স্বৈরাচারের ফেরার শঙ্কা


৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৫০

॥ মুজতাহিদ ফারুকী ॥
এই কলাম যখন লিখছি, তখন একটি জাতীয় দৈনিকের প্রধান শিরোনাম চোখে ভাসছেÑ ‘হাসিনার দুর্নীতি তদন্তে বাধা।’ শিরোনামের ঘাড়ে রয়েছে আরেকটি উপশিরোনাম, ‘দুদক চেয়ারম্যানকে সরাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল!’ খবরটি চোখে ভাসছে। কারণ এতে জুলাই বিপ্লবোত্তর দেশের পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে, তার একটি ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
ছয় মাস আগে বিপ্লবের ফসল হিসেবে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিতে। সরকারের উপদেষ্টা পদে যারা এসেছেন, তাদের মধ্যে প্রধান বেশ ক’জনের কর্মকাণ্ড এরই মধ্যে যথেষ্ট বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। দেশবাসী দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী সরকারের নানারকম জুলুম-নিপীড়ন সহ্য করেছে; সবরকম অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং দেশের স্বার্থ প্রতিদিন বিদেশি প্রভুদের হাতে তুলে দিতে দেখে অসহায় মর্মপীড়ায় দগ্ধ ও ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। তারপর দেশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত আগস্টে ফ্যাসিবাদ হটানো সম্ভব হয়েছে। জাতি মহামুক্তির স্বাদ পেয়েছে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের মতো। এ মুক্তিকে অনেকে ’৭১-এর স্বাধীনতার সাথে তুলনা করেছেন দ্বিতীয় স্বাধীনতা হিসেবে অভিহিত করে। আমরা বিষয়টিকে বাড়তি মাহাত্ম্য দিতে চাই না। বরং এর মধ্য দিয়ে শুধু বলতে চাইছি যে, এটি ছিল ’৭১, ’৭৫-এর মতোই একটি বিশাল অর্জন। তবে এ বিপ্লব বিদেশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় সংঘটিত কোনো সশস্ত্র যুদ্ধ অথবা সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত হয়নি, হয়েছে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র সাধারণ ছাত্রসমাজ ও জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত জীবনপণ লড়াই ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। স্বৈরাচারের বুলেটের সামনে তাদের অকাতরে জীবন বিলিয়ে দেয়ার বিনিময়ে। স্বাভাবিকভাবেই ফ্যাসিস্ট শাসকের পতন ও পলায়নের পর নতুন বাংলাদেশে মানুষের প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বী। মানুষ আশা করেছিল, এবার দেশের পুরো সিস্টেমটাই পাল্টে যাবে। স্বৈরাচারের সব অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, দমননীতি, চুরি-চামারি, দেশ ও ধর্মবিরোধী কর্মকাণ্ডের অবসান ঘটবে, গণহত্যাকারী, গুম, খুন, আয়নাঘরের স্রষ্টা, দেশবিরোধী অপরাধী চক্রের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে, মানুষে মানুষে বৈষম্য ও শোষণের অবসান ঘটবে।
নতুন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মুখে শোনাও গিয়েছিল সেই অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি। তিনি বলেছিলেন, রাষ্ট্রব্যবস্থার আমূল সংস্কারের সুযোগ এসেছে এবং সরকার সেই সুযোগ বাস্তবে রূপায়নের জন্য যা কিছু করণীয়, তা করবে।
