবশিষ্ট মানে ‘রেসেটু’Ñ অর্থাৎ সামান্য। এ ‘সামান্য’ আবার মোটাদাগে সামান্য না হয়ে ‘স্থান-কাল-পাত্র’ভেদে ‘যৎসামান্য’ হতে পারে। অল্প হতে পারে। ‘নগণ্য সংখ্যক’ হতে পারে। ‘সামান্য কিছু’ হতে পারে। ‘ধর্তব্য বিষয় না’ হতে পারে। ‘সেকুলার রাজনীতির’ হাত অনেক লম্বা। শুধু স্টেটিকভাবে লম্বা বা দীর্ঘ নয়, সময়ের ব্যবধানে এটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে পারে। এসব কারণে বলা হয়ে থাকে, ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই’। ‘স্থান-কাল-পাত্র’ ভেদে এখানে ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণটাই প্রধান বিবেচ্য বিষয়। আজ যা ‘সত্যের মতো বদমাশ, কাল তা বদমাশের মতো সত্য’ হতে পারে। সুবহে সাদেককে প্রভাত ও সকাল বলা বা প্রত্যুষ বলা এখানে মিথ্যাচার নয়।
বাংলাদেশের এখনকার বৃহৎ দলের ‘টপব্রাশ’ হবার কারণে বিষয়টির মধ্যে তিনি এক ‘পরিমিতিবোধ’ স্থাপন করেছেন। ভালো মানুষের মধ্যে এক ধরনের ‘পরিমাণবোধ’ থাকে। ধর্ম, মতবাদ ও আদর্শভেদে তা কখনো এক ধারায় বা এক ধরনের থাকে না। আর এ বিষয়ে যদি আমরা রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রবেশ করি, তাহলে একদিকে এমন অভয়ারণ্য দেখতে পাবো; অপরদিকে তেমন তো নয়ই, বরং নিষ্ঠুরতম অবস্থা ও ব্যবস্থা আমরা দেখতে পাবো। হালাকু খাঁ, হিটলার, স্ট্যালিন, মাওসেতুং… আরো শত শত নাম ইতিহাসের পাতায় রয়েছে এবং এখনো নিকট অতীতে ফিলিস্তিনসহ বাংলাদেশে যা ঘটে গেল, তাও তো তুল্যমূল্য অবশ্যই করা যায়।
গত স্বৈরাচারের কতজন অংশীদার বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছেন? খুব বেশি হলে ১০,০০০ জন। স্বৈরাচারের সঙ্গে গত ষোলো বছরে সাধারণভাবে কত মানুষ যুক্ত ছিলেন? না হলেও ৬০% জনগণ। এদের মধ্যে হতদরিদ্র, দরিদ্র এবং অসহায় মানুষ আছেন অন্তত ৫০% (এদের কথা আলাদা; সাধারণ দোষ করলেও আলাদা)। বাকি ৫০%-এর মধ্যে সবাই অন্যায় করেছেন, দোষ করেছেন, স্বৈরাচারের সঙ্গে ছিলেন, তাদের মান্য করেছেন, তাদের অন্যায়ভাবে ভোট দিয়েছেন, অন্য দলের ছাত্র-জনতাকে অন্যায়ভাবে অত্যাচার করেছেন, জুলুম করেছেন। সেসবও আমরা এ মুহূর্তে ধর্তব্যের মধ্যে আনছি না। ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হওয়ার দশা।
হ্যাঁ, তাদের মধ্যে যারা বড় বড় অন্যায় করেছেন, তাদের তো ক্ষমা করা যাবে না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রস্তুত করতে হবে। দেশের প্রচলিত আইনকানুন ও বিচার ব্যবস্থায় যা হবার, তা হবে। যদি প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসময় লেগে যায়, তাহলে যখন যে সরকার অবস্থান করবে, তারা সেসব নিয়ে সংবিধান সংশোধন ও নতুন নতুন আইন তৈরি করে বাস্তব এবং নৈতিক অবস্থা সৃষ্টি করবে। এসব নিয়ে দেশবাসীর মধ্যে তেমন কোনো মতানৈক্য নেই। যারা সরাসরি জুলুমের শিকার হয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের প্রতিকার চাইতে হবে, বিচার চাইতে হবে।
দেশবাসী কী চায় এবং কীভাবে চায়, তা কি আমরা বুঝতে পারি না? উপলব্ধি করতে পারি না? স্বৈরাচারের প্রধান ব্যক্তিরাই তো বলেছিলেন, ‘আমরা ক্ষমতা হারালে আমাদের বিরোধীরা লাখ লাখ আওয়ামী লীগার কতল করবে। আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলবে। আমাদের সহায়-সম্পত্তি দখল করে নেবে’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
তাদের এসব তথাকথিত ভবিষ্যদ্বাণী কি সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে? হয়নি। বিশ্বের ইতিহাসে এ মানবিক বিষয়টি চিরকাল সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবে। সারা বিশ্বের গবেষক ও নিরপেক্ষ ইতিহাসবিদগণ লিখছেন এবং ভবিষ্যতেও লিখবেন বাংলাদেশের সেকুলার রাজনীতিবিদদের অধিকাংশই অসত্যবাদী, আধিপত্যবাদী, পরসম্পদ হরণকারী, মানবাধিকারবিরোধী, সত্য ও সুবিচারবিরোধী, আইনকানুন ও বিচার ব্যবস্থার বিরোধী, ধর্মের বিরোধী, হিংসুক, পরশ্রীকাতর, লোভ-মোহ-মাৎসর্যপন্থী, বিদ্বেষপরায়ণ, সুদখোর, ঘুষখোর, লুটপাটকারী অর্থাৎ ইহলোকপন্থী। তাদের স্লোগান হলো, ‘জীবন তো একটাইÑ ইট ড্রিং অ্যান্ড বি ম্যারি’Ñ এককথায় তারা স্বার্থপর, এ কারণে দুর্নীতিবাজ। তারা জাতীয়তাবাদী নয় এবং দেশপ্রেমিকও নয়। এরা ভালো প্রবণতা থেকে খারাপ প্রবণতার দিকে ছোটে।
