নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাই মিলে একসাথে কাজ করতে হবে : অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার
২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:২৯
আবদুর রহীম, ফেনী : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নতুনভাবে বিনির্মাণে সবাই মিলে একসাথে কাজ করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আওয়ামী লীগ যে ভাষায় কথা বলত, এখন কেউ কেউ সে, ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছেন। তাদের বক্তব্যে ফ্যাসিবাদের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী শক্তি হেরে গেলেও দেশের বিরুদ্ধে এবং জামায়াতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। ফ্যাসিবাদের পথে কেউ পা বাড়ালে তাদেরও আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের কথা স্মরণ করা উচিত।
গত ১৮ জানুয়ারি শনিবার সকালে ফেনীর আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া মাদরাসা মাঠে জেলা জামায়াতের এক ইউনিট সভাপতি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা আমীর মাওলানা মুফতি আবদুল হান্নানের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আবদুর রহিমের সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও কুমিল্লা অঞ্চলের টিম সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, সাবেক জেলা আমীর একেএম শামছুদ্দিন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য এডভোকেট এএসএম কামাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও জেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক আবু ইউসুফ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও জেলার অপর নায়েবে আমীর মাওলানা মাহমুদুল হক। প্রারম্ভে দারসুল কুরআন পেশ করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও কুমিল্লা অঞ্চলের টিম সদস্য মাওলানা আলাউদ্দিন। সম্মেলনে প্রায় আট হাজার পুরুষ ও নারী সভাপতি অংশগ্রহণ করেন।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক গোলামি থেকে মুক্ত হতে পারেনি। বার বার শাসক ও শাসনের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। ঘুষ, দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কবলে পড়ে দেশের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। শাসকগোষ্ঠী হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ধনী দরিদ্রের বিশাল ব্যবধান সৃষ্টি করে সামাজিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করেছে। মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে দিনের ভোট রাতে করে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আজ এক নিকৃষ্ট পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। নতুন প্রজন্মকে জাতিসত্তার পরিচয় ভুলিয়ে দিতে মিথ্যা বানোয়াট ও কাল্পনিক ইতিহাস রচনা করে জাতির ভবিষ্যতের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, সর্বত্র বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হয়ে মানুষ মুক্তির অপেক্ষায় ছিল। ৫ আগস্ট তরুণ প্রজন্মের সাহসী ও ত্যাগী ভূমিকার কারণে দেশের মানুষ আজ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে। আমরা যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, তা হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নতুনভাবে বিনির্মাণে জামায়াতে ইসলামী প্রয়োজনীয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে আসছে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতি, টাকা পাচার, গুম, খুন, উন্নয়নের নামে লুটপাট বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। দেশের মানুষ আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের যেমন চায় না, তেমনি নতুন কেউ ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ পরিচালনায় আসুক তাও চায় না। দেশের মানুষ সত্যিকার একটি পরিবর্তন চায়; যেখানে তারা আত্মমর্যাদা, স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে বসবাস করতে পারবে। জামায়াতে ইসলামী সে ধরনের একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজ করে যাচ্ছে। সর্বক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার কাজ অব্যাহত রেখেছে। তিনি দেশবাসীকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে জামায়াতে ইসলামীর পাশে থাকার উদাত্ত আহ্বান জানান।
মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, আইয়্যামে জাহেলিয়াতের থেকেও আওয়ামী জাহেলিয়াত আরও জঘন্য ছিল। আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে জাতি সেই ঘৃণ্য জাহেলিয়াত থেকে মুক্তি লাভ করেছে। তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আগস্ট বিপ্লবের সঠিক ইতিহাস যথাযথভাবে সংরক্ষণের জোর দাবি জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যহীন দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। কোনো প্রতি বিপ্লব যেন এ বিপ্লবকে নস্যাৎ করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, এদেশে সবচেয়ে বেশি জুলুমের শিকার হয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির। আমাদের প্রতিটি অফিস বন্ধ করে দিয়েছিল। পতনের পূর্বে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল। আল্লাহ তাদের চিরতরে নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।
অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, ইসলামের ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে না পারলে এদেশের মানুষকে আবারো জীবন ও রক্ত দিতে হবে। শান্তি আসবে না। শান্তির জন্য ইসলামের পক্ষে ভোট দিতে হবে। জামায়াতে ইসলামী দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে এক টাকাও দুর্নীতি হবেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী সত্যিকার অর্থে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে রোলমডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
লগি-বৈঠার আমল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সব খুনের মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনা
রাজৈর (মাদারীপুর) সংবাদদাতা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, লগি-বৈঠার আমল থেকে ২০২৪-এর ৫ আগস্ট পর্যন্ত হাজার হাজার খুনের সমস্ত দায় শেখ হাসিনার। সব খুনের মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনা। এই শেখ হাসিনার নামে ২২৬টি মামলা হয়েছে, রেড অ্যালার্ট হয়েছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, দুদকে মামলা হয়েছে। যে ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের নেতাকর্মীদের ফাঁসি দিয়েছিল, সেই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার ফাঁসির আয়োজন চলছে। গত ১৩ জানুয়ারি সোমবার দুপুরে মাদারীপুর শহরের লেকেপাড়ের স্বাধীনতা অঙ্গনে জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। যেখানকার মাল সেখানেই গেছে। ভারতে বসে এখনো ষড়যন্ত্র করতেছে। কোনো ষড়যন্ত্রে কাজ হবে না। দেশের লোকদের অডিও-ভিডিওবার্তায় বলে তোমরা অস্তির হইও না, আমি যেকোনো সময় ঢুকে পড়বো। আরে ঢুকে পড়ে দেখেন জনগণ আপনার কী করে। ৫ আগস্ট হেলিকপ্টারে পালিয়ে না গেলে গণভবনে লাখ লাখ মানুষ যেভাবে প্রবেশ করতেছিল, আপনার যে কি অবস্থা হতো এদেশের জনগণ, জাতি ও দুনিয়া দেখতে পেত। সংস্কার ছাড়া জাতীয় নির্বাচন নয় উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, সংস্কার না করে এখন নির্বাচন দেয়া হলে ২০১৪, ১৮ ও ২৪-এর মতো ভোট হবে। ছাত্র-জনতার এ রক্ত বৃথা যাবে। নির্বাচন ভালো করতে গেলে কমপক্ষে নির্বাচন কমিশন, পুলিশ বিভাগ, সিভিল বিভাগ, বিচার বিভাগসহ ৭-৮টি জায়গায় সংস্কার করতে হবে। এরপর সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। গত ১৫ বছর দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি মন্তব্য করে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, ১৫ বছর নতুন প্রজন্মের যারা ভোটার হয়েছে, তারাসহ আমরা সবাই ৩টি নির্বাচনে ভোট দিতে পারি নাই।
ভোটের দিন সকালে জনগণ ভোট দিতে যাবে, তখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশলীগ বাধা দিয়েছে। বলেছে ভোট হয়ে গেছে, তোমরা বাড়ি চলে যাও। যারা শেখ হাসিনা সরকারের বিরোধিতা করেছে, তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। যারা সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছে তাদের চাকরি হয়নি। বিভিন্ন পরীক্ষায় পাস করেও যখন পুলিশি তদন্ত হয়, তখন বলা হয় জামায়াত-শিবির পরিবারের সদস্য, তাই সরকারি কোনো চাকরি হয়নি। সভায় সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের জেলা আমীর মাওলানা মো. মোখলেছুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ, ফরিদপুর অঞ্চল সহকারী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, টিম সদস্য মাওলানা আব্দুস ছোবহান খান, শ্রমিক নেতা কাজী আবুল বাশার। সভা পরিচালনা করেন জেলা সেক্রেটারি হাফেজ এনায়েত হোসেন। উল্লেখ্য, প্রায় উনিশ বছর পর মাদারীপুর জেলা জামায়াত, মাদারীপুর জেলা শহরে একটা বড় সমাবেশ করেছে বলে জানা গেছে।