সার্বিক নিরাপত্তায় থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

৩ পর্বের বিশ্ব ইজতেমা শুরু আজ


৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০০

স্টাফ রিপোর্টার : সব প্রস্তুতি শেষ। গাজীপুর জেলার টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে আজ ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার শুরু হচ্ছে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা। অন্যান্য বছর দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হলেও এবার ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে তিন পর্বে। আয়োজকদের সূত্রে জানা গেছে, দেশি-বিদেশি আগত মুসল্লিদের জন্য উত্তর পশ্চিমে তৈরি হয়েছে বয়ান মঞ্চ। বয়ান মঞ্চের পশ্চিম পাশে বিদেশি মেহমানদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে, মুসল্লি পারাপারের জন্য তুরাগ নদীর ওপর ৫টি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনী। বিআইডব্লিউটিএ ১টি ব্রিজ নির্মাণ করেছে। এছাড়া ইজতেমা ময়দানে সিসিটিভি স্থাপন করেছে র‌্যাব।
জানা গেছে, বাংলাদেশ তাবলিগ জামাত শূরায়ে নেজামের অধীনে ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপ। এরপর ৩ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। এরপর ৮ দিন বিরতি দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় ধাপের বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করবেন সা’দ অনুসারীরা। ১৬ ফেব্রুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমা। পরে ১৮ ফেব্রুয়ারি বাদ মাগরিব প্রশাসনের নিকট ময়দান বুঝিয়ে দেবেন সা’দ অনুসারীরা।
এ ব্যাপারে শূরায়ে নেজামের ইজতেমা আয়োজক কমিটির মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শূরায়ে নেজাম টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি ও ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি দুই ভাগে ইজতেমা করবে। এদিকে মাওলানা সাদ আহমদ কান্ধলভীর অনুসারী ইজতেমা আয়োজক কমিটির মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম বলেন, ‘মুরুব্বিদের পরামর্শক্রমে ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে নিজামুদ্দিন মারকাজ অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হবে।’
মুসল্লিদের যাতায়াতে ডিএমপির ১৩ নির্দেশনা
ইজতেমায় বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশ নেবেন। মুসল্লিদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে এবং সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গত ২৭ জানুয়ারি রাতে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এক. আখেরি মোনাজাতের দিন (২ ও ৫ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৪টা থেকে আন্তঃজেলা বাস, ট্রাক, কার্ভার্ড ভ্যান ও অন্যান্য ভারী যানবাহন আব্দুল্লাহপুর, ধউড় ব্রিজ মোড় এড়িয়ে মহাখালী-বিজয় সরণি-গাবতলী হয়ে চলাচল করবে। দুই. একইভাবে নবীনগর, বাইপাইল ও আশুলিয়া হয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে আসা যানবাহনসমূহ কামারপাড়া/আব্দুল্লাহপুর ক্রসিং এড়িয়ে সাভার, গাবতলী দিয়ে চলাচল করবে অথবা ধউড় ব্রিজ ক্রসিং হয়ে মিরপুর বেড়িবাঁধ দিয়ে চলাচল করবে।
তিন. ঢাকা থেকে এয়ারপোর্ট রোড দিয়ে আগত যানবাহনসমূহ কুড়িল ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে প্রগতি সরণি হয়ে অথবা বিশ্বরোড ক্রসিং (নিকুঞ্জ-১ ক্যাঁচি গেট) দিয়ে ইউটার্ন ব্যবহার করে চলাচল করবে। চার. আখেরি মোনাজাতের দিন (২ ও ৫ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৪টা থেকে ৩০০ ফিট দিয়ে আগত যানবাহনসমূহ কুড়িল ফ্লাইওভার লুপ-২ (বিমানবন্দরগামী) এড়িয়ে প্রগতি সরণি এবং কুড়িল ফ্লাইওভার লুপ-৪ (কাকলী-মহাখালীগামী) ব্যবহার করবে। কোনোভাবেই বিমানবন্দর সড়ক ব্যবহার করা যাবে না। পাঁচ. আখেরি মোনাজাতের দিন (২ ও ৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা/বিমানবন্দরগামী এক্সিট এড়িয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