অপরদিকে যারা সেকুলার নয়, ‘ধর্মপন্থী’ (সব ধর্মের প্রকৃত অনুসারী) তারা অনেকটা বিনয়ী, সংযমী, কৃতজ্ঞতাপন্থী এবং উপর্যুক্ত সকল দোষ-ত্রুটি থেকে অনেকটাই মুক্ত। এ পক্ষের রাজনীতিবিদগণ ‘খারাপ থেকে ভালো হতে চায় এবং ভালো থেকে আরও ভালো মানুষে পরিণত হতে চায়।’
পাশ্চাত্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, আপনারা অধিকাংশই ভুলের মধ্যে আছেন। বাংলাদেশের অধিকাংশ সেকুলারপন্থী রাজনীতিবিদ ‘সাম্প্রদায়িক’ এবং ‘ধর্মপন্থী’ অধিকাংশ রাজনীতিবিদ ‘অসাম্প্রদায়িক’। সেকুলাররা স্বার্থের কারণে ধর্মপন্থীদের জঙ্গি বলে প্রচার করে, কিন্তু সত্য ও বাস্তব যে এ দেশের সেকুলারপন্থীরাই জঙ্গি বানিয়েছে এবং পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে। সত্য উদ্ঘাটনের জন্য এ বিষয়টির ওপর আন্তর্জাতিকভাবে একটা নিরপেক্ষ গবেষণা আপনারা চালাতে পারেন।
দেশবাসী চায় একটির পরিবর্তে অন্তত ২টি ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ গঠন করা হোক। একটি ‘টপব্রাশে’র জন্যÑ যারা রাষ্ট্র ও সরকারে অংশগ্রহণের সময় পৃথকভাবে শপথগ্রহণ করে। অর্থাৎ শপথগ্রহণকারী আমলা, বিচারপতি, এমপি, মন্ত্রী এবং তৎসম পেশায় যারা দেশে-বিদেশে নিয়োজিত ছিলেন এবং এখনো নিয়োজিত আছেন। এদের মধ্যে যারা শপথ ভঙ্গ করেছেন, তারাই গুরুতর এবং সর্বোচ্চতর অপরাধী। এদের বিচার সর্বাগ্রে সম্পন্ন করতে হবে। এদের বিচারের পূর্বে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা ঠিক হবে না।
২নং ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে তাদের জন্য, যারা রাষ্ট্র ও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠ ছিলেন এবং এখনো আছেন (হায়ারারকি)। তারা শপথ গ্রহণকারী না হলেও অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাদের মধ্যে যারা বড় বড় অপরাধ সংঘটিত করেছেন, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে, জাতির বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, মীরজাফরী করেছেন, নাফরমানি করেছেন, তাদের এ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। (এখানেই স্বৈরাচারীদের দোসর ও আজ্ঞাবহদের পাওয়া যাবে।)
বড় মানুষের বা বড় রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব অনেক বড়। সেই পটভূমি ও প্রেক্ষাপটে সব দিক ভাবতে হবে, চিন্তা করতে হবে এবং বিবেচনা করতে হবে। সেকুলাররা পোলারাইজেশন করে এক জোট প্রতিষ্ঠা করবে এবং অপরদিকে ‘ধর্মপন্থীরা’ ভিন্ন এক জোট প্রতিষ্ঠা করবে- এ সময় এমন ধরনের পবিত্র রাজনীতি করা যাবে না। স্বৈরাচারীরা এখন ২টি বড় দলে অনুপ্রবেশ করছে এবং টাকা খরচ করার চেষ্টা করছে (ইনফিলট্রেশন এবং প্যানিট্রেশন)। শক্ত ও নির্মমভাবে এসব বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে এখন থেকে নির্বাচন পর্যন্ত নতুন করে সদস্য সংগ্রহ বন্ধ রাখতে হবে। নির্বাচনে ব্যক্তি বা দলকে যেন অর্থ খরচ করতে না হয়, সেই সংস্কারটি সর্বাগ্রে করতে হবে। তাহলে দুর্নীতি কম হবে। নির্বাচনের ব্যবস্থাপনায় আমলাদের যাতে অংশগ্রহণ করতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ৫ আগস্টের পর ২টি বড় দলে সদস্য ও অর্থ সংগ্রহ হচ্ছে না, নির্বাচন কমিশনকে সেসব নিশ্চিত করতে হবে। না হলে বিপ্লব ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে। যার ফলাফল আত্মঘাতী। আশা করি দেশের ফ্যাসিস্ট বিরোধী সব রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরা বিষয়টি মনে রেখে ২৪-এর অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।