কিন্তু গত ছয় মাসে আমরা কী দেখলাম? সরকার অনেকগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। বেশকিছু মামলা দায়ের হয়েছে এবং দুদকের মাধ্যমে পতিত স্বৈরাচারের দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে। কিন্তু যেটি আদতে দরকার ছিল সেটি হলো, স্বৈরাচারী জালিম সরকারের সব সদস্য, স্বৈরাচারী দল আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি অপরাধী নেতাকর্মীর অবৈধ সব সম্পদ জব্দ করা, স্বৈরাচারের দোসর যারা গত ১৫ বছর ধরে মানুষের অধিকার হরণে সহায়তা করেছে এবং নিজেরা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছে, তাদের গ্রেফতার, সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও দ্রুত বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা। ছয় মাস পর আজ তাকিয়ে দেখুন, একটি কাজও হয়নি। পতিত সরকারের মন্ত্রী, এমপিসহ প্রায় সবাই পালিয়ে গেছে এবং তাদের প্রভুর দেশে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লাগাতার ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে চলেছে। দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে আবারও ফিরে আসার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে।
সত্য বটে, সামাজিক মাধ্যমে কেউ কেউ এমনও বলতে শুরু করেছে যে, আওয়ামী শাসনই ভালো ছিল। এসব বক্তব্য আসলে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনার অংশ, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষ যারা নতুনের স্বপ্ন দেখেছিল, তারা হতাশ হচ্ছে, হয়েছে।
কেন বিপ্লবোত্তর করণীয়গুলো সম্পন্ন করা গেল না? কেন সরকার কিছুই করতে পারছে না? আমরা গত ছয় মাসের রাজনৈতিক ঘটনাবলি জানি। নিজেরাই নিজেদের প্রশ্ন করে জবাবও বের করে নিতে পারি। সাধারণ পাঠকের জন্য শুধু সামান্য আভাস রেখে যাওয়া দরকার মনে করছি।
বিপ্লবের পর সবচেয়ে জরুরি তিনটি প্রশ্ন জাতির সামনে আসে। প্রথমত, পতিত রাষ্ট্রদ্রোহী ফ্যাসিবাদী সরকারের বিচার। দ্বিতীয়ত, আগামীতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান। তৃতীয়ত, রাষ্ট্র সংস্কারের অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন করা, যাতে কাক্সিক্ষত মানের নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়, আর কখনোই দেশে স্বৈরাচারের উদ্ভব ঘটতে না পারে এবং ক্ষমতায় গিয়ে কেউ দেশ ও জনগণের স্বার্থবিরোধী কোনো কাজ করার সুযোগ না পায়। কিন্তু বাস্তবে কী হলো?
সরকারের বয়স এক মাস না যেতেই প্রশ্ন তুলে দেয়া হলো, নির্বাচনের তফসিল নিয়ে কেন কিছুই বলা হচ্ছে না। যারা দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর ধরে বিদেশের সঙ্গে বোঝাপড়ার নির্বাচন, ভোটারবিহীন নির্বাচন, নৈশভোটের নির্বাচন এবং আমি-ডামির নির্বাচন রোধ করতে পারেনি, তারা এখন একটি মুক্ত পরিবেশে নির্বাচনের জন্য এক বছর বা দুই বছর অপেক্ষা করার ধৈর্য রাখতে পারল না। শুধু তাই নয়, রাজনীতিকদের মুখে এমন বক্তব্যও শোনা গেল, যাকে অনেক বিশ্লেষক অনাকাক্সিক্ষত বলেছেন, পতিত স্বৈরাচারের বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি।
এসব কাজের ফলাফল হয়েছে গুরুতর। ফলটা চোখে দেখা যায় না, কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন টের পাওয়া যায়। সেটি হলো, সরকারের ভিত নড়বড়ে হয়ে যাওয়া। সরকারকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছে প্রশাসন থেকে শুরু করে সমাজের যে কোনো মহলই। কেউ সরাসরি স্বৈরাচারী দল ও তাদের বিদেশি প্রভুর মদদে, কেউ-বা দোসরদের প্ররোচনায়। অর্থাৎ ক্ষমতার ওপর অন্তর্বর্তী সরকারের মুঠো অনেকটা আলগা হতে শুরু করেছে। আগামী দিনের জন্য এটি বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিতে পারে। কারণ পতিত ফ্যাসিস্ট শাসক ও তার মন্ত্রী-এমপিরা