লুণ্ঠিত ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধার চায় ইসি
৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০০
স্টাফ রিপোর্টার : ঠিক কখন ভোট হবে- এমন কোনো দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়নি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন (ইসি) বসে নেই। কমিশন স্বচ্ছ এবং সব মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের জন্য সক্রিয় রয়েছে। ইতোমধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে ইসি। এছাড়া দুই ধরনের সময় মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। নির্বাচন চলতি বছরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের মাঝামাঝি হতে পারেÑ এমন ধারণা মাথায় রেখে কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে কমিশন।
ইসি সূত্র মতে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনা অনুসরণ করলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ প্রশ্নে ইসি দুই ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে। প্রথমত, নির্বাচন এ বছরের ডিসেম্বর বা ২০২৬-এর জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হলে আগামী ২ মার্চ প্রকাশিতব্য ভোটার তালিকা অনুযায়ী হবে। আরও পিছিয়ে নির্বাচন আগামী ২০২৬-এর মধ্যভাগে চলে গেলে সেক্ষেত্রে পরবর্তী হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। এ দুই ধরনের ভোটার তালিকা বিবেচনায় রেখেই নির্বাচনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে বর্তমান কমিশন। এছাড়া সংসদ নির্বাচন ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রেও দুই ধরনের প্রস্তুতি রেখে এগোচ্ছে কমিশন।
গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের শেষ দিকে অথবা ২০২৬ সালের প্রথম দিকে বা মাঝামাঝিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে পারবেন। প্রধান উপদেষ্টা ওই সময় বলেন, ‘প্রধান সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে বার বার আপনাদের কাছে আবেদন জানিয়ে এসেছি। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে আমাদের যদি অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয়, তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার করি, তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘২০২৬ সালের প্রথমার্ধ অথবা মাঝামাঝি সময়ে ভোট আয়োজন করা সম্ভব হবে।’
এদিকে গত ১৫ জানুয়ারি নির্বাচনব্যবস্থাকে স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার লক্ষ্যে সরকারের কাছে প্রায় ১৫০ ধরনের সুপারিশ করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। ফলে আগে সংস্কার, না আগে নির্বাচন? কোন নির্বাচন আগে হবেÑ জাতীয় না স্থানীয় সরকার নির্বাচন? এসব বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দল ও জনসাধারণের মধ্যে ভিন্নমত দেখা গেছে। বিএনপি ন্যূনতম সংস্কারের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাইছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু দল প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের পক্ষে। ফলে সরকাকে এ দুই মতামতের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে অগ্রসর হতে হচ্ছে।
এদিকে গত ২৭ জানুয়ারি সোমবার নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, নির্বাচন কমিশনের ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধারের সময় এসেছে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা একটি খারাপ সময় পার করেছি। খারাপ নির্বাচনের জন্য আমাদের সবার ভাবমর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। আমাদের সামনে সেই ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধারের একটি সুবর্ণ সুযোগ এসেছে। আমি নিশ্চিত, সবাই এ সুযোগ গ্রহণ করবেন।’ নির্বাচনে চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচনে তো কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। তবে এবারের নির্বাচনে আমরা চ্যালেঞ্জের থেকে সুবিধা বেশি দেখতে পাচ্ছি। বর্তমানে যেসব রাজনৈতিক দল মাঠে-ময়দানে নির্বাচনের কথা বলছেন, তারা দীর্ঘদিন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও সঠিক, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ইত্যাদি বিষয় নিয়েই দাবি তুলেছেন। আমার মনে হয়, আমাদের সময় এসেছে তাদের কাছে দাবি করা যে, আপনারা এতদিন ধরে যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছেন; আমাদের ওই দাবি পূরণ করার সুযোগ করে দেন।’