ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর ঐক্য গড়তে কাজ করছে ছাত্রশিবির ——-শিবির সভাপতি


৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০০

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য সময়ের দাবি। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি ছাত্র সংগঠনের সাথে ঐক্য করতে প্রস্তুত। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যকার অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে সকল পক্ষের নিকট আন্তরিক, বন্ধুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করে ইসলামী ছাত্রশিবির। ছাত্রশিবির ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর ঐক্য গড়তে কাজ করছে। গত ২৬ জানুয়ারি রোববার সন্ধ্যায় দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে রাজধানীর পুরানা পল্টনে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শিবির সভাপতি বলেন, ‘সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন ঘটনায় কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক বিভাজন সৃষ্টিকারী কিছু বক্তব্য আমাদের নজরে এসেছে। এ অবস্থায় ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যেকার অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে সকল পক্ষের নিকট আমরা আন্তরিক, বন্ধুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি।
তিনি বলেন, আওয়ামী স্বৈরাচারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুণগত যে পরিবরতন হওয়ার কথা ছিল, তা অনেকাংশে অনুপস্থিত। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে না ওঠা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, কিছু রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের চাঁদাবাজি, ছিনতাই, বিভিন্ন অনলাইন ক্যাম্পেইন ও প্রোপাগান্ডা, ট্যাগিংয়ের রাজনীতিসহ নানাবিধ প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রমের ফলে দেশে নতুন সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে, যা জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট পরিপন্থী। জাহিদুল ইসলাম আরো বলেন, আপনারা জানেন, গতকাল (২৫ জানুয়ারি) উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবির সেক্রেটারি রিয়াজুল ইসলামের সাথে যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এ ধরনের কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে ছাত্র সংগঠনগুলোর ঐক্যের পথকে সংকুচিত করে দিতে পারে। এর আগে আমরা লক্ষ করেছি, সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) একটি ছাত্র সংগঠনের একজন কর্মী নিজ বিভাগের কয়েকজনকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করে। যদিও বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ায় তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। আমরা লক্ষ করেছি, ২৫ জানুয়ারি শনিবার গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে এ ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান শিবিরের সভাপতি জাহিদুল।
শিবির সভাপতি বলেন, সম্প্রতি আমরা আরও লক্ষ করেছি যে, একটি ছাত্র সংগঠনের একজন শীর্ষনেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাল সন্ত্রাসের ডাক দিয়ে বলেছেন, ‘লাল সন্ত্রাসই মুক্তির একমাত্র পথ’। অতীতে আমরা দেখেছি, সমাজতন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য লাল সন্ত্রাসের মাধ্যমে স্বাধীনতা-পরবর্তী ব্যাংক লুট, থানায় হামলা, নির্বিচারে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, কেড়ে নেওয়া হয়েছে মৌলিক মানবাধিকার। আবার যদি সেই লাল সন্ত্রাস মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চায়, তবে দেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করবে। এ ধরনের বক্তব্য ছাত্র সংগঠন তথা জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করা ও সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের ক্যাম্পাসগুলোয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত প্রকাশের অবারিত সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেই সাথে প্রায় বিগত ত্রিশ বছরের নিষ্ক্রিয় ছাত্র সংসদগুলো কার্যকর করার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদমুক্ত রাজনীতির সংস্কারের নতুন এক গতিধারা বিনির্মাণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ার কারণে ক্যাম্পাসে গণতন্ত্রহীনতার চর্চা, মতপ্রকাশে বাধা ও ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের অবাধ গণতন্ত্র ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার বিকাশ ঘটানোর জন্য ক্যাম্পাসসমূহে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
তিনি বলেন, গত ২৬ জানুয়ারি রোববার দুপুরে শাহবাগে ইবতেদায়ি শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলা হয়েছে। শিক্ষক হলেন জাতি গঠনের কারিগর, তাদের ওপর এমন হামলা কোনোভাবেই কাম্য নয়।