গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনকালে ডা. শফিকুর রহমান

বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের বীরত্ব তুলে ধরবে জুলাই বিপ্লবের শহীদ স্মারক


৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:২২

গত ৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে চব্বিশের রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের তথ্যসংবলিত ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতার শহীদ যারা’ শীর্ষক স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান

স্টাফ রিপোর্টার: আমাদের জাতির ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ৪৭, ৫২, ৬৯, ৭১সহ বাংলাদেশের সকল আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের কোনো দলিল বাংলাদেশে কেন নেই, প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কারণ এক ব্যক্তির মিথ্যাচারকে টিকিয়ে রাখতে প্রকৃত শহীদদের কোনো দলিলপত্র করা হয়নি। জুলাইয়ের ইতিহাস যাতে কখনো কেউ বিকৃত করতে না পারে কিংবা মুছে দিতে না পারে, সেজন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সর্বপ্রথম ‘জুলাই বিপ্লবের শহীদ স্মারক প্রকাশ করেছে।
গত বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১.৩০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ‘জুলাই বিপ্লবের শহীদ স্মারক’ মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিমের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার, দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক আযম মীর শাহীদুল হাসান, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও একুশেপদক প্রাপ্ত ড. সুকোমল বড়ুয়া, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব এডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন প্রমুখ। এছাড়া অনুষ্ঠানে জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের বীরত্ব তুলে ধরতে ভূমিকা রাখবে জুলাই বিপ্লবের শহীদ স্মারক। এ সময় তিনি জুলাই বিপ্লবের শহীদ স্মারক পৃথিবীর সকল ভাষায় পর্যায়ক্রমে প্রকাশ ও সংরক্ষণ করার ঘোষণা দেন। ১০ খণ্ডে প্রকাশিত এই শহীদ স্মারকে ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়তে যারা আত্মদান করেছেন সকল বীর শহীদের তথ্য সংরক্ষণ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ৫ আগস্ট তথা ৩৬ জুলাইকে জাতীয় ছুটির তালিকায় অন্তভুক্ত করার দাবিও জানান আমীরে জামায়াত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৩৬ জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। এই দিন হাজার-হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, তরুণ-যুবকের জীবন ও রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। এ ফ্যাসিবাদ ছিলো স্বাধীন দেশে ভিনদেশি সরকারের আওয়ামী পুতুল সরকার।
ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে ছাত্র-জনতার প্রত্যাশিত বৈষম্যহীন, সাম্য, মানবিক ইনসাফভিত্তিক কল্যাণ বাংলাদেশ গঠনে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে আমীরে জামায়াত বলেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে সুখী-সমৃদ্ধ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার। ঐ বাংলাদেশ গঠনে জামায়াতে ইসলামী সকল রাজনৈতিক দলমত ও দেশপ্রেমিক নাগরিকদের এক কাতারে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান করছে। যেই ঐক্যে আমাদের জুলাই বিপ্লব হয়েছে, সেই ঐক্য বজায় রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সর্বপ্রথম শহীদ স্মারক প্রকাশিত হয়েছে, এটি সত্যি প্রশংসনীয়। অথচ এটি করার কথা ছিল রাষ্ট্রের। কিন্তু রাষ্ট্র সেদিকে মনোযোগী বলে মনে হচ্ছে না। আমরা জুলাই-আগস্ট আন্দোলনকে বদর যুদ্ধের ইতিহাস স্মরণ করে প্রেরণা জোগাতে সক্ষম হয়েছি। বহু সংগ্রামী সৈনিক না খেয়ে দিন-রাত কাটিয়েছে, না ঘুমিয়ে রাতারাতি সংগ্রাম করেছে। এ বিপ্লবের চেতনা রক্ষায় গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে না পারলে তিনি উপদেষ্টা পরিষদকে জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সাদিক কায়েম বলেন, জামায়াতে ইসলামী শহীদ ও আহতদের চিকিৎসার জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে,রাষ্ট্র তা নিতে পারেনি। ৬ মাসেও রাষ্ট্র শহীদের নিয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য কাজ করেনি।
উপস্থিত শহীদ পরিবারের সদস্যরা সকলেই একবাক্যে গণহত্যার বিচার শেষ না করে এদেশে কোনো নির্বাচন চান না জানিয়ে তারা বলেন, অথচ গণহত্যার বিচারের দাবি এড়িয়ে গিয়ে কেউ কেউ নির্বাচনের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তাদেরকে স্পষ্ট করে বলতে চাই, ক্ষমতার লিপ্সা ছেড়ে দেশপ্রেম লালন করুন। দেশ ও জাতির জন্য রাজনীতি করতে শিখুন। নতুন বাংলাদেশ গঠনের আগে নতুন বাংলাদেশ স্বাধীন যারা করেছে, তাদের পরিবারের কথা শুনুন। যেভাবে জামায়াতে ইসলামী শহীদ পরিবারগুলোর মনের কথা ও বেদনা বুঝতে পেরেছে। শহীদ পরিবারগুলো নির্বাচনের আগে গণহত্যার বিচার ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানী না করার অনুরোধ করেন। উল্লেখ, জামায়াতের গবেষণা বিভাগের পক্ষে ১০ খণ্ডের ২৫০০ পৃষ্ঠার এ স্মারক প্রকাশ করা হয়েছে। বাকি শহীদদের নিয়ে আরও স্মারক প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়।