ছয়. উত্তরার বাসিন্দা, বিমানযাত্রী, বিমান অপারেশনাল যানবাহন ও বিমান ক্রু বহনকারী যানবাহন, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স ব্যতীত সব ধরনের যানবাহনের চালকেরা বিমানবন্দর সড়ক এড়িয়ে বিকল্প হিসেবে মহাখালী ও বিজয় সরণি হয়ে মিরপুর-গাবতলী সড়ক ব্যবহার করবেন।
সাত. ঢাকা মহানগর থেকে যে মুসল্লিরা পায়ে হেঁটে বিশ্ব ইজতেমাস্থলে যাবেন, তারা তুরাগ নদীর ওপরে নির্মিত পন্টুন ব্রিজ অথবা কামাড়পাড়া ব্রিজ দিয়ে টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে যাতায়াত করবেন। আট. বিদেশগামী যাত্রীদের বিমানবন্দরে আনা-নেওয়ার জন্য আখেরি মোনাজাতের দিন পদ্ম ইউলুপ এবং কুড়াতলী লুপ-২ এবং নিকুঞ্জ-১ গেট থেকে ট্রাফিক-উত্তরা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় যাত্রীদের জন্য পরিবহন সেবা দেওয়া হবে।
নয়. নির্ধারিত পার্কিংয়ের স্থানে মুসল্লিবাহী যানবাহন পার্কিংয়ের সময় অবশ্যই গাড়ির চালক/হেলপার গাড়িতে অবস্থান করবেন এবং যাত্রীরা ও চালক একে অপরের মোবাইল নম্বর রাখবেন। যাতে বিশেষ প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক পারস্পরিক যোগাযোগ করা যায়। দশ. মুসল্লিবাহী প্রতিটি যানবাহনের দৃশ্যমান স্থানে চালকের নাম এবং মোবাইল নম্বর দৃশ্যমান থাকতে হবে।
এগারো. ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ফ্লাইওভারের নিচে আব্দুল্লাহপুর-বেইলি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার কারণে সব যানবাহন চালকদের আজমপুর থেকে ফ্লাইওভার ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হলো। বারো. সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে জনসাধারণকে পায়ে হেঁটে ফ্লাইওভার দিয়ে পারাপার না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। তের. খিলক্ষেত থেকে আব্দুল্লাপুর হয়ে ধউড় ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে পার্কিং করা যাবে না।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষা ও যানজট এড়ানোর লক্ষ্যে সম্মানিত ধর্মপ্রাণ নাগরিকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছে।
গাড়ি পার্কিং সংক্রান্ত নির্দেশনা
এক. ঢাকা ও চট্টগাম বিভাগের পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত এলাকা ১৫নং সেক্টর এলাকাধীন কদমতলী মার্কেট, ৫নং ব্রিজের ঢাল এবং ১৭নং সেক্টর উলুদাহ মাঠ। দুই. সিলেট ও খুলনা বিভাগ থেকে আসা যানবাহন পার্কিং করবে উত্তরাস্থ ১৫নং সেক্টর লেকপাড় মাঠে। তিন. রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে আসা যানবাহন পার্কিং করবে ১০নং ব্রিজ এবং ১১নং ব্রিজ লেকের পশ্চিম পাশ, ১৬নং সেক্টরের ভেতরে এবং বউবাজার মাঠে। চার. বরিশাল বিভাগ থেকে আসা যানবাহন পার্কিং করবে ধউর ব্রিজ ক্রসিং সংলগ্ন বিআইডব্লিউটিএ ল্যান্ডিং স্টেশনে। পাঁচ. ঢাকা মহানগরের থেকে আসা যানবাহন পার্কিং করবে ৩০০ ফিট রাস্তা সংলগ্ন স্বদেশ প্রোপার্টির খালি জায়গাতে।
ডাইভারশন সংক্রান্ত নির্দেশনা
ডাইভারশন পয়েন্ট- শুধু আখেরি মোনাজাতের দিন অর্থাৎ আগামী ২ ফেব্রুয়ারি এবং ৫ ফেব্রুয়ারি ভোর ৪টা থেকে ডাইভারশন স্থান ধউর ব্রিজ, ১৮ নং সেক্টর পঞ্চবটা ক্রসিং, পদ্ম ইউলুপ, ১২নং সেক্টর খালপাড়, মহাখালী ক্রসিং, হোটেল রেডিসন ব্লু ক্রসিং, ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে (বিশ্ব রোড নিকুঞ্জ-১ ক্যাঁচি গেট), কুড়াতলী ফ্লাইওভার লুপ-২, মহাখালী ফ্লাইওভার পশ্চিম পার্শ্ব, মিরপুর দিয়াবাড়ী বাসস্ট্যান্ড ক্রসিং।