যেমন তাদের প্রভুর আশ্রয়ে বসে অবিরাম কলকাঠি নেড়ে চলেছে, তেমনি দেশে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়া স্বৈরাচারের দোসর, অলিগার্করা বসে নেই। বরং এরা সবাই সর্বোচ্চ পর্যায়ে সক্রিয় রয়েছে কীভাবে দেশে একটি শূন্যতা সৃষ্টি করা যায়, কীভাবে অস্থিরতা ছড়িয়ে দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা যায়। মাছটা কিন্তু দেশের রাজনীতিতে তাদের নিছক পুনর্বাসন নয়; তারা চায় যত শিগগির সম্ভব ক্ষমতার মসনদে ফিরতে।
লক্ষ অর্জনে তারা দুটি ভিন্ন পথ নিয়েছে। প্রথমত, তাদের অনুগত মিডিয়া, সাংস্কৃতিক ফ্রন্ট, প্রশাসন ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে কাজে লাগানো। এরা মিডিয়ায় এমন সব খবর প্রচার করবে, যেগুলো বাহ্যত জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে না, কিন্তু ভেতরে ভেতরে স্বৈরাচারের পক্ষে ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে। দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বানোয়াট অভিযোগ তুলে হট্টগোল বাধানো হলে একাধিক প্রধান বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকের এ বিষয়ক খবরগুলো ছিল এ পরিকল্পনার অংশ। সেই সাথে সীমান্তের ওপারে কিছু ভাড়াটে মিডিয়াকে কাজে লাগানো হচ্ছে বাংলাদেশ ও অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার উদ্ভট বানোয়াট ও মিথ্যা প্রচারণা চালানোর কাজে। একইভাবে সামাজিকমাধ্যমে চালানো হয় প্রচারণা। বাংলা একাডেমির বইমেলায় ডাস্টবিন নিয়ে কুরুচির অভিযোগ এবং পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপবিষ্ট সংস্কৃতি উপদেষ্টার পেছনে পুরস্কারপ্রাপ্ত সুধীজনের দাঁড়িয়ে থাকা নিয়ে উদ্ভট বিতর্ক হলো সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের ক্রুসেডের নমুনা। এরা যে কোনো সূত্র ধরে সরকারকে নিন্দিত করতে তৎপর।
স্বৈরাচারের ফিরে আসার লক্ষ্য অর্জনে দ্বিতীয় যে কৌশল নিয়ে কাজ চলছে সেটি হলো, এ মুহূর্তে সক্রিয় রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে যে কোনো উপলক্ষে ফাটল ধরান। সেটি হোক নির্বাচন, হোক সংস্কার, হোক ধর্মীয় (তথাকথিত জঙ্গি উত্থানের কল্পকাহিনী) কোনো বিষয় অথবা ভবিষ্যতের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বিষয়ে হিসাব মেলানোর কোনো সূক্ষè বা স্থ’ূলো, সরল বা জটিল অঙ্ক। কে ক্ষমতায় আসবে, কে আসবে না; কে মাখন খাবে, কে বঞ্চিত হবেÑ এসব হিসাব এ অঙ্কের ডাকে তুলে ধরা হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে গেলানোর চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে স্বৈরাচারের পরম প্রভু অন্তরাল থেকে প্রচণ্ড সক্রিয় ভূমিকা রাখছে বলে শোনা যায়। তার টোপ ছড়ানো আছে গভীর পানির নিচে। কে গিলছে আর কে গিলছে না সাধারণের তা বোঝা দুঃসাধ্য, অনেকটা অসাধ্যও। মাঠে সক্রিয় কোনো কোনো ছোট রাজনৈতিক দল এবং দুয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল এসব অঙ্ক কষছে পরীক্ষার হলে গলদঘর্ম শিক্ষার্থীর মতো।
ফল দাঁড়িয়েছে এই যে, যারা সচেতনভাবে খোঁজখবর রাখেন তারা তো বটেই, সাধারণ মানুষও এখন সরকারের কাছে আর কিছু প্রত্যাশা করে না। তাদের নতুন দেশের স্বপ্ন ভেঙে যাবার উপক্রম হয়েছে। এমনকি অনেকে এমন সংশয়ে আছে যে, আদৌ আমরা এ মুক্ত পরিবেশ ধরে রাখতে সক্ষম হবো কি না।
শুরুতে যে খবরের শিরোনাম চোখে ভাসছে বলে উল্লেখ করেছি, সেই খবরটি যারা পড়েননি, তাদের জন্য সামান্য উল্লেখ করা দরকার মনে করছি। খবরে বলা হয়েছে, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার দুর্নীতি তদন্তে পদে পদে বাধা আসছে। তার পরিবার, স্বজন, অনুগত সামরিক-বেসামরিক আমলা ও তার মাফিয়াতন্ত্রে অর্থের জোগানদাতা অলিগার্কদের দুর্নীতি তদন্তে বাধা আসছে নানা কোণ থেকে। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ঘাটে ঘাটে সৃষ্টি করা হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। দুদক যাতে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে রণেভঙ্গ দেয়, সে লক্ষ্যে সুকৌশলে ষড়যন্ত্র চলছে। ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন ভেঙে দেয়ারও কোশেশ চলছে। লক্ষ্য হাসিলে হাসিনার দীর্ঘ মাফিয়াতন্ত্রের সহযোগী, অলিগার্করা লুণ্ঠিত ও পাচার হওয়া অর্থ দিয়ে গঠন করেছে অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল। তহবিলের অর্থ ব্যবহৃত হবে সরকারের ভেতর থেকে অস্থিরতা সৃষ্টি, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, বিদ্যমান কমিশন ভেঙে দেয়া এবং দুর্নীতির বিচার অনিশ্চিত করে তোলার কাজে। আর এসব কাজের বরকন্দাজি করছেন প্রশাসনে বা সরকারের ভেতরে ওত পেতে থাকা প্রভাবশালী আমলা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা, হাসিনার আমলে সুবিধাভোগী অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, পুলিশ, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা। প্রকল্প বাস্তবায়নে ‘মিডিয়া পার্টনার’ হিসেবে রয়েছে ১০ অলিগার্কের নিয়ন্ত্রণাধীন সংবাদ মাধ্যম। হাসিনা, তার পরিবার, স্বজন এবং চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ব্যাংক লুটেরাদের দেড় দশকের দুর্নীতির অনেক আলামতই এর মধ্যে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। অনুসন্ধান ও তদন্তের প্রয়োজনে রেকর্ডপত্র চাওয়া হলে তা পাওয়া যাচ্ছে না। নানা ছুঁতায় গড়িমসি করছেন সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এরপর আর কিছু বলার আছে বলে মনে হয় না। শুধু এটুকু বলে শেষ করবো যে, গত ৫৪ বছরে দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ নামের দলটিই। যাদের বয়স ষাটোর্ধ্ব, তারা ’৭১-পরবর্তী সাড়ে চার বছরের ফ্যাসিস্ট শাসন ভুলে যাননি। ভোলেননি পাকিস্তান আমলের রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদী আচরণ। ১৯৭০ সালে পল্টনে হামলা চালিয়ে জামায়াতের জনসভা পণ্ড করার হোতাদের ভুলে যাবার কোনো কারণ নেই। ১৯৯৬ থেকে ২০০১-এর আওয়ামী শাসনে ড্রিল মেশিন দিয়ে বিরোধী ছাত্র সংগঠনের কর্মীর শরীরে হাজার ছিদ্র করে হত্যার সেই বীভৎস চিত্র কে ভুলেছে? ২০০৯ থেকে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত শ্বাসরুদ্ধকর স্বৈরশাসনের অভিজ্ঞতা কি ভুলে যাবে এখন যাদের বয়স ২৪ বা তার নিচে এমন কোনো যুবক? আর গত জুলাইয়ে হাসিনার ভয়াবহ খুনে চেহারা কী করে ভুলবে দেশের মানুষ!
কিন্তু আফসোস! রাজনীতি, ক্ষমতার মোহ সম্ভবত সবকিছুর চেয়ে বেশি শক্তিশালী। এটি ভুলিয়ে দেয় ধানক্ষেতে লুকিয়ে থাকার যন্ত্রণা, গুম হয়ে যাওয়া সহকর্মীর নাম, হত্যার শিকার প্রিয় ভাই-বন্ধুদেরও স্মৃতি। ভুলিয়ে দেয় যাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগে পৌঁছাতে পেরেছি মুক্তির স্বর্গতোরণে, তাদের কথাও।
আজ দেশে সেই বিস্মৃতির পর্বই চলছে। এই বিস্মৃতির আমাদের দেশ ও জাতিকে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা থেকে কোন অন্ধকারের অতলে ঠেলে ফেলবে, সেটিই দেখার অপেক্ষামাত্র।